
রহমান মৃধা

আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটির সাম্প্রতিক মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির বিজয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক নতুন আলোচনা উসকে দিয়েছে। সমাজতান্ত্রিক নীতির প্রতি তার দৃঢ় অঙ্গীকার, মানবিক সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি এবং শ্রমজীবী মানুষের ক্ষমতায়নের আহ্বান তাকে নতুন প্রজন্মের প্রগতিশীল নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার বিজয়ী ভাষণে প্রতিফলিত হয়েছে মানবতার নতুন দিনের প্রত্যাশা, ন্যায়বিচারের অঙ্গীকার ও বৈশ্বিক সংহতির বার্তা।
কিন্তু এই বিজয় যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছে, তেমনি জন্ম দিয়েছে বিতর্কও। প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক মামদানিকে ‘charismatic swindler’ আখ্যা দিয়ে তার নীতিগুলোকে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস হিসেবে উপস্থাপন করেন। এমনকি তিনি মামদানির নাম বিকৃতভাবে উচ্চারণ করে মন্তব্য করেন—যা অনেকের কাছে বর্ণবাদী বিদ্বেষের ইঙ্গিত হিসেবে ধরা পড়ে। মাস্কের সমালোচনা শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং ব্যবসায়িক স্বার্থ ও সাংস্কৃতিক পক্ষপাতের মিশেল বলেও অনেকে দেখছেন। তার মতে, সমাজতান্ত্রিক নীতি বাস্তবায়িত হলে শহরের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এর বিপরীতে, মামদানি স্পষ্ট ও দৃঢ় অবস্থান নেন। তিনি বলেন, “আমরা নিউইয়র্কবাসী—আমাদের অধিকার আমাদেরই।” তিনি ট্রাম্পসহ রক্ষণশীল শিবিরের হুমকিকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে প্রত্যাখ্যান করেন। তার কিছু বক্তব্য, বিশেষত ‘Globalize the Intifada’ স্লোগানটি, আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হলেও তিনি তা ব্যাখ্যা করেছেন ফিলিস্তিনের মানবাধিকার রক্ষার প্রতীকী আহ্বান হিসেবে।
এই ঘটনাপ্রবাহ একটি বৃহত্তর বাস্তবতা নির্দেশ করে—বিশ্বের মহানগরগুলোতে নেতৃত্বের বৈচিত্র্য ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। লন্ডনের মেয়র একজন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মুসলিম, আর এখন নিউইয়র্কের মেয়রও আফ্রিকান-ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত মুসলিম। এটি বহু-সাংস্কৃতিক সমাজে অন্তর্ভুক্তির সাফল্য হলেও, একইসঙ্গে কিছু অংশে ভীতি, শঙ্কা ও বিদ্বেষও বাড়াচ্ছে। ইসলামোফোবিয়া এখনো এক বৈশ্বিক বাস্তবতা; মুসলিম নেতাদের উত্থান অনেকের কাছে ‘অপরিচিতের আতঙ্ক’ সৃষ্টি করে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশেও ছাত্র রাজনীতিতে নতুন এক ঢেউ দেখা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসলামপন্থী সংগঠনের পুনরুত্থান শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয় নয়—এটি আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটেও প্রভাব ফেলতে পারে। প্রশ্ন উঠছে, এই তরুণ প্রজন্ম কি বিশ্বকে এক নতুন দৃষ্টিকোণ উপহার দিতে পারবে, নাকি ধর্ম ও রাজনীতির মিশ্রণে নতুন ধরণের বিভাজন তৈরি হবে?
জোহরান মামদানির বিজয়, মাস্কের সমালোচনা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া মিলিতভাবে এক জটিল সামাজিক বাস্তবতা তুলে ধরে—যেখানে ভয়, বিদ্বেষ ও সাংস্কৃতিক অজ্ঞতা যেমন বিদ্যমান, তেমনি নতুন আশার দিগন্তও উন্মুক্ত।
আজকের বিশ্বে বৈচিত্র্যকে ভয় নয়, শক্তি হিসেবে গ্রহণ করাই হতে পারে প্রকৃত অগ্রগতির পথ। নীতি ও নেতৃত্ব যদি ন্যায়, সহনশীলতা ও মানবতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে, তবে সমাজ হতে পারে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক—আর সেটিই ভবিষ্যতের প্রকৃত শক্তি।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*লেখক গবেষক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। ইমেইল: [email protected]

আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটির সাম্প্রতিক মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির বিজয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক নতুন আলোচনা উসকে দিয়েছে। সমাজতান্ত্রিক নীতির প্রতি তার দৃঢ় অঙ্গীকার, মানবিক সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি এবং শ্রমজীবী মানুষের ক্ষমতায়নের আহ্বান তাকে নতুন প্রজন্মের প্রগতিশীল নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার বিজয়ী ভাষণে প্রতিফলিত হয়েছে মানবতার নতুন দিনের প্রত্যাশা, ন্যায়বিচারের অঙ্গীকার ও বৈশ্বিক সংহতির বার্তা।
কিন্তু এই বিজয় যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছে, তেমনি জন্ম দিয়েছে বিতর্কও। প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক মামদানিকে ‘charismatic swindler’ আখ্যা দিয়ে তার নীতিগুলোকে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস হিসেবে উপস্থাপন করেন। এমনকি তিনি মামদানির নাম বিকৃতভাবে উচ্চারণ করে মন্তব্য করেন—যা অনেকের কাছে বর্ণবাদী বিদ্বেষের ইঙ্গিত হিসেবে ধরা পড়ে। মাস্কের সমালোচনা শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং ব্যবসায়িক স্বার্থ ও সাংস্কৃতিক পক্ষপাতের মিশেল বলেও অনেকে দেখছেন। তার মতে, সমাজতান্ত্রিক নীতি বাস্তবায়িত হলে শহরের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এর বিপরীতে, মামদানি স্পষ্ট ও দৃঢ় অবস্থান নেন। তিনি বলেন, “আমরা নিউইয়র্কবাসী—আমাদের অধিকার আমাদেরই।” তিনি ট্রাম্পসহ রক্ষণশীল শিবিরের হুমকিকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে প্রত্যাখ্যান করেন। তার কিছু বক্তব্য, বিশেষত ‘Globalize the Intifada’ স্লোগানটি, আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হলেও তিনি তা ব্যাখ্যা করেছেন ফিলিস্তিনের মানবাধিকার রক্ষার প্রতীকী আহ্বান হিসেবে।
এই ঘটনাপ্রবাহ একটি বৃহত্তর বাস্তবতা নির্দেশ করে—বিশ্বের মহানগরগুলোতে নেতৃত্বের বৈচিত্র্য ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। লন্ডনের মেয়র একজন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মুসলিম, আর এখন নিউইয়র্কের মেয়রও আফ্রিকান-ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত মুসলিম। এটি বহু-সাংস্কৃতিক সমাজে অন্তর্ভুক্তির সাফল্য হলেও, একইসঙ্গে কিছু অংশে ভীতি, শঙ্কা ও বিদ্বেষও বাড়াচ্ছে। ইসলামোফোবিয়া এখনো এক বৈশ্বিক বাস্তবতা; মুসলিম নেতাদের উত্থান অনেকের কাছে ‘অপরিচিতের আতঙ্ক’ সৃষ্টি করে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশেও ছাত্র রাজনীতিতে নতুন এক ঢেউ দেখা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসলামপন্থী সংগঠনের পুনরুত্থান শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয় নয়—এটি আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটেও প্রভাব ফেলতে পারে। প্রশ্ন উঠছে, এই তরুণ প্রজন্ম কি বিশ্বকে এক নতুন দৃষ্টিকোণ উপহার দিতে পারবে, নাকি ধর্ম ও রাজনীতির মিশ্রণে নতুন ধরণের বিভাজন তৈরি হবে?
জোহরান মামদানির বিজয়, মাস্কের সমালোচনা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া মিলিতভাবে এক জটিল সামাজিক বাস্তবতা তুলে ধরে—যেখানে ভয়, বিদ্বেষ ও সাংস্কৃতিক অজ্ঞতা যেমন বিদ্যমান, তেমনি নতুন আশার দিগন্তও উন্মুক্ত।
আজকের বিশ্বে বৈচিত্র্যকে ভয় নয়, শক্তি হিসেবে গ্রহণ করাই হতে পারে প্রকৃত অগ্রগতির পথ। নীতি ও নেতৃত্ব যদি ন্যায়, সহনশীলতা ও মানবতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে, তবে সমাজ হতে পারে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক—আর সেটিই ভবিষ্যতের প্রকৃত শক্তি।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*লেখক গবেষক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। ইমেইল: [email protected]
আজ যখন বলা হচ্ছে, “এটি আদর্শিক নয়, কেবল নির্বাচনী সমঝোতা”— তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যদি আদর্শ বিসর্জন দিতে হয়, তাহলে এনসিপি আর অন্যদের থেকে আলাদা থাকল কোথায়?
হাহাকার টইটুম্বুর এই জীবন,/ আমি দুপুরের প্রখর/ সোনালি বিকেল/ আমি সন্ধ্যার তারা/ বিছানার গন্ধ
নেলসন ম্যান্ডেলা দীর্ঘ কারাবাসের পর প্রতিশোধ নয়, সমঝোতার রাজনীতি বেছে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে এগিয়ে নিয়েছিলেন। ইরানে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নির্বাসন ও প্রত্যাবর্তন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামোই বদলে দেয়। প্রত্যাবর্তন কখনো স্থিতি আনে, কখনো নতুন সংকট সৃষ্টি করে।
যারা মনে করেন শক্ত হাতে শাসনই স্থিতিশীলতা আনে, তারা ভুলে যান—দমন দিয়ে নীরবতা আনা যায়, কিন্তু আস্থা তৈরি করা যায় না। ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে, ভয়ভিত্তিক ও ব্যক্তিনির্ভর শাসনব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদে টেকে না। কারণ সেখানে ভুল সংশোধনের শান্তিপূর্ণ পথ এবং ক্ষমতার ওপর কার্যকর নজরদারি থাকে না।