
ইজাজ আহসান

আমেরিকান ডলার শুধু একটি মুদ্রার নাম নয়—এটি একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক অস্ত্র। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ যেভাবে ডলারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, তার ইতিহাস শুরু হয়েছিল ১৯৪৪ সালের ব্রেটন উডস সম্মেলন থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে ৪৪টি দেশ সেই সময়ের সবচেয়ে স্থিতিশীল অর্থনীতি আমেরিকার ডলারকে আন্তর্জাতিক লেনদেনের প্রধান মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করে। তখন ডলারের মূল্য নির্ধারিত হতো সোনার সঙ্গে বাঁধা রেখে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো সোনার বিপরীতে নিজেদের মুদ্রার মান স্থির করত। কিন্তু যুদ্ধের খরচ মেটাতে গিয়ে সেই সোনার ভাণ্ডার দ্রুত কমে যায়। বিপরীতে আমেরিকার ভাণ্ডারে সোনার মজুত বেড়ে যায় এবং ডলার হয়ে ওঠে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মুদ্রা। ব্রেটন উডসের পর তেলের লেনদেনও ডলারে হওয়ায় ডলারের শক্তি আরও বৃদ্ধি পায়।
সোনার মান বাতিল ও কাগুজে ডলার
১৯৭১ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন হঠাৎ করেই ডলারের সোনার মান বাতিল করেন। এর ফলে ডলার হয়ে যায় ফিয়াট কারেন্সি—অর্থাৎ সরকারের ঘোষণায় মূল্যবান, কিন্তু কোনো সম্পদের সঙ্গে সরাসরি বাঁধা নয়। আমেরিকা তখন থেকে ইচ্ছেমতো ডলার ছাপানোর ক্ষমতা পেয়ে যায়। তবুও বিশ্বের আর্থিক স্থিতিশীলতার খাতিরে দেশগুলো ডলারের ওপরই নির্ভর করতে থাকে।
ডলারের ক্ষমতার অন্ধকার দিক
ডলারের এই আধিপত্য আমেরিকাকে এক ধরনের বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণক্ষমতা দিয়েছে। কোনো দেশকে শাস্তি দিতে চাইলে তারা সহজেই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করে, এমনকি আন্তর্জাতিক লেনদেন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। উত্তর কোরিয়া, ইরান, ভেনেজুয়েলা বা সিরিয়ার মতো দেশগুলো এর উদাহরণ।
কিন্তু ইতিহাস বলে—কোনো সাম্রাজ্যই স্থায়ী নয়। ডলারের ক্ষেত্রেও পতনের ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে।
ডলার কেন চাপের মুখে?
১. আমেরিকার বিশাল ঋণ: আমেরিকান সরকারের মোট ঋণ এখন প্রায় ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার এবং শুধু সুদ পরিশোধেই বছরে লাগে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার। এটি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়।
২. বাজেট ঘাটতি: আমেরিকার সরকার যে পরিমাণ আয় করে, তার চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। ঘাটতি পূরণ করতে নতুন ঋণ নিতে হয়—যা সমস্যা আরও বাড়ায়।
৩. ক্রেডিট রেটিং কমে যাওয়া: মুডিস আমেরিকান রেটিং এএএ থেকে কমিয়ে এএ১ করেছে। রেটিং কমলে ঋণের সুদের হার বাড়ে—অর্থাৎ সমস্যার ওপর সমস্যা।
৪. সোনার দাম বেড়ে যাওয়া: বিশ্বজুড়ে সোনার দাম দ্রুত বাড়ছে। চীন ও ভারত বিপুল পরিমাণ সোনা কিনছে। এটা সাধারণত ডলারের প্রতি আস্থাহীনতার ইঙ্গিত।
৫. ব্রিকস জোটের বিকল্প মুদ্রা উদ্যোগ: ব্রিকস (BRICS) দেশগুলো এমন একটি লেনদেনব্যবস্থা গড়ার কথা ভাবছে যেখানে আমেরিকান ডলারের ভূমিকা কমে যাবে। যদিও রাতারাতি এটি সম্ভব নয়, তবুও এটি ভবিষ্যতে বড় চ্যালেঞ্জ।
৬. ক্রিপ্টোকারেন্সির উত্থান: এখনো অনিশ্চিত হলেও, বিকল্প ডিজিটাল মুদ্রা বিষয়ে বিশ্বব্যাপী আগ্রহ বাড়ছে।
ডলার দুর্বল হলে বিশ্বে কী ঘটবে?
১. বিশ্ব অর্থনীতি বড় ধাক্কা খাবে।
২. যেসব দেশ ডলার–রিজার্ভে ভর করে আছে—তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে (যেমন চীন, জাপান, রাশিয়া ইত্যাদি)।
৩. বাংলাদেশও বড় ঝুঁকিতে পড়বে
*গার্মেন্টস রপ্তানি
*প্রবাসী আয়
*রিজার্ভের মূল্য
সবকিছুই সরাসরি প্রভাবিত হবে।
বাংলাদেশের করণীয়
*রিজার্ভে সোনার পরিমাণ বাড়ানো
*ডলারনির্ভরতা কমিয়ে ইউরো, ইউয়ান ও অন্য মুদ্রায় রিজার্ভ রাখা
*আঞ্চলিক বাণিজ্যে স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়ানো
*অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য বাড়ানো
ডলারের ভবিষ্যৎ: শেষ নাকি রূপান্তর?
ডলারের আধিপত্য সঙ্গে সঙ্গে শেষ হবে না। তবে সত্য হলো—ডলারের সর্বশক্তিমান অবস্থান আজ আগের মতো আর অটুট নেই।
আমেরিকার অতি-আত্মবিশ্বাস, অতিরিক্ত ঋণ, যুদ্ধব্যয় ও বৈশ্বিক একচেটিয়াভাবে শক্তি প্রয়োগ—এ সবই দীর্ঘমেয়াদে এর পতনকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
ইতিহাস বলে—যেকোনো শক্তি যখন সীমাহীন ক্ষমতা ব্যবহার করে, তার পতন নিশ্চিত হয়।
ডলার আজ সেই পথেই চলছে কি না—তা সময়ই বলে দেবে।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*লেখক বিভাগীয় প্রধান (ব্যবসা শিক্ষা), বাংলাদেশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাস্কাট, ওমান।
ইমেইলঃ [email protected]

আমেরিকান ডলার শুধু একটি মুদ্রার নাম নয়—এটি একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক অস্ত্র। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ যেভাবে ডলারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, তার ইতিহাস শুরু হয়েছিল ১৯৪৪ সালের ব্রেটন উডস সম্মেলন থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে ৪৪টি দেশ সেই সময়ের সবচেয়ে স্থিতিশীল অর্থনীতি আমেরিকার ডলারকে আন্তর্জাতিক লেনদেনের প্রধান মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করে। তখন ডলারের মূল্য নির্ধারিত হতো সোনার সঙ্গে বাঁধা রেখে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো সোনার বিপরীতে নিজেদের মুদ্রার মান স্থির করত। কিন্তু যুদ্ধের খরচ মেটাতে গিয়ে সেই সোনার ভাণ্ডার দ্রুত কমে যায়। বিপরীতে আমেরিকার ভাণ্ডারে সোনার মজুত বেড়ে যায় এবং ডলার হয়ে ওঠে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মুদ্রা। ব্রেটন উডসের পর তেলের লেনদেনও ডলারে হওয়ায় ডলারের শক্তি আরও বৃদ্ধি পায়।
সোনার মান বাতিল ও কাগুজে ডলার
১৯৭১ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন হঠাৎ করেই ডলারের সোনার মান বাতিল করেন। এর ফলে ডলার হয়ে যায় ফিয়াট কারেন্সি—অর্থাৎ সরকারের ঘোষণায় মূল্যবান, কিন্তু কোনো সম্পদের সঙ্গে সরাসরি বাঁধা নয়। আমেরিকা তখন থেকে ইচ্ছেমতো ডলার ছাপানোর ক্ষমতা পেয়ে যায়। তবুও বিশ্বের আর্থিক স্থিতিশীলতার খাতিরে দেশগুলো ডলারের ওপরই নির্ভর করতে থাকে।
ডলারের ক্ষমতার অন্ধকার দিক
ডলারের এই আধিপত্য আমেরিকাকে এক ধরনের বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণক্ষমতা দিয়েছে। কোনো দেশকে শাস্তি দিতে চাইলে তারা সহজেই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করে, এমনকি আন্তর্জাতিক লেনদেন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। উত্তর কোরিয়া, ইরান, ভেনেজুয়েলা বা সিরিয়ার মতো দেশগুলো এর উদাহরণ।
কিন্তু ইতিহাস বলে—কোনো সাম্রাজ্যই স্থায়ী নয়। ডলারের ক্ষেত্রেও পতনের ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে।
ডলার কেন চাপের মুখে?
১. আমেরিকার বিশাল ঋণ: আমেরিকান সরকারের মোট ঋণ এখন প্রায় ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার এবং শুধু সুদ পরিশোধেই বছরে লাগে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার। এটি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়।
২. বাজেট ঘাটতি: আমেরিকার সরকার যে পরিমাণ আয় করে, তার চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। ঘাটতি পূরণ করতে নতুন ঋণ নিতে হয়—যা সমস্যা আরও বাড়ায়।
৩. ক্রেডিট রেটিং কমে যাওয়া: মুডিস আমেরিকান রেটিং এএএ থেকে কমিয়ে এএ১ করেছে। রেটিং কমলে ঋণের সুদের হার বাড়ে—অর্থাৎ সমস্যার ওপর সমস্যা।
৪. সোনার দাম বেড়ে যাওয়া: বিশ্বজুড়ে সোনার দাম দ্রুত বাড়ছে। চীন ও ভারত বিপুল পরিমাণ সোনা কিনছে। এটা সাধারণত ডলারের প্রতি আস্থাহীনতার ইঙ্গিত।
৫. ব্রিকস জোটের বিকল্প মুদ্রা উদ্যোগ: ব্রিকস (BRICS) দেশগুলো এমন একটি লেনদেনব্যবস্থা গড়ার কথা ভাবছে যেখানে আমেরিকান ডলারের ভূমিকা কমে যাবে। যদিও রাতারাতি এটি সম্ভব নয়, তবুও এটি ভবিষ্যতে বড় চ্যালেঞ্জ।
৬. ক্রিপ্টোকারেন্সির উত্থান: এখনো অনিশ্চিত হলেও, বিকল্প ডিজিটাল মুদ্রা বিষয়ে বিশ্বব্যাপী আগ্রহ বাড়ছে।
ডলার দুর্বল হলে বিশ্বে কী ঘটবে?
১. বিশ্ব অর্থনীতি বড় ধাক্কা খাবে।
২. যেসব দেশ ডলার–রিজার্ভে ভর করে আছে—তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে (যেমন চীন, জাপান, রাশিয়া ইত্যাদি)।
৩. বাংলাদেশও বড় ঝুঁকিতে পড়বে
*গার্মেন্টস রপ্তানি
*প্রবাসী আয়
*রিজার্ভের মূল্য
সবকিছুই সরাসরি প্রভাবিত হবে।
বাংলাদেশের করণীয়
*রিজার্ভে সোনার পরিমাণ বাড়ানো
*ডলারনির্ভরতা কমিয়ে ইউরো, ইউয়ান ও অন্য মুদ্রায় রিজার্ভ রাখা
*আঞ্চলিক বাণিজ্যে স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়ানো
*অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য বাড়ানো
ডলারের ভবিষ্যৎ: শেষ নাকি রূপান্তর?
ডলারের আধিপত্য সঙ্গে সঙ্গে শেষ হবে না। তবে সত্য হলো—ডলারের সর্বশক্তিমান অবস্থান আজ আগের মতো আর অটুট নেই।
আমেরিকার অতি-আত্মবিশ্বাস, অতিরিক্ত ঋণ, যুদ্ধব্যয় ও বৈশ্বিক একচেটিয়াভাবে শক্তি প্রয়োগ—এ সবই দীর্ঘমেয়াদে এর পতনকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
ইতিহাস বলে—যেকোনো শক্তি যখন সীমাহীন ক্ষমতা ব্যবহার করে, তার পতন নিশ্চিত হয়।
ডলার আজ সেই পথেই চলছে কি না—তা সময়ই বলে দেবে।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*লেখক বিভাগীয় প্রধান (ব্যবসা শিক্ষা), বাংলাদেশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাস্কাট, ওমান।
ইমেইলঃ [email protected]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো সোনার বিপরীতে নিজেদের মুদ্রার মান স্থির করত। কিন্তু যুদ্ধের খরচ মেটাতে গিয়ে সেই সোনার ভাণ্ডার দ্রুত কমে যায়। বিপরীতে আমেরিকার ভাণ্ডারে সোনার মজুত বেড়ে যায় এবং ডলার হয়ে ওঠে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মুদ্রা।
প্রবাসীরা দীর্ঘদিন থেকে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে আইনি বিধানের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। নানা সময়ে তাদের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। চব্বিশ পরবর্তী নতুন নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে এই দাবি বাস্তবায়িত হবে বলে আশা ছিল প্রবাসীদের।
ইতিহাস এখানে মার্বেলের মতো ঠান্ডা,/ তবু তার ভিতরে বেজে ওঠে উষ্ণ নদীর ধ্বনি।/ একজন ভিয়েনীয় কবি জিজ্ঞেস করেন/ “তোমার নদীগুলো কি আজও গান গায়?”/ আমি হেসে বলি—/ “তারা এখনো ভালোবাসে, কিন্তু মুখে কিছু বলে না।”
ড্রোন নিয়মিত উড়িয়ে সড়ক, সেতু, স্কুল, হাসপাতালের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা যায়। সময়ভিত্তিক ভিডিও ও জিওট্যাগড ছবির মাধ্যমে তদারকি সংস্থাগুলো সহজেই বুঝতে পারে কাজ সঠিক গতিতে এগোচ্ছে কি না।