
রহমান মৃধা

সারাদিন মিথ্যাচার, গুজব, পরনিন্দা, পরচর্চা আর দুর্নীতির এমন এক নতুন বিশ্বযাত্রা শুরু হয়েছে, যা আমেরিকার জে এফ কেনেডির সময়কালের চাঁদে লাইকা নামের কুকুরের পাঠানোর ঘটনাকেও ছাপিয়ে গেছে। আজকের পৃথিবীতে শক্তিশালী রাষ্ট্রনায়ক ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন, ভারতের নরেন্দ্র মোদি—যেখানেই তাকানো হোক, চারদিকে শুধু প্রপাগান্ডার বন্যা।
এক অর্থে ব্যতিক্রম চীনের বর্তমান ক্ষমতাসীন নেতা শি জিনপিং; তিনি একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের প্রধান। তার মুখে গুজব বা মিথ্যাচার খুব একটা শোনা যায় না—হতে পারে তিনি কম কথা বলেন!
যাহোক, যুদ্ধের পেছনে বিশ্বের যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তার মাত্র ১০ শতাংশ যদি ড্রোন প্রযুক্তির উন্নয়নে ব্যবহার করা যায়, তাহলে বৈশ্বিক অর্থনীতি থেকে শুরু করে খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা, যোগাযোগসহ নানা খাতে বিস্ময়কর পরিবর্তন আনা সম্ভব। প্রশ্ন আসতে পারে—এর সঙ্গে ড্রোন প্রযুক্তির সম্পর্ক কী? সম্পর্ক আছে। কারণ সামরিক শক্তির চেয়ে আজকের পৃথিবীর বড় চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি, গুজব, ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার ও মিথ্যাচার নিয়ন্ত্রণ করা—যা ড্রোন প্রযুক্তি সঠিকভাবে কাজে লাগালে অনেকাংশে সম্ভব।
ড্রোন প্রযুক্তি ও এর সম্ভাবনা
ড্রোন শুধু অস্ত্র নয়; এটি একটি মোবাইল সেন্সর প্ল্যাটফর্ম। উচ্চ রেজল্যুশনের ছবি, ভিডিও, জিওট্যাগড তথ্য এবং পরিবেশগত বা লজিস্টিক ডেটা সংগ্রহে এটি সক্ষম। এই তথ্য যথাসময়ে উন্মুক্ত হলে সরকারি প্রকল্প, সরবরাহশৃঙ্খলা পরিচালনা ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকেরা ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি বর্ণনার সঙ্গে বাস্তবতার পার্থক্য তুলে ধরেছেন, যা জনগণকে স্বচ্ছ তথ্য পেতে সাহায্য করে।
ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহারক্ষেত্র
প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ থেকে শুরু করে ঘুষ গ্রহণের মতো অপরাধও ড্রোনের মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব। অর্থ পাচার রোধে ব্যাংক কর্মকর্তাদের তদারকি, হুন্ডির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ এবং সমাজের চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসীদের নজরদারিতে ড্রোন হতে পারে কার্যকর হাতিয়ার।
সীমান্ত নিরাপত্তা ও চোরাচালান রোধে সমস্ত বর্ডার গার্ড ইউনিটের ওপর কঠোর নজরদারি ও যেকোনো ধরনের চোরাচালান প্রতিরোধে ড্রোন প্রযুক্তি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
তথ্য সংগ্রহ ও প্রকল্প নজরদারি
ড্রোন নিয়মিত উড়িয়ে সড়ক, সেতু, স্কুল, হাসপাতালের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা যায়। সময়ভিত্তিক ভিডিও ও জিওট্যাগড ছবির মাধ্যমে তদারকি সংস্থাগুলো সহজেই বুঝতে পারে কাজ সঠিক গতিতে এগোচ্ছে কি না।
নির্বাচনী স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক নিরাপত্তা
ভোটকেন্দ্র বা জনসভায় ড্রোনের মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল রেকর্ড রাখা হলে অনিয়ম, বিকৃতি বা জালিয়াতি চিহ্নিত করা সহজ হয়। অবশ্যই ব্যবহারের আগে আইনি সীমা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং তৃতীয় পক্ষের যাচাই নিশ্চিত করতে হবে।
সরবরাহ শৃঙ্খলা ও জরুরি সেবা
ড্রোন ব্যবহার করে সরকারি সাবসিডি, ওষুধ ও জরুরি সরবরাহ দ্রুত পৌঁছানো যায়। Zipline-এর ড্রোন সেবার উদাহরণ দেখায়—রক্ত, ভ্যাকসিন ও ওষুধ দ্রুত পৌঁছানো গেলে মৃত্যুহার কমে এবং প্রত্যন্ত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য হয়।
কৃষি ও সিস্টেম অডিট
প্রিসিশন অ্যাগ্রিকালচারে ড্রোন জমির মান যাচাই, সার ছিটানো বা কীটনাশকের লক্ষ্য নির্ধারণে অত্যন্ত কার্যকর। সরকারি বীজ বা সার বিতরণে ড্রোনভিত্তিক মাঠ পর্যবেক্ষণ জালিয়াতি ধরা সহজ করে এবং প্রকৃত প্রাপ্যতার নিশ্চয়তা দেয়।
নীতি, আইন ও নিরাপত্তা ঝুঁকি
ড্রোন ব্যবহারের সময় গোপনীয়তা লঙ্ঘন, অতিরিক্ত নজরদারি ও সাইবার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই প্রয়োজন:
*স্পষ্ট আইন
*এনক্রিপশন–ভিত্তিক ডেটা সংরক্ষণ
*ওপেন ডেটা নীতি
*স্বাধীন তৃতীয় পক্ষের যাচাই
*নাগরিক অংশগ্রহণ
অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা
২০২৪ সালে বিশ্ব সামরিক ব্যয় ছিল ২৭১৮ বিলিয়ন ডলার। এর মাত্র ১০ শতাংশ (প্রায় ২৭১.৮ বিলিয়ন ডলার) ব্যয়ে জাতীয় ড্রোন রিসার্চ সেন্টার, স্থানীয় উৎপাদন, প্রশিক্ষণ, আইনি কাঠামো ও ওপেন ডেটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যায়।
ধাপে ধাপে রোডম্যাপ
১. দুর্নীতি–ঝুঁকিপূর্ণ খাতে পাইলট প্রকল্প
২. আইনি কাঠামো ও ডেটা গার্ডিয়ানশিপ
৩. স্থানীয় প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন
৪. ড্রোন ডেটা নাগরিক-তদারকি প্ল্যাটফর্ম
৫. সাফল্য মূল্যায়ন করে ধাপে ধাপে সম্প্রসারণ
যুদ্ধের বদলে দুর্নীতি প্রতিরোধে বিনিয়োগ করলে জনগণের সার্বিক কল্যাণে ব্যাপক পরিবর্তন আনা সম্ভব। ড্রোন প্রযুক্তি সঠিক নীতিগত কাঠামো ও জনঅংশগ্রহণের সঙ্গে যুক্ত হলে এটি কেবল প্রযুক্তি নয়, গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্বের ধনী রাষ্ট্র ও করপোরেট নেতৃত্বের উদ্দেশে বার্তা
যদি আমরা সত্যিই গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হই, তাহলে ইলন মাস্কের একটি ভোট যেমন মূল্যবান, আমার ভোটও ততটাই মূল্যবান। ধনী দেশগুলো কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেও যখন লন্ডন বা নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির মতো নেতৃত্বকে পরাজিত করতে পারে না, তখন স্পষ্ট হয়—অর্থ দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখা সবসময় সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের মতো দেশে এখনো টাকা দিয়ে ভোট কেনাবেচা চলে, কিন্তু তা রোধ করা অসম্ভব নয়—যদি জনগণ সচেতন হয়। তবে দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রে এমন আশাও এখনো কঠিন।
তবু প্রশ্ন রয়ে যায়—বিশ্ব কোন পথে হাঁটবে? যুদ্ধ, নাকি শান্তি?
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*লেখক গবেষক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। ইমেইল: [email protected]

সারাদিন মিথ্যাচার, গুজব, পরনিন্দা, পরচর্চা আর দুর্নীতির এমন এক নতুন বিশ্বযাত্রা শুরু হয়েছে, যা আমেরিকার জে এফ কেনেডির সময়কালের চাঁদে লাইকা নামের কুকুরের পাঠানোর ঘটনাকেও ছাপিয়ে গেছে। আজকের পৃথিবীতে শক্তিশালী রাষ্ট্রনায়ক ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন, ভারতের নরেন্দ্র মোদি—যেখানেই তাকানো হোক, চারদিকে শুধু প্রপাগান্ডার বন্যা।
এক অর্থে ব্যতিক্রম চীনের বর্তমান ক্ষমতাসীন নেতা শি জিনপিং; তিনি একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের প্রধান। তার মুখে গুজব বা মিথ্যাচার খুব একটা শোনা যায় না—হতে পারে তিনি কম কথা বলেন!
যাহোক, যুদ্ধের পেছনে বিশ্বের যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তার মাত্র ১০ শতাংশ যদি ড্রোন প্রযুক্তির উন্নয়নে ব্যবহার করা যায়, তাহলে বৈশ্বিক অর্থনীতি থেকে শুরু করে খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা, যোগাযোগসহ নানা খাতে বিস্ময়কর পরিবর্তন আনা সম্ভব। প্রশ্ন আসতে পারে—এর সঙ্গে ড্রোন প্রযুক্তির সম্পর্ক কী? সম্পর্ক আছে। কারণ সামরিক শক্তির চেয়ে আজকের পৃথিবীর বড় চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি, গুজব, ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার ও মিথ্যাচার নিয়ন্ত্রণ করা—যা ড্রোন প্রযুক্তি সঠিকভাবে কাজে লাগালে অনেকাংশে সম্ভব।
ড্রোন প্রযুক্তি ও এর সম্ভাবনা
ড্রোন শুধু অস্ত্র নয়; এটি একটি মোবাইল সেন্সর প্ল্যাটফর্ম। উচ্চ রেজল্যুশনের ছবি, ভিডিও, জিওট্যাগড তথ্য এবং পরিবেশগত বা লজিস্টিক ডেটা সংগ্রহে এটি সক্ষম। এই তথ্য যথাসময়ে উন্মুক্ত হলে সরকারি প্রকল্প, সরবরাহশৃঙ্খলা পরিচালনা ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকেরা ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি বর্ণনার সঙ্গে বাস্তবতার পার্থক্য তুলে ধরেছেন, যা জনগণকে স্বচ্ছ তথ্য পেতে সাহায্য করে।
ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহারক্ষেত্র
প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ থেকে শুরু করে ঘুষ গ্রহণের মতো অপরাধও ড্রোনের মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব। অর্থ পাচার রোধে ব্যাংক কর্মকর্তাদের তদারকি, হুন্ডির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ এবং সমাজের চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসীদের নজরদারিতে ড্রোন হতে পারে কার্যকর হাতিয়ার।
সীমান্ত নিরাপত্তা ও চোরাচালান রোধে সমস্ত বর্ডার গার্ড ইউনিটের ওপর কঠোর নজরদারি ও যেকোনো ধরনের চোরাচালান প্রতিরোধে ড্রোন প্রযুক্তি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
তথ্য সংগ্রহ ও প্রকল্প নজরদারি
ড্রোন নিয়মিত উড়িয়ে সড়ক, সেতু, স্কুল, হাসপাতালের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা যায়। সময়ভিত্তিক ভিডিও ও জিওট্যাগড ছবির মাধ্যমে তদারকি সংস্থাগুলো সহজেই বুঝতে পারে কাজ সঠিক গতিতে এগোচ্ছে কি না।
নির্বাচনী স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক নিরাপত্তা
ভোটকেন্দ্র বা জনসভায় ড্রোনের মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল রেকর্ড রাখা হলে অনিয়ম, বিকৃতি বা জালিয়াতি চিহ্নিত করা সহজ হয়। অবশ্যই ব্যবহারের আগে আইনি সীমা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং তৃতীয় পক্ষের যাচাই নিশ্চিত করতে হবে।
সরবরাহ শৃঙ্খলা ও জরুরি সেবা
ড্রোন ব্যবহার করে সরকারি সাবসিডি, ওষুধ ও জরুরি সরবরাহ দ্রুত পৌঁছানো যায়। Zipline-এর ড্রোন সেবার উদাহরণ দেখায়—রক্ত, ভ্যাকসিন ও ওষুধ দ্রুত পৌঁছানো গেলে মৃত্যুহার কমে এবং প্রত্যন্ত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য হয়।
কৃষি ও সিস্টেম অডিট
প্রিসিশন অ্যাগ্রিকালচারে ড্রোন জমির মান যাচাই, সার ছিটানো বা কীটনাশকের লক্ষ্য নির্ধারণে অত্যন্ত কার্যকর। সরকারি বীজ বা সার বিতরণে ড্রোনভিত্তিক মাঠ পর্যবেক্ষণ জালিয়াতি ধরা সহজ করে এবং প্রকৃত প্রাপ্যতার নিশ্চয়তা দেয়।
নীতি, আইন ও নিরাপত্তা ঝুঁকি
ড্রোন ব্যবহারের সময় গোপনীয়তা লঙ্ঘন, অতিরিক্ত নজরদারি ও সাইবার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই প্রয়োজন:
*স্পষ্ট আইন
*এনক্রিপশন–ভিত্তিক ডেটা সংরক্ষণ
*ওপেন ডেটা নীতি
*স্বাধীন তৃতীয় পক্ষের যাচাই
*নাগরিক অংশগ্রহণ
অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা
২০২৪ সালে বিশ্ব সামরিক ব্যয় ছিল ২৭১৮ বিলিয়ন ডলার। এর মাত্র ১০ শতাংশ (প্রায় ২৭১.৮ বিলিয়ন ডলার) ব্যয়ে জাতীয় ড্রোন রিসার্চ সেন্টার, স্থানীয় উৎপাদন, প্রশিক্ষণ, আইনি কাঠামো ও ওপেন ডেটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যায়।
ধাপে ধাপে রোডম্যাপ
১. দুর্নীতি–ঝুঁকিপূর্ণ খাতে পাইলট প্রকল্প
২. আইনি কাঠামো ও ডেটা গার্ডিয়ানশিপ
৩. স্থানীয় প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন
৪. ড্রোন ডেটা নাগরিক-তদারকি প্ল্যাটফর্ম
৫. সাফল্য মূল্যায়ন করে ধাপে ধাপে সম্প্রসারণ
যুদ্ধের বদলে দুর্নীতি প্রতিরোধে বিনিয়োগ করলে জনগণের সার্বিক কল্যাণে ব্যাপক পরিবর্তন আনা সম্ভব। ড্রোন প্রযুক্তি সঠিক নীতিগত কাঠামো ও জনঅংশগ্রহণের সঙ্গে যুক্ত হলে এটি কেবল প্রযুক্তি নয়, গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্বের ধনী রাষ্ট্র ও করপোরেট নেতৃত্বের উদ্দেশে বার্তা
যদি আমরা সত্যিই গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হই, তাহলে ইলন মাস্কের একটি ভোট যেমন মূল্যবান, আমার ভোটও ততটাই মূল্যবান। ধনী দেশগুলো কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেও যখন লন্ডন বা নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির মতো নেতৃত্বকে পরাজিত করতে পারে না, তখন স্পষ্ট হয়—অর্থ দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখা সবসময় সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের মতো দেশে এখনো টাকা দিয়ে ভোট কেনাবেচা চলে, কিন্তু তা রোধ করা অসম্ভব নয়—যদি জনগণ সচেতন হয়। তবে দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রে এমন আশাও এখনো কঠিন।
তবু প্রশ্ন রয়ে যায়—বিশ্ব কোন পথে হাঁটবে? যুদ্ধ, নাকি শান্তি?
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*লেখক গবেষক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। ইমেইল: [email protected]
আজ যখন বলা হচ্ছে, “এটি আদর্শিক নয়, কেবল নির্বাচনী সমঝোতা”— তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যদি আদর্শ বিসর্জন দিতে হয়, তাহলে এনসিপি আর অন্যদের থেকে আলাদা থাকল কোথায়?
হাহাকার টইটুম্বুর এই জীবন,/ আমি দুপুরের প্রখর/ সোনালি বিকেল/ আমি সন্ধ্যার তারা/ বিছানার গন্ধ
নেলসন ম্যান্ডেলা দীর্ঘ কারাবাসের পর প্রতিশোধ নয়, সমঝোতার রাজনীতি বেছে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে এগিয়ে নিয়েছিলেন। ইরানে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নির্বাসন ও প্রত্যাবর্তন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামোই বদলে দেয়। প্রত্যাবর্তন কখনো স্থিতি আনে, কখনো নতুন সংকট সৃষ্টি করে।
যারা মনে করেন শক্ত হাতে শাসনই স্থিতিশীলতা আনে, তারা ভুলে যান—দমন দিয়ে নীরবতা আনা যায়, কিন্তু আস্থা তৈরি করা যায় না। ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে, ভয়ভিত্তিক ও ব্যক্তিনির্ভর শাসনব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদে টেকে না। কারণ সেখানে ভুল সংশোধনের শান্তিপূর্ণ পথ এবং ক্ষমতার ওপর কার্যকর নজরদারি থাকে না।