

ফারহানা আহমেদ লিসা

শিক্ষক দিবস চলে গেল। গতকাল ৫ অক্টোবর ছিল শিক্ষক দিবস। কত কত সুন্দর স্মৃতি মনে উঁকি দিচ্ছে। বর্ণিল জীবন। ছোটবেলায় পাঠ্য ছিল স্যান্ডস অব ডি কবিতা। ইংরেজি কবিতা আবৃতি প্রতিযোগিতায় এই কবিতা আবৃতি করে হলাম প্রথম। কী আনন্দ।
পরদিন রফিক স্যার পড়াতে এসে বললেন, শুধু কবিতা আবৃতি করলে হবে? গানও জানতে হয়। তারপর গান ধরলেন, ‘হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ–পথে কুড়াই ঝরা ভুল, একেলা আমি’।
আব্বু–আম্মি ছুটে এলেন, বেসুরো গলায় কে এই গান গায় জানতে। পরে বকা খেলাম আমি। পড়া বাদ দিয়ে গানের প্রসঙ্গ নির্ঘাত আমি এনেছি। মানে নামকরা ফাঁকিবাজ ছিলাম তো!
আমাদের সুইমিং টিচারকে আমরা কাকু ডাকতাম। সাঁতার শিখিয়েছেন তিনি ঠিকই, কিন্তু তার শিক্ষা পদ্ধতি ছিল ভয়ের। বিশাল পুলের মাঝে ফেলে দিতেন, পানি খেয়ে সাঁতার শেখা। পরবর্তীতে আমেরিকা এসে পানির ওপর পা ছপাত ছপাত করে আমাকে সাঁতার কাটতে দেখে ট্রিনা জিজ্ঞেস করেছিল, এ কেমন সাঁতার? বলেছিলাম, ফ্রি স্টাইল সাঁতার ট্রিনা।
তপন স্যার ছিলেম অংকের শিক্ষক। সাইকেল চালিয়ে পড়াতে আসতেন। এক দিন সাইকেলের চাবি ফেলে গিয়েছিলেন। আমাদেরকে পড়ানো শেষ করে বাসায় যাবার আগে, চাবি নিতে এসে দেখেন, আমি দাদাকে অভিনয় করে দেখাচ্ছি, এক চামচ ভাজা চিড়া মুখে দিয়ে মাথা নেড়ে নেড়ে কীভাবে একটু আগেই স্যার বলছিলেন, লিসা এই যে ক্লাস এইটে সেকেন্ড গ্রেডে বৃত্তি পেলে, সারাদিন খেল, পুরোপুরি চেষ্টা করো না। জানো তো, না করে যে পেতে চায়, দুঃখ তার পিছে ধায়।
স্যার পেছন থেকে বললেন ভালো ভালো, খুব ভালো সিনেমাতে বেশ নাম করবে ভবিষ্যতে। ভয় পেয়ে অতঃপর চিড়া নিচে ফেলে পিঁপড়াকে দাওয়াত দিয়ে মার কাছে ভবিষ্যত ঝরঝরা জাতীয় কথাগুলা শুনে হজম করতে বেশ কষ্ট হয়েছিল।
তো দিন কয়েক পরে দেখলাম স্যার পড়াতে আসছেন, কেন যেন পায়ে হেঁটে। বুঝলাম প্রতিশোধ নেওয়ার এই সুযোগ। সাইকেল নিয়ে আমি তখন বাইরে। স্যার হেঁটে কাছাকাছি এসে ডাকবেন, আমিও দিই স্পিড বাড়িয়ে। স্যার হন্তদন্ত হয়ে কাছে আসেন বাসায় ফিরে পড়তে বসতে বলবেন। কাছাকাছি এলেই আমি স্পিড বাড়াই। সেদিন আর পড়াতে আসেননি স্যার কিছুক্ষণ পিছে দৌড়ে।
স্কুলে বাংলা প্রশ্নের উত্তর নিজে নিজে লিখতাম, মুখস্ত করতে চাইতাম না। নম্বর ভালো পাওয়াতে এবং রফিকুল স্যারের আস্কারাতে আমি মোটামুটি নিজেকে তখন সাহিত্যিক ভেবে নিয়েছি।
কলেজে ওঠার পর শামিম স্যারের কাছে ইংরেজি পড়তে পাঠানো হলো আমাকে। দ্বিতীয় দিন পড়তে গেলাম। কোনো প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করে যাইনি। বানিয়ে লিখলাম। এমন ধমক খেয়েছি, এইচএসসি পাস করা পর্যন্ত আর কখনো চেষ্টা করিনি বানানো কোনো উত্তর লিখতে। পাসের পরপর এক দিন শুনলাম আফরিন আপার আম্মার কাছে স্যার নাকি গল্প করেছেন, লিসা একটা জিনিয়াস। কেমন দুঃখজনক ঘটনা, এই কথা সামনে বলা তো দূর, কোনো দিন একটা হাসিও দেননি আমাকে দেখে তিনি।

মেডিকেল কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে চান্স পেলাম। সে সময়ই বড় বোনের বিয়ে হলো। তাদের বাসায় আমি ঘন ঘন যাই। অতি আদরের বাঁদর ছোট বোন। বোনের হাবি আমাকে দেখলেই খুশি মনে জিজ্ঞেস করেন, ব্লাড সাপ্লাই, নার্ভ সাপ্লাই। এত বোরিং একটা বিষয়ে কোনো মানুষ যে, কোনো ছেলেমেয়েকে উৎসাহ নিয়ে পড়াতে পারেন, সেটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। যথারীতি কিচ্ছু পারি না। বোনকে এক দিন বললাম, উনি নিউরোলজিস্ট। ফাস্ট ইয়ারের আমাকে এত প্রশ্ন ক্যান করে? আপু বলল, তুইতো আমাকেও কোনো দিন মেডিকেলের কিছু বুঝিয়ে বলতে বলিসনি। বলে দিলাম, তোমরা এরকম করলে আর আসব না তোমার বাসায় কিন্তু। পিজির (বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) শিক্ষক দুলাভাই খালি হাসতেন। আরে আমি, তিনি কী করে বুঝবেন, আমি হলাম ক্লাসে বসা সেই ছাত্রী. স্যার যাই জিজ্ঞেস করেন, আমি অন্য দিকে তাকিয়ে থাকি। স্যার একদিন বলেই ফেললেন, কীরে ভাই আমি কি টেগরু নাকি। যার দিকেই তাকাই সে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে?
মেডিকেলে পড়াকালে চট্টগ্রামের গ্রাম থেকে আসা প্রচুর রোগী ওয়ার্ডে নিয়ে দেখাতে হতো। ষ্টুডেন্ট পরিচয় দিলে স্যার বা ম্যামরা সুন্দর করে দেখে দিতেন রোগী। ফাইনাল পরীক্ষার আগের রাতে নাছোড়বান্দা রোগী হাজির। গেলাম ওয়ার্ডে রোগী নিয়ে। স্যার তেড়ে এলেন, তোমার কালকে পরীক্ষা না? মিনমিন করে বলার চেষ্টা করলাম, স্যার রোগী…। তিনি বকা দিলেন, আমি দেখব রোগী, তুমি যাও পড়তে বস। সাহস কত মেয়ের।
আমেরিকাতে এসেই পুত্র এবং পরের বছর কন্যা মাকে পেলাম। ছোট মানুষ দুজনকে নিয়ে ইউএসএমএলই (মেডিকেল লাইসেন্সিং এক্সাম) পরীক্ষা দেব, পড়ব। ভীষণ এক্সপেনসিভ ডে কেয়ার কয়েক মাস এবং এক বছর কয়েক মাসের দুই শিশুর জন্য। বন্ধুর বুদ্ধিতে কমিউনিটি কলেজে টাইপিং আর মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড এক্সএলের ক্লাস নিলাম। সেই কাগজ দিয়ে সাবসিডাইজডভাবে ডে কেয়ারে পিচ্চি জমা দিয়ে আমি পড়ি। ক্লাসে অনিয়মিত। একদিন ইয়াং টিচার জিজ্ঞেস করলেন, তোমার পোটেনশিয়াল আছে, কিন্তু এত কম দিন আসো কেন? পড় মন দিয়ে, আমি চাকরির ব্যবস্থা করে দেব? তারপর জিজ্ঞেস করলেন, দেশ থেকে কতদূর পড়ে এসেছ? আমি চুপ। তিনি বললেন, মাস্টার্স, গ্র্যাজুয়েট, হাইস্কুলও পাস না? তাকে বললাম, জবাবটা তোমাকে আমি ছয় মাস পরে দিই? তিনি বললেন, দিয়ো, কিন্ত ‘এ’ পেতে হলে আরও নিয়মিত আসতে হবে ফারহানা।
ছয় মাস পর ইউএসএমএলইর স্টেপ টু পাস করলাম। স্কোর ৯২। শিক্ষকের নাম ভুলে গেছি, তাকে নম্বর দেখিয়ে বললাম, বাসায় বসে পড়ার জন্য তোমার ক্লাসে খুব অনিয়মিত ছিলাম। তিনি হাসলেন। বললেন, গুড লাক ফারহানা।
আমার রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে শিক্ষকদের সবাই চাইতেন কীভাবে ভালো ডাক্তার হতে পারব। হাতে কলমে শেখাতেন। চেষ্টা তো করতামই, আমরা বাংলাদেশিরা ভীষণ খেটে খাওয়া মানুষ। একদিন এক অ্যাটেন্ডিং মাঝে মাঝে নিজেকে একটু ক্রেডিট দিয়ো ভালো কাজের, নিজের এত বড় ক্রিটিক হওয়ার দরকার নেই।
জীবন গড়ে দেওয়া সব শিক্ষকদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। সবার অবদানে আমার মতো সামান্য এই মানুষের এ পথ চলা।

শিক্ষক দিবস চলে গেল। গতকাল ৫ অক্টোবর ছিল শিক্ষক দিবস। কত কত সুন্দর স্মৃতি মনে উঁকি দিচ্ছে। বর্ণিল জীবন। ছোটবেলায় পাঠ্য ছিল স্যান্ডস অব ডি কবিতা। ইংরেজি কবিতা আবৃতি প্রতিযোগিতায় এই কবিতা আবৃতি করে হলাম প্রথম। কী আনন্দ।
পরদিন রফিক স্যার পড়াতে এসে বললেন, শুধু কবিতা আবৃতি করলে হবে? গানও জানতে হয়। তারপর গান ধরলেন, ‘হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ–পথে কুড়াই ঝরা ভুল, একেলা আমি’।
আব্বু–আম্মি ছুটে এলেন, বেসুরো গলায় কে এই গান গায় জানতে। পরে বকা খেলাম আমি। পড়া বাদ দিয়ে গানের প্রসঙ্গ নির্ঘাত আমি এনেছি। মানে নামকরা ফাঁকিবাজ ছিলাম তো!
আমাদের সুইমিং টিচারকে আমরা কাকু ডাকতাম। সাঁতার শিখিয়েছেন তিনি ঠিকই, কিন্তু তার শিক্ষা পদ্ধতি ছিল ভয়ের। বিশাল পুলের মাঝে ফেলে দিতেন, পানি খেয়ে সাঁতার শেখা। পরবর্তীতে আমেরিকা এসে পানির ওপর পা ছপাত ছপাত করে আমাকে সাঁতার কাটতে দেখে ট্রিনা জিজ্ঞেস করেছিল, এ কেমন সাঁতার? বলেছিলাম, ফ্রি স্টাইল সাঁতার ট্রিনা।
তপন স্যার ছিলেম অংকের শিক্ষক। সাইকেল চালিয়ে পড়াতে আসতেন। এক দিন সাইকেলের চাবি ফেলে গিয়েছিলেন। আমাদেরকে পড়ানো শেষ করে বাসায় যাবার আগে, চাবি নিতে এসে দেখেন, আমি দাদাকে অভিনয় করে দেখাচ্ছি, এক চামচ ভাজা চিড়া মুখে দিয়ে মাথা নেড়ে নেড়ে কীভাবে একটু আগেই স্যার বলছিলেন, লিসা এই যে ক্লাস এইটে সেকেন্ড গ্রেডে বৃত্তি পেলে, সারাদিন খেল, পুরোপুরি চেষ্টা করো না। জানো তো, না করে যে পেতে চায়, দুঃখ তার পিছে ধায়।
স্যার পেছন থেকে বললেন ভালো ভালো, খুব ভালো সিনেমাতে বেশ নাম করবে ভবিষ্যতে। ভয় পেয়ে অতঃপর চিড়া নিচে ফেলে পিঁপড়াকে দাওয়াত দিয়ে মার কাছে ভবিষ্যত ঝরঝরা জাতীয় কথাগুলা শুনে হজম করতে বেশ কষ্ট হয়েছিল।
তো দিন কয়েক পরে দেখলাম স্যার পড়াতে আসছেন, কেন যেন পায়ে হেঁটে। বুঝলাম প্রতিশোধ নেওয়ার এই সুযোগ। সাইকেল নিয়ে আমি তখন বাইরে। স্যার হেঁটে কাছাকাছি এসে ডাকবেন, আমিও দিই স্পিড বাড়িয়ে। স্যার হন্তদন্ত হয়ে কাছে আসেন বাসায় ফিরে পড়তে বসতে বলবেন। কাছাকাছি এলেই আমি স্পিড বাড়াই। সেদিন আর পড়াতে আসেননি স্যার কিছুক্ষণ পিছে দৌড়ে।
স্কুলে বাংলা প্রশ্নের উত্তর নিজে নিজে লিখতাম, মুখস্ত করতে চাইতাম না। নম্বর ভালো পাওয়াতে এবং রফিকুল স্যারের আস্কারাতে আমি মোটামুটি নিজেকে তখন সাহিত্যিক ভেবে নিয়েছি।
কলেজে ওঠার পর শামিম স্যারের কাছে ইংরেজি পড়তে পাঠানো হলো আমাকে। দ্বিতীয় দিন পড়তে গেলাম। কোনো প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করে যাইনি। বানিয়ে লিখলাম। এমন ধমক খেয়েছি, এইচএসসি পাস করা পর্যন্ত আর কখনো চেষ্টা করিনি বানানো কোনো উত্তর লিখতে। পাসের পরপর এক দিন শুনলাম আফরিন আপার আম্মার কাছে স্যার নাকি গল্প করেছেন, লিসা একটা জিনিয়াস। কেমন দুঃখজনক ঘটনা, এই কথা সামনে বলা তো দূর, কোনো দিন একটা হাসিও দেননি আমাকে দেখে তিনি।

মেডিকেল কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে চান্স পেলাম। সে সময়ই বড় বোনের বিয়ে হলো। তাদের বাসায় আমি ঘন ঘন যাই। অতি আদরের বাঁদর ছোট বোন। বোনের হাবি আমাকে দেখলেই খুশি মনে জিজ্ঞেস করেন, ব্লাড সাপ্লাই, নার্ভ সাপ্লাই। এত বোরিং একটা বিষয়ে কোনো মানুষ যে, কোনো ছেলেমেয়েকে উৎসাহ নিয়ে পড়াতে পারেন, সেটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। যথারীতি কিচ্ছু পারি না। বোনকে এক দিন বললাম, উনি নিউরোলজিস্ট। ফাস্ট ইয়ারের আমাকে এত প্রশ্ন ক্যান করে? আপু বলল, তুইতো আমাকেও কোনো দিন মেডিকেলের কিছু বুঝিয়ে বলতে বলিসনি। বলে দিলাম, তোমরা এরকম করলে আর আসব না তোমার বাসায় কিন্তু। পিজির (বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) শিক্ষক দুলাভাই খালি হাসতেন। আরে আমি, তিনি কী করে বুঝবেন, আমি হলাম ক্লাসে বসা সেই ছাত্রী. স্যার যাই জিজ্ঞেস করেন, আমি অন্য দিকে তাকিয়ে থাকি। স্যার একদিন বলেই ফেললেন, কীরে ভাই আমি কি টেগরু নাকি। যার দিকেই তাকাই সে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে?
মেডিকেলে পড়াকালে চট্টগ্রামের গ্রাম থেকে আসা প্রচুর রোগী ওয়ার্ডে নিয়ে দেখাতে হতো। ষ্টুডেন্ট পরিচয় দিলে স্যার বা ম্যামরা সুন্দর করে দেখে দিতেন রোগী। ফাইনাল পরীক্ষার আগের রাতে নাছোড়বান্দা রোগী হাজির। গেলাম ওয়ার্ডে রোগী নিয়ে। স্যার তেড়ে এলেন, তোমার কালকে পরীক্ষা না? মিনমিন করে বলার চেষ্টা করলাম, স্যার রোগী…। তিনি বকা দিলেন, আমি দেখব রোগী, তুমি যাও পড়তে বস। সাহস কত মেয়ের।
আমেরিকাতে এসেই পুত্র এবং পরের বছর কন্যা মাকে পেলাম। ছোট মানুষ দুজনকে নিয়ে ইউএসএমএলই (মেডিকেল লাইসেন্সিং এক্সাম) পরীক্ষা দেব, পড়ব। ভীষণ এক্সপেনসিভ ডে কেয়ার কয়েক মাস এবং এক বছর কয়েক মাসের দুই শিশুর জন্য। বন্ধুর বুদ্ধিতে কমিউনিটি কলেজে টাইপিং আর মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড এক্সএলের ক্লাস নিলাম। সেই কাগজ দিয়ে সাবসিডাইজডভাবে ডে কেয়ারে পিচ্চি জমা দিয়ে আমি পড়ি। ক্লাসে অনিয়মিত। একদিন ইয়াং টিচার জিজ্ঞেস করলেন, তোমার পোটেনশিয়াল আছে, কিন্তু এত কম দিন আসো কেন? পড় মন দিয়ে, আমি চাকরির ব্যবস্থা করে দেব? তারপর জিজ্ঞেস করলেন, দেশ থেকে কতদূর পড়ে এসেছ? আমি চুপ। তিনি বললেন, মাস্টার্স, গ্র্যাজুয়েট, হাইস্কুলও পাস না? তাকে বললাম, জবাবটা তোমাকে আমি ছয় মাস পরে দিই? তিনি বললেন, দিয়ো, কিন্ত ‘এ’ পেতে হলে আরও নিয়মিত আসতে হবে ফারহানা।
ছয় মাস পর ইউএসএমএলইর স্টেপ টু পাস করলাম। স্কোর ৯২। শিক্ষকের নাম ভুলে গেছি, তাকে নম্বর দেখিয়ে বললাম, বাসায় বসে পড়ার জন্য তোমার ক্লাসে খুব অনিয়মিত ছিলাম। তিনি হাসলেন। বললেন, গুড লাক ফারহানা।
আমার রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে শিক্ষকদের সবাই চাইতেন কীভাবে ভালো ডাক্তার হতে পারব। হাতে কলমে শেখাতেন। চেষ্টা তো করতামই, আমরা বাংলাদেশিরা ভীষণ খেটে খাওয়া মানুষ। একদিন এক অ্যাটেন্ডিং মাঝে মাঝে নিজেকে একটু ক্রেডিট দিয়ো ভালো কাজের, নিজের এত বড় ক্রিটিক হওয়ার দরকার নেই।
জীবন গড়ে দেওয়া সব শিক্ষকদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। সবার অবদানে আমার মতো সামান্য এই মানুষের এ পথ চলা।
গামা আব্দুল কাদির সুদীর্ঘ প্রবাস জীবনে বাংলাদেশ অ্যাসেসিয়েশনের পাচঁবার সভাপতি এবং তিনবার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি এখনো এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদ, অস্ট্রেলিয়া এবং আওয়ামী লীগের অস্ট্রেলিয়া শাখারও প্রধান উপদেষ্টা।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতাদের একমাত্র যোগ্যতা—অসততা ও মিথ্যাচার। আর কর্মীদের যোগ্যতা—তোষামোদ। এক কঠিন সত্য হলো—এই দেশে কোনো নেতা কখনোই অযোগ্য হয় না, দুর্নীতি যতই করুক।
সমস্যা সম্পদ নয়—সমস্যা চরিত্রের, মানসিকতার, আর সৎ মানুষের কণ্ঠরোধের। রাজনৈতিক নেতাদের ওলি-আউলিয়া ভাবার সুযোগ নেই। সভ্য দেশে একটি গুরুতর অপরাধই তাদের রাজনৈতিক জীবনের ইতি টানে। আমাদের দেশে এটিই সবচেয়ে বড় ঘাটতি।
আজও বহু দেশে স্বৈরাচারী শাসন টিকে আছে; পরিবারতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র আরও গাঢ় হয়েছে। শাসন আর শোষণ যেন একই স্রোতে মিশে গেছে। বক্তব্যের স্বাধীনতা প্রতিনিয়ত আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে, ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার পরিণত হয়েছে নিছক প্রহসনে।