logo
প্রবাসের খবর

সৌদি আরব: ধর্ম, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি

বিডিজেন ডেস্ক
বিডিজেন ডেস্ক১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Copied!
সৌদি আরব: ধর্ম, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি
সৌদি আরব

সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব বিশ্বে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ। সৌদি আরব তার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, ইসলামের পবিত্র ভূমি এবং বিশাল তেল সম্পদের কারণে বৈশ্বিক পরিসরে অসাধারণ গুরুত্ব অর্জন করেছে। দেশটি আরব উপদ্বীপের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এর রাজধানী রিয়াদ। সৌদি আরবের বর্তমান শাসক হলো সৌদ পরিবার, যারা ১৯৩২ সালে দেশটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্ষমতায় রয়েছে। ইসলামের দুটি প্রধান ও পবিত্র শহর মক্কা ও মদিনা এই দেশেই অবস্থিত, যা সৌদি আরবকে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিকভাবে মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রে পরিণত করেছে।

ইতিহাস:

সৌদি আরবের ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন ও সমৃদ্ধ। ইসলামের আগে আরব উপদ্বীপ ছিল বিভিন্ন আদিবাসী গোত্রের আবাসস্থল, যারা প্রধানত বেদুইন জীবনযাপন করত। সপ্তম শতাব্দীতে, ইসলাম ধর্মের প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আরব উপদ্বীপের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে বিপ্লব আসে। মক্কা শহরের প্রান্তে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় নবী মুহাম্মদ (সা.) ইসলামের বার্তা প্রচার শুরু করেন এবং এর ফলে আরব উপদ্বীপ একটি ঐক্যবদ্ধ ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। পরবর্তীকালে, ইসলাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং মুসলিম সাম্রাজ্যের কেন্দ্র হিসেবে সৌদি আরবের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। মধ্যযুগ থেকে আধুনিক সময় পর্যন্ত, সৌদি আরব একাধিক স্থানীয় রাষ্ট্র ও ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল। তবে ১৯৩২ সালে আব্দুল আজিজ ইবনে সৌদ আধুনিক সৌদি আরব রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেন। গোত্র সংঘর্ষ ও বিশৃঙ্খলার পর তিনি দেশের বিভিন্ন অংশকে একত্রিত করে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে সৌদি আরবকে প্রতিষ্ঠিত করেন। পরবর্তীকালে, আবিষ্কৃত তেল সৌদি আরবের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি করে।

ভূগোল ও জনসংখ্যা:

সৌদি আরবের মোট আয়তন প্রায় ২১.৫ লাখ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের বিচারে বিশ্বের ১৩তম বৃহৎ দেশ। দেশের অধিকাংশ অংশ জুড়ে রয়েছে মরুভূমি, যার মধ্যে বিখ্যাত রুব আল খালি বা ‘খালি কোয়ার্টার’ মরুভূমি অন্যতম। এটি বিশ্বের বৃহত্তম বালুময় মরুভূমি এবং সৌদি আরবের দক্ষিণে অবস্থিত। এর পাশাপাশি, সৌদি আরবের পশ্চিম অংশে হেজাজ পর্বতমালা এবং পূর্বে পারস্য উপসাগরীয় নিম্নভূমি রয়েছে। জনসংখ্যার দিক থেকে, সৌদি আরবে প্রায় সাদে তিন কোটি মানুষ বসবাস করে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ বিদেশি কর্মী, যারা দেশটির তেল, নির্মাণ ও পরিষেবা খাতে কাজ করে। সৌদি জনগণের প্রধান ভাষা হলো আরবি এবং ইসলাম হলো রাষ্ট্রধর্ম। সৌদি আরবের জনসংখ্যা বড় অংশ তরুণ এবং শিক্ষার হার বাড়ছে। তবে দেশের সামাজিক প্রথা ও আইনি কাঠামো বেশ কঠোর এবং ইসলামী আইন দ্বারা পরিচালিত হয়।

রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থা:

সৌদি আরব একটি একনায়কতান্ত্রিক রাজতন্ত্র। এখানে শাসক সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। বর্তমানে সৌদি আরবের শাসক হলেন বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ। তবে তার পুত্র যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) ক্রাউন প্রিন্স ও ডি ফ্যাক্টো নেতা হিসেবে দেশের অধিকাংশ নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। রাজতন্ত্রের ভিত্তি ইসলামিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এবং শরিয়া আইন দেশটির আইনি কাঠামোর মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের অধীনে দেশটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ‘ভিশন ২০৩০’ নামের একটি উদ্ভাবনী প্রকল্পের মাধ্যমে সৌদি আরব তেল নির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে এসে একটি বহুমুখী অর্থনীতি গড়ে তুলতে কাজ করছে। এই প্রকল্পের আওতায় দেশটিতে নারীদের অধিকার বৃদ্ধি, বিনোদন শিল্পের উন্নতি ও পর্যটন খাতের প্রসার ঘটানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অর্থনীতি:

সৌদি আরবের অর্থনীতি মূলত তেলের ওপর নির্ভরশীল। দেশটির মোট জিডিপির প্রায় ৫০ শতাংশ আসে তেল শিল্প থেকে, যা এটিকে বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। ১৯৩৮ সালে পূর্বাঞ্চলে তেলের বিশাল মজুদ আবিষ্কৃত হয়। এরপর থেকেই সৌদি আরব আন্তর্জাতিক তেল বাণিজ্যের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা আরামকো বিশ্বের বৃহত্তম তেল কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি এবং সৌদি আরবের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে তেলের বাজারে অস্থিরতার কারণে দেশটি অর্থনৈতিকভাবে আরও বৈচিত্র্যময় করার প্রয়োজন অনুভব করেছে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন ২০৩০’-এর অধীনে সৌদি সরকার প্রযুক্তি, পর্যটন, বিনোদন এবং পুনর্নবায়ণযোগ্য জ্বালানি খাতেও বিনিয়োগ করছে। এছাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও নতুন শহর নির্মাণের মতো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে 'নিওম' নামের উচ্চ-প্রযুক্তি মেগা সিটি প্রকল্পটি বড় উদাহরণ।

সংস্কৃতি ও সমাজ:

সৌদি আরবের সংস্কৃতি গভীরভাবে ইসলামী ঐতিহ্য দ্বারা প্রভাবিত। এখানে প্রতিদিনের জীবনধারা এবং সমাজের সকল স্তরে ইসলামিক আচার-অনুষ্ঠান ও রীতিনীতির প্রভাব দেখা যায়। সৌদি সমাজ রক্ষণশীল এবং পরিবারকে সমাজের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখানকার নারীরা দীর্ঘদিন ধরে কঠোর বিধিনিষেধের অধীনে ছিল, তবে সাম্প্রতিক সংস্কারগুলো নারীদের জন্য আরও স্বাধীনতা নিয়ে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮ সালে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা সমাজে নারীদের অবস্থানে একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হয়।

সৌদি আরবের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে উটের দৌড়, বাজপাখি পোষা এবং ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ও সংগীত অন্যতম। ‘আরদা’ নামক ঐতিহ্যবাহী নৃত্য সৌদি আরবের অন্যতম প্রতীক। এছাড়াও, সৌদি আরবে মসজিদ, ইসলামী স্থাপত্য এবং ধর্মীয় শিক্ষার গভীর প্রভাব রয়েছে। হজ ও উমরাহ পালনের জন্য প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মুসলিম মক্কা ও মদিনায় আসেন, যা সৌদি আরবের জন্য একটি বিশাল ধর্মীয় পর্যটনের সুযোগ। এটা সে দেশের অর্থনীতিকেও পুষ্ট করছে।

নারীর অবস্থান ও আধুনিক পরিবর্তন:

সৌদি আরবে নারীদের জীবনযাপন দীর্ঘদিন ধরে কঠোর সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়ম দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নারীর অধিকার নিয়ে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে নারীদের চাকরি করার সুযোগ বৃদ্ধি, শিক্ষা ও সামাজিক কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ অনেকটাই বাড়িয়েছেন। ২০১৮ সালে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা দেশটির রক্ষণশীল সামাজিক পরিবেশে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন হিসেবে ধরা হয়। তবে, এখনো অনেক ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের তুলনায় অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকেন। এর মধ্যে আছে ভ্রমণের স্বাধীনতা এবং পরিবার-সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা। নারীদের পোশাক পরার কঠোর নিয়ম রয়েছে এবং তারা প্রকাশ্যে আবায়া পরতে বাধ্য। তবুও, নারীদের উন্নয়নে সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলো দেশটির ভবিষ্যত সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা:

সৌদি আরবের ভবিষ্যত সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য, ধর্মীয় সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। তেল নির্ভর অর্থনীতি থেকে বের হয়ে আসা এবং প্রযুক্তি, পর্যটন ও শিক্ষা খাতকে উন্নত করা দেশটির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও, সৌদি আরবের যুব প্রজন্মকে বৈশ্বিক অর্থনীতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও দক্ষতা প্রদান করা জরুরি।

পর্যটন খাতে দেশটি বিশাল সম্ভাবনা দেখছে। কারণ ইসলাম ধর্মের পবিত্র স্থানগুলো ছাড়াও অনেক ঐতিহাসিক স্থান এখানে আছে। সাথে চলছে আধুনিকতার মিশেল। যার উদাহরন নিওম মেগা সিটি।

আরও পড়ুন

বিয়ে করলেই দ্রুত মিলবে এই ৫ দেশের নাগরিকত্ব

বিয়ে করলেই দ্রুত মিলবে এই ৫ দেশের নাগরিকত্ব

এসব দেশের কোনো নাগরিককে বিয়ে করলেই দ্রুত আপনি পেয়ে যেতে পারেন সেই দেশের নাগরিকত্ব।

৩ ঘণ্টা আগে

সৌদিতে আরও ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার

সৌদিতে আরও ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার

সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আবাসন, শ্রম ও সীমান্ত নিরাপত্তা আইন মেনে চলা নিশ্চিত করতে এ অভিযান চালানো হয়েছে।

২১ ঘণ্টা আগে

নাগরিকত্ব হারাচ্ছেন আরও ২ হাজার ৮৯৯ কুয়েতি

নাগরিকত্ব হারাচ্ছেন আরও ২ হাজার ৮৯৯ কুয়েতি

কুয়েতের একটি তদন্ত কমিটি ২ হাজার ৮৯৯ কুয়েতির নাগরিকত্ব বাতিল করেছে। এ সিদ্ধান্তটি এখন অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদের কাছে পাঠানো হবে।

২১ ঘণ্টা আগে

জাতীয় প্রবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে কুয়েতে বাংলাদেশি নার্স নিয়োগের বিষয়ে সুখবর দিলেন রাষ্ট্রদূত

জাতীয় প্রবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে কুয়েতে বাংলাদেশি নার্স নিয়োগের বিষয়ে সুখবর দিলেন রাষ্ট্রদূত

কুয়েতে ১০ হাজার নার্স নিয়োগে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ থেকে তালিকা পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন।

২ দিন আগে