logo
খবর

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ বাতিল চেয়ে ১০০ জনের বিবৃতি

প্রতিবেদক, বিডিজেন২০ জানুয়ারি ২০২৫
Copied!
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ বাতিল চেয়ে ১০০ জনের বিবৃতি

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪ বাতিলের জোরালো দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ১০০ নাগরিক। তাঁরা বলেছেন, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের বেশ কিছু ধারা মানবাধিকারসংশ্লিষ্ট কনভেনশনের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। এই অধ্যাদেশ জুলাই আন্দোলনের মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও তরুণদের নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নবিরোধী। একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাত করার পর বাক্‌স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এমন বেপরোয়া কর্তৃত্ববাদী আইন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠানো হয়েছে। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। তবে এই অধ্যাদেশ জারির আগে পর্যালোচনার দাবি উঠেছে।

১০০ নাগরিকের বিবৃতিতে বলা হয়, বহুল ব্যবহৃত এবং বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ বাতিল করা ছিল এই গণ-অভ্যুত্থানের সরকারের একটি অত্যাবশ্যক ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আগের আইনটি অপপ্রয়োগ করে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার বাংলাদেশে বাক্‌স্বাধীনতা কার্যত স্তব্ধ করে ভীতি ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শাসন কায়েম করতে সফল হয়েছিল। ওই আইনের যথেচ্ছ অপব্যবহার ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান নিয়ামক। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আশা ছিল, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এই অপআইন সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে তার পরিবর্তে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মানবিক মর্যাদা এবং নাগরিক অধিকারভিত্তিক একটি জনমুখী, সুচিন্তিত, সুসংগত ও সুশাসনমূলক আইন প্রণয়ন করা। কিন্তু এই আইন পরিমার্জন করে যে অধ্যাদেশ জারি করা হচ্ছে, জনগণের মৌলিক মানবাধিকারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ চরমভাবে অগ্রাহ্য, ক্ষেত্রবিশেষে খর্ব ও নিতান্ত প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪ গণতন্ত্রের বিকাশে সহায়কের ভূমিকা না রেখে বরং আগের ধারাবাহিকতায় জনগণকে আরও বঞ্চিত এবং রাষ্ট্রকে আরও স্বেচ্ছাচারী করার পথ সুগম করে দিচ্ছে বলে বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়। বলা হয়, এই অধ্যাদেশের অন্যতম আপত্তিকর ধারা ৩৫ এবং ৩৬, যেগুলো ব্যবহার করে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় যে কারও ফোন, ল্যাপটপ বা যেকোনো ডিভাইস জব্দ ও তল্লাশি করতে পারে এবং ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারে। যে বাংলাদেশের পুলিশের দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার সর্বজনবিদিত, যেখানে জুলাইয়ের পর পুলিশের জবাবদিহি বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া উচিত ছিল, তা না করে পুলিশের হাতে জনহয়রানির একটি নতুন হাতিয়ার তুলে দেওয়া হচ্ছে। পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি এবং গ্রেপ্তার সরাসরি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার লঙ্ঘন এবং মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বিবৃতিতে বলা হয়, ৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি মনে করে কোনো তথ্য বা উপাত্ত দেশের সংহতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধ ক্ষুণ্ন করতে পারে, তাহলে তারা মহাপরিচালকের অনুমতি সাপেক্ষে এই তথ্য প্রচার ব্লক করে দিতে পারে। সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এই ধারা অপব্যবহারের পথ খুলে দেওয়া হচ্ছে। যদি কোনো ব্যক্তি বা সংবাদমাধ্যম সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুষ্কর্ম তুলে ধরার সাহস করে, তাহলে তাকে অনায়াসে এই আইনের আওতায় নিয়ে আসা যাবে। অধ্যাদেশ অনুসারে, রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাষ্ট্রের চাকরিরত কর্মকর্তারা দেশের সংহতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ ইত্যাদির সংজ্ঞা নির্ধারণ করবেন এবং তা লঙ্ঘিত হয়েছে কি না, সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাত করার পর বাক্‌স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এমন বেপরোয়া কর্তৃত্ববাদী আইন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

অধ্যাদেশের ২৫ ও ২৬ ধারায় যে ‘ব্যক্তিগত হয়রানি, অপমান ও ধর্মীয় মূল্যবোধের’ কথা বলা হয়েছে, তা অত্যন্ত আপেক্ষিক একটি বিষয়—এ কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এই ধারার আওতায় কাউকে হয়রানির উদ্দেশ্যে খুব সহজেই মামলা করা সম্ভব। ধারা ২৫-এ আরও বলা হয়েছে, কাউকে হেয়প্রতিপন্ন বা অপমান করার উদ্দেশ্যে তৈরি স্থিরচিত্র, ভিডিও, গ্রাফিকস ইত্যাদি যার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই, এমন উপাত্ত প্রকাশ বা প্রচার আইনত দণ্ডনীয়। কিন্তু এখানে শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য বলতে কী বোঝানো হচ্ছে, তা বলা হয়নি। অপমান বা হেয় করার ব্যাপারটিও সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। এর মাধ্যমে শুধু শিল্পীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না, সৃজনশীলতার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। একটি চিত্রের শৈল্পিক মূল্য আছে কি নেই, তা পুলিশ নির্ধারণ করতে পারে না। নতুন উপধারায় নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপনের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু কত দিনের মধ্যে তা উল্লেখ নেই। পুলিশ বা অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো জবাবদিহি থাকছে না।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিভিন্ন মানবাধিকার-সংশ্লিষ্ট কনভেনশনে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। এই আইনের বেশ কিছু ধারা সেগুলোর সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। অনেক কারণেই কোনো সচেতন নাগরিক এই অধ্যাদেশ মেনে নিতে পারে না। ছাত্র-জনতার রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত দায় ও দরদের এই সরকারের অমোঘ দায়িত্ব আগের ফ্যাসিস্টদের কলঙ্কময় কার্যকলাপ পেছনে ফেলে জাতির জন্য নতুন দিন নিয়ে আসা। কিন্তু সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ নতুন মোড়কে পুরোনো কালাকানুনের অবতার মাত্র। এটা জুলাই আন্দোলনের মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও তরুণদের নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নবিরোধী।

এই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন শহিদুল আলম, সাইয়ীদ কবির, ইমদাদুল হক, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, রুমি আহমেদ খান, আসিফ মোহাম্মদ শাহান, শামারুহ মির্জা, সিমু নাসের, সুবাইল বিন আলম, হানা শামস আহমেদ, দিদারুল ভূঁইয়া, মারজিয়া প্রভা, রাজীব কান্তি রায়, অনন্য রায়হান, সাইফুল খোন্দকার, সাদিক মাহবুব ইসলাম ও ফাহিম মাশরুর।

আরও পড়ুন

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বৈঠক

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বৈঠক

ঢাকা সফররত পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) শীর্ষ নেতারা।

৫ ঘণ্টা আগে

জুলাই সনদ কখনোই সংবিধানের ওপর প্রাধান্য পেতে পারে না: গণফোরাম

জুলাই সনদ কখনোই সংবিধানের ওপর প্রাধান্য পেতে পারে না: গণফোরাম

জুলাই সনদ একটি রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল। এই রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল কখনোই সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য পেতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় আপত্তির একটি জায়গা।’

১৪ ঘণ্টা আগে

আসনভিত্তিক বা সংখ্যানুপাতিক কোনোটিই একেবারে নিখুঁত নয়: বদিউল আলম মজুমদার

আসনভিত্তিক বা সংখ্যানুপাতিক কোনোটিই একেবারে নিখুঁত নয়: বদিউল আলম মজুমদার

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তারা কমিশনের পক্ষ থেকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব করেছেন। এর মধ্যে নিম্নকক্ষ হবে বর্তমান আসনভিত্তিক। আর উচ্চকক্ষ হবে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর)। সংবিধান সংস্কার কমিশনও একই রকম প্রস্তাব করেছে।

১৪ ঘণ্টা আগে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনার বিচার অবশ্যই হতে হবে: মির্জা ফখরুল

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনার বিচার অবশ্যই হতে হবে: মির্জা ফখরুল

গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার দাবি করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

২ দিন আগে