রহমান মৃধা, সুইডেন
মুক্ত আলোচনা
আমি ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। হোক সেটা আর্থিক, সামাজিক, মানসিক, মানবিক বা অনুপ্রেরণার মাধ্যমে। যখনই দেখি কেউ কষ্টে আছে, আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী যতটুকু পারি সাহায্য করি। অনেক সময় নিজের সামর্থ্যের বাইরেও গিয়ে চেষ্টা করি। প্রয়োজনে অন্যদের সাহায্য নিয়ে হলেও পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। ব্যর্থ হই, তবু হাল ছাড়ি না।
আমার সহধর্মিণী আমার থেকেও বেশি পরোপকারী। তার আনন্দ অন্যের অনুভূতির মাঝে। একবার আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘তুমি সারাক্ষণ শুধু মানুষকে দাও, কখনো কিছু পাওয়ার ইচ্ছে হয় না?’
তিনি মৃদু হেসে বললেন, ‘আমি কাউকে কিছু দিতে পারলে আনন্দ পাই, সেটাই আমার কিছু পাওয়ার ইচ্ছে পূরণ করে।’
তার উত্তর শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। সত্যিই কি এমন মানসিকতা সম্ভব? পরে বুঝেছি, হ্যাঁ, সম্ভব। আজ অবধি যা কিছু ঘটেছে, যা কিছু দেখেছি, তাতে শুধু অভিভূত হয়েছি।
আমার সহধর্মিণীর প্রতি কেউ যদি কখনো খারাপ মন্তব্য করেন, পরে দেখবেন, তিনি নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হবেন এবং ক্ষমা চাইবেন। কারণ, যদি কেউ তাকে আঘাত দেয়ও, তিনি কিছু বলবেন না, বরং বলবেন, ‘আমারই ভুল হয়েছে।’
তিনি বাবার একমাত্র মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও তার মধ্যে বিন্দুমাত্র হিংসা নেই।
আমি দিলদার, কিন্তু তার মতো নই। আমি নিশ্চিত, কখনো তার মতো হতে পারব না। তবে চেষ্টা করতে দোষ কী? তাই করে চলছি। আমার পরিবারের সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হলো, আমাদের সকল ভাই-বোনই মানুষের জন্য কাজ করতে ভালোবাসে এবং নানাভাবে অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। এটি সত্যিই গর্বের যে, আমরা ৯ ভাইবোনের মধ্যে ৮ জনই দেশের বাইরে থাকলেও, সবসময় একে অপরকে সহযোগিতা করি। হয়তো এই পারস্পরিক সংযোগ ও সহমর্মিতাই আমাদের মানবিক হয়ে ওঠার মূল কারণ!
আমাকে যারা চেনেন, তারা বলেন, আমি দেশের বাইরে থাকি বলে দেশের মানুষের প্রতি দরদ বেশি। হতে পারে। কারণ যাদের সঙ্গে আমার ওঠাবসা, তারা সবাই তুলনামূলক স্বচ্ছল। কিন্তু আমি যাদের জন্য ভাবি, তারা তো প্রতিদিন লড়াই করে বেঁচে থাকে।
এত বছর ধরে মানুষের জন্য কাজ করেও মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত শূন্যতা কাজ করে। কারণ কী জানেন? মানবিকতার এই পথে আমার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, আমার স্ত্রী ছাড়া। অথচ রাজনীতি ও ক্ষমতার খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বির কোনো শেষ নেই! যারা বলে জনগণের সেবা করতে চায়, সেই রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কি কোনো দিন আমার এতসব কাজে ১০ টাকা দিয়েও সাহায্য করেছেন?
আসলে যারা শুধু রাজনীতি করেন, তারা মূলত দুর্নীতি করেন। কারণ সেটাই তাদের পেশা, নেশা হচ্ছে মিথ্যাচার করা। কথাটা শুনে অনেকে রেগে যেতে পারেন, কিন্তু এটিই নির্মম বাস্তবতা।
তবে আমি এখনো বিশ্বাস করি, একদিন এই মানবিক কাজেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, যেমনটি রাজনীতিতে হয়। আমি সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।
হাজারও মানবিক উদ্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বাস্তব অভিজ্ঞতার অন্তর্ভুক্ত সদ্য প্রকাশিত একটি ঘটনা। আমার এলাকার এক সমাজসেবী তরুণের মাধ্যমে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা এলাকার মানুষের নানা সমস্যা সম্পর্কে জানতে পারি। সে সবসময় আমাদের মতো অসহায় মানুষের পাশে থাকে এবং তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে। গত সপ্তাহে, সে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিল—জন্ম থেকেই একটি শিশুর হৃদযন্ত্রে দুটি ছিদ্র রয়েছে, যা ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট নামে পরিচিত। শিশুটির বাবা একটি তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন, যার একার আয়ে কোনোভাবে সংসার চলে।
অভাবের সংসারে এনজিও থেকে ঋণ, সামান্য সঞ্চিত অর্থ ও ধারদেনার মাধ্যমে বিগত ৩ বছর ধরে ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে শিশুটির চিকিৎসা চলেছে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর হৃদযন্ত্রের একটি ছিদ্র ভালো হলেও, আরেকটি ছিদ্র এখনো রয়ে গেছে। যার জন্য জরুরি অপারেশন প্রয়োজন।
তবে দীর্ঘ চিকিৎসার খরচ বহন করতে গিয়ে পরিবারটি প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। অপারেশনের জন্য কমপক্ষে ২-৩ লাখ টাকা দরকার। কিন্তু অর্থের অভাবে শিশুটির বাবা-মা চিকিৎসা করাতে পারছেন না।
আমি সবসময় চেষ্টা করি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এখানে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। অথচ যেখানে ক্ষমতা বা সুযোগ-সুবিধার প্রশ্ন আসে, সেখানে প্রতিযোগিতার শেষ নেই। এর কারণ কী? এর উত্তর তো আগেই তুলে ধরেছি।
এই চিন্তায় মনটা ভারী হয়ে ছিল। পরে আমার দুই মানবিক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তাদের সবচেয়ে বড় গুণ হলো, তারা সবসময় আমার কাজে যেমন উৎসাহ দেন, তেমনি আপ্রাণ চেষ্টা করেন কীভাবে আমার এসব কাজে সহযোগিতা করা যায়।
তবে সব বন্ধুরা কিন্তু এক রকম নয়। অনেক বন্ধু আছে, সত্যি বলতে, ‘জাস্ট গুড ফর নাথিং’—কিন্তু তাদেরও দরকার আছে! কারণ, তারা তো বন্ধু, এটাও কী কম পাওয়া?
এবার ফিরে আসি শিশুটির বিষয়ে। আগামীকাল ৯ ফেব্রুয়ারি শিশুটির জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে। মনে প্রশান্তি এসেছে।
এখন বুঝতে পারছি, কেন আমার সহধর্মিণী বলেন, ‘অন্যের জন্য কিছু করতে পারলে তার আনন্দ লাগে।’
শেষ কথাঃ আমরা কি পারি না?
মানুষের জন্য কিছু করতে পারার আনন্দের চেয়ে বড় কোনো প্রাপ্তি হতে পারে কি? আমি দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষের পাশে দাঁড়াতে। অসহায় কাউকে সাহায্য করতে পারলে আমার হৃদয়ের গভীরে এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব হয়। আজও সেই কাজ করে চলেছি, প্রতিনিয়ত ভাবছি, আরও কীভাবে মানুষের উপকারে আসতে পারি।
কিন্তু দুঃখজনক হলো, এই পথে প্রতিযোগিতা নেই। অথচ রাজনীতি, ক্ষমতা আর স্বার্থের লড়াইয়ে প্রতিযোগিতার কোনো অভাব নেই! মানুষ মরিয়া হয়ে ওঠে, কে কতটা ক্ষমতা দখল করতে পারে, কার প্রভাব কতদূর বিস্তৃত হতে পারে। অথচ কেউ প্রতিযোগিতা করে না কে কার চেয়ে বেশি মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে, কে কার চেয়ে বেশি অসহায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারে।
তবে আমি থেমে যাইনি, থেমে যেতে চাই না। আমি এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছি, দিনরাত ভাবছি, কীভাবে আরও বেশি মানুষের উপকার করা যায়। আমি চাই, মানবিকতার প্রতিযোগিতা শুরু হোক, মানুষ প্রতিযোগিতা করুক ভালো কাজের জন্য। কে কার চেয়ে বেশি দান করতে পারে, কে কার চেয়ে বেশি অসহায় মানুষের জন্য লড়াই করতে পারে।
আমি বিশ্বাস করি, একদিন এই চিত্র বদলাবে।
একদিন সমাজসেবায়ও প্রতিযোগিতা হবে, একদিন নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে মানবিকতার ভিত্তিতে, ক্ষমতা নয়। একদিন মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব মাপা হবে তার সহমর্মিতা দিয়ে, তার কর্মের গভীরতা দিয়ে।
আমি সেই দিনের অপেক্ষায় আছি, যেদিন সমাজসেবা হবে নতুন প্রতিযোগিতা, মানবিকতা হবে সবচেয়ে বড় শক্তি, আর মানুষের পাশে দাঁড়ানো হবে জীবনের সর্বোচ্চ সম্মান।
আমি এখনো আছি, কাজ করে চলেছি, করে যাব।
আপনি কি প্রস্তুত?
—রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
**প্রিয় পাঠক, বিডিজেন২৪-এ গল্প, কবিতা, ভ্রমণকাহিনি, সুখ–দুঃখের স্মৃতি, প্রবন্ধ, ফিচার, অনুষ্ঠান বা ঘটনার ভিডিও এবং ছবিসহ নানা বিষয়ের লেখা পাঠান। মেইল: [email protected]
মুক্ত আলোচনা
আমি ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। হোক সেটা আর্থিক, সামাজিক, মানসিক, মানবিক বা অনুপ্রেরণার মাধ্যমে। যখনই দেখি কেউ কষ্টে আছে, আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী যতটুকু পারি সাহায্য করি। অনেক সময় নিজের সামর্থ্যের বাইরেও গিয়ে চেষ্টা করি। প্রয়োজনে অন্যদের সাহায্য নিয়ে হলেও পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। ব্যর্থ হই, তবু হাল ছাড়ি না।
আমার সহধর্মিণী আমার থেকেও বেশি পরোপকারী। তার আনন্দ অন্যের অনুভূতির মাঝে। একবার আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘তুমি সারাক্ষণ শুধু মানুষকে দাও, কখনো কিছু পাওয়ার ইচ্ছে হয় না?’
তিনি মৃদু হেসে বললেন, ‘আমি কাউকে কিছু দিতে পারলে আনন্দ পাই, সেটাই আমার কিছু পাওয়ার ইচ্ছে পূরণ করে।’
তার উত্তর শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। সত্যিই কি এমন মানসিকতা সম্ভব? পরে বুঝেছি, হ্যাঁ, সম্ভব। আজ অবধি যা কিছু ঘটেছে, যা কিছু দেখেছি, তাতে শুধু অভিভূত হয়েছি।
আমার সহধর্মিণীর প্রতি কেউ যদি কখনো খারাপ মন্তব্য করেন, পরে দেখবেন, তিনি নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হবেন এবং ক্ষমা চাইবেন। কারণ, যদি কেউ তাকে আঘাত দেয়ও, তিনি কিছু বলবেন না, বরং বলবেন, ‘আমারই ভুল হয়েছে।’
তিনি বাবার একমাত্র মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও তার মধ্যে বিন্দুমাত্র হিংসা নেই।
আমি দিলদার, কিন্তু তার মতো নই। আমি নিশ্চিত, কখনো তার মতো হতে পারব না। তবে চেষ্টা করতে দোষ কী? তাই করে চলছি। আমার পরিবারের সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হলো, আমাদের সকল ভাই-বোনই মানুষের জন্য কাজ করতে ভালোবাসে এবং নানাভাবে অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। এটি সত্যিই গর্বের যে, আমরা ৯ ভাইবোনের মধ্যে ৮ জনই দেশের বাইরে থাকলেও, সবসময় একে অপরকে সহযোগিতা করি। হয়তো এই পারস্পরিক সংযোগ ও সহমর্মিতাই আমাদের মানবিক হয়ে ওঠার মূল কারণ!
আমাকে যারা চেনেন, তারা বলেন, আমি দেশের বাইরে থাকি বলে দেশের মানুষের প্রতি দরদ বেশি। হতে পারে। কারণ যাদের সঙ্গে আমার ওঠাবসা, তারা সবাই তুলনামূলক স্বচ্ছল। কিন্তু আমি যাদের জন্য ভাবি, তারা তো প্রতিদিন লড়াই করে বেঁচে থাকে।
এত বছর ধরে মানুষের জন্য কাজ করেও মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত শূন্যতা কাজ করে। কারণ কী জানেন? মানবিকতার এই পথে আমার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, আমার স্ত্রী ছাড়া। অথচ রাজনীতি ও ক্ষমতার খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বির কোনো শেষ নেই! যারা বলে জনগণের সেবা করতে চায়, সেই রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কি কোনো দিন আমার এতসব কাজে ১০ টাকা দিয়েও সাহায্য করেছেন?
আসলে যারা শুধু রাজনীতি করেন, তারা মূলত দুর্নীতি করেন। কারণ সেটাই তাদের পেশা, নেশা হচ্ছে মিথ্যাচার করা। কথাটা শুনে অনেকে রেগে যেতে পারেন, কিন্তু এটিই নির্মম বাস্তবতা।
তবে আমি এখনো বিশ্বাস করি, একদিন এই মানবিক কাজেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, যেমনটি রাজনীতিতে হয়। আমি সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।
হাজারও মানবিক উদ্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বাস্তব অভিজ্ঞতার অন্তর্ভুক্ত সদ্য প্রকাশিত একটি ঘটনা। আমার এলাকার এক সমাজসেবী তরুণের মাধ্যমে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা এলাকার মানুষের নানা সমস্যা সম্পর্কে জানতে পারি। সে সবসময় আমাদের মতো অসহায় মানুষের পাশে থাকে এবং তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে। গত সপ্তাহে, সে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিল—জন্ম থেকেই একটি শিশুর হৃদযন্ত্রে দুটি ছিদ্র রয়েছে, যা ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট নামে পরিচিত। শিশুটির বাবা একটি তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন, যার একার আয়ে কোনোভাবে সংসার চলে।
অভাবের সংসারে এনজিও থেকে ঋণ, সামান্য সঞ্চিত অর্থ ও ধারদেনার মাধ্যমে বিগত ৩ বছর ধরে ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে শিশুটির চিকিৎসা চলেছে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর হৃদযন্ত্রের একটি ছিদ্র ভালো হলেও, আরেকটি ছিদ্র এখনো রয়ে গেছে। যার জন্য জরুরি অপারেশন প্রয়োজন।
তবে দীর্ঘ চিকিৎসার খরচ বহন করতে গিয়ে পরিবারটি প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। অপারেশনের জন্য কমপক্ষে ২-৩ লাখ টাকা দরকার। কিন্তু অর্থের অভাবে শিশুটির বাবা-মা চিকিৎসা করাতে পারছেন না।
আমি সবসময় চেষ্টা করি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এখানে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। অথচ যেখানে ক্ষমতা বা সুযোগ-সুবিধার প্রশ্ন আসে, সেখানে প্রতিযোগিতার শেষ নেই। এর কারণ কী? এর উত্তর তো আগেই তুলে ধরেছি।
এই চিন্তায় মনটা ভারী হয়ে ছিল। পরে আমার দুই মানবিক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তাদের সবচেয়ে বড় গুণ হলো, তারা সবসময় আমার কাজে যেমন উৎসাহ দেন, তেমনি আপ্রাণ চেষ্টা করেন কীভাবে আমার এসব কাজে সহযোগিতা করা যায়।
তবে সব বন্ধুরা কিন্তু এক রকম নয়। অনেক বন্ধু আছে, সত্যি বলতে, ‘জাস্ট গুড ফর নাথিং’—কিন্তু তাদেরও দরকার আছে! কারণ, তারা তো বন্ধু, এটাও কী কম পাওয়া?
এবার ফিরে আসি শিশুটির বিষয়ে। আগামীকাল ৯ ফেব্রুয়ারি শিশুটির জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে। মনে প্রশান্তি এসেছে।
এখন বুঝতে পারছি, কেন আমার সহধর্মিণী বলেন, ‘অন্যের জন্য কিছু করতে পারলে তার আনন্দ লাগে।’
শেষ কথাঃ আমরা কি পারি না?
মানুষের জন্য কিছু করতে পারার আনন্দের চেয়ে বড় কোনো প্রাপ্তি হতে পারে কি? আমি দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষের পাশে দাঁড়াতে। অসহায় কাউকে সাহায্য করতে পারলে আমার হৃদয়ের গভীরে এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব হয়। আজও সেই কাজ করে চলেছি, প্রতিনিয়ত ভাবছি, আরও কীভাবে মানুষের উপকারে আসতে পারি।
কিন্তু দুঃখজনক হলো, এই পথে প্রতিযোগিতা নেই। অথচ রাজনীতি, ক্ষমতা আর স্বার্থের লড়াইয়ে প্রতিযোগিতার কোনো অভাব নেই! মানুষ মরিয়া হয়ে ওঠে, কে কতটা ক্ষমতা দখল করতে পারে, কার প্রভাব কতদূর বিস্তৃত হতে পারে। অথচ কেউ প্রতিযোগিতা করে না কে কার চেয়ে বেশি মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে, কে কার চেয়ে বেশি অসহায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারে।
তবে আমি থেমে যাইনি, থেমে যেতে চাই না। আমি এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছি, দিনরাত ভাবছি, কীভাবে আরও বেশি মানুষের উপকার করা যায়। আমি চাই, মানবিকতার প্রতিযোগিতা শুরু হোক, মানুষ প্রতিযোগিতা করুক ভালো কাজের জন্য। কে কার চেয়ে বেশি দান করতে পারে, কে কার চেয়ে বেশি অসহায় মানুষের জন্য লড়াই করতে পারে।
আমি বিশ্বাস করি, একদিন এই চিত্র বদলাবে।
একদিন সমাজসেবায়ও প্রতিযোগিতা হবে, একদিন নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে মানবিকতার ভিত্তিতে, ক্ষমতা নয়। একদিন মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব মাপা হবে তার সহমর্মিতা দিয়ে, তার কর্মের গভীরতা দিয়ে।
আমি সেই দিনের অপেক্ষায় আছি, যেদিন সমাজসেবা হবে নতুন প্রতিযোগিতা, মানবিকতা হবে সবচেয়ে বড় শক্তি, আর মানুষের পাশে দাঁড়ানো হবে জীবনের সর্বোচ্চ সম্মান।
আমি এখনো আছি, কাজ করে চলেছি, করে যাব।
আপনি কি প্রস্তুত?
—রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
**প্রিয় পাঠক, বিডিজেন২৪-এ গল্প, কবিতা, ভ্রমণকাহিনি, সুখ–দুঃখের স্মৃতি, প্রবন্ধ, ফিচার, অনুষ্ঠান বা ঘটনার ভিডিও এবং ছবিসহ নানা বিষয়ের লেখা পাঠান। মেইল: [email protected]
একটা রোগীর প্রপার ডায়াগনোসিস করা এবং চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলার মতো মেধা আল্লাহ সবাইকে দেন না। কিছু ক্ষণজন্মা মানুষকে বিধাতা পুরো পৃথিবীতে এমনই মেধা দিয়েছেন। ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ এমনই একজন মেধাবী ও মানবিক মানুষ।
এই আমেরিকায় আসার পর থেকে সময়ের আর কোনো খোঁজই পাই না। কখন সকাল হয় আর কখন রাত তাও টের পাই না। অন্তরের দুটা অন্তরকথা কাউকে বলব, সেই সময়ও যেন নেই। তার ওপর ডেট এক্সপায়ারি মানুষ, অনেকটা দাবা খেলার ওই ক্ষমতাবান রাজার মতো, মাত্র এক ঘর যেতে পারি।
মাঝে দিয়ে ওর পরিবার পথে বসে গেছে। জায়গা জমি বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছিল লেখাপড়া করে শিক্ষিত হতে। ছেলে লেখাপড়া না করে ইমরান হাশমি বা উদিত নারায়নের মতোন ‘চুম্বন দেব’ হতে চেয়েছিল। কী আর করার।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে চিকিৎসকদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে, নতুন রোগের আবির্ভাব হচ্ছে এবং আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে।