logo
মতামত

ওয়াশিংটনে ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তি আলোচনা: ভূখণ্ড লেনদেনের বিপদ

সহিদুল আলম  স্বপন, জেনেভা, সুইজারল্যান্ড
সহিদুল আলম স্বপন, জেনেভা, সুইজারল্যান্ড১৯ আগস্ট ২০২৫
Copied!
ওয়াশিংটনে ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তি আলোচনা: ভূখণ্ড লেনদেনের বিপদ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউরোপীয় নেতাদের বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান নেতারা গতকাল (১৮ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের সমাধানের সম্ভাব্য পথ নিয়ে আলোচনা করতে।

এই আলোচনার কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল ভূখণ্ড লেনদেনের সম্ভাবনা, বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল রাশিয়াকে হস্তান্তর। শান্তি ও যুদ্ধ সমাপ্তির প্রচেষ্টা হিসেবে এর উদ্দেশ্য থাকতে পারে, কিন্তু এই ধরনের ভূখণ্ড লেনদেনের পরিণতি গভীরভাবে মূল্যায়ন করা আবশ্যক।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও আইনগত বিবেচনা

ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা সংবিধানে সুরক্ষিত। যা রাষ্ট্রীয় গণভোট ছাড়া কোনো সীমান্ত পরিবর্তনকে অনুমোদন দেয় না। রাশিয়াকে ভূখণ্ড হস্তান্তরের প্রস্তাব শুধুমাত্র এই সংবিধানিক বিধি লঙ্ঘন করে না, বরং আন্তর্জাতিক সংঘাত সমাধানের ক্ষেত্রে একটি বিপজ্জনক উদাহরণ স্থাপন করে। এই ধরনের পদক্ষেপ আগ্রাসী রাষ্ট্রগুলোকে আশা দিতে পারে যে, ভবিষ্যতে তারা ভূখণ্ড সম্প্রসারণের মাধ্যমে আলোচনার সুযোগ পাবে।

সুরক্ষা ও কৌশলগত প্রভাব

দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের ভূখণ্ড ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চল হস্তান্তর করলে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে যাবে এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও জনগণ আরও ঝুঁকিতে পড়তে পারে। যদিও সমর্থকেরা বলে যে ভূখণ্ড লেনদেন যুদ্ধকে স্থগিত করতে পারে, দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ঝুঁকি উপেক্ষা করা যায় না।

জনমত ও জাতীয় ঐক্য

ইউক্রেনের জনগণ যেকোনো ভূখণ্ড সমঝোতার কঠোর বিরোধী। জনমত জরিপে দেখা গেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ ইউক্রেনীয়রা ভূখণ্ড হস্তান্তরকে জাতীয় সার্বভৌমত্বের বিশ্বাসঘাতকতা ও আগ্রাসীর পুরস্কার হিসেবে দেখেন। ইউক্রেনের সরকার ভূখণ্ড সমঝোতা করলে দেশজুড়ে অসন্তোষ এবং জাতীয় ঐক্যের ক্ষয় ঘটতে পারে।

আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও ভূমিকা

আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা সংঘাত সমাধানে সহায়ক হতে পারে, তবে কোনো শান্তি চুক্তি অবশ্যই সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ড অখণ্ডতার নীতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। বহিরাগত শক্তির অংশগ্রহণের লক্ষ্য হওয়া উচিত সংলাপকে সহজতর করা এবং ইউক্রেনের স্বনির্ধারণের অধিকার সমর্থন করা। এর মাধ্যমে যেন ভূখণ্ড লেনদেনের চাপ তৈরি করা নয়।

যুদ্ধ শেষ করার আকাঙ্ক্ষা স্বাভাবিক হলেও, প্রস্তাবিত ভূখণ্ড লেনদেনের সঙ্গে আইনি এবং নিরাপত্তা ও নৈতিক ঝুঁকি জড়িত। ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং ভূখণ্ড অখণ্ডতা কোনো আলোচনা বা চাপের শর্তে ছাড় দেওয়া যায় না। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা উচিত এমন একটি ন্যায়সম্মত এবং স্থায়ী শান্তি অর্জনের দিকে মনোনিবেশ করা, যা এই নীতিগুলো রক্ষা করবে।

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

*লেখক সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংকিং আর্থিক অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং কলামিস্ট ও কবি

আরও পড়ুন

আত্মীয়তা রক্তে নয়, আত্মায়—সম্পর্কের প্রকৃত মানে

আত্মীয়তা রক্তে নয়, আত্মায়—সম্পর্কের প্রকৃত মানে

আত্মার আত্মীয়তা জোর করে হয় না। এটি সময়, অভিজ্ঞতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠে। কখনো কোনো কথায়, কখনো এক মুহূর্তের সহানুভূতিতে—মন থেকে মন যুক্ত হয়।

১৬ ঘণ্টা আগে

প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা

প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা

জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র চার মাস বাকি আছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু সম্পন্ন করা নির্বাচন কমিশনের জন্য কঠিন একটা কাজ হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। পাশাপাশি এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক ভুলভ্রান্তিও হতে পারে। কিন্তু তাই বলে, এটার অজুহাতে প্রবাসীদের ভোটাধিকারে বঞ্চিত করা কি সংগত হবে?

১৭ ঘণ্টা আগে

ভোট বিদেশে, দায় দেশে: প্রবাসীদের ভোট ও গণতন্ত্রের পরীক্ষা

ভোট বিদেশে, দায় দেশে: প্রবাসীদের ভোট ও গণতন্ত্রের পরীক্ষা

বিশ্বব্যাপী অভিজ্ঞতা বলে, অনেক দেশে প্রবাসী নাগরিকেরা দূতাবাসে গিয়ে আগেভাগে ভোট দেন বা ডাক-ভোটের ব্যবস্থা ব্যবহার করেন। তাতে ভোটারদের আইনগত অধিকার রক্ষা পায়, কিন্তু অংশগ্রহণের হার সাধারণত স্থায়ী বসবাসকারী ভোটারদের তুলনায় কম থাকে।

৩ দিন আগে

আজীবন শেখা ও স্বপ্ন দেখার শক্তি: মানুষকে নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায়

আজীবন শেখা ও স্বপ্ন দেখার শক্তি: মানুষকে নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায়

শেখা মানে শুধু বই পড়া বা ক্লাসে পাঠ শোনা নয়; বরং জীবনকে বোঝা, অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং নিজেকে প্রতিনিয়ত নবায়ন করা। প্রকৃতি, সমাজ, মানুষ—সবাই আমাদের শিক্ষক।

৩ দিন আগে