logo
সুপ্রবাস

সহস্রকণ্ঠে বিশ্ববাঙালির বর্ষবরণ, নিউইয়র্ক পরিণত হলো একখণ্ড বাংলাদেশে

বিডিজেন ডেস্ক
বিডিজেন ডেস্ক২ দিন আগে
Copied!
সহস্রকণ্ঠে বিশ্ববাঙালির বর্ষবরণ, নিউইয়র্ক পরিণত হলো একখণ্ড বাংলাদেশে

১৪৩২ বঙ্গাব্দ স্মরণকালের বিস্ময় নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে নিউইয়র্ক শহরে। দুই দিনের বর্ষবরণ উৎসব বাঙালি জাতির পরম আরাধ্য ও চরম প্রাপ্তির বৈকুণ্ঠময় অনুভবের স্মারক হয়ে থাকল। যেন একখণ্ড বাংলাদেশ বিশ্ববাসীকে জানান দিল যে আমাদের জীবনও আনন্দময়। ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি। জ্যাকসন হাইটসে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত মঙ্গল শোভাযাত্রাকে করে তুলেছিল নীল আকাশে সাদা মেঘের পেখম তুলে ধাবমান বলাকার প্রাণিত আলোকশিখা। তবে আগের দিন বৃষ্টিস্নাত দিনে টাইমস স্কয়ারও হয়ে উঠছিল বৈশাখের রঙিন দিবসের গীতাঞ্জলি।

প্রথম দিনে সহস্র বাঙালি একত্র হয়ে সুরে-সংগীতে-নৃত্যে পালন করেছে তাদের প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ। ওই দিন উৎসবে উপস্থিত ছিলেন থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটানের কনসাল জেনারেলরা। একইসঙ্গে বহু দেশ ও জাতির মানুষ উপস্থিত থেকে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব পালন করেন, যা রূপ নেয় আন্তর্জাতিকতায়।

2025-04-16_bfps0kw6_১৫৭

উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বাইরে বিশ্বব্যাপী বাঙালিদের বৃহত্তম সমাবেশ হয় নিউইয়র্ক শহরেই। গত দুই বছরের মতো এবারও দুই দিনের অনুষ্ঠানের প্রথম দিনটি অর্থাৎ ১২ এপ্রিল টাইমস স্কয়ারে এবং ১৩ এপ্রিল জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় উদ্‌যাপিত হয় বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উৎসব। এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয় ‘ছায়ানটে’র সভাপতি ও সংস্কৃতি-সাধক সদ্য প্রয়াত সন্‌জীদা খাতুনকে।

বিশ্ববাঙালির আয়োজনে দুই দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে ছিল গান-নৃত্য, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলা। যেখানে শতকণ্ঠে শিশুরা গান গেয়ে এবং সহস্রকণ্ঠে বড়দের সুর এবং গানে বরণ করে নেওয়া হয় বাংলা বছরের প্রথম দিনটিকে। আয়োজক সংগঠনের প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিনের মহড়া ও নিবিড় অনুশীলনের মধ্য দিয়ে প্রস্তুত করা হয় সবাইকে।

অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল মহীতোষ তালুকদার তাপসের নেতৃত্বে ‘সহস্র কণ্ঠে বর্ষবরণ’। এক হাজারের বেশি শিল্পী একসঙ্গে মিলিত হয়ে সম্প্রীতি, আনন্দ এবং মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসার গান গেয়েছেন নিউইয়র্কের মাটিতে।

2025-04-16_aojysfl3_১৫৬

এ ছাড়া, এই বছর একটি বিশেষ অনুষ্ঠান ছিল ‘হাজার বছরের বাংলা গানের গল্প’। কল্লোল বসুর পরিকল্পনায় এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অঞ্চলের ১০০ জন শিল্পী হাজার বছর ধরে বিস্তৃত এবং বহুবিধ সাংস্কৃতিক প্রভাবে প্রভাবিত বাংলা গানের ৩২টি ধারাকে তুলে ধরেন।

পরিবেশনায় ছিল ডায়াস্পোরা ইনক, কল্লোল, মৈত্রী, সিংগিং বার্ডস, সৃষ্টি একাডেমি, অনুপ দাস ডান্স একাডেমি প্রভৃতি। নৃত্যে ছিলেন চন্দ্রা ব্যানার্জি ও সম্প্রদায়। এ ছাড়া, তাজলি, কৃষ্ণা তিথি, রেশমি প্রতীক, শাহ মাহবুব এবং মণিপুরি নৃত্যে জগন্নাথ ও সম্প্রদায় সংযুক্ত পরিবেশনায় মুখর ছিল টাইমস স্কয়ার। বলা বাহুল্য, কণ্ঠশিল্পী মহীতোষ তালুকদার তাপসের নেতৃত্বে শতকণ্ঠ থেকে সহস্রকণ্ঠের এই বর্ষবরণ বাঙালি সংস্কৃতির পালকে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এর সঙ্গে খ্যাতিমান রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সুরেরধারা যুক্ত হয় উৎসবের সঙ্গে। বর্ষবরণ উৎসবে একই রকম শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে নারী-পুরুষের বর্ণিল পরিবেশনায় বাংলার জয় ঘোষণা করা হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমস স্কয়ারে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বিকেল ৫টার পর ঘটে উৎসাহব্যঞ্জক ও স্মরণীয় ঘটনা। এনআরবি ওয়ার্ল্ডওয়াইডের পক্ষ থেকে দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এরা হলেন উদ্যোক্তা এবং সমাজসেবী পরিতোষ এম চক্রবর্তী এবং অপরজন মুহাম্মদ এস চৌধুরী, যিনি মানবসেবা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষমতায়নে নিবেদিতপ্রাণ। ব্যতিক্রমী এই পুরস্কার নববর্ষ উৎসবকে ভিন্ন মাত্রা প্রদান করেছে।

2025-04-16_x8k1lseo_১৫৮

নিউইয়র্ক টাইমস স্কয়ারে বর্ষবরণ শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালে। দৃশ্যত বাস্তবতা হলো ২০২৫ সালে এসেই উৎসবটি আন্তর্জাতিক মহিমা অর্জন করেছে। বলা বাহুল্য, বাংলা বর্ষবরণের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এ বছরের উদ্‌যাপনকে অনেক বেশি তাৎপর্যমণ্ডিত করেছে; পরিণত হয়েছে বৈশ্বিক উৎসবে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে ১৪ এপ্রিলকে বাংলা নববর্ষের স্বীকৃতি দিয়ে অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আলবেনিতে গভর্নর অফিস বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় এই উৎসবকে ২৮ এপ্রিল উদ্‌যাপন করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিউইয়র্কে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের অনুরোধে সিনেটর লুইস সেপুলভেদার ১৫ জানুয়ারি প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অঙ্গরাজ্যের আইনসভার অধিবেশনে ২০২৫-এর ২২ জানুয়ারি আইনপ্রণেতারা সর্বসম্মতিক্রমে বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। রেজল্যুশনে উল্লেখ করা হয়, ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ বাংলা বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখকে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে বাংলা নববর্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো। এই অঙ্গরাজ্যের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের স্বীকৃতি হিসেবে এবং এই রাজ্যে বসবাসরত বিভিন্ন কমিউনিটির মধ্যে সম্প্রীতি দৃঢ় করার লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। টাইমস স্কয়ারে রেজল্যুশনটি (১২ এপ্রিল) পাঠ করে শ্রোতৃমণ্ডলীকে শোনানো হয়।

2025-04-16_2xb6b062_১৫৯

বলা বাহুল্য, অভিবাসী জীবনের লড়াইটা কেবল অন্ন সংস্থানের জন্য নয়; বরং বাঙালি জাতির যা কিছু অহংকারের সামগ্রী, তা সামনে নিয়ে এগিয়ে চলার লড়াইও। এই লড়াই নিজেদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার নিরন্তর সংগ্রামে উদ্দীপিত। আর এই আনন্দ উজ্জীবনের স্বাক্ষর রয়ে গেল ১৪৩২ বঙ্গাব্দের নববর্ষ উদ্‌যাপনের মধ্য দিয়ে। আয়োজক এনআরবি ওয়ার্ল্ডওয়াইড টিকে থাকুক বাঙালির রক্ষাকবচ হিসেবে।

উদ্যোক্তাদের দাবি, ১৩ এপ্রিল কেবল জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় প্রায় ৫০ হাজার বাঙালি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। আয়োজকদের কথায়, এই উদ্‌যাপনের মূল উদ্দেশ্য বৃহত্তর প্রবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে বাংলা সংস্কৃতির প্রকৃত বার্তা পৌঁছে দেওয়া। মুক্তধারা এবং এনআরবি ওয়ার্ল্ডওয়াইড সভাপতি বিশ্বজিৎ সাহার কথায়, ‘এই উৎসব বিশ্ববাঙালির ঐক্য ও ভাষার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।’

আরও পড়ুন

কুয়েতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন

কুয়েতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন

জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কুয়েতে উদ্‌যাপিত হয়েছে বাংলাদেশের ৫৪তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাস এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

২ ঘণ্টা আগে

কুয়ালালামপুরে গাউসিয়া কমিটি মালয়েশিয়া শাখার ঈদ পুনর্মিলনী

কুয়ালালামপুরে গাউসিয়া কমিটি মালয়েশিয়া শাখার ঈদ পুনর্মিলনী

মালয়েশিয়ায় গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের মালয়েশিয়া শাখার ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত রোববার (৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কুয়ালালামপুরের কেপং আমান পুরী সুরাও গাউসুল আজমে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়।

৪ ঘণ্টা আগে

আবুধাবিতে জমকালো আয়োজনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন

আবুধাবিতে জমকালো আয়োজনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে জমকালো আয়োজন উদ্‌যাপন করা হয়েছে বাংলাদেশের ৫৪তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) আবুধাবির একটি অভিজাত হোটেলে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

১ দিন আগে

আমিরাতের রাষ্ট্রপতির কাছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ

আমিরাতের রাষ্ট্রপতির কাছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয়পত্র পেশ করেছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে তিনি পরিচয়পত্র পেশ করেন।

২ দিন আগে