মঞ্জুর চৌধুরী. ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র
মুক্ত আলোচনা
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রেজুড়ে অবৈধ অভিবাসী খেদাও মিশন জোরেশোরে চলছে। বিপদে পড়েছেন হাজারো বাংলাদেশি যারা অবৈধভাবে এদেশে থাকছিলেন। নিউইয়র্কে এই সংখ্যা প্রচুর। লস অ্যাঞ্জেলেস, বোস্টন, ফ্লোরিডাতেও শুনেছি প্রচুর অবৈধ বাংলাদেশি আছেন। রেস্টুরেন্ট, গ্রোসারি ইত্যাদিতে তারা কাজ করে সংসার চালাতেন। দেশে টাকা পাঠাতেন। এখন আতঙ্কে আছেন যেকোনো সময়ে ইমিগ্রেশন পুলিশ এসে তাদের গ্রেপ্তার করে দেশে পাঠিয়ে দেবে।
তাদের অনেকেই আবার সংসারী মানুষজন। হয়তো বাচ্চাকাচ্চাদের জন্ম এ দেশে, অথবা ওরাও অবৈধ। পড়াশোনা করছে, চোখে অনেক সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন। সব এক ঝটকায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। চেনাজানা পৃথিবী থেকে তাদের তুলে নিয়ে পুরোপুরি খালি হাতে নিজের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে যা এতদিনে ‘বিদেশ’ হয়ে গেছে।
সবার আগে বলি, আমেরিকায় অবৈধভাবে এসে কোনো লাভ নেই। অবৈধ পথে এদেশে এসেই ওয়াল স্ট্রিটে চাকরি পেয়ে যাবেন না। আপনার জন্য ল্যাম্বরগিনি, ফেরারি নিয়ে সাদা চামড়ার সোনালি চুলওয়ালী কেউ বসে নেই যে আপনি কোনোরকমে এ দেশে আসলেই সে ‘এতদিন কোথায় ছিলে’ বলে আপনার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আপনাকে গ্রোসারি স্টোর, গ্যাস স্টেশন, কনস্ট্রাকশন (মিস্ত্রির কাজ) ইত্যাদিতে কাজ করতে হবে। যা অত্যন্ত পরিশ্রমের এবং বিনিময়ে টাকাও অত্যন্ত কম। এরচেয়ে কম পরিশ্রমে, দেশে অনেক কিছু করে ফেলতে পারতেন।
কথাগুলো যা বললাম, অনেক পুরানো, কিন্তু ১০০ ভাগ সত্যি। হাজারবার বলা হয়, তারপরেও লোকের মাথায় ঢোকে না। এই সেদিনই একটা লোকের খবর শুনলাম যে, টেক্সাস-মেক্সিকো বর্ডার দিয়ে আমেরিকায় ঢুকেছে (গুলি খেয়ে মরতে পারত), ৫০ লাখ টাকার মতো খরচ করেছে (জানি দেশে টাকার দাম কমেছে, কিন্তু আমি নিশ্চিত, ৫০ লাখ টাকা এখনো অনেক টাকা), তারপরে পুলিশের হাতে ধরা খেয়ে ডিপোর্টেড হয়ে এখন দেশে ফেরার অপেক্ষায় ডিটেনশন সেন্টারে আছে।
লাভটা কী হলো? যদি ভদ্রলোক ধরা না খেতেন, তাহলে কেমন চাকরি পেতেন? ঘাস কাটার অথবা ইট–সিমেন্ট বহন করার অথবা কোনো রেস্টুরেন্ট গ্যাস স্টেশনে ঘণ্টাপ্রতি ৫–৬ ডলারের চাকরি।
দেশের মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ডলারকে টাকায় কনভার্ট করে হিসাব করা। যেমন, ঘন্টায় ৫ ডলার মানে ৫০০ টাকা!, দিনে তাহলে ৪০ ডলার, মানে ৪ হাজার টাকা। আর মাস শেষে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা! এতো বিরাট উপার্জন! চলো আমেরিকা!
তাদেরকে কে বোঝাবে যে, আয় যেমন আমেরিকায় করছে, ব্যয়টাও আমেরিকাতেই হচ্ছে। এ দেশে সস্তা দোকানে চুল কাটতে গেলেও ১০-২০ ডলার চলে যায়। ঘিঞ্জি এপার্টমেন্ট ভাড়া করতে গেলেও মাসে ৫০০ ডলার যাবেই। খাওয়া দাওয়া বা অন্য খরচ ধরতে গেলে দেখা যাবে আয় ১ হাজার ২০০ ডলার হলে ব্যয় ২ হাজার ডলার। এই হিসাব মেলাতে গেলে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়। দিনের ১৬-১৮ ঘন্টা কাজেই কাটে। তারপরেও দেখা যায় হিসাব মিলছে না, টাকা তেমন জমছে না।
একটা পর্যায়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম, বিশ্রামের অভাব এবং নিয়মিত খাওয়া দাওয়া না করার কারণে অকাল মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।
অথচ দেশে ৫০ লাখ টাকা ইনভেস্ট করে ১৬-১৮ ঘন্টা পরিশ্রম করলে কোথাকার লোক কোথায় চলে যেত! বিদেশে এসে ঘাস কাটতে যদি সমস্যা না থাকে, তাহলে দেশে করতে সমস্যা কোথায়?
পরিশ্রমকে সম্মান করবেন, শ্রমও বিনিময়ে আপনাকে সম্মানী দেবে।
তো যা বলছিলাম, অবৈধ পথে এদেশে এসে খুব একটা লাভ নেই। বরং বৈধ পথে আসলে, পড়াশোনা করলে, ব্যবসা বা চাকরিতে পরিশ্রম করলে এদেশ আপনাকে যা দেবে, পৃথিবীর আর কোনো দেশ তা দিতে পারবে না। এইটা নিশ্চিত।
নিউয়র্কের এক ভদ্রলোকের ঘটনা শুনেছিলাম, ডিভি পেয়ে এসেছিলেন। ভিক্ষা করে আমেরিকায় আসার টিকেটের খরচ সংগ্রহ করতে হয়েছিল। সেই লোকের কয়েকটা সন্তান ডাক্তার, কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার হয়ে আজকে তিনি ও তাঁর পরিবার টাকার পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে আছেন। দেশে থাকলে হয়তো তিনি আজও সিলেটের কোনো গ্রামে ভিক্ষাই করতেন। এমন ঘটনা প্রচুর আছে।
বৈধ পথে এদেশে আসার বহু উপায় আছে। পরিশ্রমই যদি করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে আগেই করেন। পড়াশোনা করে IELTS, TOEFL ইত্যাদিতে স্কোর তোলেন, অথবা স্কিল্ড labor হন এবং বৈধপথে আসেন। সবচেয়ে সহজতম উপায় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিককে বিয়ে করে এদেশে আসা।
যদি কেউ অবৈধ পথের সন্ধান দেয়, ওদের এড়িয়ে চলুন। আর পরিশ্রমের পরেও আমেরিকা আসতে না পারলে ধরেই নেবেন আপনার রিজিক অন্য কোথাও লেখা আছে।
তা এখন যারা অবৈধ অভিবাসী, তারা কী করতে পারেন?
এক নম্বর শর্ত হচ্ছে, খবরদার, এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে আপনি পুলিশের রাডারে চলে আসেন। মানে আইন ভাঙবেন না। সেটা চুরি ডাকাতি থেকে শুরু করে ট্রাফিক আইন, ভুল পার্কিং পর্যন্ত সবকিছুই। একদম বেতের মতন সোজা থাকবেন। নাহলে মহা বিপদে পড়বেন। একবার পুলিশের তালিকায় নাম চলে এলে আপনাকে খুঁজে বের করা ওদের জন্য কোনো বিষয়ই না।
দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে শুধু শুধু প্যানিক করবেন না। হয়তো আপনার কোনো এসাইলাম কেস পেন্ডিং আছে, হয়তো অন্য কোনো কিছু আছে যা আইনগতভাবে আপনাকে আমেরিকায় থাকার সুযোগ দিচ্ছে। এক্ষেত্রে জরুরি কাগজপত্র নিজের কাছে রাখবেন। খবরদার, ওসব কাগজপত্র হারাবেন না। হারালেই বিপদ। আর সবচেয়ে বড় বিপদে পড়বেন যদি নার্ভাস হয়ে যান। মাথা ঠান্ডা রাখলে অনেক বিপদ এমনিতেই কেটে যাবে।
এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক একটি উদাহরণ দেই। গত ডিসেম্বরে আমরা সাউথ পাদ্রে আইল্যান্ডে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ফেরার সময়ে আমেরিকান বর্ডার সিকিউরিটির এক চেকপোস্ট আছে। সেখানে গাড়ি থামিয়ে সবাইকেই জিজ্ঞেস করে যে ভেতরের যাত্রীরা কি আমেরিকান নাগরিক কি না।
আমাদের গাড়িতেও একই প্রশ্ন করল। আমরাও জানালাম যে আমরা সিটিজেন এবং আমার শ্বাশুড়ি ভিজিটর ভিসায় এসেছেন।
কিন্তু আমার বউ এবং শ্বাশুড়ির চেহারা দেখেই ওদের মনে সন্দেহ আসল। ওরা এমন নার্ভাস কেন? নিশ্চই কোনো ঘটনা আছে। আমাকে বলল, ‘ওই চিপায় গাড়ি পার্ক করো, আমরা আসছি।’
৪–৫ জনের দল এসে তখন আমাদের সবার আইডি চেকিং শুরু করল। আমার শ্বাশুড়ির পাসপোর্ট এমনভাবে দেখল যেন ওনার নামের পেছনে ‘লাদেন’ শব্দ আছে।
প্যাঁচানোর মতোন কিছুই না পেয়ে ওদেরকে হতাশ মনে হলো। ওরা ভেবেছিল আমরা মানবপাচারকারী। মেক্সিকো বর্ডার দিয়ে অবৈধ অভিবাসীকে মার্কিন মুলুকে প্রবেশ করিয়েছি। অথচ আমি লিখে দিতে পারি, ওই একই চেক পোস্টে বহু মানুষ আছে যারা অবৈধ, কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে নার্ভের ওপর কন্ট্রোল রাখে বলেই আরামসে পার পেয়ে যায়।
স্টুডেন্ট যারা আছেন, তারা যেন নিজেদের স্টুডেন্ট আইডিসহ ক্লাস রেজিস্ট্রেশনের কাগজপত্র সাঙ্গে রাখেন।
রাস্তাঘাটে পুলিশ আপনাকে ধরে ‘তুমি কি বৈধ/অবৈধ’ ইত্যাদি প্রশ্ন করতে পারবে না। কাজেই রিল্যাক্সড থাকুন। স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যান। ইমিগ্রেশন পুলিশ বা আইস কিন্তু চাইলেই আপনার বাড়িতে ঢুকে যেতে পারবে না।
আর সবচেয়ে বড় কথা, পুলিশ অ্যারেস্ট করলে নিজের মুখ দিয়ে একটা কথা, একটা শব্দও করবেন না। শুধু বলবেন আপনি আপনার উকিলের সঙ্গে কথা বলতে চান এবং যা বলার উকিল বলবে। আদালত আপনার মুখ ফসকে বলা একটা কথা, একটা শব্দ আপনার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে। কাজেই এই বিষয়টা অবশ্যই অবশ্যই মাথায় রাখবেন।
আবারও বলি, এদেশে অবৈধ উপায়ে আসবেন না। কাউকে আসতে উৎসাহিতও করবেন না। নিজে বিপদে পড়বেন, অন্যকেও বিপদে টেনে আনবেন। লাভটা কী? বরং বৈধ পথে আসেন, জীবন গড়েন।
সাবধানে থাকবেন। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
**প্রিয় পাঠক, বিডিজেন২৪-এ গল্প, কবিতা, ভ্রমণকাহিনি, সুখ–দুঃখের স্মৃতি, প্রবন্ধ, ফিচার, অনুষ্ঠান বা ঘটনার ভিডিও এবং ছবিসহ নানা বিষয়ের লেখা পাঠান। মেইল: [email protected]
মুক্ত আলোচনা
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রেজুড়ে অবৈধ অভিবাসী খেদাও মিশন জোরেশোরে চলছে। বিপদে পড়েছেন হাজারো বাংলাদেশি যারা অবৈধভাবে এদেশে থাকছিলেন। নিউইয়র্কে এই সংখ্যা প্রচুর। লস অ্যাঞ্জেলেস, বোস্টন, ফ্লোরিডাতেও শুনেছি প্রচুর অবৈধ বাংলাদেশি আছেন। রেস্টুরেন্ট, গ্রোসারি ইত্যাদিতে তারা কাজ করে সংসার চালাতেন। দেশে টাকা পাঠাতেন। এখন আতঙ্কে আছেন যেকোনো সময়ে ইমিগ্রেশন পুলিশ এসে তাদের গ্রেপ্তার করে দেশে পাঠিয়ে দেবে।
তাদের অনেকেই আবার সংসারী মানুষজন। হয়তো বাচ্চাকাচ্চাদের জন্ম এ দেশে, অথবা ওরাও অবৈধ। পড়াশোনা করছে, চোখে অনেক সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন। সব এক ঝটকায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। চেনাজানা পৃথিবী থেকে তাদের তুলে নিয়ে পুরোপুরি খালি হাতে নিজের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে যা এতদিনে ‘বিদেশ’ হয়ে গেছে।
সবার আগে বলি, আমেরিকায় অবৈধভাবে এসে কোনো লাভ নেই। অবৈধ পথে এদেশে এসেই ওয়াল স্ট্রিটে চাকরি পেয়ে যাবেন না। আপনার জন্য ল্যাম্বরগিনি, ফেরারি নিয়ে সাদা চামড়ার সোনালি চুলওয়ালী কেউ বসে নেই যে আপনি কোনোরকমে এ দেশে আসলেই সে ‘এতদিন কোথায় ছিলে’ বলে আপনার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আপনাকে গ্রোসারি স্টোর, গ্যাস স্টেশন, কনস্ট্রাকশন (মিস্ত্রির কাজ) ইত্যাদিতে কাজ করতে হবে। যা অত্যন্ত পরিশ্রমের এবং বিনিময়ে টাকাও অত্যন্ত কম। এরচেয়ে কম পরিশ্রমে, দেশে অনেক কিছু করে ফেলতে পারতেন।
কথাগুলো যা বললাম, অনেক পুরানো, কিন্তু ১০০ ভাগ সত্যি। হাজারবার বলা হয়, তারপরেও লোকের মাথায় ঢোকে না। এই সেদিনই একটা লোকের খবর শুনলাম যে, টেক্সাস-মেক্সিকো বর্ডার দিয়ে আমেরিকায় ঢুকেছে (গুলি খেয়ে মরতে পারত), ৫০ লাখ টাকার মতো খরচ করেছে (জানি দেশে টাকার দাম কমেছে, কিন্তু আমি নিশ্চিত, ৫০ লাখ টাকা এখনো অনেক টাকা), তারপরে পুলিশের হাতে ধরা খেয়ে ডিপোর্টেড হয়ে এখন দেশে ফেরার অপেক্ষায় ডিটেনশন সেন্টারে আছে।
লাভটা কী হলো? যদি ভদ্রলোক ধরা না খেতেন, তাহলে কেমন চাকরি পেতেন? ঘাস কাটার অথবা ইট–সিমেন্ট বহন করার অথবা কোনো রেস্টুরেন্ট গ্যাস স্টেশনে ঘণ্টাপ্রতি ৫–৬ ডলারের চাকরি।
দেশের মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ডলারকে টাকায় কনভার্ট করে হিসাব করা। যেমন, ঘন্টায় ৫ ডলার মানে ৫০০ টাকা!, দিনে তাহলে ৪০ ডলার, মানে ৪ হাজার টাকা। আর মাস শেষে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা! এতো বিরাট উপার্জন! চলো আমেরিকা!
তাদেরকে কে বোঝাবে যে, আয় যেমন আমেরিকায় করছে, ব্যয়টাও আমেরিকাতেই হচ্ছে। এ দেশে সস্তা দোকানে চুল কাটতে গেলেও ১০-২০ ডলার চলে যায়। ঘিঞ্জি এপার্টমেন্ট ভাড়া করতে গেলেও মাসে ৫০০ ডলার যাবেই। খাওয়া দাওয়া বা অন্য খরচ ধরতে গেলে দেখা যাবে আয় ১ হাজার ২০০ ডলার হলে ব্যয় ২ হাজার ডলার। এই হিসাব মেলাতে গেলে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়। দিনের ১৬-১৮ ঘন্টা কাজেই কাটে। তারপরেও দেখা যায় হিসাব মিলছে না, টাকা তেমন জমছে না।
একটা পর্যায়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম, বিশ্রামের অভাব এবং নিয়মিত খাওয়া দাওয়া না করার কারণে অকাল মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।
অথচ দেশে ৫০ লাখ টাকা ইনভেস্ট করে ১৬-১৮ ঘন্টা পরিশ্রম করলে কোথাকার লোক কোথায় চলে যেত! বিদেশে এসে ঘাস কাটতে যদি সমস্যা না থাকে, তাহলে দেশে করতে সমস্যা কোথায়?
পরিশ্রমকে সম্মান করবেন, শ্রমও বিনিময়ে আপনাকে সম্মানী দেবে।
তো যা বলছিলাম, অবৈধ পথে এদেশে এসে খুব একটা লাভ নেই। বরং বৈধ পথে আসলে, পড়াশোনা করলে, ব্যবসা বা চাকরিতে পরিশ্রম করলে এদেশ আপনাকে যা দেবে, পৃথিবীর আর কোনো দেশ তা দিতে পারবে না। এইটা নিশ্চিত।
নিউয়র্কের এক ভদ্রলোকের ঘটনা শুনেছিলাম, ডিভি পেয়ে এসেছিলেন। ভিক্ষা করে আমেরিকায় আসার টিকেটের খরচ সংগ্রহ করতে হয়েছিল। সেই লোকের কয়েকটা সন্তান ডাক্তার, কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার হয়ে আজকে তিনি ও তাঁর পরিবার টাকার পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে আছেন। দেশে থাকলে হয়তো তিনি আজও সিলেটের কোনো গ্রামে ভিক্ষাই করতেন। এমন ঘটনা প্রচুর আছে।
বৈধ পথে এদেশে আসার বহু উপায় আছে। পরিশ্রমই যদি করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে আগেই করেন। পড়াশোনা করে IELTS, TOEFL ইত্যাদিতে স্কোর তোলেন, অথবা স্কিল্ড labor হন এবং বৈধপথে আসেন। সবচেয়ে সহজতম উপায় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিককে বিয়ে করে এদেশে আসা।
যদি কেউ অবৈধ পথের সন্ধান দেয়, ওদের এড়িয়ে চলুন। আর পরিশ্রমের পরেও আমেরিকা আসতে না পারলে ধরেই নেবেন আপনার রিজিক অন্য কোথাও লেখা আছে।
তা এখন যারা অবৈধ অভিবাসী, তারা কী করতে পারেন?
এক নম্বর শর্ত হচ্ছে, খবরদার, এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে আপনি পুলিশের রাডারে চলে আসেন। মানে আইন ভাঙবেন না। সেটা চুরি ডাকাতি থেকে শুরু করে ট্রাফিক আইন, ভুল পার্কিং পর্যন্ত সবকিছুই। একদম বেতের মতন সোজা থাকবেন। নাহলে মহা বিপদে পড়বেন। একবার পুলিশের তালিকায় নাম চলে এলে আপনাকে খুঁজে বের করা ওদের জন্য কোনো বিষয়ই না।
দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে শুধু শুধু প্যানিক করবেন না। হয়তো আপনার কোনো এসাইলাম কেস পেন্ডিং আছে, হয়তো অন্য কোনো কিছু আছে যা আইনগতভাবে আপনাকে আমেরিকায় থাকার সুযোগ দিচ্ছে। এক্ষেত্রে জরুরি কাগজপত্র নিজের কাছে রাখবেন। খবরদার, ওসব কাগজপত্র হারাবেন না। হারালেই বিপদ। আর সবচেয়ে বড় বিপদে পড়বেন যদি নার্ভাস হয়ে যান। মাথা ঠান্ডা রাখলে অনেক বিপদ এমনিতেই কেটে যাবে।
এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক একটি উদাহরণ দেই। গত ডিসেম্বরে আমরা সাউথ পাদ্রে আইল্যান্ডে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ফেরার সময়ে আমেরিকান বর্ডার সিকিউরিটির এক চেকপোস্ট আছে। সেখানে গাড়ি থামিয়ে সবাইকেই জিজ্ঞেস করে যে ভেতরের যাত্রীরা কি আমেরিকান নাগরিক কি না।
আমাদের গাড়িতেও একই প্রশ্ন করল। আমরাও জানালাম যে আমরা সিটিজেন এবং আমার শ্বাশুড়ি ভিজিটর ভিসায় এসেছেন।
কিন্তু আমার বউ এবং শ্বাশুড়ির চেহারা দেখেই ওদের মনে সন্দেহ আসল। ওরা এমন নার্ভাস কেন? নিশ্চই কোনো ঘটনা আছে। আমাকে বলল, ‘ওই চিপায় গাড়ি পার্ক করো, আমরা আসছি।’
৪–৫ জনের দল এসে তখন আমাদের সবার আইডি চেকিং শুরু করল। আমার শ্বাশুড়ির পাসপোর্ট এমনভাবে দেখল যেন ওনার নামের পেছনে ‘লাদেন’ শব্দ আছে।
প্যাঁচানোর মতোন কিছুই না পেয়ে ওদেরকে হতাশ মনে হলো। ওরা ভেবেছিল আমরা মানবপাচারকারী। মেক্সিকো বর্ডার দিয়ে অবৈধ অভিবাসীকে মার্কিন মুলুকে প্রবেশ করিয়েছি। অথচ আমি লিখে দিতে পারি, ওই একই চেক পোস্টে বহু মানুষ আছে যারা অবৈধ, কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে নার্ভের ওপর কন্ট্রোল রাখে বলেই আরামসে পার পেয়ে যায়।
স্টুডেন্ট যারা আছেন, তারা যেন নিজেদের স্টুডেন্ট আইডিসহ ক্লাস রেজিস্ট্রেশনের কাগজপত্র সাঙ্গে রাখেন।
রাস্তাঘাটে পুলিশ আপনাকে ধরে ‘তুমি কি বৈধ/অবৈধ’ ইত্যাদি প্রশ্ন করতে পারবে না। কাজেই রিল্যাক্সড থাকুন। স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যান। ইমিগ্রেশন পুলিশ বা আইস কিন্তু চাইলেই আপনার বাড়িতে ঢুকে যেতে পারবে না।
আর সবচেয়ে বড় কথা, পুলিশ অ্যারেস্ট করলে নিজের মুখ দিয়ে একটা কথা, একটা শব্দও করবেন না। শুধু বলবেন আপনি আপনার উকিলের সঙ্গে কথা বলতে চান এবং যা বলার উকিল বলবে। আদালত আপনার মুখ ফসকে বলা একটা কথা, একটা শব্দ আপনার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে। কাজেই এই বিষয়টা অবশ্যই অবশ্যই মাথায় রাখবেন।
আবারও বলি, এদেশে অবৈধ উপায়ে আসবেন না। কাউকে আসতে উৎসাহিতও করবেন না। নিজে বিপদে পড়বেন, অন্যকেও বিপদে টেনে আনবেন। লাভটা কী? বরং বৈধ পথে আসেন, জীবন গড়েন।
সাবধানে থাকবেন। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
**প্রিয় পাঠক, বিডিজেন২৪-এ গল্প, কবিতা, ভ্রমণকাহিনি, সুখ–দুঃখের স্মৃতি, প্রবন্ধ, ফিচার, অনুষ্ঠান বা ঘটনার ভিডিও এবং ছবিসহ নানা বিষয়ের লেখা পাঠান। মেইল: [email protected]
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানটি টেলিভিশনে লাইভে সেদিন আমি পুরোটা দেখেছি। দেখে আমার কাছে প্রথম মেয়াদের চাইতে এবারের ট্রাম্পকে অনেক বেশি ম্যাচিউরড মনে হয়েছে। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই তিনি অনেকগুলো নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রেজুড়ে অবৈধ অভিবাসী খেদাও মিশন জোরেশোরে চলছে। বিপদে পড়েছেন হাজারো বাংলাদেশি যারা অবৈধভাবে এদেশে থাকছিলেন। নিউইয়র্কে এই সংখ্যা প্রচুর। লস অ্যাঞ্জেলেস, বোস্টন, ফ্লোরিডাতেও শুনেছি প্রচুর অবৈধ বাংলাদেশি আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম, পরিবার ও সমাজের প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের নতুন প্রজন্মকে মানবিক শিক্ষা, সহানুভূতি ও ধর্মীয় সহাবস্থানের বিষয়ে সচেতন করতে হবে। তাদের বুঝতে হবে যে, বৈচিত্র্য আমাদের শক্তি হতে পারে, যদি আমরা এটি সম্মান করি।
ভারত তার নিকটবর্তী প্রতিবেশী দেশগুলোতে, বিশেষ করে বাংলাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিকে তার আঞ্চলিক প্রভাবের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখে। চীন তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) মাধ্যমে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোতে সক্রিয়ভাবে বিনিয়োগ করছে।