সহিদুল আলম স্বপন, জেনেভা, সুইজারল্যান্ড
মানুষ সমাজবদ্ধ প্রাণী। আমরা জন্মসূত্রে এক পরিবারের, এক রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ হই। জন্মের পর থেকেই বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদি, নানা-নানী, চাচা-খালা—সবাই মিলে আমাদের ঘিরে রাখে। সমাজ এই সম্পর্কগুলোকে ‘আত্মীয়তা’ বলে সংজ্ঞায়িত করে। কিন্তু আসলেই কি আত্মীয়তা কেবল রক্তের বন্ধনেই সীমাবদ্ধ? যে মানুষ আমার রক্তের না, কিন্তু আমার কষ্টে পাশে থাকে, আনন্দে হাসে, বিপদে হাত বাড়ায়—সে কি আত্মীয় নয়?
আজকের বাস্তবতার আলোকে দেখা যায়, আত্মীয়তার প্রকৃত ভিত্তি রক্ত নয়, আত্মা। মানুষ মানুষকে বোঝে, অনুভব করে, শ্রদ্ধা করে এবং ভালোবাসে—এই মিলনেই আত্মীয়তার জন্ম হয়। আত্মার সংযোগই সত্যিকারের সম্পর্ককে পূর্ণতা দেয়।
রক্তের সম্পর্ক বনাম আত্মার সম্পর্ক
রক্তের সম্পর্ক জন্মগত, আমাদের হাতে নেই। বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন—সব কিছুই ঈশ্বরনির্ধারিত। কিন্তু আত্মার সম্পর্ক আমরা নিজেরাই তৈরি করি। একজন শিক্ষক, একজন বন্ধু, একজন প্রতিবেশী কিংবা একজন অপরিচিত মানুষ—যে আমাদের মনকে স্পর্শ করে, যে আমাদের বোঝে, সে-ই আত্মার আত্মীয়।
রক্তের সম্পর্ক অনেক সময় শুধুই সামাজিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যায়। কিন্তু আত্মার সম্পর্ক আসে হৃদয়ের গভীরতা থেকে, যেখানে প্রত্যাশার পরিবর্তে থাকে অনুভূতি, ভালোবাসা ও আন্তরিকতা। সেখানে প্রতিদান চাওয়া হয় না; থাকে নিঃস্বার্থ প্রীতি।
আত্মার সম্পর্কের শক্তি
আত্মার সম্পর্ক এমন এক বন্ধন যা সময়, দূরত্ব কিংবা সমাজের বিধি-বিধানের গণ্ডি মানে না। আপনি হয়তো এমন একজন মানুষকে চেনেন, যার সঙ্গে কথা বললেই মন ভালো হয়ে যায় বা যার সামনে নিজেকে নির্ভয়ে প্রকাশ করতে পারেন। এটাই আত্মার সংযোগ।
একজন বন্ধুর উদাহরণ ধরা যাক—যার সঙ্গে রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই, কিন্তু জীবনের প্রতিটি কঠিন সময়ে সে পাশে থাকে। কখনো পরামর্শ দেয়, কখনো চুপচাপ শুধু উপস্থিত থাকে। তার এই নিঃস্বার্থ উপস্থিতিই প্রমাণ করে আত্মার সম্পর্ক কতটা গভীর হতে পারে।
রক্তের সম্পর্ক সবসময় মধুর নয়
বাস্তব জীবনে আমরা দেখি, অনেক রক্তের সম্পর্ক ভেঙে যায়। ভাই ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে না, সন্তান বাবা-মাকে ত্যাগ করে, আত্মীয়েরা সম্পত্তি নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হয়। এইসব উদাহরণ প্রমাণ করে যে, রক্তের সম্পর্ক থাকলেই ভালোবাসা বা আত্মীয়তা নিশ্চিত হয় না।
আবার উল্টো দিকও দেখা যায়—কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই, তবু কেউ কারও জন্য পৃথিবী উল্টে দিতে প্রস্তুত। কেউ কোনো দুঃসময়ে আপনজনের মতো এগিয়ে আসে। এখানেই বোঝা যায়, আত্মার সম্পর্কই আসল, রক্তের নয়।
ইতিহাস ও সাহিত্যে আত্মার সম্পর্কের উদাহরণ
বাংলা সাহিত্যেই এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পে মিনির সঙ্গে কাবুলিওয়ালার রক্তের সম্পর্ক ছিল না, কিন্তু ছিল আত্মার। ছোট্ট মিনিকে কাবুলিওয়ালা নিজের মেয়ের প্রতিচ্ছবি হিসেবে ভালোবেসেছিল।
আবার শরৎচন্দ্রের উপন্যাসে দেখা যায়—দেবদাস, চন্দ্রমুখী, পার্বতীর সম্পর্ক—যেখানে আত্মার আকর্ষণ রক্ত বা সমাজের সীমা পেরিয়ে যায়।
মানুষের ইতিহাসেও এমন সম্পর্কের নজির ভরপুর—যেমন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সহচর আবু বকর (রা.)-এর সঙ্গে তাঁর বন্ধন, যা রক্তের নয়, আত্মার ছিল।
আত্মার সংযোগে আসে শান্তি ও পরিপূর্ণতা
যখন কারও সঙ্গে আত্মার সংযোগ তৈরি হয়, তখন জীবনে এক ধরনের প্রশান্তি আসে। সেখানে স্বার্থ নেই, ভয় নেই, শুধুই বোঝাপড়া ও স্নেহ। এমন সম্পর্ক মানুষকে নিরাপত্তা দেয়, আত্মবিশ্বাস জোগায় এবং জীবনের কষ্ট কমিয়ে দেয়।
আত্মার সম্পর্ক মানুষকে একা হতে দেয় না। এমনকি দূরত্ব থাকলেও মনে হয়, কেউ আছে—যে বোঝে, শোনে, অনুভব করে। সেই অনুভূতি রক্তের আত্মীয়দের অনেকের মধ্যেও পাওয়া যায় না।
আধুনিক সমাজে আত্মার সম্পর্কের গুরুত্ব
আজকের পৃথিবী প্রযুক্তিনির্ভর, ব্যস্ত ও আত্মকেন্দ্রিক। মানুষ প্রতিদিন শত শত মানুষের সংস্পর্শে আসে, কিন্তু আন্তরিক সম্পর্ক তৈরি হয় অল্প কয়েকজনের সঙ্গে। এমন সমাজে আত্মার সম্পর্কের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়।
যখন চারপাশে মানুষ থাকলেও একাকিত্ব গ্রাস করে, তখন এক আত্মার আত্মীয়ের সান্নিধ্যই পারে মানুষকে বাঁচাতে। একজন সত্যিকারের বন্ধু, সঙ্গী বা সহকর্মী—যে হৃদয় দিয়ে পাশে থাকে—তারাই জীবনের অন্ধকারে আলোর মতো কাজ করে।
আত্মীয়তা মানে দায়িত্ব নয়, অনুভূতি
রক্তের আত্মীয়তা প্রায়শই দায়িত্বের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ‘আমি ওর আত্মীয়, তাই যেতে হবে’, ‘ওর অনুষ্ঠান, তাই হাজির থাকতে হবে’—এসব অনেক সময় কেবল সামাজিক বাধ্যবাধকতা।
কিন্তু আত্মার আত্মীয়তার ক্ষেত্রে এসব আনুষ্ঠানিকতা থাকে না। সেখানে সম্পর্কের মূল থাকে অনুভূতি ও ইচ্ছায়। কাউকে ভালো লাগলে, বুঝলে, তার সুখ-দুঃখে অংশ নিতে চাওয়া—এই মানবিক টানটাই আত্মার আত্মীয়তার প্রকৃত রূপ।
আত্মার আত্মীয়তা তৈরি হয় কীভাবে?
আত্মার আত্মীয়তা জোর করে হয় না। এটি সময়, অভিজ্ঞতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠে। কখনো কোনো কথায়, কখনো এক মুহূর্তের সহানুভূতিতে—মন থেকে মন যুক্ত হয়।
দুজন মানুষের চিন্তা, মূল্যবোধ ও হৃদয়ের তরঙ্গ যখন এক সুরে বাজে, তখনই জন্ম নেয় আত্মার বন্ধন। এতে জাত, ধর্ম, বয়স, লিঙ্গ কিছুই বাধা নয়।
আত্মার সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ
যদিও আত্মার সম্পর্ক গভীর, তবু এরও চ্যালেঞ্জ আছে। অনেক সময় সমাজ এই সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেয় না—বিশেষ করে যখন রক্তের বাইরের কারও প্রতি গভীর টান তৈরি হয়। তা ছাড়া, আত্মার সম্পর্কের জন্য সততা ও মানসিক পরিপক্বতা প্রয়োজন। যদি একজন আন্তরিক হয় আর অন্যজন না হয়, তবে সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে। তাই এমন সম্পর্ক ধরে রাখতে দরকার পারস্পরিক শ্রদ্ধা, খোলামেলা যোগাযোগ ও মানসিক ভারসাম্য।
আত্মার আত্মীয়তার সৌন্দর্য
রক্তের সম্পর্ক আমাদের অস্তিত্বের অংশ, কিন্তু আত্মার সম্পর্ক আমাদের জীবনের মানে দেয়। পৃথিবীতে এমন মানুষ খুবই অল্প—যারা আমাদের আত্মাকে ছুঁয়ে যায়, বোঝে, ভালোবাসে এবং নিঃস্বার্থভাবে পাশে থাকে।
যে আত্মীয়তার জন্ম আত্মার মিলনে, তা চিরস্থায়ী। মৃত্যুর পরেও এমন সম্পর্ক বেঁচে থাকে স্মৃতিতে, ভালোবাসায়, প্রার্থনায়।
তাই বলা যায়—
‘আত্মীয়তা রক্তের সম্পর্কে নয়, আত্মীয়তা হয় আত্মার সঙ্গে সম্পর্কে।’
এই সত্য উপলব্ধি করতে পারলেই আমরা বুঝব, ভালোবাসা ও আত্মিক বন্ধনই মানুষকে মানুষ করে তোলে, সমাজকে করে মানবিক, আর জীবনকে করে অর্থবহ।
*লেখক সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংকিং আর্থিক অপরাধ বিশেষজ্ঞ, কলামিস্ট ও কবি
মানুষ সমাজবদ্ধ প্রাণী। আমরা জন্মসূত্রে এক পরিবারের, এক রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ হই। জন্মের পর থেকেই বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদি, নানা-নানী, চাচা-খালা—সবাই মিলে আমাদের ঘিরে রাখে। সমাজ এই সম্পর্কগুলোকে ‘আত্মীয়তা’ বলে সংজ্ঞায়িত করে। কিন্তু আসলেই কি আত্মীয়তা কেবল রক্তের বন্ধনেই সীমাবদ্ধ? যে মানুষ আমার রক্তের না, কিন্তু আমার কষ্টে পাশে থাকে, আনন্দে হাসে, বিপদে হাত বাড়ায়—সে কি আত্মীয় নয়?
আজকের বাস্তবতার আলোকে দেখা যায়, আত্মীয়তার প্রকৃত ভিত্তি রক্ত নয়, আত্মা। মানুষ মানুষকে বোঝে, অনুভব করে, শ্রদ্ধা করে এবং ভালোবাসে—এই মিলনেই আত্মীয়তার জন্ম হয়। আত্মার সংযোগই সত্যিকারের সম্পর্ককে পূর্ণতা দেয়।
রক্তের সম্পর্ক বনাম আত্মার সম্পর্ক
রক্তের সম্পর্ক জন্মগত, আমাদের হাতে নেই। বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন—সব কিছুই ঈশ্বরনির্ধারিত। কিন্তু আত্মার সম্পর্ক আমরা নিজেরাই তৈরি করি। একজন শিক্ষক, একজন বন্ধু, একজন প্রতিবেশী কিংবা একজন অপরিচিত মানুষ—যে আমাদের মনকে স্পর্শ করে, যে আমাদের বোঝে, সে-ই আত্মার আত্মীয়।
রক্তের সম্পর্ক অনেক সময় শুধুই সামাজিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যায়। কিন্তু আত্মার সম্পর্ক আসে হৃদয়ের গভীরতা থেকে, যেখানে প্রত্যাশার পরিবর্তে থাকে অনুভূতি, ভালোবাসা ও আন্তরিকতা। সেখানে প্রতিদান চাওয়া হয় না; থাকে নিঃস্বার্থ প্রীতি।
আত্মার সম্পর্কের শক্তি
আত্মার সম্পর্ক এমন এক বন্ধন যা সময়, দূরত্ব কিংবা সমাজের বিধি-বিধানের গণ্ডি মানে না। আপনি হয়তো এমন একজন মানুষকে চেনেন, যার সঙ্গে কথা বললেই মন ভালো হয়ে যায় বা যার সামনে নিজেকে নির্ভয়ে প্রকাশ করতে পারেন। এটাই আত্মার সংযোগ।
একজন বন্ধুর উদাহরণ ধরা যাক—যার সঙ্গে রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই, কিন্তু জীবনের প্রতিটি কঠিন সময়ে সে পাশে থাকে। কখনো পরামর্শ দেয়, কখনো চুপচাপ শুধু উপস্থিত থাকে। তার এই নিঃস্বার্থ উপস্থিতিই প্রমাণ করে আত্মার সম্পর্ক কতটা গভীর হতে পারে।
রক্তের সম্পর্ক সবসময় মধুর নয়
বাস্তব জীবনে আমরা দেখি, অনেক রক্তের সম্পর্ক ভেঙে যায়। ভাই ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে না, সন্তান বাবা-মাকে ত্যাগ করে, আত্মীয়েরা সম্পত্তি নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হয়। এইসব উদাহরণ প্রমাণ করে যে, রক্তের সম্পর্ক থাকলেই ভালোবাসা বা আত্মীয়তা নিশ্চিত হয় না।
আবার উল্টো দিকও দেখা যায়—কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই, তবু কেউ কারও জন্য পৃথিবী উল্টে দিতে প্রস্তুত। কেউ কোনো দুঃসময়ে আপনজনের মতো এগিয়ে আসে। এখানেই বোঝা যায়, আত্মার সম্পর্কই আসল, রক্তের নয়।
ইতিহাস ও সাহিত্যে আত্মার সম্পর্কের উদাহরণ
বাংলা সাহিত্যেই এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পে মিনির সঙ্গে কাবুলিওয়ালার রক্তের সম্পর্ক ছিল না, কিন্তু ছিল আত্মার। ছোট্ট মিনিকে কাবুলিওয়ালা নিজের মেয়ের প্রতিচ্ছবি হিসেবে ভালোবেসেছিল।
আবার শরৎচন্দ্রের উপন্যাসে দেখা যায়—দেবদাস, চন্দ্রমুখী, পার্বতীর সম্পর্ক—যেখানে আত্মার আকর্ষণ রক্ত বা সমাজের সীমা পেরিয়ে যায়।
মানুষের ইতিহাসেও এমন সম্পর্কের নজির ভরপুর—যেমন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সহচর আবু বকর (রা.)-এর সঙ্গে তাঁর বন্ধন, যা রক্তের নয়, আত্মার ছিল।
আত্মার সংযোগে আসে শান্তি ও পরিপূর্ণতা
যখন কারও সঙ্গে আত্মার সংযোগ তৈরি হয়, তখন জীবনে এক ধরনের প্রশান্তি আসে। সেখানে স্বার্থ নেই, ভয় নেই, শুধুই বোঝাপড়া ও স্নেহ। এমন সম্পর্ক মানুষকে নিরাপত্তা দেয়, আত্মবিশ্বাস জোগায় এবং জীবনের কষ্ট কমিয়ে দেয়।
আত্মার সম্পর্ক মানুষকে একা হতে দেয় না। এমনকি দূরত্ব থাকলেও মনে হয়, কেউ আছে—যে বোঝে, শোনে, অনুভব করে। সেই অনুভূতি রক্তের আত্মীয়দের অনেকের মধ্যেও পাওয়া যায় না।
আধুনিক সমাজে আত্মার সম্পর্কের গুরুত্ব
আজকের পৃথিবী প্রযুক্তিনির্ভর, ব্যস্ত ও আত্মকেন্দ্রিক। মানুষ প্রতিদিন শত শত মানুষের সংস্পর্শে আসে, কিন্তু আন্তরিক সম্পর্ক তৈরি হয় অল্প কয়েকজনের সঙ্গে। এমন সমাজে আত্মার সম্পর্কের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়।
যখন চারপাশে মানুষ থাকলেও একাকিত্ব গ্রাস করে, তখন এক আত্মার আত্মীয়ের সান্নিধ্যই পারে মানুষকে বাঁচাতে। একজন সত্যিকারের বন্ধু, সঙ্গী বা সহকর্মী—যে হৃদয় দিয়ে পাশে থাকে—তারাই জীবনের অন্ধকারে আলোর মতো কাজ করে।
আত্মীয়তা মানে দায়িত্ব নয়, অনুভূতি
রক্তের আত্মীয়তা প্রায়শই দায়িত্বের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ‘আমি ওর আত্মীয়, তাই যেতে হবে’, ‘ওর অনুষ্ঠান, তাই হাজির থাকতে হবে’—এসব অনেক সময় কেবল সামাজিক বাধ্যবাধকতা।
কিন্তু আত্মার আত্মীয়তার ক্ষেত্রে এসব আনুষ্ঠানিকতা থাকে না। সেখানে সম্পর্কের মূল থাকে অনুভূতি ও ইচ্ছায়। কাউকে ভালো লাগলে, বুঝলে, তার সুখ-দুঃখে অংশ নিতে চাওয়া—এই মানবিক টানটাই আত্মার আত্মীয়তার প্রকৃত রূপ।
আত্মার আত্মীয়তা তৈরি হয় কীভাবে?
আত্মার আত্মীয়তা জোর করে হয় না। এটি সময়, অভিজ্ঞতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠে। কখনো কোনো কথায়, কখনো এক মুহূর্তের সহানুভূতিতে—মন থেকে মন যুক্ত হয়।
দুজন মানুষের চিন্তা, মূল্যবোধ ও হৃদয়ের তরঙ্গ যখন এক সুরে বাজে, তখনই জন্ম নেয় আত্মার বন্ধন। এতে জাত, ধর্ম, বয়স, লিঙ্গ কিছুই বাধা নয়।
আত্মার সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ
যদিও আত্মার সম্পর্ক গভীর, তবু এরও চ্যালেঞ্জ আছে। অনেক সময় সমাজ এই সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেয় না—বিশেষ করে যখন রক্তের বাইরের কারও প্রতি গভীর টান তৈরি হয়। তা ছাড়া, আত্মার সম্পর্কের জন্য সততা ও মানসিক পরিপক্বতা প্রয়োজন। যদি একজন আন্তরিক হয় আর অন্যজন না হয়, তবে সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে। তাই এমন সম্পর্ক ধরে রাখতে দরকার পারস্পরিক শ্রদ্ধা, খোলামেলা যোগাযোগ ও মানসিক ভারসাম্য।
আত্মার আত্মীয়তার সৌন্দর্য
রক্তের সম্পর্ক আমাদের অস্তিত্বের অংশ, কিন্তু আত্মার সম্পর্ক আমাদের জীবনের মানে দেয়। পৃথিবীতে এমন মানুষ খুবই অল্প—যারা আমাদের আত্মাকে ছুঁয়ে যায়, বোঝে, ভালোবাসে এবং নিঃস্বার্থভাবে পাশে থাকে।
যে আত্মীয়তার জন্ম আত্মার মিলনে, তা চিরস্থায়ী। মৃত্যুর পরেও এমন সম্পর্ক বেঁচে থাকে স্মৃতিতে, ভালোবাসায়, প্রার্থনায়।
তাই বলা যায়—
‘আত্মীয়তা রক্তের সম্পর্কে নয়, আত্মীয়তা হয় আত্মার সঙ্গে সম্পর্কে।’
এই সত্য উপলব্ধি করতে পারলেই আমরা বুঝব, ভালোবাসা ও আত্মিক বন্ধনই মানুষকে মানুষ করে তোলে, সমাজকে করে মানবিক, আর জীবনকে করে অর্থবহ।
*লেখক সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংকিং আর্থিক অপরাধ বিশেষজ্ঞ, কলামিস্ট ও কবি
আত্মার আত্মীয়তা জোর করে হয় না। এটি সময়, অভিজ্ঞতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠে। কখনো কোনো কথায়, কখনো এক মুহূর্তের সহানুভূতিতে—মন থেকে মন যুক্ত হয়।
জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র চার মাস বাকি আছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু সম্পন্ন করা নির্বাচন কমিশনের জন্য কঠিন একটা কাজ হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। পাশাপাশি এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক ভুলভ্রান্তিও হতে পারে। কিন্তু তাই বলে, এটার অজুহাতে প্রবাসীদের ভোটাধিকারে বঞ্চিত করা কি সংগত হবে?
বিশ্বব্যাপী অভিজ্ঞতা বলে, অনেক দেশে প্রবাসী নাগরিকেরা দূতাবাসে গিয়ে আগেভাগে ভোট দেন বা ডাক-ভোটের ব্যবস্থা ব্যবহার করেন। তাতে ভোটারদের আইনগত অধিকার রক্ষা পায়, কিন্তু অংশগ্রহণের হার সাধারণত স্থায়ী বসবাসকারী ভোটারদের তুলনায় কম থাকে।
শেখা মানে শুধু বই পড়া বা ক্লাসে পাঠ শোনা নয়; বরং জীবনকে বোঝা, অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং নিজেকে প্রতিনিয়ত নবায়ন করা। প্রকৃতি, সমাজ, মানুষ—সবাই আমাদের শিক্ষক।