logo
প্রবাসের খবর

কাতারের ইতিহাস, ধর্ম, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি

বিডিজেন ডেস্ক
বিডিজেন ডেস্ক০৬ অক্টোবর ২০২৪
Copied!
কাতারের ইতিহাস, ধর্ম, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি
কাতারের রাজধানী দোহা। ছবি: সংগৃহীত

পারস্য উপসাগরের আরব উপদ্বীপে কাতারের অবস্থান। দেশটি আরব উপদ্বীপের পূর্ব উপকূল থেকে উত্তর দিকে প্রসারিত। কাতারের দক্ষিণে সৌদি আরব ও পশ্চিমে দ্বীপরাষ্ট্র বাহরাইনের অবস্থান।

কাতার উত্তপ্ত ও শুষ্ক মরু এলাকা। দেশটির মূল ভূখন্ডে প্রাকৃতিক কোনো জলাশয় নেই। প্রাণী ও উদ্ভিদের সংখ্যাও কম। বেশির ভাগ মানুষ শহরে, বিশেষত রাজধানী দোহায় বাস করে। দেশটিতে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বড় মজুদ আছে। এই প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে দেশটির অর্থনীতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

বর্তমান শাসক আল-থানি পরিবার ১৩০ বছর ধরে কাতার অঞ্চলটিকে একটি আমিরাত হিসেবে শাসন করে আসছে।

বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত কাতার দরিদ্র দেশ ছিল। এ সময় দেশটিতে পেট্রোলিয়ামের আবিষ্কৃত ও উত্তোলন শুরু হয়। বর্তমানে মাথাপিছু আয়ের হিসাবে কাতার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর একটি।

ইতিহাস

প্রাচীন ইতিহাসে কাতারে অস্থায়ী জনবসতির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। 'কান্নানিয়ান' নামক জেলে সম্প্রদায় মাছ ধরার মৌসুমে কাতারের দোহায় অস্থায়ী বসতি করত। পারস্য ও প্রাচীন গ্রিক সাম্রাজ্যের যুদ্ধের রেকর্ড (খ্রি.পূ. ৪৯৯-৪৪৯ অব্দ) থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।

সপ্তম শতকে গোটা আরব উপদ্বীপে ইসলাম প্রসার লাভ করলে এ অঞ্চলও ইসলামের ছায়ায় চলে আসে। এ সময় কাতারে মূলত আরব বেদুইন উপজাতি জেলেরা বসবাস করত। বেদুইনরা বনু আমের বিন আবদ উল কায়েস ও বনু সা'দ বিন যায়েদ মিনাহ বিন তামি্ম নামে গোত্রের ছিল। ষোড়শ শতকে তারা কাতারের দোহায় স্থায়ী হয়। বর্তমান শাসক গোষ্ঠী আল-থানি পরিবার ওইসব গোত্রেরই একটি শাখা।

কাতারের বসবাসকারীদের মূল জীবিকা ছিল মাছ ধরা এবং উট–ঘোড়া লালন–পালন। উমাইয়া শাসনামলে (৬৬১-৭৫০ খ্রি) এ অঞ্চল উট ও ঘোড়া ব্যবসার কেন্দ্রে পরিণত হয়। তথন মুক্তা ব্যবসারও উন্নতি হয়। প্রাচ্যের দেশগুলোয় কাতারি মুক্তার ব্যাপক চাহিদা ছিল। এ ছাড়া, দেশটিতে উটের পশম থেকে এক ধরনের কাপড় তৈরি হতো। এটিও কাতারের অন্যতম ব্যবসায়িক আকর্ষণ ছিল।

ষোড়শ শতাব্দীতে অটোমানরা আরব অঞ্চলে অধিকার প্রতিষ্ঠা করলে একসময় কাতার অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়।

১৭৮৩ সালে বাহরাইনের আল খলিফা পরিবার কাতার দখল করে। তখন পারস্য উপসাগরে বাহরাইন জলদস্যুতার কেন্দ্র ছিল।

উনবিংশ শতাব্দীতে এ অঞ্চলে ব্রিটেনের আনুষ্ঠানিক কোনো উপনিবেশ ছিল না। কিন্তু ব্রিটেনই ছিল ওই অঞ্চলে সর্বময় ক্ষমতাধর বিদেশি শক্তি। ১৮২১ সালে দোহায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একটি জাহাজে বাহরাইন আক্রমণ করে। এই ঘটনা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তাদের ক্ষুব্ধ করে। প্রতিশোধ নিতে তারা দোহায় একটি জাহাজ পাঠায়। ব্রিটিশদের বোমাবর্ষণে দোহার অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ সময় বেশির ভাগ কাতারি শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে যখন কাতারিরা জানতে পারে ব্রিটিশরা কাতারিদের ওপর বোমাবর্ষণ করছে না, তখন তারা বাহরাইনের আল খলিফা শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। এ সময় কাতারের বর্তমান শাসক পরিবার থানি গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়।

১৮৬৭ সালে কাতার ও বাহরাইন যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধে দোহা আরও একবার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এই সময় ব্রিটেন হস্তক্ষেপ করে এবং কাতারকে বাহরাইন থেকে পৃথক একটি সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এটি ছিল কাতার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ।

পরবর্তীতে থানি পরিবারের শেখ জসিম বিন মোহাম্মদ আল থানির নেতৃত্বে অটোমান বাহিনীকে পরাজিত করে অটোমান সাম্রাজ্যের মধ্যেই কাতারিরা স্বায়ত্তশাসিত একটি জাতিতে পরিণত হয়েছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪–১৯১৮) সময় অটোমান সাম্রাজ্যের পতন হলে কাতার ব্রিটিশ আশ্রিত একটি রাজ্যে পরিণত হয়।

১৯১৬ সালের ৩ নভেম্বর কাতার বহি:শত্রুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ব্রিটেনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করে। এই চুক্তির মাধ্যমে কাতারের প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্ব নেয় ব্রিটেন। কৌশলগত এই চুক্তির বিনিময়ে ব্রিটিশ সরকার বহিরাক্রমণ থেকে কাতারকে সুরক্ষার দায়িত্ব নেয়। অন্যদিকে কাতার ব্রিটিশ সরকারের অনুমতি ছাড়া অন্য কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ হারায়। এর মাধ্যমে কাতার ‘ট্রুসিয়াল স্টেট’ বা চুক্তিবদ্ধ রাজ্য বা আমিরাত হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৯৩৫ সালে অভ্যন্তরীণ হুমকির মুখে কাতারের তৎকালীন শাসক এই চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশদের কাছ থেকে সুরক্ষা পেয়েছিলেন।

এর কয়েক বছর পর ১৯৪০ সালে কাতারে তেল আবিষ্কৃত হয়। তেল সম্পদ পরবর্তীতে দেশটির অবকাঠামো উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করে।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত কাতার ব্রিটেনের প্রভাবাধীন ছিল। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিশেষত ১৯৪৭ সালে পর থেকে কাতারসহ অন্য চুক্তিবদ্ধ রাজ্য বা আমিরাতগুলো ব্রিটেনের কাছ থেকে ক্রমশ স্বায়ত্তশাসন পেতে থাকে।

১৯৬৮ সালে কাতার উপসাগরীয় ৯টি আমিরাত বা দেশের একটি দলে যোগ দিয়েছিল। এই জোট পরবর্তীতে সংযুক্ত আরব আমিরাত ফেডারেশন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কাতারেরও এই ফেডারেশনে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আঞ্চলিক বিরোধের কারণে কাতার এই জোট ত্যাগ করে ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

তেলসমৃদ্ধ কাতার পরবর্তীতে আঞ্চলিক প্রভাবশালী একটি দেশে পরিণত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক লেখক মেশি কোয়েনের মতে, ছোট্ট এই আমিরাতকে বর্তমান আমির শেখ তামিমের বাবা শেখ হামাদ বিন খলিফা আল থানি কাতারকে আন্তর্জাতিক ভরকেন্দ্র বানিয়েছেন।

স্বনির্ভর আধুনিক কাতার গড়ার মানসে শেখ হামাদ সুদূরপ্রসারী বহুমুখী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন। এই লক্ষ্যে স্ত্রী শেখ মোজাহ বিনতে নাসেরকে (বর্তমান আমির শেখ তামিমের মা) সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন কাতার ফাউন্ডেশন। শেখ মোজাহ কাতারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আমূল পাল্টে সাজান পশ্চিমা ধাঁচে।

কাতারের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিকল্পনা ঠিক করার জন্য ২০০৮ সালে গঠন করা হয়েছিল কাতার ‘ন্যাশনাল ভিশন (রূপকল্প) ২০৩০’। এই পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য যে সুপ্রিম কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেটির নেতৃত্বে ছিলেন শেখ তামিম। তিনি বাবা–মার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। তাঁর বাবা ও মা সেসব ভিশন ঠিক করেছিলেন সেগুলোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন শেখ তামিম।

রূপকল্প ২০৩০-এর অংশ হিসেবে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলার মাধ্যমে ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কাতার ফাউন্ডেশন দায়িত্ব পালন করেছে বাতিঘরের মতো। ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য হলো কাতারের নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও গবেষণায় দক্ষ করে গড়ে তোলা। চার দেয়ালে বন্দী নারীরা নারী-শিক্ষার সুফল প্রত্যক্ষভাবে ভোগ করছে। কাতারের ৪২ শতাংশ নারীই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট। শিক্ষায় পশ্চিমা মান অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে কাতারের। দেশীয় মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা রয়েছে দেশটিতে।

কাতার ফাউন্ডেশন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান, ধর্ম, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, খেলাধুলা, বিনোদন পর্যটন ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।

কাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি, চমৎকার ক্যালিগ্রাফি অঙ্কিত বিশ্বনন্দিত কাতার ফাউন্ডেশন মসজিদ, রিসার্চ সেন্টার, আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল, প্রশাসনিক অফিস, এডুকেশনাল সিটি স্টেডিয়াম, নয়নাভিরাম অক্সিজেন পার্ক, বৃক্ষশোভিত চমৎকার রাস্তাঘাট, দেশি-বিদেশি নামি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ক্যাম্পাস, ট্রাম লাইন, বহুতল পার্কিং, সব একই ফ্রেমে বাঁধা হয়েছে এডুকেশনাল সিটির নান্দনিক প্রেক্ষাপটে।

কাতার বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের রাষ্ট্র। দেশটির নাগরিক সুযোগসুবিধার মান খুবই উন্নত।

দেশটির রাজধানী দোহাকে অনেকে মধ্যপ্রাচ্যের জেনেভা হিসেবেও বর্ণনা করেন।

অর্থনীতি

মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশের মতো কাতারের অর্থনীতিও তেল-গ্যাসভিত্তিক। কাতার এখন বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ হলেও এক সময় তারা গরিবই ছিল। ১৯৪০ সালে কাতারে তেল আবিষ্কৃত হয়। এরপর থেকে বদলে যেতে শুরু করে অর্থনীতি। মরুভূমির বালুরাশির নিচে তেলের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসও খুঁজে পায় কাতার। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গ্যাসের ভান্ডার হলো কাতার। প্রায় ২ হাজার ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত আছে কাতারে।

বিশ্বের মোট গ্যাস সম্পদের প্রায় ১২ ভাগই আছে কাতারে। শুষ্ক প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে কাতার বিশ্বে ষষ্ঠ আর এলএনজি রপ্তানিতে দ্বিতীয়।

তবে কাতার সবচেয়ে লাভবান হয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস তরলীকরণের ব্যবসায়। এই পদ্ধতির নাম লিকুইফ্যাকশন বা তরলীকরণ। তরলীকৃত গ্যাস বড় বড় জাহাজে তেলের মতো পরিবহন করা যায়।

১৯৮৪ সালে এলএনজি তৈরিতে যৌথ উদ্যোগে কাতারগ্যাস নামের এক কোম্পানি গঠন করে। এটি এখন বিশ্বের বৃহত্তম এলএনজি উৎপাদনকারী। কাতারের এখন বার্ষিক সক্ষমতা ৭ কোটি ৭০ লাখ টন; ২০২৭ সালে যা ১২ কোটি ৬০ লাখ টনে উন্নীত হওয়ার কথা।

জ্বালানি বিক্রি করে বিপুল অর্থ আয় করে কাতার। এই অর্থ কাজে লাগানোর জন্য গঠন করা হয়েছে ‘কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি’। এই প্রতিষ্ঠানের কাজ হচ্ছে তেল-গ্যাস বিক্রি করে আয় করা অর্থ দেশ-বিদেশের লাভজনক ব্যবসায় বিনিয়োগ করা।

কাতারের এই তহবিলের অর্থ বিশ্বের প্রতিটি কোনায় রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। হোটেল, অফিস, অ্যাপার্টমেন্ট কেনার মাধ্যমে লন্ডনের বেশ বড় একটা অংশ কাতারের মালিকানায়; যুক্তরাষ্ট্রেও বিদেশি বিনিয়োগকারী রাষ্ট্রের তালিকায় কাতারের অবস্থান চার নম্বরে।

পুঁজিবাজারকে আরও আকর্ষণীয় করতে কাতার নতুন নতুন বিনিয়োগ মাধ্যম তৈরি করছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা কাতারে পুঁজিবাজারে আসছেন।

এ ছাড়া কাতারের আর্থিক খাতের সফলতার বড় আরেকটি কারণ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম ব্যাংক কাতার ন্যাশনাল ব্যাংক। ২০২৩ সালে নর্থ ফিল্ড এক্সপ্যানশন বা সম্প্রসারণ প্রকল্পে অর্থায়ন করে কাতার ন্যাশনাল ব্যাংক। সেই সঙ্গে এই ব্যাংক এ ধরনের আরও প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে।

সম্প্রতি কাতার সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের মধ্য দিয়ে। ২০২২ সালে এই বিশ্বকাপ আয়োজনে ৩০ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে দেশটি। দ্য ইকোনমিস্টের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বকাপ ফুটবলের বদৌলতে কাতারের অর্থনীতিতে ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের মতো যুক্ত হয়েছে। দেশটি এ আয়োজনে যে খরচ করেছে, তা মূলত ব্যয় হয়েছে অবকাঠামো নির্মাণে। এই ফুটবল বিশ্বকাপের আসর নিয়ে কাতারের অনেক সমালোচনা হলেও শেষমেশ তারা সফলভাবে তা আয়োজন করে। আর্থিকভাবে তা খুব একটা লাভজনক না হলেও এতে তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

কাতার এখন অর্থনীতির বহুমুখীকরণের চেষ্টা করছে। মূলত উৎপাদন, পর্যটন, লজিস্টিকস, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য খাতের ওপর ভর করে কাতার এখন প্রতি বছর তেল-গ্যাস বহির্ভূত খাতে চার শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করার চেষ্টা করছে।

ন্যাশনাল ভিশন ২০৩০ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের তৃতীয় ধাপে আছে এখন কাতার। এই সময় তারা বিনিয়োগবান্ধব অর্থনীতি তৈরি করতে চায়। বিশ্ব ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালে কাতারে বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই এসেছিল ৭৬ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।

শাসন কাঠামো

কাতার নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র কাঠামোয় পরিচালিত হয়। কাতারের আমির একাধারে রাষ্ট্রের প্রধান ও সরকার প্রধান।

বর্তমান আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি ২০১৩ সালের ২৫ জুন তাঁর বাবা হামাদ বিন খলিফা আল থানির কাছ থেকে আমিরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৫ সাল থেকে হামাদ বিন খলিফা দেশটির আমির ছিলেন।

বর্তমান আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ২০১৩ সালে যখন দায়িত্ব নেন তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩৩ বছর। তিনি উপসাগরীয় আরব রাজতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হন।

কাতারের শাসক পরিবারের ইতিহাসে পরিবারের এক সদস্যকে সরিয়ে দিয়ে আরেক সদস্যের জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলের ইতিহাসও রয়েছে।

থানি পরিবারে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বের ইতিহাস বেশ পুরনো। বর্তমান আমির শেখ তামিমের বাবা শেখ হামাদ তাঁর বাবা শেখ খলিফাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ১৯৯৬ সালে প্রথম দিকে ক্ষমতায় আসেন। শেখ খলিফাও ১৯৭২ সালে তাঁর চাচাতো ভাইকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতায় বসেছিলেন।

শেখ হামাদ ১৮ বছর ধরে কাতারের আমিরের দায়িত্বে থাকাকালে বিশ্বের কূটনৈতিক মঞ্চে তাঁর বড় ধরনের প্রভাব ছিল। তিনি ‘আরব বসন্তের’ সমর্থক ছিলেন। তাঁর শাসনকালে কাতার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। এই সময়ে কাতার বিশ্বব্যাপী শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে।

শেখ হামাদের সময় থেকেই তেলসমৃদ্ধ দেশ কাতার মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

১৯৯৬ সালে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছিল, আমির শেখ হামাদ ক্ষমতায় থাকাকালে তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছিলেন শেখ হামাদ বিন জসিম। তিনি ছিলেন আমিরের প্রথম স্ত্রীর সন্তান। শেখ জসিম ছিলেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও শীর্ষ কূটনীতিবিদ। অনেকে মনে করতেন শেখ জসিমই কাতারের পরবর্তী আমির।

কিন্তু শেখ জসিমকে নিয়ে থানি পরিবারের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি ছিল। শেখ হামাদও চাননি শেখ জসিম আমির হোক। এ অবস্থায় পরিবারের মধ্যে কোনো বিরোধ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার আগেই শেখ হামাদ ২০১৩ সালে শেখ তামিমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তিনি ছিলেন শেখ হামাদের দ্বিতীয় স্ত্রী শেখ মোজাহর দ্বিতীয় সন্তান। অবশ্য শেখ তামিমকে পরবর্তী আমির হিসেবে যোগ্য করে গড়ে তুলতে গোপনে বছরের পর বছর ধরেই কাজ চলেছিল।

নতুন আমির শেখ তামিম ক্ষমতা নেওয়ার পরপরই মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করে শেখ জসিমকে বাদ দেন।

বর্তমানে কাতারের প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ বিন নাসের বিন খলিফা আল থানি। তিনি ২০১৩ সাল থেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী।

এক নজরে কাতার

দেশের সরকারি নাম

স্টেট অব কাতার

স্বাধীনতা

৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

জাতীয় দিবস

১৮ ডিসেম্বর

রাজধানী

দোহা

আয়তন

১১ হাজার ৫২১ বর্গমিটার।

জলবায়ু

শুষ্ক। গ্রীষ্মকাল খুব গরম ও আর্দ্র। শীতকাল হালকা, মনোরম।

মুদ্রা

কাতারি রিয়াল

সরকারের ধরন

নিরঙ্কুশ রাজতস্ত্র

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ

দোহা (রাজধানী দোহার সঙ্গে যুক্ত আল রাইয়ান ও দায়্যান মিউনিসিপ্যালিটি)

আল ওয়াকর‍্যা

আল খোর

দায়্যান

আল রাইয়ান

আল-শাহানিয়া

উম্মে সালাল

আল সামাল

ভাষা

সরকারি ভাষা আরবি। কাতারিরা আরবি ভাষায় কথা বলেন। আন্তর্জাতিক কাজকর্মে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়।

শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সংগঠন

কাতারে শিক্ষিতের হার প্রায় ৫৮ শতাংশ। কাতারে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা কম। কাতার একটি ইসলামিক রাষ্ট্র হওয়ায় সেখানে কিছু নিয়ম রয়েছে যা সবাইকে মেনে চলতে হয়। ইসলাম প্রভাবিত কাতারের সংস্কৃতি পূর্ব আরবের অন্য দেশের মতোই। সৌদি আরব ও ওমানের পর কাতার অন্যতম রক্ষণশীল রাষ্ট্র।

আরও পড়ুন

৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইসরায়েল, হামাস না মানলে ফল খারাপ হবে: ট্রাম্প

৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইসরায়েল, হামাস না মানলে ফল খারাপ হবে: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল। পাশাপাশি, হামাস এই চুক্তি না মানলে ফলাফল আরও খারাপ হবে বলেও দাবি করেন ট্রাম্প।

২১ ঘণ্টা আগে

সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ জারি

সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ জারি

সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রায় ৬ মাস আগে সিরিয়ায় ক্ষমতা থেকে উৎখাত হন দেশটির দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদ। তাঁকে উৎখাতে নেতৃত্ব দেন দেশটির বর্তমান শাসক আহমেদ আল–শারা।

২ দিন আগে

ট্রাম্পের নাগরিকত্ব অধ্যাদেশের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের রায়

ট্রাম্পের নাগরিকত্ব অধ্যাদেশের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের রায়

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে ফেডারেল বিচারকদের ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে। এই বিচারকেরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সীমিত করার নির্বাহী আদেশ স্থগিত করতে দেশব্যাপী আদেশ জারি করেছিলেন।

৫ দিন আগে