নিমাই সরকার
বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা আজ রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) শুরু হলো। এটা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব।
আজ দুর্গাষষ্ঠীর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এর সূচনা। আগামীকাল সোমবার মহাসপ্তমী, মঙ্গলবার মহাষ্টমী, বুধবার মহানবমী এবং বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী।
দেবী দুর্গার কাছে ভক্তদের চাওয়া আছে অনেক। তাঁরা কল্যাণ কামনা করেন। প্রার্থনা করেন, সব বাধা পেরোনের।
পুরাণমতে রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। তিনি বসন্তে এই পূজার আয়োজন করায় একে বাসন্তী পূজা বলা হয়। কিন্তু রাবনের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে লঙ্কা যাত্রার আগে রামচন্দ্র দেবীর পূজার আয়োজন করেন। শরৎকালে এই পূজা হয়। তাই এর নাম শারদীয় উৎসব। শরৎকালে উদ্বোধন হয় বলে এই পূজাকে অকাল বোধনও বলা হয়।
শ্বশুরবাড়ি কৈলাস (স্বর্গলোক) থেকে কন্যারূপে দেবী দুর্গা বাপের বাড়ি বেড়াতে মর্ত্যলোকে আসছেন। এবার দেবী দুর্গা আসছেন গজে (হাতি) করে। বিদায় নেবেন দোলায় (পালকি)।
শাস্ত্র মতে, দেবীর আগমন হাতিতে হলে মর্ত্যলোক সুখ শান্তি আর সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠে। মানুষের ইচ্ছা পূরণ হয়। তাই এ বছর দেবীর আগমন অত্যন্ত শুভ। তবে দেবীর গমন দোলায় বলে এর ফল অশুভ। ভয়টা এখানেই। এতে বাড়বে দুর্ভোগ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ভক্তের চাওয়া বেড়ে যায়।
মাতৃরূপে আজ মণ্ডপে মণ্ডপে ঠাঁই নিচ্ছেন দেবী।
শঙ্খধ্বনি, ধূপের সুঘ্রাণ ঢাক ঢোলের সঙ্গে ভক্তিমন্ত্রে মেতে উঠবে পূজা মণ্ডপগুলো।
প্রতিমা দেখেই একজন সনাতনধর্মীর মনের ভাব প্রকাশিত হয়। তাই মনে এবং প্রতিমায় ভক্ত দেবী দুর্গার পূজা করে থাকেন।
আসুরিক শক্তির বিনাশ আর মানুষের কল্যাণ এবং সমৃদ্ধি লাভের বাসনা ভক্তের। তারা যুগ যুগ ধরে দেবী দুর্গার আরাধনা করে আসছেন। সূত্র হিসেবে কৃত্তিবাস ওঝা নামটি আনা যায়।
কৃত্তিবাস ওঝা সংস্কৃত থেকে বাংলায় রামায়ণ অনুবাদ করেন। প্রথম সেখানে দুর্গাপূজার উল্লেখ ছিল না। পরবর্তীতে যুক্ত হয় রামের দুর্গাপূজা বিষয়টি। সেই থেকে অব্যাহত এই শারদীয় পূজা।
বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্যোগে দুর্গাপূজা করা হয়ে থাকে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িষ্যা, আসাম, ঝাড়খণ্ড উদ্যাপন করে এই উৎসব। এ ছাড়াও, ৯০টি দেশে প্রবাসীরাও দুর্গাপূজা করে থাকেন।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজা শুরুর বিষয়টি চমকপ্রদ। ১১০০ থেকে ১২০০ সাল। সেকালে গভীর জঙ্গল ছিল পুরানো ঢাকায়। সেন বংশের কোনো এক রাজা এরই এক স্থান থেকে দুর্গা সদৃশ একটি মূর্তি পান। সেটা তিনি প্রতিস্থাপন করেন মন্দিরে। ওটাই ঢাকেশ্বরী মন্দির। আর চারপাশে যে জনপদ বা শহর এরই নাম ঢাকা। ঢাকা শব্দের সাথে ঈশ্বরী যুক্ত হয়ে ঢাকেশ্বরী। পূজা শুরুর ইতিহাসটা এই অর্থে এই গল্পের সমান।
তবে এর চেয়েও জাকজমক খবর উত্তরবঙ্গের। ১৬০০ সালের দিকে রাজশাহী জেলার তাহেরপুর থানায় পূজা করেন রাজা কংস নারায়ণ। উৎসবের শেষ নেই।
সেকালে সাধারণত পূজা হতো একক উদ্যোগে। কিন্তু এখন এর বাইরে সম্মিলিতভাবেও অনেক অনেক পূজা হয়ে থাকে। বারো ইয়ার মিলে কোনো পূজার আয়োজন করলে তাকে বারোয়ারি বলা যায়। ইয়ার একটি সংস্কৃত শব্দ। বারো বন্ধুতে নয়, এখন শতজন এক হয়ে করেন বড় পূজার মতো বিশাল যজ্ঞ।
দুর্গা একটি মহাশক্তির পূজা। এই কাঠামোয় উপস্থিত সব দেবতাই মহাঋষিদের প্রতিনিধি। তা ছাড়া, এই সম্মিলনের আছে আলাদা তাৎপর্য।
শিব হচ্ছেন মহেশ্বর। তাঁরই প্রতিনিধি দুর্গা। একইভাবে ব্রহ্মার সরস্বতী এবং বিষ্ণুর লক্ষ্মী। এখানে গণেশ সব কাজের সিদ্ধিদাতা, কার্তিক যোদ্ধার প্রতীক। আছে প্রকৃতির গাছপালার সমন্বয়ে নবপত্রিকা বা কলাবউ। যুক্ত আছে প্রাণিকুল। ওরা পৃথিবীর সন্তান।
এ ছাড়া সংগৃহীত আছে যৌনকর্মীর ঘরের মাটি পর্যন্ত।
অর্থ হচ্ছে, কাউকে বাদ রেখে এই পূজা নয়। উচ্চ থেকে নিচ—সবাইকে নিয়ে। কোনো ঘৃণা নয়, নয় অবহেলা।
দেবলোক এবং প্রাণী প্রকৃতি জগতের সবকিছু নিয়ে মহাশক্তি। তারই অভিষেক, তারই পূজা। সে কারণেই বড় পূজা।
মহিষাসুর বধও এ ক্ষেত্রে প্রতিমার কাঠামোতে স্থান পায়। পুরাণেরই কথা। অসুর শক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোক ছেড়েছিলেন। এই অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করতে একত্রিত হন তাঁরা। দেবতাদের তেজরশ্মি থেকে আবির্ভূত হলেন অসুর বিনাশী মহাশক্তি। এই-ই দুর্গা। তাঁর রোষে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় আসুরিক দেয়াল।
সনাতনধর্মীরা এমন একটা বিশ্বাস থেকে দেবীর স্মরণাপন্ন হন। তারা অশুভ শক্তির বিনাশ চান। ভক্তরা দেবীর উদ্দেশ্যে প্রণাম করেন। মনে মনে প্রার্থনা করেন, বাঁধ ভেঙে দাও; বাঁধ ভেঙে দাও মা... আ... গো।
*লেখক: প্রকৌশলী , কথাসাহিত্যিক
বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা আজ রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) শুরু হলো। এটা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব।
আজ দুর্গাষষ্ঠীর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এর সূচনা। আগামীকাল সোমবার মহাসপ্তমী, মঙ্গলবার মহাষ্টমী, বুধবার মহানবমী এবং বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী।
দেবী দুর্গার কাছে ভক্তদের চাওয়া আছে অনেক। তাঁরা কল্যাণ কামনা করেন। প্রার্থনা করেন, সব বাধা পেরোনের।
পুরাণমতে রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। তিনি বসন্তে এই পূজার আয়োজন করায় একে বাসন্তী পূজা বলা হয়। কিন্তু রাবনের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে লঙ্কা যাত্রার আগে রামচন্দ্র দেবীর পূজার আয়োজন করেন। শরৎকালে এই পূজা হয়। তাই এর নাম শারদীয় উৎসব। শরৎকালে উদ্বোধন হয় বলে এই পূজাকে অকাল বোধনও বলা হয়।
শ্বশুরবাড়ি কৈলাস (স্বর্গলোক) থেকে কন্যারূপে দেবী দুর্গা বাপের বাড়ি বেড়াতে মর্ত্যলোকে আসছেন। এবার দেবী দুর্গা আসছেন গজে (হাতি) করে। বিদায় নেবেন দোলায় (পালকি)।
শাস্ত্র মতে, দেবীর আগমন হাতিতে হলে মর্ত্যলোক সুখ শান্তি আর সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠে। মানুষের ইচ্ছা পূরণ হয়। তাই এ বছর দেবীর আগমন অত্যন্ত শুভ। তবে দেবীর গমন দোলায় বলে এর ফল অশুভ। ভয়টা এখানেই। এতে বাড়বে দুর্ভোগ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ভক্তের চাওয়া বেড়ে যায়।
মাতৃরূপে আজ মণ্ডপে মণ্ডপে ঠাঁই নিচ্ছেন দেবী।
শঙ্খধ্বনি, ধূপের সুঘ্রাণ ঢাক ঢোলের সঙ্গে ভক্তিমন্ত্রে মেতে উঠবে পূজা মণ্ডপগুলো।
প্রতিমা দেখেই একজন সনাতনধর্মীর মনের ভাব প্রকাশিত হয়। তাই মনে এবং প্রতিমায় ভক্ত দেবী দুর্গার পূজা করে থাকেন।
আসুরিক শক্তির বিনাশ আর মানুষের কল্যাণ এবং সমৃদ্ধি লাভের বাসনা ভক্তের। তারা যুগ যুগ ধরে দেবী দুর্গার আরাধনা করে আসছেন। সূত্র হিসেবে কৃত্তিবাস ওঝা নামটি আনা যায়।
কৃত্তিবাস ওঝা সংস্কৃত থেকে বাংলায় রামায়ণ অনুবাদ করেন। প্রথম সেখানে দুর্গাপূজার উল্লেখ ছিল না। পরবর্তীতে যুক্ত হয় রামের দুর্গাপূজা বিষয়টি। সেই থেকে অব্যাহত এই শারদীয় পূজা।
বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্যোগে দুর্গাপূজা করা হয়ে থাকে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িষ্যা, আসাম, ঝাড়খণ্ড উদ্যাপন করে এই উৎসব। এ ছাড়াও, ৯০টি দেশে প্রবাসীরাও দুর্গাপূজা করে থাকেন।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজা শুরুর বিষয়টি চমকপ্রদ। ১১০০ থেকে ১২০০ সাল। সেকালে গভীর জঙ্গল ছিল পুরানো ঢাকায়। সেন বংশের কোনো এক রাজা এরই এক স্থান থেকে দুর্গা সদৃশ একটি মূর্তি পান। সেটা তিনি প্রতিস্থাপন করেন মন্দিরে। ওটাই ঢাকেশ্বরী মন্দির। আর চারপাশে যে জনপদ বা শহর এরই নাম ঢাকা। ঢাকা শব্দের সাথে ঈশ্বরী যুক্ত হয়ে ঢাকেশ্বরী। পূজা শুরুর ইতিহাসটা এই অর্থে এই গল্পের সমান।
তবে এর চেয়েও জাকজমক খবর উত্তরবঙ্গের। ১৬০০ সালের দিকে রাজশাহী জেলার তাহেরপুর থানায় পূজা করেন রাজা কংস নারায়ণ। উৎসবের শেষ নেই।
সেকালে সাধারণত পূজা হতো একক উদ্যোগে। কিন্তু এখন এর বাইরে সম্মিলিতভাবেও অনেক অনেক পূজা হয়ে থাকে। বারো ইয়ার মিলে কোনো পূজার আয়োজন করলে তাকে বারোয়ারি বলা যায়। ইয়ার একটি সংস্কৃত শব্দ। বারো বন্ধুতে নয়, এখন শতজন এক হয়ে করেন বড় পূজার মতো বিশাল যজ্ঞ।
দুর্গা একটি মহাশক্তির পূজা। এই কাঠামোয় উপস্থিত সব দেবতাই মহাঋষিদের প্রতিনিধি। তা ছাড়া, এই সম্মিলনের আছে আলাদা তাৎপর্য।
শিব হচ্ছেন মহেশ্বর। তাঁরই প্রতিনিধি দুর্গা। একইভাবে ব্রহ্মার সরস্বতী এবং বিষ্ণুর লক্ষ্মী। এখানে গণেশ সব কাজের সিদ্ধিদাতা, কার্তিক যোদ্ধার প্রতীক। আছে প্রকৃতির গাছপালার সমন্বয়ে নবপত্রিকা বা কলাবউ। যুক্ত আছে প্রাণিকুল। ওরা পৃথিবীর সন্তান।
এ ছাড়া সংগৃহীত আছে যৌনকর্মীর ঘরের মাটি পর্যন্ত।
অর্থ হচ্ছে, কাউকে বাদ রেখে এই পূজা নয়। উচ্চ থেকে নিচ—সবাইকে নিয়ে। কোনো ঘৃণা নয়, নয় অবহেলা।
দেবলোক এবং প্রাণী প্রকৃতি জগতের সবকিছু নিয়ে মহাশক্তি। তারই অভিষেক, তারই পূজা। সে কারণেই বড় পূজা।
মহিষাসুর বধও এ ক্ষেত্রে প্রতিমার কাঠামোতে স্থান পায়। পুরাণেরই কথা। অসুর শক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোক ছেড়েছিলেন। এই অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করতে একত্রিত হন তাঁরা। দেবতাদের তেজরশ্মি থেকে আবির্ভূত হলেন অসুর বিনাশী মহাশক্তি। এই-ই দুর্গা। তাঁর রোষে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় আসুরিক দেয়াল।
সনাতনধর্মীরা এমন একটা বিশ্বাস থেকে দেবীর স্মরণাপন্ন হন। তারা অশুভ শক্তির বিনাশ চান। ভক্তরা দেবীর উদ্দেশ্যে প্রণাম করেন। মনে মনে প্রার্থনা করেন, বাঁধ ভেঙে দাও; বাঁধ ভেঙে দাও মা... আ... গো।
*লেখক: প্রকৌশলী , কথাসাহিত্যিক
পুরাণমতে রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। তিনি বসন্তে এই পূজার আয়োজন করায় একে বাসন্তী পূজা বলা হয়। কিন্তু রাবনের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে লঙ্কা যাত্রার আগে রামচন্দ্র দেবীর পূজার আয়োজন করেন। শরৎকালে এই পূজা হয়। তাই এর নাম শারদীয় উৎসব।
ইউক্রেন যুদ্ধের ঘটনাবলির দিকে গভীরভাবে নজর দিলে পরিষ্কার হয়ে উঠবে, পুতিন তথা রাশিয়া অনেক বেশি ধৈর্য্য ধরেছে।
আঞ্চলিক সহযোগিতা এই অঞ্চলের সব মানুষের ভাগ্যের দুয়ার খুলে দিতে পারত। যেমন পেরেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল বাজার, জনশক্তি ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার এই অঞ্চলের দেশগুলোকে অর্থনৈতিক উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে পারে।
মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি ধর্মপ্রাণ হয়ে উঠতে পারেন আবার একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। এটি একটি সংবেদনশীল প্রশ্ন, তাই না…?