ইজাজ আহসান
প্রবাসী বাংলাদেশির মোট সংখ্যা কত তার সঠিক বা সর্বসম্মত পরিসংখ্যান নেই। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে কর্মরত আছেন। তবে কারও কারও মতে এ সংখ্যা আরও বেশি। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী আছেন সৌদি আরবে। ওমানসহ বাকি ৫টি তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশেও বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী তাদের শ্রম দিয়ে চলেছেন নিরলসভাবে।
প্রবাসীদের সুখ–দুঃখ, হাসি–কান্নার সামান্য কিছু গল্প আমরা জানতে পারি, বিমানবন্দরে হয়রানি কিংবা মৃতদের লাশ দেশে আনা নিয়ে বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে। প্রবাসীদের অসহায়ত্ব উঠে আসে আবার বুদবুদের মত হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।
বর্তমান সরকার অবশ্য প্রবাসীদের কিছু বিষয়ে দৃষ্টি দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক বিষয় যেটা প্রবাসীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, সেটা হলো প্রবাসীদের ভোটাধিকার। স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি প্রবাসীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। কোনো রাজনৈতিক দলও তাদের এই অধিকার নিয়ে কখনো তেমন কথা বলেনি। এই সিদ্ধান্ত প্রবাসীদের খুবই আনন্দিত করেছে। তারা আশায় বুক বেঁধে আছেন এবার তারা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারবেন। তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন।
আমরা যারা প্রবাসে থাকি, বেশির ভাগই সবসময় দেশের কথা ভাবি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় প্রবাসীদের কথা কোনো রাজনৈতিক দল এখন পর্যন্ত তেমন ভাবেনি। ভাবাতো দূরের কথা কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মী প্রবাসী ভোটাধিকারের বিরোধিতা করছেন বুঝে বা না বুঝে। তাদের কথা হচ্ছে তাদের ভোট দেওয়ার কী দরকার আছে। আবার কোনো কোনো পক্ষ থেকে এমনও বলা হচ্ছে, এটা নিখুঁতভাবে করা যাবে না, ফলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই এটার দরকার নেই। শুধু একটি রাজনৈতিক দল এর সমর্থনে সোচ্চার হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন মতলব থাকে, থাকাই স্বাভাবিক। সবাই চায় কী করলে তাদের ভোটের বাক্স ভারী হবে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন ধরনের কথা বলে থাকে। তবে যাই বলুক না কেন, কোনো অবস্থাতেই জনগণের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কথা বলতে পারে না এবং ভোটাধিকার দেশের সব মানুষের একটা মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত।
জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র চার মাস বাকি আছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু সম্পন্ন করা নির্বাচন কমিশনের জন্য কঠিন একটা কাজ হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। পাশাপাশি এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক ভুলভ্রান্তিও হতে পারে। কিন্তু তাই বলে, এটার অজুহাতে প্রবাসীদের ভোটাধিকারে বঞ্চিত করা কি সংগত হবে?
বাংলাদেশে প্রথম যখন জাতীয় পরিচয়পত্রের কার্যক্রম শুরু হয়, তখন অনেক ভুলভ্রান্তি ছিল। কিন্তু এখন শুধু ভোটের ক্ষেত্রেই নয়, বিদেশেও বিভিন্ন কাজে এই পরিচয়পত্র কাজে আসছে। এ ছাড়া, জন্মনিবন্ধনও গুরুত্বপূর্ণ একটা দলিল হিসাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে আসছে। কিন্তু জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম যখন শুরু হয় বহু ভুলভ্রান্তি হয়েছে, বহু সমালোচনা হয়েছে। প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও যে ভুলভ্রান্তি হবে না, তার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। তবে এ জন্য প্রবাসীদের তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে সব চেয়ে বড় ভুল।
আমি ওমানপ্রবাসী। এবার আসি ওমানের কথায়। আনুমানিক ৭ থেকে ৮ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মরত আছেন ওমানে। নির্মাণ শ্রমিক, ছোটখাটো দোকানপাটের ব্যবসা থেকে নিয়ে ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ আছেন। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার একটা বড় অংশ ওমান থেকে আসে। জুলাই বিপ্লবে বাংলাদেশের সংগ্রামীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ানোয় এখানে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, অনেককে জেলে যেতে হয়েছে, অনেককে আবার দেশে ফেরত পাঠান হয়েছে। তাই তাদের কাছে নির্বাচন অনেক কিছু। তবে কোন পদ্ধতিতে প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন তা এখনো প্রবাসীদের কাছে স্পষ্ট নয়। আশা করা যায়, নির্বাচন কমিশন শিগগিরই প্রবাসীদের কাছে এটা পরিষ্কার করবেন।
কিন্তু ভোটাধিকারের আগে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো নিবন্ধন। এ বিষয়ে প্রবাসীদের সচেতনেতা গড়ে তোলার কোনো উদ্যোগ এখনো তেমন দেখা যাচ্ছে না। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মিডিয়ারও এ ক্ষেত্রে একটা বিরাট ভূমিকা পালন করার আছে। প্রবাসে শ্রমজীবী হিসাবে যারা কর্মরত আছেন বিশেষ করে তাদের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। অনেকের জন্য মোবাইলের মাধ্যমে নিবন্ধন করা কঠিন হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে কীভাবে তাদের ব্যাপারটা সহজে শেখানো যায় তার ব্যবস্থা নিতে হবে আগে ভাগে। অন্য দেশের ক্ষেত্রে তাদের দূতাবাস এই ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের যেহেতু বিদেশে বসবাসকারী নাগরিকের সংখ্যা খুবই কম, সেহেতু তাদের এই সমস্ত ব্যবস্থাপনা ততটা কঠিন হয় না। কিন্তু ওমানে বাংলাদেশের দূতাবাসে সেই পরিমাণ জনবল নেই, যা দিয়ে এত বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য সেবা দেওয়া যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে পাসপোর্ট নবায়নের বিষয়টি উল্লেখ করা যায়। ওমানে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য প্রবাসীদের পাশাপাশি দূতাবাসের কর্মচারিদেরও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। কারণ বিপুলসংখ্যক মানুষকে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা দূতাবাসের নেই।
নির্বাচন কমিশনকে দ্রুতই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। তবে কোনো কারণে যদি ভুল ভ্রান্তির পরিমাণ বেশি হয়ে যায়, তাহলে এই নির্বাচনকে প্রচণ্ডভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করবে । দেশে বিদেশে নিন্দুকেরা শোরগোল তুলবেন। প্রবাসীরাও হতাশ হবেন। কারণ এই নির্বাচন তাদের পরম আরাধ্য। এই নির্বাচন দেশে কিংবা প্রবাসে থাকা সব নাগরিকের জন্য অস্ত্বিত্বের প্রশ্ন। তাই সর্বশক্তি দিয়ে প্রবাসীদের জন্যও একটা অবাধ নিরপেক্ষ শান্তিপূর্ণ আর উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে হবে। প্রবাসীরাও অধীর আগ্রহভরে তাকিয়ে আছেন এই নির্বাচনের দিকে। বিদেশে বসে এই প্রথম তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। অনেক তরুণ ভোটার এই প্রথম তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। বিগত প্রায় দেড় যুগ পরে দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। তাই কোনো অবহেলা, অযত্ন বা ভুলে যেন এই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্থ না তার জন্য নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি একান্ত অনুরোধ রইল।
*লেখক বিভাগীয় প্রধান (ব্যবসায় শিক্ষা), বাংলাদেশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাস্কাট, ওমান।
ইমেইল: <[email protected]>
প্রবাসী বাংলাদেশির মোট সংখ্যা কত তার সঠিক বা সর্বসম্মত পরিসংখ্যান নেই। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে কর্মরত আছেন। তবে কারও কারও মতে এ সংখ্যা আরও বেশি। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী আছেন সৌদি আরবে। ওমানসহ বাকি ৫টি তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশেও বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী তাদের শ্রম দিয়ে চলেছেন নিরলসভাবে।
প্রবাসীদের সুখ–দুঃখ, হাসি–কান্নার সামান্য কিছু গল্প আমরা জানতে পারি, বিমানবন্দরে হয়রানি কিংবা মৃতদের লাশ দেশে আনা নিয়ে বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে। প্রবাসীদের অসহায়ত্ব উঠে আসে আবার বুদবুদের মত হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।
বর্তমান সরকার অবশ্য প্রবাসীদের কিছু বিষয়ে দৃষ্টি দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক বিষয় যেটা প্রবাসীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, সেটা হলো প্রবাসীদের ভোটাধিকার। স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি প্রবাসীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। কোনো রাজনৈতিক দলও তাদের এই অধিকার নিয়ে কখনো তেমন কথা বলেনি। এই সিদ্ধান্ত প্রবাসীদের খুবই আনন্দিত করেছে। তারা আশায় বুক বেঁধে আছেন এবার তারা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারবেন। তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন।
আমরা যারা প্রবাসে থাকি, বেশির ভাগই সবসময় দেশের কথা ভাবি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় প্রবাসীদের কথা কোনো রাজনৈতিক দল এখন পর্যন্ত তেমন ভাবেনি। ভাবাতো দূরের কথা কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মী প্রবাসী ভোটাধিকারের বিরোধিতা করছেন বুঝে বা না বুঝে। তাদের কথা হচ্ছে তাদের ভোট দেওয়ার কী দরকার আছে। আবার কোনো কোনো পক্ষ থেকে এমনও বলা হচ্ছে, এটা নিখুঁতভাবে করা যাবে না, ফলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই এটার দরকার নেই। শুধু একটি রাজনৈতিক দল এর সমর্থনে সোচ্চার হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন মতলব থাকে, থাকাই স্বাভাবিক। সবাই চায় কী করলে তাদের ভোটের বাক্স ভারী হবে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন ধরনের কথা বলে থাকে। তবে যাই বলুক না কেন, কোনো অবস্থাতেই জনগণের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কথা বলতে পারে না এবং ভোটাধিকার দেশের সব মানুষের একটা মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত।
জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র চার মাস বাকি আছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু সম্পন্ন করা নির্বাচন কমিশনের জন্য কঠিন একটা কাজ হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। পাশাপাশি এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক ভুলভ্রান্তিও হতে পারে। কিন্তু তাই বলে, এটার অজুহাতে প্রবাসীদের ভোটাধিকারে বঞ্চিত করা কি সংগত হবে?
বাংলাদেশে প্রথম যখন জাতীয় পরিচয়পত্রের কার্যক্রম শুরু হয়, তখন অনেক ভুলভ্রান্তি ছিল। কিন্তু এখন শুধু ভোটের ক্ষেত্রেই নয়, বিদেশেও বিভিন্ন কাজে এই পরিচয়পত্র কাজে আসছে। এ ছাড়া, জন্মনিবন্ধনও গুরুত্বপূর্ণ একটা দলিল হিসাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে আসছে। কিন্তু জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম যখন শুরু হয় বহু ভুলভ্রান্তি হয়েছে, বহু সমালোচনা হয়েছে। প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও যে ভুলভ্রান্তি হবে না, তার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। তবে এ জন্য প্রবাসীদের তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে সব চেয়ে বড় ভুল।
আমি ওমানপ্রবাসী। এবার আসি ওমানের কথায়। আনুমানিক ৭ থেকে ৮ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মরত আছেন ওমানে। নির্মাণ শ্রমিক, ছোটখাটো দোকানপাটের ব্যবসা থেকে নিয়ে ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ আছেন। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার একটা বড় অংশ ওমান থেকে আসে। জুলাই বিপ্লবে বাংলাদেশের সংগ্রামীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ানোয় এখানে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, অনেককে জেলে যেতে হয়েছে, অনেককে আবার দেশে ফেরত পাঠান হয়েছে। তাই তাদের কাছে নির্বাচন অনেক কিছু। তবে কোন পদ্ধতিতে প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন তা এখনো প্রবাসীদের কাছে স্পষ্ট নয়। আশা করা যায়, নির্বাচন কমিশন শিগগিরই প্রবাসীদের কাছে এটা পরিষ্কার করবেন।
কিন্তু ভোটাধিকারের আগে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো নিবন্ধন। এ বিষয়ে প্রবাসীদের সচেতনেতা গড়ে তোলার কোনো উদ্যোগ এখনো তেমন দেখা যাচ্ছে না। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মিডিয়ারও এ ক্ষেত্রে একটা বিরাট ভূমিকা পালন করার আছে। প্রবাসে শ্রমজীবী হিসাবে যারা কর্মরত আছেন বিশেষ করে তাদের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। অনেকের জন্য মোবাইলের মাধ্যমে নিবন্ধন করা কঠিন হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে কীভাবে তাদের ব্যাপারটা সহজে শেখানো যায় তার ব্যবস্থা নিতে হবে আগে ভাগে। অন্য দেশের ক্ষেত্রে তাদের দূতাবাস এই ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের যেহেতু বিদেশে বসবাসকারী নাগরিকের সংখ্যা খুবই কম, সেহেতু তাদের এই সমস্ত ব্যবস্থাপনা ততটা কঠিন হয় না। কিন্তু ওমানে বাংলাদেশের দূতাবাসে সেই পরিমাণ জনবল নেই, যা দিয়ে এত বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য সেবা দেওয়া যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে পাসপোর্ট নবায়নের বিষয়টি উল্লেখ করা যায়। ওমানে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য প্রবাসীদের পাশাপাশি দূতাবাসের কর্মচারিদেরও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। কারণ বিপুলসংখ্যক মানুষকে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা দূতাবাসের নেই।
নির্বাচন কমিশনকে দ্রুতই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। তবে কোনো কারণে যদি ভুল ভ্রান্তির পরিমাণ বেশি হয়ে যায়, তাহলে এই নির্বাচনকে প্রচণ্ডভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করবে । দেশে বিদেশে নিন্দুকেরা শোরগোল তুলবেন। প্রবাসীরাও হতাশ হবেন। কারণ এই নির্বাচন তাদের পরম আরাধ্য। এই নির্বাচন দেশে কিংবা প্রবাসে থাকা সব নাগরিকের জন্য অস্ত্বিত্বের প্রশ্ন। তাই সর্বশক্তি দিয়ে প্রবাসীদের জন্যও একটা অবাধ নিরপেক্ষ শান্তিপূর্ণ আর উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে হবে। প্রবাসীরাও অধীর আগ্রহভরে তাকিয়ে আছেন এই নির্বাচনের দিকে। বিদেশে বসে এই প্রথম তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। অনেক তরুণ ভোটার এই প্রথম তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। বিগত প্রায় দেড় যুগ পরে দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। তাই কোনো অবহেলা, অযত্ন বা ভুলে যেন এই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্থ না তার জন্য নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি একান্ত অনুরোধ রইল।
*লেখক বিভাগীয় প্রধান (ব্যবসায় শিক্ষা), বাংলাদেশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাস্কাট, ওমান।
ইমেইল: <[email protected]>
আত্মার আত্মীয়তা জোর করে হয় না। এটি সময়, অভিজ্ঞতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠে। কখনো কোনো কথায়, কখনো এক মুহূর্তের সহানুভূতিতে—মন থেকে মন যুক্ত হয়।
জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র চার মাস বাকি আছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু সম্পন্ন করা নির্বাচন কমিশনের জন্য কঠিন একটা কাজ হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। পাশাপাশি এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক ভুলভ্রান্তিও হতে পারে। কিন্তু তাই বলে, এটার অজুহাতে প্রবাসীদের ভোটাধিকারে বঞ্চিত করা কি সংগত হবে?
বিশ্বব্যাপী অভিজ্ঞতা বলে, অনেক দেশে প্রবাসী নাগরিকেরা দূতাবাসে গিয়ে আগেভাগে ভোট দেন বা ডাক-ভোটের ব্যবস্থা ব্যবহার করেন। তাতে ভোটারদের আইনগত অধিকার রক্ষা পায়, কিন্তু অংশগ্রহণের হার সাধারণত স্থায়ী বসবাসকারী ভোটারদের তুলনায় কম থাকে।
শেখা মানে শুধু বই পড়া বা ক্লাসে পাঠ শোনা নয়; বরং জীবনকে বোঝা, অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং নিজেকে প্রতিনিয়ত নবায়ন করা। প্রকৃতি, সমাজ, মানুষ—সবাই আমাদের শিক্ষক।