
সহিদুল আলম স্বপন

দক্ষিণ এশিয়া এমন এক ভূরাজনৈতিক অঞ্চল, যেখানে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও রাজনীতির জটিল সম্পর্ক রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতাকে বারবার পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ অঞ্চলের বেশির ভাগ দেশই রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনিক দুর্বলতা, দুর্নীতি এবং জনআস্থার সংকটে ভুগেছে। সম্প্রতি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল মন্তব্য করেছেন—দুর্বল শাসন কাঠামো প্রায়ই একটি দেশের সরকার পতনের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক ঘটনাবলিও সেই বিশ্লেষণকে সমর্থন করে। এই মন্তব্য নিছক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ নয়; বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গভীরে নিহিত সমস্যার বাস্তব প্রতিফলন।
ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার ও প্রশাসনিক সংস্কারের অভাব
একটি রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী হয় দক্ষ প্রশাসন, জবাবদিহি, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং নাগরিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার প্রশাসনিক কাঠামো গঠিত হয়েছে ঔপনিবেশিক শাসনের উত্তরাধিকার থেকে, যেখানে প্রশাসনের উদ্দেশ্য ছিল জনগণকে সেবা দেওয়া নয়, বরং নিয়ন্ত্রণ করা। স্বাধীনতার পর অধিকাংশ দেশই প্রশাসনিক সংস্কারে ব্যর্থ হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসনকে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। ফলস্বরূপ, শাসনব্যবস্থা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং জনআস্থা ক্ষয় হতে থাকে।
বাংলাদেশ: রাজনৈতিকীকৃত প্রশাসনের ফাঁদে
বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা এই সংকটকে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করে। স্বাধীনতার পর বারবার সরকার পরিবর্তন, সামরিক শাসন, একদলীয় ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক সহিংসতা প্রশাসনের নিরপেক্ষতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিচারব্যবস্থায় নির্বাহী হস্তক্ষেপ, প্রশাসনের দলীয়করণ এবং দুর্নীতি রাষ্ট্রের শাসন কাঠামোকে দুর্বল করেছে। যখন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের আস্থা হারায়, তখন রাজনীতি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে সরে গিয়ে রাজপথ ও আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়াশীল রূপ নেয়—বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাস তারই প্রতিফলন।
নেপালে গণতন্ত্রের পরও অনিশ্চয়তা
নেপালে রাজতন্ত্রের অবসানের পর গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসেনি। দলীয় বিভাজন, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা ও দুর্বল প্রশাসনিক কাঠামো সরকার পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে উন্নয়ন পরিকল্পনা ধারাবাহিকতা হারিয়েছে, প্রশাসনিক দক্ষতা কমেছে, এবং জনগণের আস্থা ক্রমেই ক্ষীণ হয়েছে।
শ্রীলঙ্কায় পারিবারিক রাজনীতি ও প্রশাসনিক পতন
শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটও দুর্বল শাসনেরই ফলাফল। পারিবারিক রাজনীতির প্রভাব, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং প্রশাসনে স্বজনপ্রীতি নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়াকে বিকৃত করেছে। কোভিড-পরবর্তী সময়ের অর্থনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত—যেমন হঠাৎ করে রাসায়নিক সার নিষিদ্ধ করা—প্রশাসনিক অদক্ষতার এক দৃষ্টান্ত। এসব ব্যর্থতার ফলেই ২০২২ সালের গণঅভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে পদত্যাগে বাধ্য হন। এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—দুর্বল শাসন কাঠামো রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতাকে ভেঙে দিতে পারে।
দুর্বল শাসন ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ঝুঁকি
অজিত দোভাল সঠিকভাবেই ইঙ্গিত করেছেন যে, দুর্বল শাসনব্যবস্থা কেবল একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার ঝুঁকিও বাড়ায়। বাংলাদেশের অস্থিরতা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রভাব ফেলতে পারে, নেপালের অনিশ্চয়তা চীন-ভারত ভারসাম্যকে নড়বড়ে করে, আর শ্রীলঙ্কার সংকট ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করে। ফলে প্রশাসনিক দুর্বলতা দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক ভূরাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।
পরিবর্তনের প্রয়াস ও সীমাবদ্ধতা
তবু পরিস্থিতি একেবারে হতাশাজনক নয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ধীরে ধীরে সংস্কারের পথে হাঁটছে। বাংলাদেশে ডিজিটাল প্রশাসনের উদ্যোগ, নেপালের প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা, এবং শ্রীলঙ্কার সাংবিধানিক সংস্কার—সবই ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে এসব উদ্যোগ সফল হতে হলে প্রশাসনকে পেশাদার, স্বচ্ছ ও দলনিরপেক্ষ হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি প্রশাসনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে, তবে কোনো সংস্কারই বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারবে না।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ ও আস্থার প্রশ্ন
সুশাসন কেবল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নেরও পূর্বশর্ত। দক্ষ প্রশাসন বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে, কর্মসংস্থান বাড়ায় এবং আস্থা সৃষ্টি করে। অপরদিকে দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অদক্ষতা বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করে অর্থনীতিকে স্থবির করে ফেলে। শ্রীলঙ্কার ঋণ সংকট, পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণনির্ভরতা এবং আফগানিস্তানের প্রশাসনিক পতন এই বাস্তবতারই প্রতিফলন।
একটি কার্যকর রাষ্ট্র গঠনের জন্য সবচেয়ে জরুরি উপাদান হলো জনআস্থা। প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, আইনের শাসন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত না হলে সেই আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় না। দক্ষিণ এশিয়ার বহু রাষ্ট্রে শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে, কিন্তু এর ফল হয় বিপরীত—রাষ্ট্র দুর্বল হয়, সমাজ বিভক্ত হয়, সরকার অস্থির হয়।
শক্তিশালী রাষ্ট্র বনাম টেকসই সরকার
অজিত দোভালের বক্তব্য আমাদের সামনে এক মৌলিক প্রশ্ন রাখে—আমরা কি শক্তিশালী রাষ্ট্র চাই, নাকি কেবল টিকে থাকা সরকার? যদি লক্ষ্য হয় রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা ও জনগণের কল্যাণ, তবে প্রশাসনিক সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রশাসন কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পত্তি নয়—এটি জাতির সম্পদ। দুর্বল প্রশাসন হয়তো কোনো সরকারকে সাময়িকভাবে টিকিয়ে রাখতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা রাষ্ট্রের ভিত্তিকে ধ্বংস করে দেয়।
দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের অন্যতম সম্ভাবনাময় অঞ্চল। এই সম্ভাবনা বাস্তবায়নের চাবিকাঠি একটাই—সুশাসন। প্রশাসনকে যদি জবাবদিহিমূলক, পেশাদার ও জনগণমুখী করা যায়, তবে রাজনৈতিক পরিবর্তন আর হবে না অস্থিতিশীলতার প্রতীক, বরং হবে গণতান্ত্রিক বিকাশের স্বাভাবিক ধারা।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*লেখক সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংকিং আর্থিক অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং কলামিস্ট ও কবি

দক্ষিণ এশিয়া এমন এক ভূরাজনৈতিক অঞ্চল, যেখানে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও রাজনীতির জটিল সম্পর্ক রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতাকে বারবার পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ অঞ্চলের বেশির ভাগ দেশই রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনিক দুর্বলতা, দুর্নীতি এবং জনআস্থার সংকটে ভুগেছে। সম্প্রতি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল মন্তব্য করেছেন—দুর্বল শাসন কাঠামো প্রায়ই একটি দেশের সরকার পতনের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক ঘটনাবলিও সেই বিশ্লেষণকে সমর্থন করে। এই মন্তব্য নিছক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ নয়; বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গভীরে নিহিত সমস্যার বাস্তব প্রতিফলন।
ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার ও প্রশাসনিক সংস্কারের অভাব
একটি রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী হয় দক্ষ প্রশাসন, জবাবদিহি, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং নাগরিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার প্রশাসনিক কাঠামো গঠিত হয়েছে ঔপনিবেশিক শাসনের উত্তরাধিকার থেকে, যেখানে প্রশাসনের উদ্দেশ্য ছিল জনগণকে সেবা দেওয়া নয়, বরং নিয়ন্ত্রণ করা। স্বাধীনতার পর অধিকাংশ দেশই প্রশাসনিক সংস্কারে ব্যর্থ হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসনকে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। ফলস্বরূপ, শাসনব্যবস্থা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং জনআস্থা ক্ষয় হতে থাকে।
বাংলাদেশ: রাজনৈতিকীকৃত প্রশাসনের ফাঁদে
বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা এই সংকটকে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করে। স্বাধীনতার পর বারবার সরকার পরিবর্তন, সামরিক শাসন, একদলীয় ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক সহিংসতা প্রশাসনের নিরপেক্ষতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিচারব্যবস্থায় নির্বাহী হস্তক্ষেপ, প্রশাসনের দলীয়করণ এবং দুর্নীতি রাষ্ট্রের শাসন কাঠামোকে দুর্বল করেছে। যখন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের আস্থা হারায়, তখন রাজনীতি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে সরে গিয়ে রাজপথ ও আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়াশীল রূপ নেয়—বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাস তারই প্রতিফলন।
নেপালে গণতন্ত্রের পরও অনিশ্চয়তা
নেপালে রাজতন্ত্রের অবসানের পর গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসেনি। দলীয় বিভাজন, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা ও দুর্বল প্রশাসনিক কাঠামো সরকার পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে উন্নয়ন পরিকল্পনা ধারাবাহিকতা হারিয়েছে, প্রশাসনিক দক্ষতা কমেছে, এবং জনগণের আস্থা ক্রমেই ক্ষীণ হয়েছে।
শ্রীলঙ্কায় পারিবারিক রাজনীতি ও প্রশাসনিক পতন
শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটও দুর্বল শাসনেরই ফলাফল। পারিবারিক রাজনীতির প্রভাব, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং প্রশাসনে স্বজনপ্রীতি নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়াকে বিকৃত করেছে। কোভিড-পরবর্তী সময়ের অর্থনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত—যেমন হঠাৎ করে রাসায়নিক সার নিষিদ্ধ করা—প্রশাসনিক অদক্ষতার এক দৃষ্টান্ত। এসব ব্যর্থতার ফলেই ২০২২ সালের গণঅভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে পদত্যাগে বাধ্য হন। এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—দুর্বল শাসন কাঠামো রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতাকে ভেঙে দিতে পারে।
দুর্বল শাসন ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ঝুঁকি
অজিত দোভাল সঠিকভাবেই ইঙ্গিত করেছেন যে, দুর্বল শাসনব্যবস্থা কেবল একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার ঝুঁকিও বাড়ায়। বাংলাদেশের অস্থিরতা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রভাব ফেলতে পারে, নেপালের অনিশ্চয়তা চীন-ভারত ভারসাম্যকে নড়বড়ে করে, আর শ্রীলঙ্কার সংকট ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করে। ফলে প্রশাসনিক দুর্বলতা দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক ভূরাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।
পরিবর্তনের প্রয়াস ও সীমাবদ্ধতা
তবু পরিস্থিতি একেবারে হতাশাজনক নয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ধীরে ধীরে সংস্কারের পথে হাঁটছে। বাংলাদেশে ডিজিটাল প্রশাসনের উদ্যোগ, নেপালের প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা, এবং শ্রীলঙ্কার সাংবিধানিক সংস্কার—সবই ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে এসব উদ্যোগ সফল হতে হলে প্রশাসনকে পেশাদার, স্বচ্ছ ও দলনিরপেক্ষ হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি প্রশাসনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে, তবে কোনো সংস্কারই বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারবে না।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ ও আস্থার প্রশ্ন
সুশাসন কেবল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নেরও পূর্বশর্ত। দক্ষ প্রশাসন বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে, কর্মসংস্থান বাড়ায় এবং আস্থা সৃষ্টি করে। অপরদিকে দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অদক্ষতা বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করে অর্থনীতিকে স্থবির করে ফেলে। শ্রীলঙ্কার ঋণ সংকট, পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণনির্ভরতা এবং আফগানিস্তানের প্রশাসনিক পতন এই বাস্তবতারই প্রতিফলন।
একটি কার্যকর রাষ্ট্র গঠনের জন্য সবচেয়ে জরুরি উপাদান হলো জনআস্থা। প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, আইনের শাসন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত না হলে সেই আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় না। দক্ষিণ এশিয়ার বহু রাষ্ট্রে শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে, কিন্তু এর ফল হয় বিপরীত—রাষ্ট্র দুর্বল হয়, সমাজ বিভক্ত হয়, সরকার অস্থির হয়।
শক্তিশালী রাষ্ট্র বনাম টেকসই সরকার
অজিত দোভালের বক্তব্য আমাদের সামনে এক মৌলিক প্রশ্ন রাখে—আমরা কি শক্তিশালী রাষ্ট্র চাই, নাকি কেবল টিকে থাকা সরকার? যদি লক্ষ্য হয় রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা ও জনগণের কল্যাণ, তবে প্রশাসনিক সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রশাসন কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পত্তি নয়—এটি জাতির সম্পদ। দুর্বল প্রশাসন হয়তো কোনো সরকারকে সাময়িকভাবে টিকিয়ে রাখতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা রাষ্ট্রের ভিত্তিকে ধ্বংস করে দেয়।
দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের অন্যতম সম্ভাবনাময় অঞ্চল। এই সম্ভাবনা বাস্তবায়নের চাবিকাঠি একটাই—সুশাসন। প্রশাসনকে যদি জবাবদিহিমূলক, পেশাদার ও জনগণমুখী করা যায়, তবে রাজনৈতিক পরিবর্তন আর হবে না অস্থিতিশীলতার প্রতীক, বরং হবে গণতান্ত্রিক বিকাশের স্বাভাবিক ধারা।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*লেখক সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংকিং আর্থিক অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং কলামিস্ট ও কবি
বাংলাদেশ আজ এক নতুন সূচনার দোরগোড়ায়। দমন ও বিভাজনের অন্ধ অধ্যায় পেরিয়ে জাতি আজ নতুন আলো দেখছে। কিন্তু এই আলোর পথ সহজ নয়। পরিবর্তনের যাত্রা টেকসই করতে হলে আত্মসমালোচনার সাহস থাকতে হবে—কে কোথায় ভুল করেছে, কেন ভুলের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই হবে।
মামদানি শুধু বাক্সর্বস্ব নন। তিনি ধনীদের ট্যাক্স মাত্র দুই পার্সেন্ট বাড়িয়ে গরিবদের এ সুযোগগুলো দিতে পারবেন চিন্তা করছেন। এই পরিবর্তনে ধনীরা এ শহর ছেড়ে গেলেও তাদের রেখে যাওয়া জায়গায় ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ভাড়া বাড়ি তৈরি করা সম্ভব। আয় আর ব্যয়ের একটা সামঞ্জস্য আসবে।
আভিজাত্য যাই থাকুক/ তাতে ছদ্মবেশী গাঢ় দুর্বলতা আছে/ আছে নতুন সুখের গন্ধ/ শিবের সাপ নাচানো খেলা,