বিডিজেন ডেস্ক
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রধান উপদেষ্টা এবং প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টার মুখে শুনে আসছি, প্রবাসীদের কল্যাণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা, বিমানবন্দরে প্রবাসীদের ভিআইপি মর্যাদা দেওয়ার কথা।
কথা হচ্ছে, দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অপরিসীম অবদানের কথা সব সরকারই স্বীকার করে। অতীতের সরকার প্রধানসহ বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করা সকল অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা প্রবাসীদের অর্থনৈতিক অবদানের কথায় প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। তারা যে প্রবাসীদের জন্য নানা উদ্যোগ নেননি তা নয়। তবে যত উদ্যোগই নেওয়া হোক, প্রবাসীদের মূল সমস্যাগুলোর সমাধান হয়নি।
প্রবাসীদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে হাইকমিশন বা দূতাবাস থেকে পাসপোর্ট নবায়নে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া। বিশেষ করে সময়মতো পাসপোর্ট না পাওয়া। মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব হওয়ার খবর আমরা গণমাধ্যমে দেখি, পড়ি। কিন্তু এই সমস্যা কীভাবে লাঘব করা যায় সেটা নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো সরকার বা দূতাবাস যথার্থ ভেবেছে বলে মনে হয় না। ভাবলে তো এই সমস্যা চিরকালের সমস্যা হয়ে রয়ে যেত না।
মালয়েশিয়ার কথাই বলি। কাজের সূত্রে এ দেশে কয়েক লাখ বাংলাদেশির বসবাস। রেমিট্যান্সের জন্য মালয়েশিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি। বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের সংখ্যা বিবেচনায় সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরই হয়তো মালয়েশিয়ার অবস্থান।
মালয়েশিয়ায় এই বিপুলসংখ্যক প্রবাসীর প্রধান সমস্যা হলো সময়মতো পাসপোর্ট না পাওয়া। পাসপোর্ট নবায়নে সমসময় সমস্যা হয় বা সব প্রবাসী সমস্যার সম্মুখীন হন, ব্যাপারটা এমনও নয়। কিন্তু সমস্যার সম্মুখীন হওয়া প্রবাসীর সংখ্যাও কম নয়। আমার দীর্ঘ ২১ বছরের প্রবাস জীবনে এই সমস্যা আমি অনেকবার দেখেছি।
প্রবাসীদের জন্য পাসপোর্ট হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একজন প্রবাসী যত টাকাই আয় করুন, কাজ থাকুক বা না থাকুক, তার পাসপোর্ট থাকা চাই। ভিসা–পারমিট থাকা চাই। আর ভিসা–পারমিটের জন্য তার পাসপোর্ট থাকাটা অপরিহার্য। পাসপোর্টের কোনো বিকল্প নেই।
তাই প্রবাসীদের জন্য রাষ্ট্রের এক নম্বর সেবা হচ্ছে পাসপোর্ট। বাঁচার জন্য মানুষের যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য—এই ৫টি মৌলিক চাহিদার কথা সেই ছোটবেলায় বইয়ে পড়েছি। তেমনি প্রবাসে এসে বুঝেছি প্রবাসীদের প্রাপ্য মৌলিক সেবা হচ্ছে পাসপোর্ট। এ জন্য প্রত্যেক প্রবাসীর পাসপোর্ট পাওয়া সহজ করা উচিত ছিল রাষ্ট্রের বা সরকারের। পাসপোর্টের পাশাপাশি ট্রাভেল পাস ও অন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সেবা পাওয়াও।
কোনো প্রবাসীই যেন পাসপোর্ট পেতে অযথা সমস্যার সম্মুখীন না হন, এমন উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল। অথচ, সব সরকারই এটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থ হয়েছে বলছি এই কারণে, গত ১৮ নভেম্বর অনলাইনে একটি ভিডিও দেখলাম, মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্টের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান ইএসকেএলের অফিসে সেবা নিতে আসা প্রবাসীদের লাঠি দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে। হয়তো মৃদু আঘাত। এই আঘাত যারা করছেন, তারা ইএসকেএলের নিরাপত্তাকর্মী। ভিডিওতে দেখা যায়, ওখানে অনেক প্রবাসী গাদাগাদি করে দাঁড়িয়েছেন, ঠেলাঠেলিও হচ্ছে।
মালয়েশিয়ানরা সাধারণত ধাক্কাধাক্কি, ঠেলাঠেলি পছন্দ করেন না। সঠিক না জেনে বলছি, হয়তো ধাক্কাধাক্কির কারণে মালয়েশিয়ান নিরাপত্তাকর্মীরা এমনটা করে থাকতে পারেন। আমার নিজ অভিজ্ঞতা জানি, কোথাও লাইনে দাঁড়াতে হলে আশপাশে খালি জায়গা থাকলেও বাংলাদেশিরা সাধারণত এক জায়গায় গাদাগাদি ও ঠেলাঠেলি করে দাঁড়ান। ওখানে খালি জায়গা ছিল কি না আমার জানা নেই।
আমার কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের মানুষ কেমন আমরা জানি। আমাদের প্রবাসীদের আমরা চিনি, জানি। তারা আমাদেরই ভাই। তাদের সেবা দিতে হলে কীভাবে দেব, কখনো সেবাপ্রত্যাশীর সংখ্যা অতিরিক্ত হয়ে গেলে তখন কী পদক্ষেপ গ্রহণ করব, জাতীয়ভাবে দেশে পাসপোর্ট প্রিন্ট হতে বিলম্ব হলে কী করব, প্রবাসীদের আগাম কী জবাব দেব, সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারকে বিষয়টা কীভাবে জানালে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আমাদের প্রবাসীদের প্রতি পাসপোর্টের ব্যাপারে নমনীয় হবে, এগুলো আমাদের(দূতাবাসের বা পাসপোর্টের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের) আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার ছিল।
বেশ কয়েক বছর আগেও দেখেছি, হাইকমিশন/দূতাবাসে পাসপোর্ট ও ট্রাভেল পাস নিতে আসা প্রবাসীরা নানাভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
আমি এর আগেও লিখেছিলাম, স্বভাবত মানুষ যে দেশে থাকেন সে দেশের নিয়ম কানুনের সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায়। কেউ ভালোভাবে, কেউ বা একটু কম। প্রবাসীরা নানা সেবাগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যান। সেখানে তারা ঠেলাঠেলি বা ধাক্কাধাক্কি করেন না বা তার সম্মুখীন না। কাজ হোক বা না হোক, তারা কোনো ধরনের হেনস্তার সম্মুখীন হন না। দুর্নীতির শিকার হন না। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্তৃক তাদের অহেতুক হয়রানির মধ্যে পড়তে হয় না। প্রয়োজনীয় সঠিক পরামর্শ পান কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কাছ থেকে।
অথচ, স্বদেশের দূতাবাসে গেলে সম্মুখীন হতে হয় নানা হয়রানির। আমার মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কথা হচ্ছে, নিয়মকানুন সব প্রবাসীর জানতে হবে। দূতাবাসের কর্মীদের সময় নেই নিয়ম বোঝানোর, বুঝিয়ে দেওয়ার। তারা অনেক বড়। তাদের বিশাল দায়িত্ব। তারা বড় বড় স্যার। তারা জ্ঞানী, গুণী। প্রবাসীরা কেবলই শ্রমিক! তারা হিসাব করেন বছরে কত হাজার পাসপোর্ট বিতরণ করেছেন, কত হাজার ট্রাভেল পাস ইস্যু করেছেন, কত কাগজপত্র সত্যায়িত করেছেন। তারা অনেক অনেক কাজ করেছেন, তাদের রেকর্ড আছে। উর্ধ্বতন কর্তাদের তারা দেখাতে পারেন অনেক কাজ করেছেন।
কিন্তু তারা অনুভব করতে পারেন না, ওই সেবাগুলো নিতে গিয়ে প্রবাসীরা তাদের কাছে (দূতাবাস কর্মকর্তাদের কাছে) কতটা অসহায় ছিলেন! কতটা নিরীহ বোধ করেছিলেন সেবা নিতে আসা অধিকাংশ প্রবাসী। হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য তারা দালাল ধরেছেন। খরচ করেছেন বাড়তি টাকা। এক্ষেত্রে প্রবাসীরা সেবাটি কীভাবে পেয়েছেন সেই রেকর্ড দূতাবাসের খাতায় নেই। দূতাবাসের রেকর্ডে আছে কেবল কাজ আর কাজ।
প্রবাসীদের শুধুমাত্র পাসপোর্ট ইস্যু, ট্রাভেল পাস ইস্যু, কাগজপত্র সত্যায়িত করে দিলে হয় না। এই সেবাগুলো তারা কতটা সহজভাবে পেয়েছেন সেটাই বড় কথা। সেবাগুলো সহজভাবে প্রাপ্যটা তাদের মৌলিক অধিকার, এটাই কর্মকর্তা–কর্মচারীরা বোঝেন না। তারা বোঝেন না প্রবাসীদের সেবা দেওয়া মানে শুধু পাসপোর্ট–ট্রাভেল পাস ইস্যু ও ডকুমেন্টসে সাক্ষর করা নয়। তাদের আবেদনপত্র সঠিকভাবে করানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করাও একটি প্রধান কাজ। তাদেরকে দালালের কাছে যাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে দূতাবাসের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সহযোগিতা করাটাই প্রবাসীদের প্রতি দায়িত্ব পালন করা যথাযথ হয়।
প্রয়োজনে দূতাবাসের কনস্যুলেট অফিস বাড়ান। প্রবাসীদের সেবা দেওয়ার জন্য কিছু খরচ বাড়ান। আমরা প্রবাসীরা বিদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানে যেতে যতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, বিদেশে স্বদেশের দূতাবাসে যেতে (কাজে) ততটা বিপদগ্রস্ত বোধ করি! অধিকাংশ প্রবাসীর কাছে বাংলাদেশ হাইকমিশন বা দূতাবাসে যাওয়া (কাজে) মানে বিশাল অস্বস্তিকর ব্যাপার।
প্রবাসীরা যেদিন বিদেশে বাংলাদেশ হাইকমিশন বা দূতাবাসে যাওয়ার জন্য অস্বস্তিবোধ করবেন না, সেদিন মনে হবে রাষ্ট্র প্রবাসীদের যথাযথ সেবা দিতে পারছে। কীভাবে কী করলে প্রবাসীরা সহজভাবে সেবা পাবেন সেটার কর্মপন্থা তৈরি করুন, কর্মপন্থা কী রকম হবে সেটা বের করার জন্য দেশের নাগরিকদের করের টাকায় হাজারো মেধাবীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা আন্তরিকভাবে চিন্তা করলেই সব সম্ভব। সাথে সরকারে নেতৃত্ব দেওয়া বিজ্ঞ ব্যক্তিরা তো আছেনই। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ প্রবাসীদেরও কাজে লাগাতে পারেন নানাভাবে।
প্রবাসীদের অন্য সেবা নিয়ে পরবর্তীতে লিখব আশা রাখি। প্রবাসী ও দেশের সকল মানুষের নাগরিক সেবাপ্রাপ্তি সহজলভ্য হোক।
—রফিক আহমদ খান, মালয়েশিয়াপ্রবাসী
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রধান উপদেষ্টা এবং প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টার মুখে শুনে আসছি, প্রবাসীদের কল্যাণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা, বিমানবন্দরে প্রবাসীদের ভিআইপি মর্যাদা দেওয়ার কথা।
কথা হচ্ছে, দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অপরিসীম অবদানের কথা সব সরকারই স্বীকার করে। অতীতের সরকার প্রধানসহ বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করা সকল অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা প্রবাসীদের অর্থনৈতিক অবদানের কথায় প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। তারা যে প্রবাসীদের জন্য নানা উদ্যোগ নেননি তা নয়। তবে যত উদ্যোগই নেওয়া হোক, প্রবাসীদের মূল সমস্যাগুলোর সমাধান হয়নি।
প্রবাসীদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে হাইকমিশন বা দূতাবাস থেকে পাসপোর্ট নবায়নে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া। বিশেষ করে সময়মতো পাসপোর্ট না পাওয়া। মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব হওয়ার খবর আমরা গণমাধ্যমে দেখি, পড়ি। কিন্তু এই সমস্যা কীভাবে লাঘব করা যায় সেটা নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো সরকার বা দূতাবাস যথার্থ ভেবেছে বলে মনে হয় না। ভাবলে তো এই সমস্যা চিরকালের সমস্যা হয়ে রয়ে যেত না।
মালয়েশিয়ার কথাই বলি। কাজের সূত্রে এ দেশে কয়েক লাখ বাংলাদেশির বসবাস। রেমিট্যান্সের জন্য মালয়েশিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি। বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের সংখ্যা বিবেচনায় সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরই হয়তো মালয়েশিয়ার অবস্থান।
মালয়েশিয়ায় এই বিপুলসংখ্যক প্রবাসীর প্রধান সমস্যা হলো সময়মতো পাসপোর্ট না পাওয়া। পাসপোর্ট নবায়নে সমসময় সমস্যা হয় বা সব প্রবাসী সমস্যার সম্মুখীন হন, ব্যাপারটা এমনও নয়। কিন্তু সমস্যার সম্মুখীন হওয়া প্রবাসীর সংখ্যাও কম নয়। আমার দীর্ঘ ২১ বছরের প্রবাস জীবনে এই সমস্যা আমি অনেকবার দেখেছি।
প্রবাসীদের জন্য পাসপোর্ট হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একজন প্রবাসী যত টাকাই আয় করুন, কাজ থাকুক বা না থাকুক, তার পাসপোর্ট থাকা চাই। ভিসা–পারমিট থাকা চাই। আর ভিসা–পারমিটের জন্য তার পাসপোর্ট থাকাটা অপরিহার্য। পাসপোর্টের কোনো বিকল্প নেই।
তাই প্রবাসীদের জন্য রাষ্ট্রের এক নম্বর সেবা হচ্ছে পাসপোর্ট। বাঁচার জন্য মানুষের যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য—এই ৫টি মৌলিক চাহিদার কথা সেই ছোটবেলায় বইয়ে পড়েছি। তেমনি প্রবাসে এসে বুঝেছি প্রবাসীদের প্রাপ্য মৌলিক সেবা হচ্ছে পাসপোর্ট। এ জন্য প্রত্যেক প্রবাসীর পাসপোর্ট পাওয়া সহজ করা উচিত ছিল রাষ্ট্রের বা সরকারের। পাসপোর্টের পাশাপাশি ট্রাভেল পাস ও অন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সেবা পাওয়াও।
কোনো প্রবাসীই যেন পাসপোর্ট পেতে অযথা সমস্যার সম্মুখীন না হন, এমন উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল। অথচ, সব সরকারই এটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থ হয়েছে বলছি এই কারণে, গত ১৮ নভেম্বর অনলাইনে একটি ভিডিও দেখলাম, মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্টের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান ইএসকেএলের অফিসে সেবা নিতে আসা প্রবাসীদের লাঠি দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে। হয়তো মৃদু আঘাত। এই আঘাত যারা করছেন, তারা ইএসকেএলের নিরাপত্তাকর্মী। ভিডিওতে দেখা যায়, ওখানে অনেক প্রবাসী গাদাগাদি করে দাঁড়িয়েছেন, ঠেলাঠেলিও হচ্ছে।
মালয়েশিয়ানরা সাধারণত ধাক্কাধাক্কি, ঠেলাঠেলি পছন্দ করেন না। সঠিক না জেনে বলছি, হয়তো ধাক্কাধাক্কির কারণে মালয়েশিয়ান নিরাপত্তাকর্মীরা এমনটা করে থাকতে পারেন। আমার নিজ অভিজ্ঞতা জানি, কোথাও লাইনে দাঁড়াতে হলে আশপাশে খালি জায়গা থাকলেও বাংলাদেশিরা সাধারণত এক জায়গায় গাদাগাদি ও ঠেলাঠেলি করে দাঁড়ান। ওখানে খালি জায়গা ছিল কি না আমার জানা নেই।
আমার কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের মানুষ কেমন আমরা জানি। আমাদের প্রবাসীদের আমরা চিনি, জানি। তারা আমাদেরই ভাই। তাদের সেবা দিতে হলে কীভাবে দেব, কখনো সেবাপ্রত্যাশীর সংখ্যা অতিরিক্ত হয়ে গেলে তখন কী পদক্ষেপ গ্রহণ করব, জাতীয়ভাবে দেশে পাসপোর্ট প্রিন্ট হতে বিলম্ব হলে কী করব, প্রবাসীদের আগাম কী জবাব দেব, সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারকে বিষয়টা কীভাবে জানালে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আমাদের প্রবাসীদের প্রতি পাসপোর্টের ব্যাপারে নমনীয় হবে, এগুলো আমাদের(দূতাবাসের বা পাসপোর্টের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের) আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার ছিল।
বেশ কয়েক বছর আগেও দেখেছি, হাইকমিশন/দূতাবাসে পাসপোর্ট ও ট্রাভেল পাস নিতে আসা প্রবাসীরা নানাভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
আমি এর আগেও লিখেছিলাম, স্বভাবত মানুষ যে দেশে থাকেন সে দেশের নিয়ম কানুনের সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায়। কেউ ভালোভাবে, কেউ বা একটু কম। প্রবাসীরা নানা সেবাগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যান। সেখানে তারা ঠেলাঠেলি বা ধাক্কাধাক্কি করেন না বা তার সম্মুখীন না। কাজ হোক বা না হোক, তারা কোনো ধরনের হেনস্তার সম্মুখীন হন না। দুর্নীতির শিকার হন না। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্তৃক তাদের অহেতুক হয়রানির মধ্যে পড়তে হয় না। প্রয়োজনীয় সঠিক পরামর্শ পান কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কাছ থেকে।
অথচ, স্বদেশের দূতাবাসে গেলে সম্মুখীন হতে হয় নানা হয়রানির। আমার মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কথা হচ্ছে, নিয়মকানুন সব প্রবাসীর জানতে হবে। দূতাবাসের কর্মীদের সময় নেই নিয়ম বোঝানোর, বুঝিয়ে দেওয়ার। তারা অনেক বড়। তাদের বিশাল দায়িত্ব। তারা বড় বড় স্যার। তারা জ্ঞানী, গুণী। প্রবাসীরা কেবলই শ্রমিক! তারা হিসাব করেন বছরে কত হাজার পাসপোর্ট বিতরণ করেছেন, কত হাজার ট্রাভেল পাস ইস্যু করেছেন, কত কাগজপত্র সত্যায়িত করেছেন। তারা অনেক অনেক কাজ করেছেন, তাদের রেকর্ড আছে। উর্ধ্বতন কর্তাদের তারা দেখাতে পারেন অনেক কাজ করেছেন।
কিন্তু তারা অনুভব করতে পারেন না, ওই সেবাগুলো নিতে গিয়ে প্রবাসীরা তাদের কাছে (দূতাবাস কর্মকর্তাদের কাছে) কতটা অসহায় ছিলেন! কতটা নিরীহ বোধ করেছিলেন সেবা নিতে আসা অধিকাংশ প্রবাসী। হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য তারা দালাল ধরেছেন। খরচ করেছেন বাড়তি টাকা। এক্ষেত্রে প্রবাসীরা সেবাটি কীভাবে পেয়েছেন সেই রেকর্ড দূতাবাসের খাতায় নেই। দূতাবাসের রেকর্ডে আছে কেবল কাজ আর কাজ।
প্রবাসীদের শুধুমাত্র পাসপোর্ট ইস্যু, ট্রাভেল পাস ইস্যু, কাগজপত্র সত্যায়িত করে দিলে হয় না। এই সেবাগুলো তারা কতটা সহজভাবে পেয়েছেন সেটাই বড় কথা। সেবাগুলো সহজভাবে প্রাপ্যটা তাদের মৌলিক অধিকার, এটাই কর্মকর্তা–কর্মচারীরা বোঝেন না। তারা বোঝেন না প্রবাসীদের সেবা দেওয়া মানে শুধু পাসপোর্ট–ট্রাভেল পাস ইস্যু ও ডকুমেন্টসে সাক্ষর করা নয়। তাদের আবেদনপত্র সঠিকভাবে করানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করাও একটি প্রধান কাজ। তাদেরকে দালালের কাছে যাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে দূতাবাসের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সহযোগিতা করাটাই প্রবাসীদের প্রতি দায়িত্ব পালন করা যথাযথ হয়।
প্রয়োজনে দূতাবাসের কনস্যুলেট অফিস বাড়ান। প্রবাসীদের সেবা দেওয়ার জন্য কিছু খরচ বাড়ান। আমরা প্রবাসীরা বিদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানে যেতে যতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, বিদেশে স্বদেশের দূতাবাসে যেতে (কাজে) ততটা বিপদগ্রস্ত বোধ করি! অধিকাংশ প্রবাসীর কাছে বাংলাদেশ হাইকমিশন বা দূতাবাসে যাওয়া (কাজে) মানে বিশাল অস্বস্তিকর ব্যাপার।
প্রবাসীরা যেদিন বিদেশে বাংলাদেশ হাইকমিশন বা দূতাবাসে যাওয়ার জন্য অস্বস্তিবোধ করবেন না, সেদিন মনে হবে রাষ্ট্র প্রবাসীদের যথাযথ সেবা দিতে পারছে। কীভাবে কী করলে প্রবাসীরা সহজভাবে সেবা পাবেন সেটার কর্মপন্থা তৈরি করুন, কর্মপন্থা কী রকম হবে সেটা বের করার জন্য দেশের নাগরিকদের করের টাকায় হাজারো মেধাবীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা আন্তরিকভাবে চিন্তা করলেই সব সম্ভব। সাথে সরকারে নেতৃত্ব দেওয়া বিজ্ঞ ব্যক্তিরা তো আছেনই। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ প্রবাসীদেরও কাজে লাগাতে পারেন নানাভাবে।
প্রবাসীদের অন্য সেবা নিয়ে পরবর্তীতে লিখব আশা রাখি। প্রবাসী ও দেশের সকল মানুষের নাগরিক সেবাপ্রাপ্তি সহজলভ্য হোক।
—রফিক আহমদ খান, মালয়েশিয়াপ্রবাসী
আরও পড়ুন
সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আবাসন, শ্রম ও সীমান্ত নিরাপত্তা আইন মেনে চলা নিশ্চিত করতে এ অভিযান চালানো হয়েছে।
কুয়েতের একটি তদন্ত কমিটি ২ হাজার ৮৯৯ কুয়েতির নাগরিকত্ব বাতিল করেছে। এ সিদ্ধান্তটি এখন অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদের কাছে পাঠানো হবে।
কুয়েতে ১০ হাজার নার্স নিয়োগে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ থেকে তালিকা পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন।
সৌদি রেড ক্রিসেন্টের মদিনা শাখার পরিচালক ডা. আহমেদ বিন আলী আল জাহরানির ও মদিনা অঞ্চলের গভর্নর প্রিন্স সালমান বিন সুলতান বিন আব্দুলাজিজ আনুষ্ঠানিকভাবে এই সার্ভিসটির উদ্বোধন করেন।