শরীফুল আলম, যুক্তরাষ্ট্র
আমেরিকায় আসার আমার ২৫ বছর পূর্ণ হলো। সময়ের হিসাবে এটি অনেক লম্বা একটা সময়। প্রথম প্রথম এখানে এসে অনেক লাভ–লোকসানের হিসাব করতাম। একটা পর্যায়ে দেশে ফেরত যাবারও ইচ্ছা করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তাই জীবনকে এখানে অন্যভাবে সাজিয়ে নিয়েছি।
কিন্তু প্রায় প্রতি বছরই আমার দেশে যাওয়া–আসা হয়েছে। এই দেশটা (আমেরিকা) এখন ভালোই লাগে আবার বাংলাদেশকেও আমার ভালো লাগে। আমার দেশে সম্পদের যেমন ঘাটতি আছে সুষম ব্যাবস্থাপনারও তেমনি ঘাটতি আছে প্রচুর।
এবার বাংলাদেশ ভ্রমণে আমার কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের তুলে ধরব। সেখানকার নজরকাড়া অনেক সৌন্দর্যে আমি সত্যি মুগ্ধ হয়েছি। সৌন্দর্যের লীলাভূমি যে বাংলাদেশ তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। মূলত সৌন্দর্যটাই আমার কাছে বাংলাদেশের বৈশিষ্ট বলে মনে হয়েছে। বাংলাদেশে এখনো ছায়াঢাকা গ্রাম আছে, মায়া ভরা পাহাড় আছে, চোখজুড়ানো হাস্যোজ্বল সৌন্দর্য আছে। আকাশ আর নীলের ঘনঘটায় এখনো সেখানে দিগন্ত প্লাবিত হয়।
সবুজ শাড়ি পরা মাঠ এখনো চোখে পড়ে। বাংলাদেশটা আসলেই অপূর্ব এক সুন্দরের রঙ্গশালা। কোথাও কোথাও প্রকৃতির সবুজ ঘোমটা ভেদ করে সোনালি শস্য আপনার নজরে পড়বেই। কাক চক্ষু দীঘিতে লাল শপলা কিংবা পদ্ম আপনি এখনো সেখানে দেখতে পাবেন। এ যেন স্বতন্ত্র সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এক বাংলাদেশ। যেকটি নদী আমি দেখেছি তার কোনোটি শান্ত আবার কোনোটি খরস্রোতা, কোনোটা স্বচ্ছ, কোনোটা আবার ঘোলা। জেলেদের ডিঙ্গি, কচুরিপানা, নদীতীরের কাশবন, পুকুরের পানিতে আলোকচ্ছটা—এসবই ঠিক আগের মতোই আছে। ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এবার খুব কাছ থেকে দেখেছি। সুন্দরবনের স্বতন্ত্র রূপমাধুর্য খানিকটা ঘটতি লক্ষ্য করা যায়। সৈকতজুড়ে প্রবালের প্রাচীর, আছড়ে পড়া সমুদ্রের ঢেউ এইসবই ঠিক আগের মতোই আছে। তবে বরিশালের কীর্তনখোলা কিংবা খুলনার রূপসা নদীর ক্ষুরধার স্রোত এখন আর আগের মতো নেই। তবে ভোরবেলার শান্ত স্নিগ্ধ রূপ মনকে আগের মতই প্রশান্ত করে। আঁধার ঘেরা সন্ধ্যা এখনো আগের মতই উদাস করে।
অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে সবুজের পরিমাণ দিনে দিনে কিছুটা কমছে বটে। বন্ধু পুত্র সুমিতের সহযোগিতায় খুলনার বিদ্যমান অনেক অবস্থাপনা সম্পর্কে জানলাম। রাষ্ট্রায়ত্ত অনেক পাটকল সেখানে এখন বন্ধ, খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি বন্ধ, ফলে প্রায় ১৪ হাজার শ্রমিকের জীবন জীবিকা আজ হুমকির মুখে। ২৫০টি তাঁতের মধ্যে মাত্র ২০টি চালু রয়েছে। হিমায়িত চিড়িং রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত কারখানার অনেকগুলোই এখন বন্ধ। ইউনেসকো স্বীকৃত সুন্দরবনকে দূর থেকে দেখলে এখন আর হেরিটেজ বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের অনেক ছেলেমেয়ের সাথে কথা বলে আমি জানতে পেরেছি, তারা সবাই ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে বিদ্যমান রীতিতে তাদের সাফল্য বাধাগ্রস্থ।
বইমেলা উপলক্ষেই মূলত আমার বাংলাদেশে আসা। এবারের বইমেলায় যেটি আমার দৃষ্টি কেড়েছে তা হচ্ছে, ‘নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। এই প্রতিপাদ্যটি আমার কাছে নতুনত্ব বলে মনে হয়েছে। এ ছাড়া আঙ্গিকগত কিছু পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যায়। যেমন শিশু চত্তর, নামাজের স্থান, ওয়াশরুম। বইমেলার বিভিন্ন ষ্টল ঘুরে জাতীয় ভাষার (বাংলা) প্রভাব কিছুটা ক্ষুণ্ণ মনে হয়েছে। অনুবাদ গ্রন্থের প্রধান্য লক্ষ্য করা যায়। অথচ সিয়েরা লিওন দেশে বাংলা এখন সেদেশের অন্যতম প্রধান রাষ্ট্র ভাষা।
বাংলাদেশে অসাধারণ সাংস্কৃতিক বৈচিত্রে আমি বরাবরই মুগ্ধ হই, কিন্তু পুরাতন অথচ নতুনের এক বিশৃঙ্খল সুন্দর মিশ্রন এখন বিদ্যমান। অনেক সুস্বাদু খাবার আমার কাছে বেশ প্রাণবন্তই মনে হয়েছে। খাবারগুলোতে মশলা, স্বাদ গঠনে বেশ সমৃদ্ধ। বোন পান্নার খাবারের ঐতিহ্যে এক নিখুঁত মিশ্রণ পাওয়া যায়। বন্ধুর দেওয়া সরষে ইলিশে এখনো সেই স্বাদ অটুট। ষ্ট্রিট ফুডের মধ্যে ফুচকা, চটপটি, বড়বাপের পোলায় খায়, এখনো তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। খাদ্য সংস্কৃতিতে ভাত এখনো তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে। বাংলাদেশে প্রতিটি মানুষকেই আমার কাছে মনে হয়েছে তারা প্রচন্ড আশাবাদী। দৈনন্দিন জীবনে তারা খুবই ষ্পষ্ট। আমার বাংলাদেশ নামক দেশটি আসলেই ঘুরে দেখার যোগ্য, সেখানে পুরোনো দিনের যেমনি আকর্ষণ আছে আধুনিক অগ্রগতির বিস্ময়ও তেমনি সেখানে আছে। আপনি চাইলে সুন্দরবন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, বান্দরবনের নীলগিরি, সিলেটের জাফলং, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেক, খান জাহান আলীর মাজার, ষাটগম্বুজ, বগুড়ার মহাস্থান গড়, পানাম নগর (সোনারগাঁও), হবিগঞ্জের জাতীয় উদ্যান, পদ্মা নদী, ফয়েসলেক ঘুরে আসতে পারেন। প্রতিটি জায়গাতেই লুকিয়ে আছে ভিন্ন ভিন্ন গল্প, মুক্তির আনন্দ, আপনার হৃদয়ের অনেক না বলা ভাষা।
—শরীফুল আলম, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।
আমেরিকায় আসার আমার ২৫ বছর পূর্ণ হলো। সময়ের হিসাবে এটি অনেক লম্বা একটা সময়। প্রথম প্রথম এখানে এসে অনেক লাভ–লোকসানের হিসাব করতাম। একটা পর্যায়ে দেশে ফেরত যাবারও ইচ্ছা করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তাই জীবনকে এখানে অন্যভাবে সাজিয়ে নিয়েছি।
কিন্তু প্রায় প্রতি বছরই আমার দেশে যাওয়া–আসা হয়েছে। এই দেশটা (আমেরিকা) এখন ভালোই লাগে আবার বাংলাদেশকেও আমার ভালো লাগে। আমার দেশে সম্পদের যেমন ঘাটতি আছে সুষম ব্যাবস্থাপনারও তেমনি ঘাটতি আছে প্রচুর।
এবার বাংলাদেশ ভ্রমণে আমার কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের তুলে ধরব। সেখানকার নজরকাড়া অনেক সৌন্দর্যে আমি সত্যি মুগ্ধ হয়েছি। সৌন্দর্যের লীলাভূমি যে বাংলাদেশ তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। মূলত সৌন্দর্যটাই আমার কাছে বাংলাদেশের বৈশিষ্ট বলে মনে হয়েছে। বাংলাদেশে এখনো ছায়াঢাকা গ্রাম আছে, মায়া ভরা পাহাড় আছে, চোখজুড়ানো হাস্যোজ্বল সৌন্দর্য আছে। আকাশ আর নীলের ঘনঘটায় এখনো সেখানে দিগন্ত প্লাবিত হয়।
সবুজ শাড়ি পরা মাঠ এখনো চোখে পড়ে। বাংলাদেশটা আসলেই অপূর্ব এক সুন্দরের রঙ্গশালা। কোথাও কোথাও প্রকৃতির সবুজ ঘোমটা ভেদ করে সোনালি শস্য আপনার নজরে পড়বেই। কাক চক্ষু দীঘিতে লাল শপলা কিংবা পদ্ম আপনি এখনো সেখানে দেখতে পাবেন। এ যেন স্বতন্ত্র সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এক বাংলাদেশ। যেকটি নদী আমি দেখেছি তার কোনোটি শান্ত আবার কোনোটি খরস্রোতা, কোনোটা স্বচ্ছ, কোনোটা আবার ঘোলা। জেলেদের ডিঙ্গি, কচুরিপানা, নদীতীরের কাশবন, পুকুরের পানিতে আলোকচ্ছটা—এসবই ঠিক আগের মতোই আছে। ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এবার খুব কাছ থেকে দেখেছি। সুন্দরবনের স্বতন্ত্র রূপমাধুর্য খানিকটা ঘটতি লক্ষ্য করা যায়। সৈকতজুড়ে প্রবালের প্রাচীর, আছড়ে পড়া সমুদ্রের ঢেউ এইসবই ঠিক আগের মতোই আছে। তবে বরিশালের কীর্তনখোলা কিংবা খুলনার রূপসা নদীর ক্ষুরধার স্রোত এখন আর আগের মতো নেই। তবে ভোরবেলার শান্ত স্নিগ্ধ রূপ মনকে আগের মতই প্রশান্ত করে। আঁধার ঘেরা সন্ধ্যা এখনো আগের মতই উদাস করে।
অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে সবুজের পরিমাণ দিনে দিনে কিছুটা কমছে বটে। বন্ধু পুত্র সুমিতের সহযোগিতায় খুলনার বিদ্যমান অনেক অবস্থাপনা সম্পর্কে জানলাম। রাষ্ট্রায়ত্ত অনেক পাটকল সেখানে এখন বন্ধ, খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি বন্ধ, ফলে প্রায় ১৪ হাজার শ্রমিকের জীবন জীবিকা আজ হুমকির মুখে। ২৫০টি তাঁতের মধ্যে মাত্র ২০টি চালু রয়েছে। হিমায়িত চিড়িং রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত কারখানার অনেকগুলোই এখন বন্ধ। ইউনেসকো স্বীকৃত সুন্দরবনকে দূর থেকে দেখলে এখন আর হেরিটেজ বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের অনেক ছেলেমেয়ের সাথে কথা বলে আমি জানতে পেরেছি, তারা সবাই ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে বিদ্যমান রীতিতে তাদের সাফল্য বাধাগ্রস্থ।
বইমেলা উপলক্ষেই মূলত আমার বাংলাদেশে আসা। এবারের বইমেলায় যেটি আমার দৃষ্টি কেড়েছে তা হচ্ছে, ‘নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। এই প্রতিপাদ্যটি আমার কাছে নতুনত্ব বলে মনে হয়েছে। এ ছাড়া আঙ্গিকগত কিছু পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যায়। যেমন শিশু চত্তর, নামাজের স্থান, ওয়াশরুম। বইমেলার বিভিন্ন ষ্টল ঘুরে জাতীয় ভাষার (বাংলা) প্রভাব কিছুটা ক্ষুণ্ণ মনে হয়েছে। অনুবাদ গ্রন্থের প্রধান্য লক্ষ্য করা যায়। অথচ সিয়েরা লিওন দেশে বাংলা এখন সেদেশের অন্যতম প্রধান রাষ্ট্র ভাষা।
বাংলাদেশে অসাধারণ সাংস্কৃতিক বৈচিত্রে আমি বরাবরই মুগ্ধ হই, কিন্তু পুরাতন অথচ নতুনের এক বিশৃঙ্খল সুন্দর মিশ্রন এখন বিদ্যমান। অনেক সুস্বাদু খাবার আমার কাছে বেশ প্রাণবন্তই মনে হয়েছে। খাবারগুলোতে মশলা, স্বাদ গঠনে বেশ সমৃদ্ধ। বোন পান্নার খাবারের ঐতিহ্যে এক নিখুঁত মিশ্রণ পাওয়া যায়। বন্ধুর দেওয়া সরষে ইলিশে এখনো সেই স্বাদ অটুট। ষ্ট্রিট ফুডের মধ্যে ফুচকা, চটপটি, বড়বাপের পোলায় খায়, এখনো তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। খাদ্য সংস্কৃতিতে ভাত এখনো তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে। বাংলাদেশে প্রতিটি মানুষকেই আমার কাছে মনে হয়েছে তারা প্রচন্ড আশাবাদী। দৈনন্দিন জীবনে তারা খুবই ষ্পষ্ট। আমার বাংলাদেশ নামক দেশটি আসলেই ঘুরে দেখার যোগ্য, সেখানে পুরোনো দিনের যেমনি আকর্ষণ আছে আধুনিক অগ্রগতির বিস্ময়ও তেমনি সেখানে আছে। আপনি চাইলে সুন্দরবন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, বান্দরবনের নীলগিরি, সিলেটের জাফলং, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেক, খান জাহান আলীর মাজার, ষাটগম্বুজ, বগুড়ার মহাস্থান গড়, পানাম নগর (সোনারগাঁও), হবিগঞ্জের জাতীয় উদ্যান, পদ্মা নদী, ফয়েসলেক ঘুরে আসতে পারেন। প্রতিটি জায়গাতেই লুকিয়ে আছে ভিন্ন ভিন্ন গল্প, মুক্তির আনন্দ, আপনার হৃদয়ের অনেক না বলা ভাষা।
—শরীফুল আলম, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।
আমেরিকায় আসার আমার ২৫ বছর পূর্ণ হলো। সময়ের হিসাবে এটি অনেক লম্বা একটা সময়। প্রথম প্রথম এখানে এসে অনেক লাভ–লোকসানের হিসাব করতাম। একটা পর্যায়ে দেশে ফেরত যাবারও ইচ্ছা করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তাই জীবনকে এখানে অন্যভাবে সাজিয়ে নিয়েছি।
একাকিত্ব একটি জটিল ও বহুমাত্রিক মানসিক সমস্যা। এটি মানুষের মনোজগতে গভীর প্রভাব ফেলে। এটি শুধুমাত্র শারীরিক বিচ্ছিন্নতা বা একা থাকার অনুভূতি নয়, বরং মানসিক ও আবেগিক বিচ্ছিন্নতার অনুভূতিও তৈরি করে। তবে একাকিত্বকে শুধু নেতিবাচক হিসেবে দেখার কোনো কারণ নেই।
বিশ্ব মা দিবসের প্রাক্কালে পুলিশ অফিসার পলাশ চলে গেলেন। মা একটা অপরূপ শব্দ, একটা অনন্য সম্পর্ক যেটা পৃথিবীর সুন্দরতম সম্পর্কের একটা। নিজের জীবন বাজি রেখে মা সন্তানের জন্ম দেন, তিল তিল করে বড় করে তোলেন।
১৪৩১ সালের শেষের ৬ দিন গেল ঝড়ের মতো। না সান ডিয়েগো শহরে ঝড় শুরু হয়নি। হয়েছে ব্যক্তিগত জীবনে। আমি সাধারণ মানুষ, সব সময় রাডারের নিচে থাকতে চাই। কিন্তু সেলিব্রিটিদের জীবনের ফ্যান্সি সমস্যা আমার ঘাড়ে এসে পড়ে।