
সহিদুল আলম স্বপন, জেনেভা, সুইজারল্যান্ড

আমাদের বাসা তখন বনানী ১২ নম্বর রোডে। শান্ত এলাকা। বাড়িটা বড় কিছু নয়, কিন্তু বারান্দাটা ছিল আমার পৃথিবীর প্রিয়তম কোণ। দুপুরের আলো যখন কাচ জানালা ভেদ করে আসে, তখন সেই বারান্দা যেন এক ক্ষুদ্র মঞ্চের মতো হয়ে উঠত। আমি সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হারমোনিয়াম বাজাতাম। কখনো হারমোনিয়াম, কখনো বাঁশি গাছের পাতার সরে যাওয়া শব্দের সঙ্গে আমার সুর মিলত।
আজও মনে আছে সেই বিকেলগুলো সুরের ভেতর দিয়ে যেন বাতাস হেঁটে যেত।
গান-বাজনা ছিল আমার প্রথম হবি। আর দ্বিতীয়টি অটোগ্রাফ সংগ্রহ করা।
আজকের দিনে বিষয়টা যতটা সাধারণ শোনায়, তখন আমার কাছে তা ছিল ইতিহাস সংগ্রহ ও প্রেরণা সংগ্রহ করা এবং মানুষের ছাপ রাখার চেষ্টা।
বয়সে তখন তরুণ। কিন্তু বুকের ভেতর স্বপ্নের আগুন জ্বলত এক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মতো। আমার বড় ভাই বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একজন উর্ধতন কর্মকর্তা। তিনি নিয়মিত উৎসাহ দিতেন।
তিনি বলতেন, “মানুষের স্বাক্ষর কখনো কাগজে থাকে না, থাকে সেই মানুষের সময় ও মানসিকতার ভেতর। তুমি যত স্বাক্ষর সংগ্রহ করবে, তত মানুষের গল্প তোমার হাতে জমা হবে।”
সেই কথা আমি তখন পুরোপুরি বুঝতাম না। আজ বুঝি সেই কথাগুলোই আমার সেই শৈশব-সাহসের জন্ম দিয়েছিল।
বঙ্গভবনের রঙিন গেট পেরিয়ে
সেদিনটা হয়তো আমার জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিন এসেছিল হঠাৎ করেই।
বঙ্গভবনে শিশু-কিশোরদের মেলা।
সেই দিনের আকাশটা ছিল অদ্ভুত স্বচ্ছ, যেন নীল কাচের তৈরি। রাস্তাগুলোও যেন উৎসবের আগমন জানত।
মেলায় ঢুকতেই রঙিন পতাকাগুলো বাতাসে দুলছিল।
শিশুরা কেউ নাটক করছে, কেউ খেলছে, কেউ গান করছে।
সেই শব্দের ভিড়ে আমি মনে মনে বাঁশির পরের একটি সুর ভাবছিলাম এই সুরটা আজ নতুন হবে।
হঠাৎ, গোলচত্ত্বরের কাছে দেখতে পেলাম, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শিশুদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন।
তার চারপাশে অদ্ভুত এক উজ্জ্বলতা। কেউ নেই, অথচ যেন হাজার মানুষের আবেগ বুকে নিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে।
আমি থমকে গেলাম। যেন কোনো স্বপ্নের মধ্যে ঢুকে পড়েছি।
মনের মধ্যে যেন দৌড় শুরু হলো—যাব?
নাকি যাব না?
সাহস আছে?
না কি ফিরে যাব?
কিন্তু তার মুখের সেই হাসিটা অদ্ভুতভাবে ধরে রাখার মতো আমাকে টেনে নিল সামনে।
আমি গলার আওয়াজ খুঁজে পেলাম অনেকক্ষণ পর—“স্যার…আমি কি আপনার অটোগ্রাফ পেতে পারি…?”
জিয়াউর রহমান মাথা তুললেন।
তার চোখে কোনো কঠোরতা নেই, কোনো ব্যস্ততা নেই, শুধুই একটা মমতা।
তিনি বললেন, “অবশ্যই পেতে পার। তোমরা-ই তো আমাদের ভবিষ্যৎ।”
তিনি যখন আমার নোটবুকে স্বাক্ষর করলেন, তখন মনে হচ্ছিল সময় থমকে গেছে।
হয়তো বাতাসও নিঃশব্দ হয়ে তাকিয়ে আছে।
স্বাক্ষরটি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই মনে হলো এই পাতার নিচে যদি খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর থাকে?
স্বপ্নের দ্বিতীয় অধ্যায় তখনই শেকড় গাড়ল আমার ভেতরে।
শহীদ মইনুল রোডে সাহসের পরীক্ষা
এক দুপুরে নোটবুক হাতে বাসা থেকে বের হলাম।
বাতাসটা ছিল নরম, কিন্তু আমার ভেতরে উত্তেজনার দমকা হাওয়া বইছিল।
শহীদ মইনুল রোডের বাড়িটি তখন নীরবতার মধ্যে দাঁড়িয়ে।
বাড়ির গেট লোহার তৈরি, উঁচু, শক্ত।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন সেনা গার্ড আমাকে দেখে একটুও নড়লেন না।
আমি ধীরে ধীরে তাদের কাছে গিয়ে বললাম, “আমি…আমি বেগম খালেদা জিয়ার অটোগ্রাফ নিতে এসেছি।”
এক গার্ডের চোখে একটু কৌতূহল। অন্যজন বললেন, “এভাবে ঢোকা যাবে না। ফিরে যাও।” আজকাল দিনের রোবোটিক স্বরের মতো।
আমি এক মুহূর্তে সব হারিয়ে ফেললাম। মনে হলো রোদটা হঠাৎই গরম হয়ে গেছে। গলা শুকিয়ে এল। তখন মনে পড়ল আমার সে অমূল্য সম্পদের কথা। আমি নোটবুক খুলে তাদের দেখালাম জিয়াউর রহমানের অটোগ্রাফ।
বললাম, “এটা ম্যাডামকে দেখান। দেখলেই ডাকবেন…।
দুই গার্ড এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলেন। তারপর একজন নোটবুকটি হাতে নিয়ে ভেতরে গেলেন।
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম।
রাস্তার ওপর পায়ের শব্দ, দূরের গাড়ির হর্ন, গাছের পাতার মর্মর—সব যেন মিলেমিশে এক অদ্ভুত উত্তেজনা তৈরি করছিল।
কিছুক্ষণ পর একজন কর্মকর্তা এসে শান্ত গলায় বললেন, “চলো, তোমাকে ভেতরে ডাকা হয়েছে।”
সেই মুহূর্তে মনে হলো গেটের লোহার শব্দ যেন স্বপ্নের দরজার মতো খোলা।
বসার ঘরে-এক নারী, এক স্মৃতি, আর এক অটোগ্রাফ
বাড়ির ভিতরের উঠোনটা ছিল ঠান্ডা, ছায়াঘেরা। আমি ছোট ছোট পদক্ষেপে চলছিলাম। করিডোর পার হতে হতে মনে হচ্ছিল, প্রতিটি দেয়ালেই যেন নীরব ইতিহাস ঝুলে আছে।
বসার ঘরে ঢুকতেই দেখি, বেগম খালেদা জিয়া বসে আছেন। সাদামাটা কিন্তু দীপ্তিময় পোশাকে। তার ভেতর একটা রাজকীয় নীরবতা, আবার এক মায়ের কোমলতা।
তিনি আমার দিকে তাকিয়ে হালকা মাথা নেড়ে বললেন, “এসো, বসো।”
আমি নোটবুকটা এগিয়ে দিলাম।
তিনি প্রথমে চোখে দেখলেন জিয়াউর রহমানের স্বাক্ষর।
এক মুহূর্ত। এক শ্বাস। এক নরম স্মৃতি।
তার দৃষ্টিতে একটা গভীর নীরবতা নেমে এল—যেন ভেতরে ভেতরে তিনি অতীতে ফিরে গেলেন।
তিনি বললেন, “তুমি মুকুল ফৌজ করো? খুব ভালো। তোমাদের মতো ছোট ছেলেমেয়েরা একদিন বড় কাজ করবে। দেশকে ভালোবাসো।”
তারপর তিনি কলম হাতে নিলেন। আমার নোটবুকের পাতায় ঝুঁকে জিয়াউর রহমানের অটোগ্রাফের ঠিক নিচে নিজের স্বাক্ষর দিলেন।
কালির রেখা যখন পাতার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল, তখন মনে হচ্ছিল-
আমি যেন এক ইতিহাসের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
আজকের শূন্যতা-অটোগ্রাফ যেখানে হারিয়েছে
বাড়ি ফেরার সময় মনে হচ্ছিল, রাস্তাটাও যেন আমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।
হাওয়ার প্রতিটি দম যেন বলছে, “তুমি পেরেছ।”
সেই নোটবুকটা আমি যত্ন করে রাখতাম। গান-বাজনার বই, বাঁশি, হারমোনিয়াম সবকিছুর মাঝেই সেটি ছিল আমার জাদুর মতো এক সম্পদ।
কিন্তু জীবন তো কেবল পাওয়ার গল্প নয়। হারানোরও অনেক অধ্যায় আছে। কালের স্রোতে, স্থানান্তরে, ভাঙাগড়ার টানে-সেই নোটবুক আর নেই। সেই অটোগ্রাফ দুটো আর নেই।
আজ যখন হারমোনিকা হাতে নিই,
একটি পুরনো সুর তুলতে গিয়ে মনে হয়—
আমার আঙুলের ভেতর দিয়ে যেন সেই স্বাক্ষরগুলো ফিরে আসে।
কখনো কখনো মনে হয়, যেন শুধু অটোগ্রাফ নয়—
হারিয়ে গেছে আমার এক টুকরো শৈশব,
হারিয়ে গেছে স্বপ্ন দেখার সেই প্রথম উৎসাহ।
তবুও, স্মৃতিগুলো রয়ে গেছে।
স্বাক্ষর নেই, কালি নেই—
তবুও সেই দিন, সেই মুখ, সেই রোদ, সেই দ্বিধা
সবই এখনো খুব কাছে, খুব জীবন্ত।
অটোগ্রাফের কালি মুছে যায়।
কিন্তু গল্পের কালি
কখনো মুছে যায় না।

আমাদের বাসা তখন বনানী ১২ নম্বর রোডে। শান্ত এলাকা। বাড়িটা বড় কিছু নয়, কিন্তু বারান্দাটা ছিল আমার পৃথিবীর প্রিয়তম কোণ। দুপুরের আলো যখন কাচ জানালা ভেদ করে আসে, তখন সেই বারান্দা যেন এক ক্ষুদ্র মঞ্চের মতো হয়ে উঠত। আমি সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হারমোনিয়াম বাজাতাম। কখনো হারমোনিয়াম, কখনো বাঁশি গাছের পাতার সরে যাওয়া শব্দের সঙ্গে আমার সুর মিলত।
আজও মনে আছে সেই বিকেলগুলো সুরের ভেতর দিয়ে যেন বাতাস হেঁটে যেত।
গান-বাজনা ছিল আমার প্রথম হবি। আর দ্বিতীয়টি অটোগ্রাফ সংগ্রহ করা।
আজকের দিনে বিষয়টা যতটা সাধারণ শোনায়, তখন আমার কাছে তা ছিল ইতিহাস সংগ্রহ ও প্রেরণা সংগ্রহ করা এবং মানুষের ছাপ রাখার চেষ্টা।
বয়সে তখন তরুণ। কিন্তু বুকের ভেতর স্বপ্নের আগুন জ্বলত এক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মতো। আমার বড় ভাই বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একজন উর্ধতন কর্মকর্তা। তিনি নিয়মিত উৎসাহ দিতেন।
তিনি বলতেন, “মানুষের স্বাক্ষর কখনো কাগজে থাকে না, থাকে সেই মানুষের সময় ও মানসিকতার ভেতর। তুমি যত স্বাক্ষর সংগ্রহ করবে, তত মানুষের গল্প তোমার হাতে জমা হবে।”
সেই কথা আমি তখন পুরোপুরি বুঝতাম না। আজ বুঝি সেই কথাগুলোই আমার সেই শৈশব-সাহসের জন্ম দিয়েছিল।
বঙ্গভবনের রঙিন গেট পেরিয়ে
সেদিনটা হয়তো আমার জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিন এসেছিল হঠাৎ করেই।
বঙ্গভবনে শিশু-কিশোরদের মেলা।
সেই দিনের আকাশটা ছিল অদ্ভুত স্বচ্ছ, যেন নীল কাচের তৈরি। রাস্তাগুলোও যেন উৎসবের আগমন জানত।
মেলায় ঢুকতেই রঙিন পতাকাগুলো বাতাসে দুলছিল।
শিশুরা কেউ নাটক করছে, কেউ খেলছে, কেউ গান করছে।
সেই শব্দের ভিড়ে আমি মনে মনে বাঁশির পরের একটি সুর ভাবছিলাম এই সুরটা আজ নতুন হবে।
হঠাৎ, গোলচত্ত্বরের কাছে দেখতে পেলাম, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শিশুদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন।
তার চারপাশে অদ্ভুত এক উজ্জ্বলতা। কেউ নেই, অথচ যেন হাজার মানুষের আবেগ বুকে নিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে।
আমি থমকে গেলাম। যেন কোনো স্বপ্নের মধ্যে ঢুকে পড়েছি।
মনের মধ্যে যেন দৌড় শুরু হলো—যাব?
নাকি যাব না?
সাহস আছে?
না কি ফিরে যাব?
কিন্তু তার মুখের সেই হাসিটা অদ্ভুতভাবে ধরে রাখার মতো আমাকে টেনে নিল সামনে।
আমি গলার আওয়াজ খুঁজে পেলাম অনেকক্ষণ পর—“স্যার…আমি কি আপনার অটোগ্রাফ পেতে পারি…?”
জিয়াউর রহমান মাথা তুললেন।
তার চোখে কোনো কঠোরতা নেই, কোনো ব্যস্ততা নেই, শুধুই একটা মমতা।
তিনি বললেন, “অবশ্যই পেতে পার। তোমরা-ই তো আমাদের ভবিষ্যৎ।”
তিনি যখন আমার নোটবুকে স্বাক্ষর করলেন, তখন মনে হচ্ছিল সময় থমকে গেছে।
হয়তো বাতাসও নিঃশব্দ হয়ে তাকিয়ে আছে।
স্বাক্ষরটি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই মনে হলো এই পাতার নিচে যদি খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর থাকে?
স্বপ্নের দ্বিতীয় অধ্যায় তখনই শেকড় গাড়ল আমার ভেতরে।
শহীদ মইনুল রোডে সাহসের পরীক্ষা
এক দুপুরে নোটবুক হাতে বাসা থেকে বের হলাম।
বাতাসটা ছিল নরম, কিন্তু আমার ভেতরে উত্তেজনার দমকা হাওয়া বইছিল।
শহীদ মইনুল রোডের বাড়িটি তখন নীরবতার মধ্যে দাঁড়িয়ে।
বাড়ির গেট লোহার তৈরি, উঁচু, শক্ত।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন সেনা গার্ড আমাকে দেখে একটুও নড়লেন না।
আমি ধীরে ধীরে তাদের কাছে গিয়ে বললাম, “আমি…আমি বেগম খালেদা জিয়ার অটোগ্রাফ নিতে এসেছি।”
এক গার্ডের চোখে একটু কৌতূহল। অন্যজন বললেন, “এভাবে ঢোকা যাবে না। ফিরে যাও।” আজকাল দিনের রোবোটিক স্বরের মতো।
আমি এক মুহূর্তে সব হারিয়ে ফেললাম। মনে হলো রোদটা হঠাৎই গরম হয়ে গেছে। গলা শুকিয়ে এল। তখন মনে পড়ল আমার সে অমূল্য সম্পদের কথা। আমি নোটবুক খুলে তাদের দেখালাম জিয়াউর রহমানের অটোগ্রাফ।
বললাম, “এটা ম্যাডামকে দেখান। দেখলেই ডাকবেন…।
দুই গার্ড এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলেন। তারপর একজন নোটবুকটি হাতে নিয়ে ভেতরে গেলেন।
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম।
রাস্তার ওপর পায়ের শব্দ, দূরের গাড়ির হর্ন, গাছের পাতার মর্মর—সব যেন মিলেমিশে এক অদ্ভুত উত্তেজনা তৈরি করছিল।
কিছুক্ষণ পর একজন কর্মকর্তা এসে শান্ত গলায় বললেন, “চলো, তোমাকে ভেতরে ডাকা হয়েছে।”
সেই মুহূর্তে মনে হলো গেটের লোহার শব্দ যেন স্বপ্নের দরজার মতো খোলা।
বসার ঘরে-এক নারী, এক স্মৃতি, আর এক অটোগ্রাফ
বাড়ির ভিতরের উঠোনটা ছিল ঠান্ডা, ছায়াঘেরা। আমি ছোট ছোট পদক্ষেপে চলছিলাম। করিডোর পার হতে হতে মনে হচ্ছিল, প্রতিটি দেয়ালেই যেন নীরব ইতিহাস ঝুলে আছে।
বসার ঘরে ঢুকতেই দেখি, বেগম খালেদা জিয়া বসে আছেন। সাদামাটা কিন্তু দীপ্তিময় পোশাকে। তার ভেতর একটা রাজকীয় নীরবতা, আবার এক মায়ের কোমলতা।
তিনি আমার দিকে তাকিয়ে হালকা মাথা নেড়ে বললেন, “এসো, বসো।”
আমি নোটবুকটা এগিয়ে দিলাম।
তিনি প্রথমে চোখে দেখলেন জিয়াউর রহমানের স্বাক্ষর।
এক মুহূর্ত। এক শ্বাস। এক নরম স্মৃতি।
তার দৃষ্টিতে একটা গভীর নীরবতা নেমে এল—যেন ভেতরে ভেতরে তিনি অতীতে ফিরে গেলেন।
তিনি বললেন, “তুমি মুকুল ফৌজ করো? খুব ভালো। তোমাদের মতো ছোট ছেলেমেয়েরা একদিন বড় কাজ করবে। দেশকে ভালোবাসো।”
তারপর তিনি কলম হাতে নিলেন। আমার নোটবুকের পাতায় ঝুঁকে জিয়াউর রহমানের অটোগ্রাফের ঠিক নিচে নিজের স্বাক্ষর দিলেন।
কালির রেখা যখন পাতার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল, তখন মনে হচ্ছিল-
আমি যেন এক ইতিহাসের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
আজকের শূন্যতা-অটোগ্রাফ যেখানে হারিয়েছে
বাড়ি ফেরার সময় মনে হচ্ছিল, রাস্তাটাও যেন আমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।
হাওয়ার প্রতিটি দম যেন বলছে, “তুমি পেরেছ।”
সেই নোটবুকটা আমি যত্ন করে রাখতাম। গান-বাজনার বই, বাঁশি, হারমোনিয়াম সবকিছুর মাঝেই সেটি ছিল আমার জাদুর মতো এক সম্পদ।
কিন্তু জীবন তো কেবল পাওয়ার গল্প নয়। হারানোরও অনেক অধ্যায় আছে। কালের স্রোতে, স্থানান্তরে, ভাঙাগড়ার টানে-সেই নোটবুক আর নেই। সেই অটোগ্রাফ দুটো আর নেই।
আজ যখন হারমোনিকা হাতে নিই,
একটি পুরনো সুর তুলতে গিয়ে মনে হয়—
আমার আঙুলের ভেতর দিয়ে যেন সেই স্বাক্ষরগুলো ফিরে আসে।
কখনো কখনো মনে হয়, যেন শুধু অটোগ্রাফ নয়—
হারিয়ে গেছে আমার এক টুকরো শৈশব,
হারিয়ে গেছে স্বপ্ন দেখার সেই প্রথম উৎসাহ।
তবুও, স্মৃতিগুলো রয়ে গেছে।
স্বাক্ষর নেই, কালি নেই—
তবুও সেই দিন, সেই মুখ, সেই রোদ, সেই দ্বিধা
সবই এখনো খুব কাছে, খুব জীবন্ত।
অটোগ্রাফের কালি মুছে যায়।
কিন্তু গল্পের কালি
কখনো মুছে যায় না।
বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও গবেষণায় বিনিয়োগ এখনো সন্তোষজনক নয়। তবে কৃষিক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়। অন্য ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন গবেষণা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। প্রযুক্তি, চিকিৎসা, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ, খনিজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থাপনায় এখনো বড় ঘাটতি আছে।
বসার ঘরে ঢুকতেই দেখি, বেগম খালেদা জিয়া বসে আছেন। সাদামাটা কিন্তু দীপ্তিময় পোশাকে। তার ভেতর একটা রাজকীয় নীরবতা, আবার এক মায়ের কোমলতা। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে হালকা মাথা নেড়ে বললেন, “এসো, বসো।”
মেঠো পথ ধরে সাইকেল চালিয়ে যায় বেনু। তার কানে বাজে আত্মহত্যা করার আগে মুকিতের লেখা শেষ চিঠির কথাগুলো, "তুমি বলেছিলে, আমার জন্য তুমি জীবন দেবেও না, নেবেও না। আমি রাখলাম কথা। শুধু চলে যাচ্ছি, চিরতরে...ভালো থেকো, শিউলি।"
জবাবদিহিতা ছাড়া কোনো সংস্কার সফল হবে না। যেকোনো অনিয়ম প্রকাশ পেলে দ্রুত তদন্ত, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি এবং বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এগুলো শুধু আইন প্রয়োগ নয়, বরং এক ধরনের মানসিক বার্তাও তৈরি করে যে অপরাধী রেহাই পায় না। বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে লুটপাটের প্রধান শক্তি ছিল বিচারহীনতা।