
রহমান মৃধা

বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি মৌলিক রূপান্তরের সময় এসে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির যে চর্চা চলেছে, তা আজ জনসমর্থনের সংকটে পড়েছে। অর্থ, প্রভাব কিংবা সংগঠনের জোরে রাজনীতি চালানো গেলেও জনগণের আস্থা আর সহজে অর্জিত হচ্ছে না। মানুষ এখন জানে—কে কী করেন, কোথায় যান, কার স্বার্থে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই জানাই রাজনীতির পুরোনো ভাষাকে অকার্যকর করে দিয়েছে।
রাজনীতি আর মাইক্রোফোন ধরে উচ্চকণ্ঠে বক্তৃতা কিংবা নির্বাচনের আগে আশ্বাসের ফুলঝুরি ছোড়ার বিষয় নয়। সেই যুগ পেরিয়ে এসেছে জননীতি—যেখানে মানুষের দৈনন্দিন জীবন, কষ্ট ও প্রত্যাশা নীতিনির্ধারণের কেন্দ্রে থাকে। জননীতি মানে কাগুজে পরিকল্পনা নয়, বাস্তবে পরিবর্তন। মানুষ এখন ফলাফল দেখতে চায়—সেবা, ন্যায় ও জীবনের সহজতায়।
একটি বড় ভুল রাজনীতিবিদেরা দীর্ঘদিন ধরে করে এসেছেন—তারা জনগণকে সরল ভেবেছেন। বাস্তবে জনগণ মোটেও সরল নয়। তারা জানে কোন উন্নয়ন প্রকৃত, আর কোনটি কেবল প্রদর্শনী। তারা বোঝে কোন প্রকল্প জনস্বার্থে, আর কোনটি ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত সুবিধার ঢাল। এই সচেতন জনগণ এখন আর প্রশ্ন করে না—ভোটের মাধ্যমে জবাব দেয়।
জননীতির পথে হাঁটতে হলে প্রথম শর্ত আত্মসমালোচনা। প্রশাসন ও রাজনৈতিক কার্যালয়গুলো জনগণের জন্য কতটা উন্মুক্ত, সেটি নিজেকেই আগে যাচাই করতে হবে। চারপাশে যারা ক্ষমতার ছায়ায় ব্যবসা করে, তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে হবে। জননীতি মানে জবাবদিহি, স্বচ্ছতা ও দায়িত্ব নেওয়ার সাহস। এই গুণগুলো ছাড়া রাজনীতির গায়ে নতুন শব্দ জুড়ে দিলেও বাস্তব বদলায় না।
দ্বিতীয় শর্ত হলো সংযোগ। নীতিনির্ধারকেরা যদি মানুষের দৈনন্দিন বাস্তবতা না বোঝেন, তবে বড় প্রকল্পও অর্থহীন হয়ে পড়ে। একটি পরিবারের শিক্ষাখরচ বন্ধ হয়ে গেলে তার সামাজিক ও মানসিক প্রভাব কী—সেই বোধ না থাকলে রাজনীতি কেবল দূরত্বই বাড়ায়। জননীতি মানে বিদেশ সফর বা আন্তর্জাতিক সম্মেলনের তালিকা নয়; জননীতি মানে প্রতিদিনের ছোট সমস্যাগুলোর সমাধান।
তৃতীয় শর্ত সংস্কৃতি ও নৈতিকতা। জনগণ সহজেই বুঝে ফেলে কে আন্তরিক, আর কে কেবল সততার ভান করে। নীতিনির্ধারকের ব্যক্তিগত আচরণ, ভাষা ও সিদ্ধান্ত—সবকিছুই বিশ্বাসযোগ্যতার অংশ। জননীতি এমন এক মানদণ্ড দাবি করে, যা মানুষ নিজের জীবনেও অনুসরণ করতে আগ্রহী হয়।
চতুর্থ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত বাস্তব অর্জন। কাগজে লেখা পরিকল্পনা নয়, ফাইলে বন্দি রিপোর্ট নয়—মানুষ বিচার করে ফল দিয়ে। সেবা পৌঁছেছে কি না, দুর্নীতি কমেছে কি না, জীবন সহজ হয়েছে কি না—এই প্রশ্নগুলোর উত্তরেই রাজনৈতিক মূল্যায়ন হয়। কাজ চোখে না পড়লে প্রচার দ্রুতই অর্থহীন হয়ে যায়।
এই প্রেক্ষাপটে ওসমান হাদির জীবন ও আদর্শ বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। তার রাজনীতির কেন্দ্রে ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্ভীক অবস্থান, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রচিন্তা এবং জনগণের সঙ্গে গভীর সংযোগ। তিনি রাজনীতিকে ক্ষমতার সিঁড়ি নয়, নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে দেখেছিলেন। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও চিন্তার স্বাধীনতাকে তিনি সামাজিক পরিবর্তনের প্রধান শক্তি বলে বিশ্বাস করতেন।
দুর্নীতি, আধিপত্যবাদ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থান তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি কেবল একজন ব্যক্তির ওপর হামলা নয়; এটি ছিল জননীতির দর্শনের ওপর আঘাত। ইতিহাস বারবার দেখিয়েছে—যারা ভয়ের রাজনীতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে জনগণের শক্তিকে সামনে আনে, তাদের পথ সহজ হয় না।
তবু সত্য থেকে যায়—ন্যায়ের পথে হাঁটাই ইতিহাসে স্থায়ী হওয়ার একমাত্র উপায়। ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, দেহ থেমে যেতে পারে, কিন্তু আদর্শ টিকে থাকে। জননীতি সেই আদর্শেরই নাম, যেখানে ক্ষমতার চেয়ে মানুষের মর্যাদা বড়, আর ভোটের চেয়েও সম্মান মূল্যবান।
আজ তাই প্রশ্ন একটাই—আমরা কি পুরোনো রাজনীতির চর্চায় আটকে থাকব, নাকি জননীতির পথে সাহসী পদক্ষেপ নেব?
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*লেখক গবেষক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। ইমেইল: [email protected]

বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি মৌলিক রূপান্তরের সময় এসে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির যে চর্চা চলেছে, তা আজ জনসমর্থনের সংকটে পড়েছে। অর্থ, প্রভাব কিংবা সংগঠনের জোরে রাজনীতি চালানো গেলেও জনগণের আস্থা আর সহজে অর্জিত হচ্ছে না। মানুষ এখন জানে—কে কী করেন, কোথায় যান, কার স্বার্থে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই জানাই রাজনীতির পুরোনো ভাষাকে অকার্যকর করে দিয়েছে।
রাজনীতি আর মাইক্রোফোন ধরে উচ্চকণ্ঠে বক্তৃতা কিংবা নির্বাচনের আগে আশ্বাসের ফুলঝুরি ছোড়ার বিষয় নয়। সেই যুগ পেরিয়ে এসেছে জননীতি—যেখানে মানুষের দৈনন্দিন জীবন, কষ্ট ও প্রত্যাশা নীতিনির্ধারণের কেন্দ্রে থাকে। জননীতি মানে কাগুজে পরিকল্পনা নয়, বাস্তবে পরিবর্তন। মানুষ এখন ফলাফল দেখতে চায়—সেবা, ন্যায় ও জীবনের সহজতায়।
একটি বড় ভুল রাজনীতিবিদেরা দীর্ঘদিন ধরে করে এসেছেন—তারা জনগণকে সরল ভেবেছেন। বাস্তবে জনগণ মোটেও সরল নয়। তারা জানে কোন উন্নয়ন প্রকৃত, আর কোনটি কেবল প্রদর্শনী। তারা বোঝে কোন প্রকল্প জনস্বার্থে, আর কোনটি ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত সুবিধার ঢাল। এই সচেতন জনগণ এখন আর প্রশ্ন করে না—ভোটের মাধ্যমে জবাব দেয়।
জননীতির পথে হাঁটতে হলে প্রথম শর্ত আত্মসমালোচনা। প্রশাসন ও রাজনৈতিক কার্যালয়গুলো জনগণের জন্য কতটা উন্মুক্ত, সেটি নিজেকেই আগে যাচাই করতে হবে। চারপাশে যারা ক্ষমতার ছায়ায় ব্যবসা করে, তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে হবে। জননীতি মানে জবাবদিহি, স্বচ্ছতা ও দায়িত্ব নেওয়ার সাহস। এই গুণগুলো ছাড়া রাজনীতির গায়ে নতুন শব্দ জুড়ে দিলেও বাস্তব বদলায় না।
দ্বিতীয় শর্ত হলো সংযোগ। নীতিনির্ধারকেরা যদি মানুষের দৈনন্দিন বাস্তবতা না বোঝেন, তবে বড় প্রকল্পও অর্থহীন হয়ে পড়ে। একটি পরিবারের শিক্ষাখরচ বন্ধ হয়ে গেলে তার সামাজিক ও মানসিক প্রভাব কী—সেই বোধ না থাকলে রাজনীতি কেবল দূরত্বই বাড়ায়। জননীতি মানে বিদেশ সফর বা আন্তর্জাতিক সম্মেলনের তালিকা নয়; জননীতি মানে প্রতিদিনের ছোট সমস্যাগুলোর সমাধান।
তৃতীয় শর্ত সংস্কৃতি ও নৈতিকতা। জনগণ সহজেই বুঝে ফেলে কে আন্তরিক, আর কে কেবল সততার ভান করে। নীতিনির্ধারকের ব্যক্তিগত আচরণ, ভাষা ও সিদ্ধান্ত—সবকিছুই বিশ্বাসযোগ্যতার অংশ। জননীতি এমন এক মানদণ্ড দাবি করে, যা মানুষ নিজের জীবনেও অনুসরণ করতে আগ্রহী হয়।
চতুর্থ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত বাস্তব অর্জন। কাগজে লেখা পরিকল্পনা নয়, ফাইলে বন্দি রিপোর্ট নয়—মানুষ বিচার করে ফল দিয়ে। সেবা পৌঁছেছে কি না, দুর্নীতি কমেছে কি না, জীবন সহজ হয়েছে কি না—এই প্রশ্নগুলোর উত্তরেই রাজনৈতিক মূল্যায়ন হয়। কাজ চোখে না পড়লে প্রচার দ্রুতই অর্থহীন হয়ে যায়।
এই প্রেক্ষাপটে ওসমান হাদির জীবন ও আদর্শ বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। তার রাজনীতির কেন্দ্রে ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্ভীক অবস্থান, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রচিন্তা এবং জনগণের সঙ্গে গভীর সংযোগ। তিনি রাজনীতিকে ক্ষমতার সিঁড়ি নয়, নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে দেখেছিলেন। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও চিন্তার স্বাধীনতাকে তিনি সামাজিক পরিবর্তনের প্রধান শক্তি বলে বিশ্বাস করতেন।
দুর্নীতি, আধিপত্যবাদ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থান তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি কেবল একজন ব্যক্তির ওপর হামলা নয়; এটি ছিল জননীতির দর্শনের ওপর আঘাত। ইতিহাস বারবার দেখিয়েছে—যারা ভয়ের রাজনীতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে জনগণের শক্তিকে সামনে আনে, তাদের পথ সহজ হয় না।
তবু সত্য থেকে যায়—ন্যায়ের পথে হাঁটাই ইতিহাসে স্থায়ী হওয়ার একমাত্র উপায়। ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, দেহ থেমে যেতে পারে, কিন্তু আদর্শ টিকে থাকে। জননীতি সেই আদর্শেরই নাম, যেখানে ক্ষমতার চেয়ে মানুষের মর্যাদা বড়, আর ভোটের চেয়েও সম্মান মূল্যবান।
আজ তাই প্রশ্ন একটাই—আমরা কি পুরোনো রাজনীতির চর্চায় আটকে থাকব, নাকি জননীতির পথে সাহসী পদক্ষেপ নেব?
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*লেখক গবেষক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। ইমেইল: [email protected]
বাংলাদেশেরও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিদেশের মাটিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে, যা অনেকেরই অজানা। প্রতিষ্ঠানটির নাম বাংলাদেশ স্কুল মাস্কাট। এটি ইংরেজি মাধ্যম অ্যাডেক্সসেল কারিকুলামের অধীনে পরিচালিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ওমানের রাজধানী মাস্কাটের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই স্কুল।
কিছু না বলা শব্দ জমে থাকে বুকে,/ হিমেল নিঃশ্বাসে জমাট বাঁধে প্রশ্ন,/ আমি হাত বাড়াই নিশ্চিত দিনের দিকে—/ কিন্তু আঙুলে ধরা পড়ে শুধু অনিশ্চয়তা।
ন্যায়ের পথে হাঁটাই ইতিহাসে স্থায়ী হওয়ার একমাত্র উপায়। ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, দেহ থেমে যেতে পারে, কিন্তু আদর্শ টিকে থাকে। জননীতি সেই আদর্শেরই নাম, যেখানে ক্ষমতার চেয়ে মানুষের মর্যাদা বড়, আর ভোটের চেয়েও সম্মান মূল্যবান।
সাহিত্য কর্ম আর সমাজ সংস্কারক তাকে পরিণত বয়সে তার স্বামী দেখে যেতে পারেননি। কত আনন্দিতই না তিনি হতেন। আসলে নারী বা পুরুষ অনেকে অপরের পরিপূরক, প্রতিদ্বন্দ্বী নন, এটা যত তাড়াতাড়ি সবাই বোঝেন ততই ভালো।