

সৈয়দ ইজাজ আহসান

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারত উপমহাদেশে প্রথমে এসেছিল ব্যবসা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে। পরবর্তীতে তারা রাজদণ্ডও দখল করে। তবে একটি বিষয় তারা খুব ভালোভাবেই বুঝেছিল—শুধু শক্তির জোরে এই বিপুল জনসংখ্যাকে দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। মানুষকে শাসন করতে হলে তাদের জানতে হবে, বুঝতে হবে, আর সেই সঙ্গে প্রভাব ফেলতে হবে তাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির ওপর। এই লক্ষ্যেই তারা শিক্ষা ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে।
এই উদ্দেশ্যে ১৭৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ক্যালকাটা মোহামেডান কলেজ, যা ওয়ারেন হেস্টিংসের উদ্যোগে গড়ে ওঠে। বর্তমানে এটি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা নামে সুপরিচিত। এর বাইরে ব্রিটিশরা আরও বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিল, যার তালিকা দীর্ঘ। এই প্রসঙ্গ টানার মূল কারণ হলো—শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে একটি দেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিস্তার করতে পারে, তা অনুধাবন করা।
বাংলাদেশেও বহু বিদেশি সংস্থা, বিশেষ করে খ্রিস্টান মিশনারিরা, মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। নটর ডেম কলেজ, সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুল, হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হারমান মাইনর স্কুল—এগুলো তার উজ্জ্বল উদাহরণ। বাংলাদেশে বহু বিদেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে এবং এখনো করছে, কিন্তু আমরা তাদের নাম খুব কমই জানি। অথচ নটর ডেম কলেজ বা হলিক্রস কলেজের নাম বললে দেশের প্রায় সবাই চেনে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আজ রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ফলে যে দেশগুলো এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে, তাদের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়েছে।
বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরির কথা সবাই জানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ফুলার রোডে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে লাইব্রেরি সেবা ও ইংরেজি ভাষাভিত্তিক শিক্ষা সহায়তা দিয়ে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা ব্যাপক জনপ্রিয়। অ্যাডেক্সসেল ও কেমব্রিজ বোর্ডের অধীনে বহু শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। প্রায় দুই শতাব্দী আগে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হলেও শিক্ষা ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব আজও সমানভাবে বিদ্যমান। এক সময় বলা হতো—সান নেভার সেটস অন দ্য ব্রিটিশ এমপায়ার। সাম্রাজ্য নেই, কিন্তু তাদের শিক্ষা-প্রভাবের আলো এখনো বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত।
এই আলোচনার প্রেক্ষাপটেই বলা যায়—বাংলাদেশেরও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিদেশের মাটিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে, যা অনেকেরই অজানা। প্রতিষ্ঠানটির নাম বাংলাদেশ স্কুল মাস্কাট। এটি ইংরেজি মাধ্যম অ্যাডেক্সসেল কারিকুলামের অধীনে পরিচালিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ওমানের রাজধানী মাস্কাটের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই স্কুলে শিশু শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে।

বাংলাদেশ স্কুল মাস্কাটের অধীনে আরও কয়েকটি শাখা প্রতিষ্ঠান রয়েছে—সোহার, সাহাম, জালান সিনা প্রভৃতি স্থানে। এর মধ্যে সাহাম স্কুল অ্যান্ড কলেজ বাংলাদেশি কারিকুলামের ইংরেজি ভার্সন অনুসরণ করে, আর অন্যগুলো অ্যাডেক্সসেল কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষা প্রদান করে। বিদেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে কমিউনিটি এডুকেশন ইনস্টিটিউট বলা হয়, যা প্রবাসী নাগরিকদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য গড়ে তোলা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ স্কুল মাস্কাটও ২০০৪ সালে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই স্কুলের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো—এখানে বহুজাতিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সমন্বয় রয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষকদের পাশাপাশি ঘানা, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ওমানের শিক্ষকেরা পাঠদান করছেন। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশসহ নানা দেশের শিক্ষার্থীরাও এখানে অধ্যয়ন করছে। ফলে এটি একটি বাংলাদেশি কমিউনিটি প্রতিষ্ঠান হলেও কার্যত একটি আন্তর্জাতিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রূপ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি অ্যাডেক্সসেল বোর্ডের অনুমোদিত পরীক্ষা কেন্দ্র হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য অন্য কোথাও যেতে হয় না।
স্কুলটি সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হয়। কোভিড-১৯ মহামারির সময় প্রতিষ্ঠানটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। মাস্কাট শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বিশাল ক্যাম্পাস, সবুজ প্রাকৃতিক ঘাসের খেলার মাঠ—সব মিলিয়ে এটি দেশি-বিদেশি সবার কাছে সুনাম অর্জন করেছে এবং মরুর বুকে বাংলাদেশের পতাকাবাহী এক অনন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের সক্ষমতার প্রমাণ দিচ্ছে।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশে উচ্চশিক্ষা অত্যন্ত ব্যয়বহুল—ওমানও এর ব্যতিক্রম নয়। ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর পক্ষে উচ্চশিক্ষার ব্যয় বহন করা সম্ভব হয় না। আফ্রিকা ও অন্য স্বল্পোন্নত দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা বিদ্যমান। এই বাস্তবতায় স্কুল পরিচালনা পর্ষদ সার্বিক উন্নয়নের জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে একক উদ্যোগে বিদেশের মাটিতে বড় পরিসরে কিছু করা কঠিন।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় যদি এখানে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম চালু করা যায়, তাহলে প্রবাসী শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। সরকার প্রবাসী কল্যাণে আন্তরিক—প্রবাসী আয়ের ওপর ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা, বিমানবন্দরে নানা সুবিধা তার প্রমাণ। একইভাবে বিদেশে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিও নজর দিলে দীর্ঘমেয়াদে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ধীরে ধীরে বিদেশি শ্রমের ওপর নির্ভরতা কমাচ্ছে। ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হলে দেশে কর্মসংস্থান বাড়বে এবং মানুষ দেশত্যাগে কম আগ্রহী হবে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যাবে—সেই দেশে দেশের এক ধরনের শিক্ষাদূত হিসেবে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, যে দেশে বা যে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে, সেই দেশের প্রতি তাদের এক ধরনের স্বাভাবিক মমত্ববোধ গড়ে ওঠে। এ কারণেই একসময় সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা বিস্তারের জন্য বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিত।
শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রভাব তাই অস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী—Pen is mightier than sword। আমরা আশাবাদী, বাংলাদেশ স্কুল মাস্কাট ভবিষ্যতে উপসাগরীয় অঞ্চলের একটি প্রভাবশালী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে এবং মরুর বুকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাবে।
*ইজাজ আহসান: ইমেইলঃ <[email protected]>, Facebook ID: Syed Ahsan

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারত উপমহাদেশে প্রথমে এসেছিল ব্যবসা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে। পরবর্তীতে তারা রাজদণ্ডও দখল করে। তবে একটি বিষয় তারা খুব ভালোভাবেই বুঝেছিল—শুধু শক্তির জোরে এই বিপুল জনসংখ্যাকে দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। মানুষকে শাসন করতে হলে তাদের জানতে হবে, বুঝতে হবে, আর সেই সঙ্গে প্রভাব ফেলতে হবে তাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির ওপর। এই লক্ষ্যেই তারা শিক্ষা ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে।
এই উদ্দেশ্যে ১৭৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ক্যালকাটা মোহামেডান কলেজ, যা ওয়ারেন হেস্টিংসের উদ্যোগে গড়ে ওঠে। বর্তমানে এটি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা নামে সুপরিচিত। এর বাইরে ব্রিটিশরা আরও বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিল, যার তালিকা দীর্ঘ। এই প্রসঙ্গ টানার মূল কারণ হলো—শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে একটি দেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিস্তার করতে পারে, তা অনুধাবন করা।
বাংলাদেশেও বহু বিদেশি সংস্থা, বিশেষ করে খ্রিস্টান মিশনারিরা, মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। নটর ডেম কলেজ, সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুল, হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হারমান মাইনর স্কুল—এগুলো তার উজ্জ্বল উদাহরণ। বাংলাদেশে বহু বিদেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে এবং এখনো করছে, কিন্তু আমরা তাদের নাম খুব কমই জানি। অথচ নটর ডেম কলেজ বা হলিক্রস কলেজের নাম বললে দেশের প্রায় সবাই চেনে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আজ রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ফলে যে দেশগুলো এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে, তাদের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়েছে।
বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরির কথা সবাই জানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ফুলার রোডে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে লাইব্রেরি সেবা ও ইংরেজি ভাষাভিত্তিক শিক্ষা সহায়তা দিয়ে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা ব্যাপক জনপ্রিয়। অ্যাডেক্সসেল ও কেমব্রিজ বোর্ডের অধীনে বহু শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। প্রায় দুই শতাব্দী আগে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হলেও শিক্ষা ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব আজও সমানভাবে বিদ্যমান। এক সময় বলা হতো—সান নেভার সেটস অন দ্য ব্রিটিশ এমপায়ার। সাম্রাজ্য নেই, কিন্তু তাদের শিক্ষা-প্রভাবের আলো এখনো বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত।
এই আলোচনার প্রেক্ষাপটেই বলা যায়—বাংলাদেশেরও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিদেশের মাটিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে, যা অনেকেরই অজানা। প্রতিষ্ঠানটির নাম বাংলাদেশ স্কুল মাস্কাট। এটি ইংরেজি মাধ্যম অ্যাডেক্সসেল কারিকুলামের অধীনে পরিচালিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ওমানের রাজধানী মাস্কাটের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই স্কুলে শিশু শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে।

বাংলাদেশ স্কুল মাস্কাটের অধীনে আরও কয়েকটি শাখা প্রতিষ্ঠান রয়েছে—সোহার, সাহাম, জালান সিনা প্রভৃতি স্থানে। এর মধ্যে সাহাম স্কুল অ্যান্ড কলেজ বাংলাদেশি কারিকুলামের ইংরেজি ভার্সন অনুসরণ করে, আর অন্যগুলো অ্যাডেক্সসেল কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষা প্রদান করে। বিদেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে কমিউনিটি এডুকেশন ইনস্টিটিউট বলা হয়, যা প্রবাসী নাগরিকদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য গড়ে তোলা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ স্কুল মাস্কাটও ২০০৪ সালে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই স্কুলের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো—এখানে বহুজাতিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সমন্বয় রয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষকদের পাশাপাশি ঘানা, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ওমানের শিক্ষকেরা পাঠদান করছেন। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশসহ নানা দেশের শিক্ষার্থীরাও এখানে অধ্যয়ন করছে। ফলে এটি একটি বাংলাদেশি কমিউনিটি প্রতিষ্ঠান হলেও কার্যত একটি আন্তর্জাতিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রূপ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি অ্যাডেক্সসেল বোর্ডের অনুমোদিত পরীক্ষা কেন্দ্র হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য অন্য কোথাও যেতে হয় না।
স্কুলটি সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হয়। কোভিড-১৯ মহামারির সময় প্রতিষ্ঠানটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। মাস্কাট শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বিশাল ক্যাম্পাস, সবুজ প্রাকৃতিক ঘাসের খেলার মাঠ—সব মিলিয়ে এটি দেশি-বিদেশি সবার কাছে সুনাম অর্জন করেছে এবং মরুর বুকে বাংলাদেশের পতাকাবাহী এক অনন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের সক্ষমতার প্রমাণ দিচ্ছে।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশে উচ্চশিক্ষা অত্যন্ত ব্যয়বহুল—ওমানও এর ব্যতিক্রম নয়। ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর পক্ষে উচ্চশিক্ষার ব্যয় বহন করা সম্ভব হয় না। আফ্রিকা ও অন্য স্বল্পোন্নত দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা বিদ্যমান। এই বাস্তবতায় স্কুল পরিচালনা পর্ষদ সার্বিক উন্নয়নের জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে একক উদ্যোগে বিদেশের মাটিতে বড় পরিসরে কিছু করা কঠিন।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় যদি এখানে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম চালু করা যায়, তাহলে প্রবাসী শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। সরকার প্রবাসী কল্যাণে আন্তরিক—প্রবাসী আয়ের ওপর ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা, বিমানবন্দরে নানা সুবিধা তার প্রমাণ। একইভাবে বিদেশে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিও নজর দিলে দীর্ঘমেয়াদে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ধীরে ধীরে বিদেশি শ্রমের ওপর নির্ভরতা কমাচ্ছে। ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হলে দেশে কর্মসংস্থান বাড়বে এবং মানুষ দেশত্যাগে কম আগ্রহী হবে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যাবে—সেই দেশে দেশের এক ধরনের শিক্ষাদূত হিসেবে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, যে দেশে বা যে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে, সেই দেশের প্রতি তাদের এক ধরনের স্বাভাবিক মমত্ববোধ গড়ে ওঠে। এ কারণেই একসময় সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা বিস্তারের জন্য বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিত।
শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রভাব তাই অস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী—Pen is mightier than sword। আমরা আশাবাদী, বাংলাদেশ স্কুল মাস্কাট ভবিষ্যতে উপসাগরীয় অঞ্চলের একটি প্রভাবশালী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে এবং মরুর বুকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাবে।
*ইজাজ আহসান: ইমেইলঃ <[email protected]>, Facebook ID: Syed Ahsan
বাংলাদেশেরও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিদেশের মাটিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে, যা অনেকেরই অজানা। প্রতিষ্ঠানটির নাম বাংলাদেশ স্কুল মাস্কাট। এটি ইংরেজি মাধ্যম অ্যাডেক্সসেল কারিকুলামের অধীনে পরিচালিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ওমানের রাজধানী মাস্কাটের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই স্কুল।
কিছু না বলা শব্দ জমে থাকে বুকে,/ হিমেল নিঃশ্বাসে জমাট বাঁধে প্রশ্ন,/ আমি হাত বাড়াই নিশ্চিত দিনের দিকে—/ কিন্তু আঙুলে ধরা পড়ে শুধু অনিশ্চয়তা।
ন্যায়ের পথে হাঁটাই ইতিহাসে স্থায়ী হওয়ার একমাত্র উপায়। ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, দেহ থেমে যেতে পারে, কিন্তু আদর্শ টিকে থাকে। জননীতি সেই আদর্শেরই নাম, যেখানে ক্ষমতার চেয়ে মানুষের মর্যাদা বড়, আর ভোটের চেয়েও সম্মান মূল্যবান।
সাহিত্য কর্ম আর সমাজ সংস্কারক তাকে পরিণত বয়সে তার স্বামী দেখে যেতে পারেননি। কত আনন্দিতই না তিনি হতেন। আসলে নারী বা পুরুষ অনেকে অপরের পরিপূরক, প্রতিদ্বন্দ্বী নন, এটা যত তাড়াতাড়ি সবাই বোঝেন ততই ভালো।