logo
মতামত

আমাদের রোজার দিনগুলো

ফারহানা আহমেদ লিসা
ফারহানা আহমেদ লিসা৩০ মার্চ ২০২৫
Copied!
আমাদের রোজার দিনগুলো
লেখিকা। ছবি: লেখিকার পাঠানো

সানডিয়েগোতে বাংলাদেশিরাই আমার আর আমার দুই বাচ্চার পরিবার। দেশ থেকে বহু দূরে থাকি ছোট্ট এক টুকরো বাংলাদেশে যেন। যে কয় দিন কাজ করি, বাসায় এসে বাচ্চাদের সঙ্গে ইফতার করা একটু কঠিন হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় রোজার দিন তাই আমি আর বাচ্চারা ঠিক করলাম কাছের কয়েকটি পরিবার নিয়ে একসঙ্গে ইফতার করব। সব সময় ছুটির দিনে কারও না কারও বাসায় আমরা যাই। ইফতারের সময় একটু ভয় ছিল পারব তো? আধা ঘণ্টা আগে থেকেই বন্ধুরা আসা শুরু করল। এরপর ইফতারি সাজানো, কোন খাবার কখন বের করব, সব তারা নিজের কাঁধে তুলে নিলেন।

একসঙ্গে দোয়া, নামাজ পড়ে অপূর্ব মায়াময় একটা মাসের শুরু। ইনারামনি তার বাবা আর মাকে অসম্ভব ব‍্যস্ত রাখে। খুব চঞ্চল, আর সারা দিন ব‍্যথা পায়, আমাদের ভবিষ‍্যৎ আইনস্টাইন। সে ইফতারের খুশিতে শুরু করল নাচ। বাইরে তখন শুরু হয়েছে শিলাবৃষ্টি। কেউ কেউ চলে গেলেন মসজিদে তারাবিহ পড়তে। এক বছরের চারুলতা মায়ের সঙ্গে বসল বাসায়। আমার মেয়ে ‘রামাদান কারিম’ লেখা লাইট সাজিয়েছে।

IMG_7764

পরের সপ্তাহে কনির বাসায় গেলাম আমরা ইফতারে। দোয়ার পর জমজম কূপের পানি দিয়ে ইফতার শুরু করলাম। রোজা রেখে সব খাবার এত অপূর্ব করে রান্না করে পরিবেশন করা ওর পক্ষেই সম্ভব। ভালোবাসামাখা যে।

চার শনিবারে মুসলিম কমিউনিটি সেন্টারে বড় করে সবাইকে ইফতারি খাওয়ান সবাই, তিন শনিবার অন‍্য দেশিরা। একটা শনিবার আমাদের সবাই ইফতারি খাওয়াই। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ। খাবার আসে রেস্তোরাঁ থেকে, ফল সবাই কাটেন, গোছান।

গত শনিবার কাজ ছিল। যেতে পারিনি, নামাজ শেষে আমার আপা ঠিকই মসজিদের ইফতারি আমাদের দিয়েছেন বাসায় এসে। এই ইফতারির সঙ্গে সবাই বাড়তি টাকা দেন, মসজিদের জন‍্য। বেশ কয়েক বছর ধরে এ নিয়মই চলছে। জাকাত–ফিতরা সবাই দেশেই পাঠান, তবে অনেককে ঈদের নামাজের আগে ফিতরা মসজিদে দিতে দেখেছি। দেশে অনেকেই বিভিন্নভাবে ইফতারি খাওয়ান  মানুষকে। ফান্ড রেইজ করেন। পরবর্তী প্রজন্ম শিখছে। আমাদের আশা, নাড়ির টান সব সময় যেন থাকে ওদের মধ্যে।

আগে ছোট করে কয়েকটা হতো। আর গত বছর থেকে বড় করেই হচ্ছে চাঁদরাত উদ্‌যাপন। একদিকে ঈদের আনন্দে গান, অন‍্যদিকে মেহেদির রঙে সাজছে সবাই। স্থানীয় বেশ কিছু শিল্পী আছেন নাচগানের। সেই সঙ্গে ছোট বাচ্চাদের পরিবেশনা দেশের আনন্দমুখর দিনগুলোয় নিয়ে যায়। নজরুলের ‘বুলবুলি’ গানটা গাওয়ার খুব ইচ্ছা আছে, তবে সেই রাতেই হাসপাতালের কাজে কেউ সিক কল করেছে। আমাকে আগেভাগে বলে রেখেছে যেতে। আকুল আবেদন জানিয়েছি, কেউ যদি তোলে সে শিফটটা। না তুললে সারা রাত কাজ করে দিনে হবে ঈদ। কাছের মানুষগুলোকে দেখব—এ আনন্দ রাখি কোথায়।

সবাইকে আগাম ঈদ মোবারক। পৃথিবীতে আসুক শান্তি আর ভালোবাসা। সবাইকে নিয়ে আমরা যেন খুব ভালো থাকি।

আরও দেখুন

গবেষণায় বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন

গবেষণায় বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন

বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও গবেষণায় বিনিয়োগ এখনো সন্তোষজনক নয়। তবে কৃষিক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়। অন্য ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন গবেষণা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। প্রযুক্তি, চিকিৎসা, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ, খনিজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থাপনায় এখনো বড় ঘাটতি আছে।

১ দিন আগে

অটোগ্রাফের দিন

অটোগ্রাফের দিন

বসার ঘরে ঢুকতেই দেখি, বেগম খালেদা জিয়া বসে আছেন। সাদামাটা কিন্তু দীপ্তিময় পোশাকে। তার ভেতর একটা রাজকীয় নীরবতা, আবার এক মায়ের কোমলতা। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে হালকা মাথা নেড়ে বললেন, “এসো, বসো।”

৩ দিন আগে

গল্প: সোনালু ফুল নয় রোদ্রগন্ধা চিঠি

গল্প: সোনালু ফুল নয় রোদ্রগন্ধা চিঠি

মেঠো পথ ধরে সাইকেল চালিয়ে যায় বেনু। তার কানে বাজে আত্মহত্যা করার আগে মুকিতের লেখা শেষ চিঠির কথাগুলো, "তুমি বলেছিলে, আমার জন্য তুমি জীবন দেবেও না, নেবেও না। আমি রাখলাম কথা। শুধু চলে যাচ্ছি, চিরতরে...ভালো থেকো, শিউলি।"

৭ দিন আগে

ব্যাংকিং খাতে গভীর ক্ষত: বাংলাদেশ কি পুনরুদ্ধারের পথ খুঁজে পাবে?

ব্যাংকিং খাতে গভীর ক্ষত: বাংলাদেশ কি পুনরুদ্ধারের পথ খুঁজে পাবে?

জবাবদিহিতা ছাড়া কোনো সংস্কার সফল হবে না। যেকোনো অনিয়ম প্রকাশ পেলে দ্রুত তদন্ত, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি এবং বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এগুলো শুধু আইন প্রয়োগ নয়, বরং এক ধরনের মানসিক বার্তাও তৈরি করে যে অপরাধী রেহাই পায় না। বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে লুটপাটের প্রধান শক্তি ছিল বিচারহীনতা।

৮ দিন আগে