বিবিসি
সিঙ্গাপুরের ব্যস্ততম একটি সড়কে হঠাৎ তৈরি হওয়া এক সুবিশাল গর্তে গাড়িসহ পড়ে যান এক নারী। সড়কের পাশে কর্মরত একদল নির্মাণশ্রমিক রীতিমতো ফিল্মি কায়দায় উদ্ধার করেন তাকে। গর্তের ভেতর থেকে ওই নারীকে উদ্ধারে শ্রমিকদের সময় লেগেছে ৫ মিনিটেরও কম।
গত ২৬ জুলাই দুর্ঘটনাটি ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই নির্মাণ শ্রমিকদের ফোরম্যান সুপ্পিয়াহ পিচাই উদাইয়াপ্পান দেরি না করে একটি দড়ি নিয়ে এগিয়ে যান। গর্তের ভেতর ছুড়ে দেন দড়িটি। কোনোমতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন চালক ওই নারী। পরে, ওই দড়ি ধরে টেনে তাকে ওপরে তোলা হয়। পরে উদাইয়াপ্পান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলাম, কিন্তু আমরা খালি মনে হয়েছিল, যেকোনো মূল্যে ওই নারীকে বাঁচাতে হবে।’
এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল তাদের সেই দুঃসাহসিক উদ্ধার অভিযান। অনেকেই তাদের ‘হিরো’ আখ্যা দিচ্ছেন। এই শ্রমিকদের সবাই অভিবাসী। উদ্ধারকারী সাত ভারতীয় অভিবাসী শ্রমিককে ব্যক্তিগতভাবে ইস্তানা প্যালেস ওপেন হাউসে আমন্ত্রণ জানাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট থারমান শানমুগরত্নম। এ ছাড়া, সিঙ্গাপুরের জনশক্তি মন্ত্রণালয় এই শ্রমিকদের ‘প্রশংসা মুদ্রা’ দিয়ে সম্মানিত করেছে এবং অভিবাসী শ্রমিকদের একটি দাতব্য সংস্থা তাদের জন্য ৭২ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার সংগ্রহ করেছে।
দেশটিতে অভিবাসী শ্রমিকদের এমন বীরত্বের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে চলতি বছর এপ্রিলেও একটি দোকানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বীরত্ব দেখিয়েছে অভিবাসী শ্রমিকেরা। দোকানটিতে আটকে পড়া শিশুদের উদ্ধার করেছেন তারা।
সরকারের এমন স্বীকৃতি সত্ত্বেও, অভিবাসী শ্রমিকেরা কম বেতন, অনিশ্চিত পরিস্থিতি এবং স্থায়ী বসবাসের অধিকার না পাওয়ার মতো বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বহুদিন ধরেই।
এবারের এই ঘটনাটি সিঙ্গাপুরে স্বল্প আয়ের শ্রমিকদের অধিকার এবং তাদের দৈনন্দিন দুর্দশা নিয়ে বহু পুরোনো বিতর্ককে আবারও উসকে দিয়েছে। সিঙ্গাপুরে ১১ লাখ ৭ হাজার অভিবাসী শ্রমিক কাজ করেন। তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের নাগরিক। দেশটির বিদেশি কর্মশক্তির প্রায় তিন-চতুর্থাংশই এই শ্রমিকেরা। সাধারণত, স্থানীয়রা যেসব কম বেতনের শ্রমসাধ্য কাজ এড়িয়ে চলেন, সেগুলোই করেন এসব শ্রমিক। ভবন নির্মাণ, জাহাজ নির্মাণ এবং উৎপাদন খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে তাদের অবদান ব্যাপক।
কিন্তু সিঙ্গাপুরে অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য কোনো ন্যূনতম মজুরি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, কিছু শ্রমিক মাসে মাত্র ৩০০ সিঙ্গাপুরি ডলার (২৩৩ ইউএস ডলার) উপার্জন করেন। তারা সাধারণত আবাসিক এলাকা থেকে দূরে, ঘিঞ্জি ডরমিটরিতে থাকেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, অনেক সময়ই তাদের নিয়োগকারী সংস্থা বা মালিকদের দ্বারা শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ওভারটাইম মজুরি ছাড়াই অতিরিক্ত কাজ, মজুরি না পাওয়া এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে বাধ্য হওয়ার মতো শোষণের শিকার হন তারা। এই সমস্যাগুলো বহু বছর ধরে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় থাকলেও, অধিকার কর্মীরা বলছেন, পরিস্থিতি খুব বেশি বদলায়নি।
সিঙ্গাপুরের সমাজকর্মী সুরেন্দ্র কুমার ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘আজ আপনারা তাদের বীর হিসেবে সম্মান জানাচ্ছেন। কিন্তু আগামীকাল আবার তাদেরই “প্রতারক, মিথ্যাবাদী ও নোংরা” বলে সাধারণীকরণ করবেন।’
২০২০ সালের কোভিড মহামারির সময় এই শ্রমিকদের দুর্দশা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাদের ডরমিটরিগুলো ভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল এবং প্রতিদিন শত শত শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছিলেন। সেই সময় তাদের জীবনযাত্রা নিয়ে তীব্র আলোচনা শুরু হয়, যার ফলস্বরূপ বাধ্য হয়ে ডরমিটরির মান উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ নেয় কর্তৃপক্ষ।
সিঙ্কহোলের ঘটনাটি শ্রমিকদের আরেকটি গুরুতর সমস্যার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, সেটি হলো ফ্ল্যাট-বেড ট্রাকে (বাংলাদেশের লেগুনার মতো) করে তাদের কর্মস্থলে যাতায়াত। অধিকার কর্মী সুরেন্দ্র কুমার এই পরিস্থিতিকে ‘করুণ বাস্তবতা’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, যেসব শ্রমিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একজন সিঙ্গাপুরি নারীকে উদ্ধার করেছেন, সম্ভবত তারা লরিতে করেই যাতায়াত করেন।
সিঙ্গাপুরের আইন অনুযায়ী, জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ছাড়া সাধারণ মানুষের ট্রাকে করে যাতায়াত নিষিদ্ধ। তবে, যদি শ্রমিকেরা ওই ট্রাকের মালিকের কর্মচারী হন, তাহলে এই নিয়ম শিথিল। কিন্তু এই পরিবহন ব্যবস্থার ফলে বহু দুর্ঘটনা ঘটে। প্রায়শই ১২ জন পর্যন্ত শ্রমিককে ট্রাকে গাদাগাদি করে পরিবহন করা হয়, এতে কোনো সিটবেল্ট নেই। এই পদ্ধতি অনেক নিয়োগকর্তার জন্য সাশ্রয়ী, কারণ তাঁরা একই ট্রাকে পণ্যও পরিবহন করতে পারেন।
২০২১ সালের এপ্রিলে এ রকম এক দুর্ঘটনায় দুজন প্রবাসী শ্রমিক নিহত হন। এমনকি গত বছরও ট্রাক দুর্ঘটনায় নিহত হন অন্তত চারজন শ্রমিক। এতে আহত হয়েছিলেন আরও চার শতাধিক।
অধিকারকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের পরিবহন নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছেন। বিষয়টি একাধিকবার পার্লামেন্টেও আলোচিত হয়েছে, কিন্তু খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। সিঙ্গাপুর সরকার বারবার বলে আসছে, তারা কোম্পানিগুলোকে বাসে করে শ্রমিক পরিবহনের জন্য উৎসাহিত করছে। কিন্তু ছোট ব্যবসার জন্য এই ধরনের ট্রাক নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়। একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী গত ফেব্রুয়ারিতে পার্লামেন্টে বলেন, ‘বাসে শ্রমিক পরিবহনে বাধ্য করলে অনেক কোম্পানি বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য হবে। এতে দেশি ও বিদেশি উভয় ধরনের শ্রমিকই কাজ হারাবে। এতে আবাসন, স্কুল, হাসপাতাল এবং ট্রেন লাইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো বিলম্বিত হবে এবং সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের জন্য খরচও বাড়বে।’
শ্রমিকদের অধিকারকে কেবল অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ওই সময় সরকার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। অধিকারকর্মীরা উল্লেখ করেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের মতো যেসব দেশ অভিবাসী শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল, তারাও ট্রাকে করে মানুষ পরিবহন নিষিদ্ধ করেছে। সুরেন্দ্র কুমার বলেন, সরকার বিদেশি শ্রমিকদের থেকে যে কর বা লেভি সংগ্রহ করে, তা ব্যবহার করে শ্রমিকদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, এতে ব্যবসা ও ভোক্তাদের ওপর বাড়তি খরচ চাপবে না।
মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যানিটেরিয়ান অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন ইকোনমিকসের’ সিনিয়র গবেষক জয়া অনিল কুমার বলেন, সরকারের এই ধরনের যুক্তিই অভিবাসী শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকার ওপর নিয়োগকর্তাদের অন্যায্য নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার উৎস।
শ্রমিকদের সুরক্ষায় ট্রাকে পরিবহন নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি আরও কিছু পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে, যেমন—যথাযথ মজুরি, হুইসেলব্লোয়ার (গোপন তথ্য ফাঁসকারী) সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবাতে ভর্তুকি। দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরে কাজ করেও এই শ্রমিকেরা স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পান না, কারণ বিদেশি পেশাজীবী ও কর্মকর্তাদের চেয়ে তাদের কর্মসংস্থান ভিসা ভিন্ন। সুপ্পিয়াহ উদাইয়াপ্পান, যার নেতৃত্বে শ্রমিকেরা ওই সিঙ্গাপুরি নারীকে গর্ত থেকে উদ্ধার করেছেন, তিনি ২২ বছর ধরে সিঙ্গাপুরে কাজ করছেন, তারও স্থায়ীভাবে বসবাসের কোনো সুযোগ নেই।
এ ছাড়া, কর্মসংস্থান ভিসাধারীদের সিঙ্গাপুরিদের বিয়ে করার জন্যও সরকারের অনুমতি নিতে হয়—এটিও অধিকার কর্মীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ। অনিল কুমার বলেন, ‘খুব ধীর গতিতে আইনের পরিবর্তন হচ্ছে, কারণ কার্যকর পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সদিচ্ছা নেই।’
এই সপ্তাহে কর্তৃপক্ষ সিঙ্কহোল থেকে উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া সাতজন শ্রমিককে ‘অ্যাপ্রেসিয়েশন কয়েন’ দিয়ে সম্মানিত করেছে। কিন্তু অনেকেই এই পদক্ষেপকে ‘টোকেনিজম’ বলে সমালোচনা করেছেন। সুরেন্দ্র কুমার বলেন, ‘তাদের বীরত্বের জন্য যত ধন্যবাদই দেওয়া হোক না কেন, তা সেই শোষণমূলক অর্থনৈতিক মডেলকে ন্যায্যতা দিতে পারে না, যা প্রতিদিন তাঁদের দমিয়ে রেখে সিঙ্গাপুরে আমাদের জীবনধারা টিকিয়ে রাখে।’
অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই কথার প্রতিধ্বনি তুলেছেন এবং বলেছেন যে এই শ্রমিকদের আরও বেশি স্বীকৃতি প্রাপ্য। কেউ কেউ তাদের আর্থিক পুরস্কার এবং এমনকি স্থায়ী নাগরিকত্ব দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন। সিঙ্গাপুরের জনশক্তি মন্ত্রণালয় বিবিসিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘অভিবাসী শ্রমিকদের আরও নানাভাবে সম্মান জানানোর জন্য পাওয়া ফিডব্যাকে আমরা উৎসাহিত।’ তবে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাবের বিষয়ে তাঁরা সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি।
অভিবাসী অধিকার বিষয়ক সংগঠন ‘ইটস রেইনিং রেইনকোটস’ ৭২ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার সংগ্রহ করেছে। উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া সাত শ্রমিকের মধ্যে এই অর্থ সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হবে। বাংলাদেশি শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনাকারী একেএম মহসিন এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেন, ‘এই শ্রমিকেরা প্রায়শই নিজেদের জীবন বিপন্ন করে অনেক সিঙ্গাপুরিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন। তারা সংবাদমাধ্যমে প্রশংসিত হন এবং মানবিক কাজের চমৎকার উদাহরণ হিসেবে পরিচিতি পান, কিন্তু কর্মস্থলে, পরিবহনে এবং বাসস্থানে তাদের মানবাধিকার প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে।’
মানবাধিকার কর্মীদের মতে, অভিবাসী শ্রমিকদের নিজেদের তুলনায় একটি ভিন্ন এবং নিম্ন শ্রেণির মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে অধিকাংশ সিঙ্গাপুরি।
অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ট্রানজিয়েন্ট ওয়ার্কার্স কাউন্ট টু-এর সহসভাপতি অ্যালেক্স আউ নির্দ্বিধায় বলেন, ‘আমরা মূলত তাদের ভিন্ন শ্রেণির মানুষ হিসেবে দেখি। আমরা তাদের কাছ থেকে সেবা আশা করি এবং বিশ্বাস করি যে তারা এই জন্যই এখানে আছে। আর ভৃত্যদের অবশ্যই তাদের প্রভুদের বিপদে এগিয়ে আসা উচিত।’
সিঙ্গাপুরের ব্যস্ততম একটি সড়কে হঠাৎ তৈরি হওয়া এক সুবিশাল গর্তে গাড়িসহ পড়ে যান এক নারী। সড়কের পাশে কর্মরত একদল নির্মাণশ্রমিক রীতিমতো ফিল্মি কায়দায় উদ্ধার করেন তাকে। গর্তের ভেতর থেকে ওই নারীকে উদ্ধারে শ্রমিকদের সময় লেগেছে ৫ মিনিটেরও কম।
গত ২৬ জুলাই দুর্ঘটনাটি ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই নির্মাণ শ্রমিকদের ফোরম্যান সুপ্পিয়াহ পিচাই উদাইয়াপ্পান দেরি না করে একটি দড়ি নিয়ে এগিয়ে যান। গর্তের ভেতর ছুড়ে দেন দড়িটি। কোনোমতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন চালক ওই নারী। পরে, ওই দড়ি ধরে টেনে তাকে ওপরে তোলা হয়। পরে উদাইয়াপ্পান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলাম, কিন্তু আমরা খালি মনে হয়েছিল, যেকোনো মূল্যে ওই নারীকে বাঁচাতে হবে।’
এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল তাদের সেই দুঃসাহসিক উদ্ধার অভিযান। অনেকেই তাদের ‘হিরো’ আখ্যা দিচ্ছেন। এই শ্রমিকদের সবাই অভিবাসী। উদ্ধারকারী সাত ভারতীয় অভিবাসী শ্রমিককে ব্যক্তিগতভাবে ইস্তানা প্যালেস ওপেন হাউসে আমন্ত্রণ জানাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট থারমান শানমুগরত্নম। এ ছাড়া, সিঙ্গাপুরের জনশক্তি মন্ত্রণালয় এই শ্রমিকদের ‘প্রশংসা মুদ্রা’ দিয়ে সম্মানিত করেছে এবং অভিবাসী শ্রমিকদের একটি দাতব্য সংস্থা তাদের জন্য ৭২ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার সংগ্রহ করেছে।
দেশটিতে অভিবাসী শ্রমিকদের এমন বীরত্বের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে চলতি বছর এপ্রিলেও একটি দোকানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বীরত্ব দেখিয়েছে অভিবাসী শ্রমিকেরা। দোকানটিতে আটকে পড়া শিশুদের উদ্ধার করেছেন তারা।
সরকারের এমন স্বীকৃতি সত্ত্বেও, অভিবাসী শ্রমিকেরা কম বেতন, অনিশ্চিত পরিস্থিতি এবং স্থায়ী বসবাসের অধিকার না পাওয়ার মতো বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বহুদিন ধরেই।
এবারের এই ঘটনাটি সিঙ্গাপুরে স্বল্প আয়ের শ্রমিকদের অধিকার এবং তাদের দৈনন্দিন দুর্দশা নিয়ে বহু পুরোনো বিতর্ককে আবারও উসকে দিয়েছে। সিঙ্গাপুরে ১১ লাখ ৭ হাজার অভিবাসী শ্রমিক কাজ করেন। তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের নাগরিক। দেশটির বিদেশি কর্মশক্তির প্রায় তিন-চতুর্থাংশই এই শ্রমিকেরা। সাধারণত, স্থানীয়রা যেসব কম বেতনের শ্রমসাধ্য কাজ এড়িয়ে চলেন, সেগুলোই করেন এসব শ্রমিক। ভবন নির্মাণ, জাহাজ নির্মাণ এবং উৎপাদন খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে তাদের অবদান ব্যাপক।
কিন্তু সিঙ্গাপুরে অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য কোনো ন্যূনতম মজুরি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, কিছু শ্রমিক মাসে মাত্র ৩০০ সিঙ্গাপুরি ডলার (২৩৩ ইউএস ডলার) উপার্জন করেন। তারা সাধারণত আবাসিক এলাকা থেকে দূরে, ঘিঞ্জি ডরমিটরিতে থাকেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, অনেক সময়ই তাদের নিয়োগকারী সংস্থা বা মালিকদের দ্বারা শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ওভারটাইম মজুরি ছাড়াই অতিরিক্ত কাজ, মজুরি না পাওয়া এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে বাধ্য হওয়ার মতো শোষণের শিকার হন তারা। এই সমস্যাগুলো বহু বছর ধরে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় থাকলেও, অধিকার কর্মীরা বলছেন, পরিস্থিতি খুব বেশি বদলায়নি।
সিঙ্গাপুরের সমাজকর্মী সুরেন্দ্র কুমার ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘আজ আপনারা তাদের বীর হিসেবে সম্মান জানাচ্ছেন। কিন্তু আগামীকাল আবার তাদেরই “প্রতারক, মিথ্যাবাদী ও নোংরা” বলে সাধারণীকরণ করবেন।’
২০২০ সালের কোভিড মহামারির সময় এই শ্রমিকদের দুর্দশা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাদের ডরমিটরিগুলো ভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল এবং প্রতিদিন শত শত শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছিলেন। সেই সময় তাদের জীবনযাত্রা নিয়ে তীব্র আলোচনা শুরু হয়, যার ফলস্বরূপ বাধ্য হয়ে ডরমিটরির মান উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ নেয় কর্তৃপক্ষ।
সিঙ্কহোলের ঘটনাটি শ্রমিকদের আরেকটি গুরুতর সমস্যার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, সেটি হলো ফ্ল্যাট-বেড ট্রাকে (বাংলাদেশের লেগুনার মতো) করে তাদের কর্মস্থলে যাতায়াত। অধিকার কর্মী সুরেন্দ্র কুমার এই পরিস্থিতিকে ‘করুণ বাস্তবতা’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, যেসব শ্রমিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একজন সিঙ্গাপুরি নারীকে উদ্ধার করেছেন, সম্ভবত তারা লরিতে করেই যাতায়াত করেন।
সিঙ্গাপুরের আইন অনুযায়ী, জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ছাড়া সাধারণ মানুষের ট্রাকে করে যাতায়াত নিষিদ্ধ। তবে, যদি শ্রমিকেরা ওই ট্রাকের মালিকের কর্মচারী হন, তাহলে এই নিয়ম শিথিল। কিন্তু এই পরিবহন ব্যবস্থার ফলে বহু দুর্ঘটনা ঘটে। প্রায়শই ১২ জন পর্যন্ত শ্রমিককে ট্রাকে গাদাগাদি করে পরিবহন করা হয়, এতে কোনো সিটবেল্ট নেই। এই পদ্ধতি অনেক নিয়োগকর্তার জন্য সাশ্রয়ী, কারণ তাঁরা একই ট্রাকে পণ্যও পরিবহন করতে পারেন।
২০২১ সালের এপ্রিলে এ রকম এক দুর্ঘটনায় দুজন প্রবাসী শ্রমিক নিহত হন। এমনকি গত বছরও ট্রাক দুর্ঘটনায় নিহত হন অন্তত চারজন শ্রমিক। এতে আহত হয়েছিলেন আরও চার শতাধিক।
অধিকারকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের পরিবহন নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছেন। বিষয়টি একাধিকবার পার্লামেন্টেও আলোচিত হয়েছে, কিন্তু খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। সিঙ্গাপুর সরকার বারবার বলে আসছে, তারা কোম্পানিগুলোকে বাসে করে শ্রমিক পরিবহনের জন্য উৎসাহিত করছে। কিন্তু ছোট ব্যবসার জন্য এই ধরনের ট্রাক নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়। একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী গত ফেব্রুয়ারিতে পার্লামেন্টে বলেন, ‘বাসে শ্রমিক পরিবহনে বাধ্য করলে অনেক কোম্পানি বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য হবে। এতে দেশি ও বিদেশি উভয় ধরনের শ্রমিকই কাজ হারাবে। এতে আবাসন, স্কুল, হাসপাতাল এবং ট্রেন লাইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো বিলম্বিত হবে এবং সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের জন্য খরচও বাড়বে।’
শ্রমিকদের অধিকারকে কেবল অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ওই সময় সরকার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। অধিকারকর্মীরা উল্লেখ করেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের মতো যেসব দেশ অভিবাসী শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল, তারাও ট্রাকে করে মানুষ পরিবহন নিষিদ্ধ করেছে। সুরেন্দ্র কুমার বলেন, সরকার বিদেশি শ্রমিকদের থেকে যে কর বা লেভি সংগ্রহ করে, তা ব্যবহার করে শ্রমিকদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, এতে ব্যবসা ও ভোক্তাদের ওপর বাড়তি খরচ চাপবে না।
মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যানিটেরিয়ান অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন ইকোনমিকসের’ সিনিয়র গবেষক জয়া অনিল কুমার বলেন, সরকারের এই ধরনের যুক্তিই অভিবাসী শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকার ওপর নিয়োগকর্তাদের অন্যায্য নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার উৎস।
শ্রমিকদের সুরক্ষায় ট্রাকে পরিবহন নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি আরও কিছু পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে, যেমন—যথাযথ মজুরি, হুইসেলব্লোয়ার (গোপন তথ্য ফাঁসকারী) সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবাতে ভর্তুকি। দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরে কাজ করেও এই শ্রমিকেরা স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পান না, কারণ বিদেশি পেশাজীবী ও কর্মকর্তাদের চেয়ে তাদের কর্মসংস্থান ভিসা ভিন্ন। সুপ্পিয়াহ উদাইয়াপ্পান, যার নেতৃত্বে শ্রমিকেরা ওই সিঙ্গাপুরি নারীকে গর্ত থেকে উদ্ধার করেছেন, তিনি ২২ বছর ধরে সিঙ্গাপুরে কাজ করছেন, তারও স্থায়ীভাবে বসবাসের কোনো সুযোগ নেই।
এ ছাড়া, কর্মসংস্থান ভিসাধারীদের সিঙ্গাপুরিদের বিয়ে করার জন্যও সরকারের অনুমতি নিতে হয়—এটিও অধিকার কর্মীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ। অনিল কুমার বলেন, ‘খুব ধীর গতিতে আইনের পরিবর্তন হচ্ছে, কারণ কার্যকর পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সদিচ্ছা নেই।’
এই সপ্তাহে কর্তৃপক্ষ সিঙ্কহোল থেকে উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া সাতজন শ্রমিককে ‘অ্যাপ্রেসিয়েশন কয়েন’ দিয়ে সম্মানিত করেছে। কিন্তু অনেকেই এই পদক্ষেপকে ‘টোকেনিজম’ বলে সমালোচনা করেছেন। সুরেন্দ্র কুমার বলেন, ‘তাদের বীরত্বের জন্য যত ধন্যবাদই দেওয়া হোক না কেন, তা সেই শোষণমূলক অর্থনৈতিক মডেলকে ন্যায্যতা দিতে পারে না, যা প্রতিদিন তাঁদের দমিয়ে রেখে সিঙ্গাপুরে আমাদের জীবনধারা টিকিয়ে রাখে।’
অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই কথার প্রতিধ্বনি তুলেছেন এবং বলেছেন যে এই শ্রমিকদের আরও বেশি স্বীকৃতি প্রাপ্য। কেউ কেউ তাদের আর্থিক পুরস্কার এবং এমনকি স্থায়ী নাগরিকত্ব দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন। সিঙ্গাপুরের জনশক্তি মন্ত্রণালয় বিবিসিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘অভিবাসী শ্রমিকদের আরও নানাভাবে সম্মান জানানোর জন্য পাওয়া ফিডব্যাকে আমরা উৎসাহিত।’ তবে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাবের বিষয়ে তাঁরা সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি।
অভিবাসী অধিকার বিষয়ক সংগঠন ‘ইটস রেইনিং রেইনকোটস’ ৭২ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার সংগ্রহ করেছে। উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া সাত শ্রমিকের মধ্যে এই অর্থ সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হবে। বাংলাদেশি শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনাকারী একেএম মহসিন এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেন, ‘এই শ্রমিকেরা প্রায়শই নিজেদের জীবন বিপন্ন করে অনেক সিঙ্গাপুরিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন। তারা সংবাদমাধ্যমে প্রশংসিত হন এবং মানবিক কাজের চমৎকার উদাহরণ হিসেবে পরিচিতি পান, কিন্তু কর্মস্থলে, পরিবহনে এবং বাসস্থানে তাদের মানবাধিকার প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে।’
মানবাধিকার কর্মীদের মতে, অভিবাসী শ্রমিকদের নিজেদের তুলনায় একটি ভিন্ন এবং নিম্ন শ্রেণির মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে অধিকাংশ সিঙ্গাপুরি।
অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ট্রানজিয়েন্ট ওয়ার্কার্স কাউন্ট টু-এর সহসভাপতি অ্যালেক্স আউ নির্দ্বিধায় বলেন, ‘আমরা মূলত তাদের ভিন্ন শ্রেণির মানুষ হিসেবে দেখি। আমরা তাদের কাছ থেকে সেবা আশা করি এবং বিশ্বাস করি যে তারা এই জন্যই এখানে আছে। আর ভৃত্যদের অবশ্যই তাদের প্রভুদের বিপদে এগিয়ে আসা উচিত।’
মালয়েশিয়ার পূর্ব উপকূলীয় মহাসড়কে (ইস্ট কোস্ট হাইওয়ে) মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে তিন বাংলাদেশি নাগরিক। আহত হয়েছে আরও দুজন। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় কুয়ানতান শহরের কাছে মহাসড়কের কিলোমিটার ২০০ দশমিক ৮ নম্বর পয়েন্ট পিলারের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
সিঙ্গাপুরের ব্যস্ততম একটি সড়কে হঠাৎ তৈরি হওয়া এক সুবিশাল গর্তে গাড়িসহ পড়ে যান এক নারী। সড়কের পাশে কর্মরত একদল নির্মাণশ্রমিক রীতিমতো ফিল্মি কায়দায় উদ্ধার করেন তাকে। গর্তের ভেতর থেকে ওই নারীকে উদ্ধারে শ্রমিকদের সময় লেগেছে ৫ মিনিটেরও কম।
কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও যুক্তরাষ্ট্রের পপ সুপারস্টার কেটি পেরিকে সম্প্রতি মন্ট্রিয়লের একটি রেস্তোরাঁয় একসঙ্গে রাতের খাবার খেতে দেখা গেছে। এ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই কানাডা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহলে তাঁদের মধ্য প্রেমের সম্পর্ক আছে বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
সিবিআইয়ের অধীন কমপক্ষে দুই লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে একটি বাড়ি কিনলেই আপনি পেয়ে যাবেন এ পাসপোর্ট। এতে ইউরোপের শেনজেন অঞ্চল, যুক্তরাজ্যসহ ১৫০টির বেশি দেশে পাবেন ভিসামুক্ত প্রবেশের সুবিধা।
কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও যুক্তরাষ্ট্রের পপ সুপারস্টার কেটি পেরিকে সম্প্রতি মন্ট্রিয়লের একটি রেস্তোরাঁয় একসঙ্গে রাতের খাবার খেতে দেখা গেছে। এ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই কানাডা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহলে তাঁদের মধ্য প্রেমের সম্পর্ক আছে বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
৩ দিন আগে