logo
প্রবাসের খবর

সিডনিতে ২৪ সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো বিজয়া সম্মিলন

নাইম আবদুল্লাহ, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া১৬ ঘণ্টা আগে
Copied!
সিডনিতে ২৪ সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো বিজয়া সম্মিলন

অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উদ্‌যাপনের পর শুভেচ্ছা ও সৌহার্দ বিনিময়ের লক্ষ্যে বিজয়া পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ২৪টি সংগঠন সম্মিলিতভাবে এই পুনর্মিলনীকে ‘বিজয়া সম্মিলন’ নামে অভিহিত করছে।

শনিবার (৮ নভেম্বর) এই চতুর্থ আয়োজনের আসর বসেছিল সিডনির শহরতলী ক্যাম্পসির ওরিয়ন ফাংশন সেন্টারে। সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন ফর এথনিক অ্যান্ড রিলিজিয়াস মাইনোরিটিস ইন বাংলাদেশের (এএফইআরএমবি) উদ্যোগে এ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।

দেবী দুর্গার উপাসনার মূল আহ্বানকে পুনরুচ্চারিত করে, বরাবরের মতো এই বিজয়া সম্মিলনের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘অশুভের বিনাশ হোক, শুচি হোক বিশ্বলোক’। সকল আসুরিক, দানবিক, অমানবিক শক্তির বিনাশ ঘটে বিশ্বে শান্তি, মঙ্গল ও শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা হোক, এটাই প্রার্থনা।

আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাদেশিক ও ফেডারেল পর্যায়ের কয়েকজন এমপি ও মন্ত্রী, কমিউনিটির বিপুলসংখ্যক সদস্য এবং স্পন্সর ও মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।

Vijaya Sammilan in Sydney 2

বিকেল ৫টায় শুরু হয়ে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে এই আনন্দঘন মহাসম্মিলন। সমগ্র অস্ট্রেলিয়া, বিশেষত নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সদস্যরা সপরিবারে যোগ দেন। বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই আনন্দধারায় যুক্ত হয়ে প্রীত হন। এই মধুর সম্মিলনের উদ্দেশ্য ও আহবানের সঙ্গে তাদের দৃঢ় প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন।

যেসব সংগঠনের প্রতিনিধি বা সদস্যরা সশরীরে অংশগ্রহণ করতে পারেননি, তারা যথারীতি বিজয়ার শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন। এতে উপস্থিতি আংশিক ভার্চ্যুয়াল হলেও অংশগ্রহণে পূর্ণতা পেয়েছে।

শুভ্রা সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। কান্ট্রি অ্যাকনলেজমেন্ট, বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত গাওয়া এবং পরমেশ ভট্টাচার্য ও অপু সাহার সমন্বয়ে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে ঢাক ও শঙ্খের মূখরিত বাজনার সঙ্গে উলুধ্বনিতে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। এরপর নতুন প্রজন্মের শিশুরা পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করে। এতে অংশগ্রহণ করে ‘রাধা কৃষ্ণ গৌড়ীয় মন্দির’-এর শিশুরা।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংস ঘটনাবলির ওপর আকাশ দের নির্মিত একটি ভিডিও প্রদর্শিত হয়, যা উপস্থিত সবাইকে স্তম্ভিত করে। আনন্দের অনুষ্ঠানে বিষাদের ছায়া নেমে এলেও স্বদেশের বাস্তবতা দেখে তারা এই ব্যাপারে কিছু ভূমিকা রাখার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্মিলিত শক্তিতে অশুভ শক্তিকে রুখে দেবার বার্তাও ছিল এই ভিডিওতে, যা সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে।

Vijaya Sammilan in Sydney 3

এরপর উপস্থিত সকল সংগঠনের সভাপতি ও প্রতিনিধিরা মঞ্চে দাঁড়িয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় ও ঐক্য অটুট রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এএফইআরএমবির সভাপতি সুরজিৎ রায় উদাত্ত আহ্বান জানান সম্মিলিত শক্তিতে ঐক্যবদ্ধ থাকার লক্ষ্যে। তার দৃঢ়কন্ঠের এই প্রত্যয়ী আহ্বান সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে।

এই আয়োজনের স্পন্সরদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দৃষ্টিনন্দন ক্রেস্ট উপহার দেওয়া হয়, যা ছিল একটি নতুন সংযোজন।

অন্যদের মধ্যে ফেডারেল পার্লামেন্টের সদস্য ও বার্টনের এমপি অ্যাস অ্যাম্বিহাইপার, হিউজের ফেডারেল এমপি ডেভিড মনক্রিফ, হিন্দু কাউন্সিল অব অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল সেক্রেটারি শোভা দেশিকান এবং চট্টগ্রাম হিল ট্রাক্টস ইন্ডিজিনিয়াস জুম্মা অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য কবিতা চাকমা অতিথি হিসেবে যোগ দেন এবং বক্তব্য দেন। তারা তাদের বক্তব্যে বিজয়া পুনর্মিলনী ও দীপাবলির মতো অনুষ্ঠান আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এই আয়োজন অস্ট্রেলিয়ার বহুজাতিক সংস্কৃতির সমাজের সংস্কৃতিকে ঋদ্ধ, বৈচিত্রময় ও উপভোগ্য করবে বলে মত প্রকাশ করেন।

Vijaya Sammilan in Sydney 4

আঁধার মুছে আলো, মূঢ়তা ছেড়ে জ্ঞান এবং অশুভ হেনে শুভশক্তির আহ্বান ও প্রতিষ্ঠায় এএফএআরএমবির এই মহৎ উদ্যোগের সাথে তারা সংহতি প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রদায়ের ওপর চলমান নির্যাতন বন্ধ করে তাদের অধিকার ও মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য অতিথিরা আহ্বান জানান।

অতিথিরা আরও বলেন, এই সমন্বিত বর্ণিল ও প্রাণোস্ফূরণময় উৎসব পালন এই বহুজাতিক ও বহুসাংস্কৃতিক সমাজে নিশ্চিতভাবেই প্রাণ ও প্রেরণা সঞ্চার করবে। তারা অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রামের এই প্রত্যয়ে সবাইকে যূথবদ্ধ হবার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে ডেভিড মনক্রিফ এমপির হাতে এএফএআরএমবির একটি প্রকাশনা ‘গ্লোবাল লেন্স’ এর প্রথম সংখ্যা তুলে দিয়ে এই প্রকাশনার যাত্রা সূচনা করা হয়। এই প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত এএফএআরএমবির সম্পাদকমণ্ডলিও এসময় যুক্ত হন। এই প্রকাশনার মূল উদ্দেশ্য হলো, মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সংঘটিত অবিচার, অত্যাচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তুলে ধরা। এতে বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতির ওপর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, গবেষণালব্ধ লেখা ও দিকনির্দেশনামূলক বার্তা সন্নিবেশিত হয়েছে।

Vijaya Sammilan in Sydney 5

এরপর অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে হিমেল ও শাওলি ভৌমিকের সঞ্চালনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপিত হয় সদস্য সংগঠনের প্রযোজনায়। এএফএআরএমবির বিভিন্ন সংগঠন আলাদাভাবে এসব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করে। যার মাধ্যমে অশুভের বিনাশ ও মঙ্গলের আবাহন মূর্ত হয়ে ওঠে। এর মধ্যে ছিল, স্তোত্রপাঠ, কবিতা আবৃত্তি, গান ও নাচ।

অনুষ্ঠানের শেষে মনোমুগ্ধকর সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সিঁথি সাহা। শিল্পী শ্রোতাদের সঙ্গে গানে-গানে উৎফুল্ল প্রাণে চমৎকার এক সেতুবন্ধন রচনা করেন। এত প্রাণবন্ত পরিবেশনায়, এত হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গানে উপস্থিত আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই পুরোটা সময় আনন্দে, নৃত্যে, করতালিতে উপভোগ করেন। সিঁথি সাহার গান ভরিয়েছে সবার মনপ্রাণ।

অনুষ্ঠান শেষে এএফএআরএমবির পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারপারসন ড. সমীর সরকার সকল সংগঠন, শিল্পী ও আয়োজকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

বিজয়া সম্মিলন শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বী বা বাঙালি কমিউনিটির উৎসব নয়, এই প্রদেশের একটি বর্ণিল ও প্রাণময় উৎসব ছিল এই আয়োজন। এমনটি বলেছেন উপস্থিত অনেক অতিথি। সকল বিচারে এই আয়োজন ছিল গুরুত্বপূর্ণ, ঋদ্ধ ও স্মরণীয়। এই বিজয়া সম্মিলন প্রকৃত অর্থেই হয়ে উঠেছিল এক মহাসম্মিলন।

আরও দেখুন

সিডনিতে ২৪ সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো বিজয়া সম্মিলন

সিডনিতে ২৪ সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো বিজয়া সম্মিলন

দেবী দুর্গার উপাসনার মূল আহ্বানকে পুনরুচ্চারিত করে, বরাবরের মতো এই বিজয়া সম্মিলনের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘অশুভের বিনাশ হোক, শুচি হোক বিশ্বলোক’। সকল আসুরিক, দানবিক, অমানবিক শক্তির বিনাশ ঘটে বিশ্বে শান্তি, মঙ্গল ও শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা হোক, এটাই প্রার্থনা।

১৬ ঘণ্টা আগে

রেমিয়ানস অস্ট্রেলিয়ার পুনর্মিলনী: স্মৃতি, শ্রদ্ধা, আনন্দ আর মিলনের এক উৎসব

রেমিয়ানস অস্ট্রেলিয়ার পুনর্মিলনী: স্মৃতি, শ্রদ্ধা, আনন্দ আর মিলনের এক উৎসব

পুনর্মিলনী উপলক্ষে গ্রেগ পার্সিভাল কমিউনিটি সেন্টার সকাল থেকেই ভরে উঠেছিল প্রাক্তন রেমিয়ান ও তাদের পরিবারের পদচারণায়। হাসি, গল্প, পুরোনো স্মৃতি আর বন্ধুত্বের টানে অডিটোরিয়াম ভরে ওঠে উচ্ছ্বাস ও ভালোবাসায়।

১৭ ঘণ্টা আগে

জাপানের জনশক্তির ঘাটতি পূরণে পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ

জাপানের জনশক্তির ঘাটতি পূরণে পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ

নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া জানান, ২০৪০ সালের মধ্যে জাপানের প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ বিদেশি কর্মীর প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশে বর্তমানে অতিরিক্ত ২ কোটি ৫০ লাখ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী রয়েছে—এ প্রবণতা ২০৪০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

২ দিন আগে

আবুধাবিতে ৭ নভেম্বর উপলক্ষে আলোচনা সভা

আবুধাবিতে ৭ নভেম্বর উপলক্ষে আলোচনা সভা

সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) রাজধানী আবুধাবিতে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) আবুধাবি শাখার উদ্যোগে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

২ দিন আগে