
বিডিজেন ডেস্ক

ইতালি গিয়ে স্বপ্নপূরণ করতে চেয়েছিলেন সুজন ফরাজী। বৈধ পথে সুযোগ না পেয়ে অবৈধভাবে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সুজনের সিদ্ধান্তে পরিবারের অন্য সদস্যরা সম্মতি দিলেও ঝুঁকি নিতে রাজি হননি বাবা মিরাজুল ইসলাম। এ নিয়ে বাবা-ছেলের মধ্যে কয়েক দফা বাগ্বিতণ্ডাও হয়। একপর্যায়ে বাবাকে কিছু না জানিয়ে দালালের সহযোগিতায় লিবিয়া চলে যান সুজন।
খবর প্রথম আলোর।
সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে নৌযান ডুবে লিবিয়া উপকূলে ভেসে আসা ২৩টি লাশের মধ্যে সুজন ফরাজীর লাশও আছে। সুজনের মৃত্যুর বিষয়টি আজ মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন বাবা মিরাজুল ইসলাম। তাঁদের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের পূর্ব ঘটমাঝি এলাকায়।
লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, লিবিয়া থেকে নৌযানে করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন একদল অভিবাসনপ্রত্যাশী। ৫৬ জন আরোহী নিয়ে নৌযানটি ২৫ জানুয়ারি ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায়। এরপর ২৮–৩১ জানুয়ারির মধ্যে ২৩টি লাশ সৈকতে ভেসে আসে। গলিত লাশগুলোর পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া গেলেও স্থানীয় সূত্রের বরাতে দূতাবাস বলছে, তাদের প্রায় সবাই বাংলাদেশি।
সুজনের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দালালের প্রলোভনে পড়ে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন সুজন। প্রথমে ঢাকা থেকে দুবাইয়ে যান। সেখানে কয়েক দিন থেকে লিবিয়ায় যান। এরপর তাকে লিবিয়ার বেনগাজি শহরের একটি বন্দিশালায় রাখা হয়। গত ২৪ জানুয়ারি লিবিয়ার উপকূল থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেন সুজনসহ অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। কিন্তু ইতালি পৌঁছানোর আগেই নৌকাটি ডুবে যায়।
মঙ্গলবার দুপুরে পূর্ব ঘটমাঝি এলাকায় সুজনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের ভিড়। সবার মুখে সুজনের কথা। বাড়ির সামনে একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে বুক চাপড়ে কান্নাকাটি করছেন বাবা মিরাজুল ইসলাম। পাশেই সুজনের খালারাও কান্না করছেন। প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
জানতে চাইলে মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই বিদাশ বিদাশ কইরা ৩ মাস ধরে বাবা-ছেলের রাগারাগি। বাড়ির লোক আমারে বলছে, সুজন ওর ফুফুর বাড়িতে আছে। তাই দুশ্চিন্তায় ছিলাম না। পরে ২৫ জানুয়ারি জানতে পারি, ফুফুর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা লইয়া সুজন লিবিয়া গেছে। তখন থিকাই আমার মনে ভয়। আমার একমাত্র পোলা। আমি আগে জানলে ওরে কাইট্টা গাঙ্গে ভাসাইয়া দিতাম। তবু অবৈধ পথে সাগর পাড়ি দিয়া বিদাশ যাইতে দিতাম না। পোলারে নিয়ে আমার সব স্বপ্ন শ্যাষ হইয়া গেল।’
সুজনের মা ২০০৩ সালে মারা যান। এরপর থেকে সুজনের বাবাই তাঁকে লালন–পালন করে বড় করেছেন। স্থানীয় একটি কলেজ থেকে সুজন উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে কয়েক দিন ইজিবাইক চালিয়ে বাবাকে সহযোগিতা করেছেন।
সুজনের চাচি শিউলি বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা যাইতে দিতে না চাইলেও সুজন ফুফুগো হাত-পা ধইরা কান্নাকাটি কইরা কইত আমারে বিদাশ পাঠান। মা মরা পোলাডার মায়ায় পইড়া ওর এক ফুফু টাকা দিয়ে ওরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এখন দুর্ঘটনায় সুজন মারা গেছে। এ জন্য যে দালাল ওরে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে পাঠাইছে, আমরা তার বিচার চাই।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লিবিয়া হয়ে ইতালি নেওয়ার দালাল মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার মজুমদারকান্দি এলাকার হায়দার শেখের ছেলে মনির শেখ। তিনি সুজনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকায় ইতালি নেওয়ার চুক্তি করেন। এ বিষয়ে কথা বলতে দালাল মনির শেখের বাড়িতে গেলে ঘর তালাবদ্ধ দেখা যায়। মুঠোফোনেও একাধিকবার কল দিলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
মনিরের প্রতিবেশী টুটুল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনিরের মাফিয়া সংযোগ খুবই শক্তিশালী। বহু যুবককে ইতালি পাঠানোর কাজ সফলভাবে করে বিশ্বাস অর্জন করেছে। এই কাজ করে বহু টাকাও উপার্জন করেছে। তবে মনির সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় ওর নাম আসায় পলাতক। তাঁকে আমরাও কেউ খুঁজে পাচ্ছি না।’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ভাস্কর সাহা প্রথম আলোকে বলেন, লিবিয়ায় নিখোঁজ ও মারা যাওয়ার ঘটনায় প্রত্যেক পরিবারের সদস্যকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। তারা অভিযোগ দিলে পুলিশ মামলা নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া অভিযুক্ত কয়েকজন দালালের সন্ধানও তারা পেয়েছেন। তাদের ধরতেও পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
সূত্র: প্রথম আলো
আরও পড়ুন

ইতালি গিয়ে স্বপ্নপূরণ করতে চেয়েছিলেন সুজন ফরাজী। বৈধ পথে সুযোগ না পেয়ে অবৈধভাবে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সুজনের সিদ্ধান্তে পরিবারের অন্য সদস্যরা সম্মতি দিলেও ঝুঁকি নিতে রাজি হননি বাবা মিরাজুল ইসলাম। এ নিয়ে বাবা-ছেলের মধ্যে কয়েক দফা বাগ্বিতণ্ডাও হয়। একপর্যায়ে বাবাকে কিছু না জানিয়ে দালালের সহযোগিতায় লিবিয়া চলে যান সুজন।
খবর প্রথম আলোর।
সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে নৌযান ডুবে লিবিয়া উপকূলে ভেসে আসা ২৩টি লাশের মধ্যে সুজন ফরাজীর লাশও আছে। সুজনের মৃত্যুর বিষয়টি আজ মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন বাবা মিরাজুল ইসলাম। তাঁদের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের পূর্ব ঘটমাঝি এলাকায়।
লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, লিবিয়া থেকে নৌযানে করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন একদল অভিবাসনপ্রত্যাশী। ৫৬ জন আরোহী নিয়ে নৌযানটি ২৫ জানুয়ারি ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায়। এরপর ২৮–৩১ জানুয়ারির মধ্যে ২৩টি লাশ সৈকতে ভেসে আসে। গলিত লাশগুলোর পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া গেলেও স্থানীয় সূত্রের বরাতে দূতাবাস বলছে, তাদের প্রায় সবাই বাংলাদেশি।
সুজনের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দালালের প্রলোভনে পড়ে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন সুজন। প্রথমে ঢাকা থেকে দুবাইয়ে যান। সেখানে কয়েক দিন থেকে লিবিয়ায় যান। এরপর তাকে লিবিয়ার বেনগাজি শহরের একটি বন্দিশালায় রাখা হয়। গত ২৪ জানুয়ারি লিবিয়ার উপকূল থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেন সুজনসহ অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। কিন্তু ইতালি পৌঁছানোর আগেই নৌকাটি ডুবে যায়।
মঙ্গলবার দুপুরে পূর্ব ঘটমাঝি এলাকায় সুজনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের ভিড়। সবার মুখে সুজনের কথা। বাড়ির সামনে একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে বুক চাপড়ে কান্নাকাটি করছেন বাবা মিরাজুল ইসলাম। পাশেই সুজনের খালারাও কান্না করছেন। প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
জানতে চাইলে মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই বিদাশ বিদাশ কইরা ৩ মাস ধরে বাবা-ছেলের রাগারাগি। বাড়ির লোক আমারে বলছে, সুজন ওর ফুফুর বাড়িতে আছে। তাই দুশ্চিন্তায় ছিলাম না। পরে ২৫ জানুয়ারি জানতে পারি, ফুফুর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা লইয়া সুজন লিবিয়া গেছে। তখন থিকাই আমার মনে ভয়। আমার একমাত্র পোলা। আমি আগে জানলে ওরে কাইট্টা গাঙ্গে ভাসাইয়া দিতাম। তবু অবৈধ পথে সাগর পাড়ি দিয়া বিদাশ যাইতে দিতাম না। পোলারে নিয়ে আমার সব স্বপ্ন শ্যাষ হইয়া গেল।’
সুজনের মা ২০০৩ সালে মারা যান। এরপর থেকে সুজনের বাবাই তাঁকে লালন–পালন করে বড় করেছেন। স্থানীয় একটি কলেজ থেকে সুজন উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে কয়েক দিন ইজিবাইক চালিয়ে বাবাকে সহযোগিতা করেছেন।
সুজনের চাচি শিউলি বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা যাইতে দিতে না চাইলেও সুজন ফুফুগো হাত-পা ধইরা কান্নাকাটি কইরা কইত আমারে বিদাশ পাঠান। মা মরা পোলাডার মায়ায় পইড়া ওর এক ফুফু টাকা দিয়ে ওরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এখন দুর্ঘটনায় সুজন মারা গেছে। এ জন্য যে দালাল ওরে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে পাঠাইছে, আমরা তার বিচার চাই।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লিবিয়া হয়ে ইতালি নেওয়ার দালাল মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার মজুমদারকান্দি এলাকার হায়দার শেখের ছেলে মনির শেখ। তিনি সুজনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকায় ইতালি নেওয়ার চুক্তি করেন। এ বিষয়ে কথা বলতে দালাল মনির শেখের বাড়িতে গেলে ঘর তালাবদ্ধ দেখা যায়। মুঠোফোনেও একাধিকবার কল দিলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
মনিরের প্রতিবেশী টুটুল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনিরের মাফিয়া সংযোগ খুবই শক্তিশালী। বহু যুবককে ইতালি পাঠানোর কাজ সফলভাবে করে বিশ্বাস অর্জন করেছে। এই কাজ করে বহু টাকাও উপার্জন করেছে। তবে মনির সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় ওর নাম আসায় পলাতক। তাঁকে আমরাও কেউ খুঁজে পাচ্ছি না।’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ভাস্কর সাহা প্রথম আলোকে বলেন, লিবিয়ায় নিখোঁজ ও মারা যাওয়ার ঘটনায় প্রত্যেক পরিবারের সদস্যকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। তারা অভিযোগ দিলে পুলিশ মামলা নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া অভিযুক্ত কয়েকজন দালালের সন্ধানও তারা পেয়েছেন। তাদের ধরতেও পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
সূত্র: প্রথম আলো
আরও পড়ুন
ভুক্তভোগীদের অনেক ক্ষেত্রে গ্যারান্টিযুক্ত ভিসা, যোগ্যতা ছাড়াই চাকরি বা অতিরিক্ত ফির বিনিময়ে দ্রুত প্রক্রিয়াকরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। বাস্তবে তারা পায় আর্থিক ক্ষতি, ভিসা প্রত্যাখ্যান, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পাচার ও শোষণের শিকার হয়।
অ্যাপ চালুর পর গতকাল রোববার রাত ৮টা পর্যন্ত এসব অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে বসবাস করা ১৭ হাজার ৯০৭ জন প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন করেছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১৬ হাজার ৩৫৫ জন। নারী ১ হাজার ৫৫২ জন।
আমেরিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ ১৬টি দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাত ১২টা থেকে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।