logo
প্রবাসের খবর

শুধু প্রশংসা নয়, রেমিট্যান্সযোদ্ধারা তার চেয়েও আরও বেশি কিছু প্রাপ্য: আসিফ আকবর

বিডিজেন ডেস্ক
বিডিজেন ডেস্ক৬ ঘণ্টা আগে
Copied!
শুধু প্রশংসা নয়, রেমিট্যান্সযোদ্ধারা তার চেয়েও আরও বেশি কিছু প্রাপ্য: আসিফ আকবর
আসিফ আকবর। সৌদি আরবের রিয়াদের সুয়াইদি পার্কের মঞ্চে। ছবি: ফেসবুক থেকে

সৌদি আরবের রিয়াদের সুয়াইদি পার্ক উপচে পড়েছিল হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশির ভিড়ে, যখন জনপ্রিয় শিল্পী আসিফ আকবর উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটি এবং সৌদি আরবসহ অংশগ্রহণকারী অন্য দেশের বন্ধুদের হৃদয় জয় করেন।

বাতাসে ছিল বিদ্যুতের মতো উত্তেজনা—তবুও গভীর আবেগে ভরা—কারণ প্রিয় এই গায়ক হৃদয়ের টানে যুক্ত হন সেইসব মানুষের সঙ্গে, যারা হাজার মাইল দূর থেকে দেশের অর্থনীতি সচল রাখছেন।

উষ্ণতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলতে বলতে আসিফ আকবর বলেন, রেমিট্যান্স যোদ্ধারা—যারা আরামের জীবন, পরিবারের সময়, এমনকি ব্যক্তিগত স্বপ্ন ত্যাগ করে পরিশ্রম করেন—তারা কেবল প্রশংসাই নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু প্রাপ্য। তাদের প্রাপ্য আনন্দ, বললেন তিনি।

“রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বাঁচতে, মানুষ থাকতে বিনোদন দরকার,” আসিফ আবেগভরে বলেন। “আনন্দের মুহূর্ত, বিনোদনের সুযোগ না থাকলে প্রতিদিনের লড়াই মানুষকে কঠিন করে তোলে।”

‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’সহ অসংখ্য হিট গান উপহার দেওয়া আসিফ তুলে ধরেন প্রবাসী কর্মীদের নীরব সংগ্রামের কথা—একাকিত্ব, বিচ্ছিন্ন জীবন, অদম্য পরিশ্রম এবং সারাক্ষণ দেওয়ার চাপ, যেখানে তারা খুব কমই কিছু ফিরে পান।

তবুও এত কিছুর পরেও তারা দেশে টাকা পাঠান, পরিবারের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলেন এবং দেশের অর্থনীতির ভিত আরও মজবুত করেন—এ কথাও স্মরণ করেন তিনি।

আসিফ প্রবাসী বাংলাদেশিদের বর্ণনা করেন “জাতির সবচেয়ে দেশপ্রেমিক সন্তান” হিসেবে।

তাদের অটল নিষ্ঠার প্রশংসা করে তিনি বলেন, তারা অগ্রগতির স্তম্ভ, যাদের ত্যাগ অনেক সময় অদেখাই থেকে যায়।

“তারা দূর দেশে, প্রিয়জনদের থেকে বহু দূরে থেকে কাজ করেন—শুধু ঘরের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। কিন্তু সেই পথে তারা নিজের আনন্দের মুহূর্তগুলো হারিয়ে ফেলেন,” বড় মঞ্চে দর্শকদের সঙ্গে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে বলেন আসিফ।

সুযাইদি পার্কে সহকর্মী প্রবাসীদের উচ্ছ্বাস এবং উষ্ণতায় ঘেরা পরিবেশে আসিফ সবাইকে মনে করিয়ে দেন—প্রতিটি রেমিট্যান্সের পেছনে লুকিয়ে থাকে একেকটি সংগ্রাম, ত্যাগ এবং না-বলা বেদনার গল্প এবং সংগীত ও একাত্মতার মাধ্যমে, অন্তত কিছুক্ষণের জন্য হলেও সেই বোঝাগুলো হালকা হয়েছে—বলেন গায়ক, যিনি প্রায় দুই ঘণ্টা গান করেন।

প্রতিটি গানেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেখা গেছে তাদের প্রিয় শিল্পীর সঙ্গে কণ্ঠ মেলাতে।

সৌদি আরবের গণমাধ্যম মন্ত্রণালয়, জেনারেল এন্টারটেইনমেন্ট অথরিটির সহযোগিতায়, দ্বিতীয়বারের মতো গ্লোবাল হারমনি আয়োজন করেছে, যেখানে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরা হচ্ছে।

‘বাংলাদেশি কালচারাল’ সেগমেন্ট শুরু হয় ১১ নভেম্বর এবং শেষ হয় শুক্রবার রাতে (রিয়াদ সময় অনুযায়ী ১৪ নভেম্বর)।

এত বড় আয়োজনের জন্য আসিফ সৌদি সরকার, গণমাধ্যম মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি আরও কৃতজ্ঞতা জানান প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনামূল্যে কনসার্ট উপভোগের সুযোগ সৃষ্টি করায়।

জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রার্থনা ফারদিন দিঘি এবং রাবিউল হক জামানের উপস্থাপনায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি ঐতিহ্য, সংগীত, নৃত্য এবং খাবারের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি প্রদর্শিত হয়।

হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়ে লাইভ পারফরম্যান্স উপভোগ করেন, গান গেয়ে পার্কটিকে রূপ দেন আলো-সুরের সমুদ্রে।

অনেকের জন্য এটি ছিল আবেগময় ও গর্বের রাত—নিজেদের শিকড়ের সঙ্গে পুনরায় যুক্ত হওয়া এবং সৌদি কমিউনিটির কাছে নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরার একটি সুযোগ, একতা, বন্ধুত্ব ও দুই দেশের ক্রমবর্ধমান সাংস্কৃতিক সম্পর্ক উদযাপনের মুহূর্ত।

“দারুণ লেগেছে। পরিবারকে হাসি রাখতে প্রতিদিন আমরা এখানে কঠোর পরিশ্রম করি। এই ইভেন্টটা খুবই সতেজতা এনে দিয়েছে, বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার একটা সুযোগ,” বলেন রুমেল, যিনি বন্ধুদের নিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

“প্রথমবার উপস্থাপনা করতে এলাম—এটা আমার নতুন অভিজ্ঞতা। দারুণ লাগছে, বাংলাদেশি কমিউনিটির এত কাছে থাকতে পেরে। দর্শক অসাধারণ। সৌদি কর্তৃপক্ষ ও গণমাধ্যম মন্ত্রণালয়ের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ,” ইউএনবিকে বলেন দিঘি।

গ্লোবাল হারমনি কমিটির মুখপাত্র সারি শাবান জানান, সৌদি আরবে বসবাসরত সবচেয়ে বড় প্রবাসী জনগোষ্ঠীগুলোর একটি হিসেবে বাংলাদেশিদের আতিথ্য দিতে পেরে তারা অত্যন্ত আনন্দিত।

“বাংলাদেশি কমিউনিটিকে পেয়ে আমরা রোমাঞ্চিত। এই ইভেন্ট সৌদি দর্শকদের বাংলাদেশ এবং এর সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও জানতে সাহায্য করবে,” বলেন তিনি।

এই আয়োজনে আরও অংশ নিচ্ছে—মিসর (১৫–১৭ নভেম্বর), লেভান্ত (১৮–২০ নভেম্বর), ইয়েমেন (২১–২৮ নভেম্বর), পাকিস্তান (২৯ নভেম্বর–১ ডিসেম্বর), ইন্দোনেশিয়া (২–৪ ডিসেম্বর), ফিলিপাইন (৫–৮ ডিসেম্বর), উগান্ডা (৯–১০ ডিসেম্বর), ইথিওপিয়া (১১–১৩ ডিসেম্বর) এবং সুদান (১৪–২০ ডিসেম্বর)।

গ্লোবাল হারমনি উদ্যোগ প্রথম চালু হয় ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে, সৌদি আরবের জনসংখ্যার বৈচিত্র্য উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে।

গত বছরের ইভেন্টে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, শ্রীলঙ্কা, মিসর, লেবানন, জর্ডান এবং ফিলিপাইনের সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়।

গতবারের আয়োজনে অংশ নেন বাংলার কিংবদন্তি রক আইকন নগর বাউল জেমস, ডিজে সোনিকা এবং জনপ্রিয় গায়ক হাবিব ওয়াহিদ, পোষ্টি ও বিউটি খান—যার মধ্যে জেমসের রিয়াদে প্রথম লাইভ পারফরম্যান্স ছিল প্রধান আকর্ষণ।

গ্লোবাল হারমনি উদ্যোগ চলমান অবস্থায় ৪৯ দিনের মধ্যে ১৪টি দেশের সাংস্কৃতিক সপ্তাহ উদ্‌যাপিত হচ্ছে।

এই কর্মসূচি সৌদি আরবের বৃহত্তর উদ্যোগের অংশ, যা আন্তঃসংস্কৃতিগত সংলাপ ও পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়াতে সহায়তা করছে এবং রিয়াদকে সাংস্কৃতিক ও সভ্যতাগত বৈচিত্র্যের বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরছে।

সূত্র: ইউএনবি

আরও দেখুন

শুধু প্রশংসা নয়, রেমিট্যান্সযোদ্ধারা তার চেয়েও আরও বেশি কিছু প্রাপ্য: আসিফ আকবর

শুধু প্রশংসা নয়, রেমিট্যান্সযোদ্ধারা তার চেয়েও আরও বেশি কিছু প্রাপ্য: আসিফ আকবর

“তারা দূর দেশে, প্রিয়জনদের থেকে বহু দূরে থেকে কাজ করেন—শুধু ঘরের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। কিন্তু সেই পথে তারা নিজের আনন্দের মুহূর্তগুলো হারিয়ে ফেলেন,” বড় মঞ্চে দর্শকদের সঙ্গে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে বলেন আসিফ।

৬ ঘণ্টা আগে

রিয়াদের গ্লোবাল হারমনি উৎসবে বাংলাদেশের বর্ণিল ঐতিহ্যের ঝলক

রিয়াদের গ্লোবাল হারমনি উৎসবে বাংলাদেশের বর্ণিল ঐতিহ্যের ঝলক

হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি ও তাদের পরিবার উৎসবে অংশ নেন। নাচ, গান ও আলোকসজ্জায় গোটা পার্ক রূপ নেয় উৎসবের নগরে। প্রবাসী রুমেল বলেন, “এটি সত্যিই অসাধারণ। প্রতিদিন কাজের চাপে থাকি, পরিবারের মুখে হাসি রাখতে লড়াই করি। এই আয়োজন আমাদের ক্লান্তি ভুলিয়ে দিয়েছে।

৩ দিন আগে

রিয়াদে ৪ দিন ঝলমল করবে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য

রিয়াদে ৪ দিন ঝলমল করবে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য

জাঁকজমকপূর্ণ এই উৎসবে থাকছে প্রাণবন্ত পরিবেশনা, ঐতিহ্যবাহী সংগীত ও নৃত্য, সঙ্গে থাকবে আসল বাংলাদেশি খাবারের স্বাদ—সব মিলিয়ে এটি হয়ে উঠবে বাংলাদেশের ঐতিহ্যের এক চমৎকার প্রদর্শনী।

৪ দিন আগে

মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড উপকূলে রোহিঙ্গাবাহী নৌকাডুবিতে ইউএনএইচসিআর ও আইওএমের শোক

মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড উপকূলে রোহিঙ্গাবাহী নৌকাডুবিতে ইউএনএইচসিআর ও আইওএমের শোক

সমুদ্রে বিপদগ্রস্ত মানুষের জীবন রক্ষা আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইনের অধীনে মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব। ইউএনএইচসিআর ও আইওএম আহ্বান জানিয়েছে, এমন ট্র্যাজেডি রোধে অনুসন্ধান ও উদ্ধার সক্ষমতা বৃদ্ধি, নিরাপদ আশ্রয়ে প্রবেশের সুযোগ নিশ্চিতকরণ এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের জন্য।

৪ দিন আগে