

নিমাই সরকার

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবির শেখ খলিফা বিন যায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ছিলেন মীর আনিসুল হাসান। এ ধরনের কর্মে রাজনীতি, সমাজনীতি, যুদ্ধনীতি সবই থাকে। তবে মীর আনিসুল হাসানের প্রশাসনিক শক্তির অন্তরালে ছিল এক কাব্যিক বোধ। অবসর নিয়ে মীর হাসান এখন বাংলাদেশে। সম্প্রতি বিডিজেন২৪–এর পক্ষ থেকে তার সঙ্গে আমার কথা হয়। সেই কথোপকথনে উঠে এসেছে তার প্রবাসজীবনের কিছু কাহিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই মীর আনিসুল হাসান দেশে একটা কলেজে কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর অন্য কলেজেও শিক্ষকতা করেছেন তিনি। মানুষ গড়ার কারিগর হয়ে সমাজের জন্য কিছু করার ইচ্ছে তার। শুরু করলেন যাত্রা। কিন্তু তাতে ছন্দপতন ঘটল। আবুধাবির হাতছানি তাকে দেশে থাকতে দিল না।
আবুধাবি এসে দেখলেন কোনো তেমন কিছুই ওইভাবে তৈরি হয়ে ওঠেনি। তবে প্রতিষ্ঠানটির জন্য এগিয়ে এসেছেন শিক্ষামনস্ক প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সর্বোপরি বাংলাদেশ দূতাবাস, শিক্ষক ও অভিভাবকদের রয়েছে যুগপৎ ভূমিকা। শুরুতে নারী শিক্ষক এবং এককালের প্রথম পুরুষ-শিক্ষক মীর আনিসুল হাসানও বেতন সমর্পণ করেছেন স্কুলের উন্নয়নে। স্কুলের কার্যক্রমের পরিধি ক্রমে বাড়ছে। এক পর্যায়ে স্কুলের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতির পিতা শেখ যায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান জমি দান করেন। সেখানেই গড়ে ওঠে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ভবন। এ সময়ই কলেজের কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।
সেই সময় স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ওয়ালি–উজ জামান। ৩টি শিফট চলে। তত দিনে বাংলাদেশি পুরুষ শিক্ষকদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র হয়ে ৬ বছর চাকরি করে ফেলেছেন মীর আনিসুল হাসান। স্কুল ও কলেজের কার্যক্রম চলতে থাকে। একটা শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে শিশুরা পড়ছে। পাশাপাশি খেলাধূলা, দৌড়াদৌড়ি করছে। আনন্দময় শৈশব তাদের। তরুণ শিক্ষক মীর আনিসুল হাসান হারিয়ে গেলেন শিক্ষা ও সৃজনের আনন্দের মাঝে। এক সময় তিনি ইংরেজি শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান।
এলো ২০০০ সাল। অধ্যক্ষ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে মীর আনিসুল হাসানকে দায়িত্ব দিলেন ইভনিং শিফটের ইনচার্জ হিসেবে। তখন ইভনিং শিফটে কলেজের ছেলেমেয়েরা পড়ত।
ওই সময় মীর আনিসুলের সিনিয়র শায়লা ছিলেন কো-অর্ডিনেটর। তিনি পারিবারিক কারণে কানাডা চলে যান। ওই পদে মীর হাসানকে স্বাগত জানানো হয়। শুরুতে ওই দায়িত্ব নিতে কিছুটা ইতস্তত বোধ করছিলেন তিনি। কো–অর্ডিনেটরের দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পরই আবার তিনি ভাইস প্রিন্সিপাল পদে পদোন্নতি পান। অধ্যক্ষ ওয়ালি–উজ জামানের আশা পূরণ হয়। তিনি হাসানকে বলেছিলেন, নিকটতম সময়ে আমি তোমাকে ভাইস প্রিন্সিপাল পদে দেখতে চাই।
তত দিনে ওয়ালি–উজ জামান বিলেত চলে গেছেন। এরপর অনেক বার মীর আনিসুল হাসান অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেন, অধ্যক্ষের শূন্যতায়। একের পর প্রিন্সিপাল আসে যায়। মীর আনিসুল হাসান হাল ধরে থাকেন। যখনই দরকার পড়ে অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। এ জন্য কখনো কখনো রসিকতা করে তিনি নিজেই বলতেন, আমি হচ্ছি অভিনেতা। ভারপ্রাপ্ত/অস্থায়ী প্রিন্সিপাল।
২০১২ সালে তিনি স্থায়ীভাবে অধ্যক্ষের পদে অধিষ্ঠিত হন। এর আগেই আমিরাতের মিনিস্ট্রি অব এডুকেশনের লাইসেন্সও পেয়ে যান তিনি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অধ্যক্ষের পদে কাজ করে অবসর নিয়ে দেশে চলে এসেছেন তিনি।
মীর আনিসুল হাসানের প্রশাসনিক শক্তির উৎস ছিল এক কাব্যিক বোধ। এটা এক ধরনের কল্পনা-শক্তি যাকে তিনি আবেগ বলেন। এ থেকেই তিনি বাঙালি সাংস্কৃতিক চেতনায় ঋদ্ধ হয়েছেন এবং আবেগী কবিতাকে নিয়ে গেছেন সৃজনশীল শিক্ষার বাঁকে।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করেছেন দেশপ্রেম সিক্ত সাংস্কৃতিক চেতনায়। শিখিয়েছেন বাংলা ও ইংরেজি কবিতা আবৃত্তি, দুই ভাষায় বক্তৃতা ও উপস্থাপনা। অঙ্গভঙ্গি ও স্বরক্ষেপণ সহকারে আবৃত্তি করার একটি অনুশীলন বা শৈলী দাঁড় করিয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ‘অলঙ্কারপুর্ণ আবৃত্তি’ বা ‘সাড়ম্বর ভাষণ’–এ অংশ নিয়েছে তার শিক্ষার্থীরা। তারই আন্তরিক তালিমে জয়ের মুকুট ছিনিয়ে এনেছে এই প্রতিষ্ঠান।

মীর আনিসুল একজন ঈর্ষণীয় সংগঠক। ২০০৩ সালে তার নেতৃত্বে ইকো ক্লাব গঠিত হলে তিনি তার কো-অর্ডিনেটর নিযুক্ত হন। অর্জন করেন যায়েদ ফিউচার এনার্জি পুরস্কার। অভিযান চালিয়ে যান।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে ‘টেকসই উদ্যোগ’–এর জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতিষ্ঠানটি প্রথম পুরস্কার পায়। এটা ছিল স্বর্ণখচিত ক্রেস্ট। আর এর পুরস্কার মূল্য ছিল এক লাখ আমেরিকান ডলার। এ প্রতিযোগিতায় সারা বিশ্বের কমিউনিটি স্কুল অংশগ্রহণ করে।
যায়েদ ফিউচার এনার্জি পুরস্কার প্রাপ্তির অনুরণন শেষ হয় না। খোদ আমিরাতের শিক্ষামন্ত্রী মুগীর তার সফরসঙ্গীসহ আসেন বাংলাদেশ স্কুলে। আবুধাবি এডুকেশন কাউন্সিলের পক্ষ থেকে তাকে উপহার দেওয়া হয় অপূর্ব একটি স্মৃতি চিহ্ন। তিনি ভেতরে নয় শুধু, বাইরে থেকেও মর্যাদা ছিনিয়ে আনেন।
ওই বছর আবুধাবির খুব নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইসলামিয়া ইংলিশ স্কুল তাকে প্রধান অতিথি করে। ভালোবাসার হাত তাকে বড় বেশি টানে।
ভালো উপস্থাপক হিসেবে মীর আনিসুল হাসানের নাম ছিল সর্বজনবিদিত। নিজ প্রতিষ্ঠানের উপস্থাপনা ছাড়াও কমিউনিটির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাংলা ও ইংরেজিতে ভিন্ন মাত্রায় তুলে ধরেছেন তিনি। তার জ্ঞানযোগ এবং তাল লয় নির্ভর উপস্থাপনা সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে।
১৯৯৭ সালে তিনি প্রবাসী বাঙালিদের জন্য অনুষ্ঠান আমিরাত বাংলায় যোগদান করেন ও দীর্ঘদিন সংবাদপাঠক হিসেবে কাজ করেছেন। এখানেও তিনি সফল।
২০০৩ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ইউনেসকোর আমন্ত্রণে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ আমেরিকান কমিউনিটি স্কুলে যোগ দেন। এ সময় 'আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি' গানটি ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে পরিবেশন করেন। গানটির ইংরেজি অনুবাদ তার বক্তব্যে তুলে ধরেন এবং এ জন্যে অনেক প্রশংসা অর্জন করেন।
ইন্ডিয়া সোশ্যাল সেন্টারে কলকাতার বাঙালিরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেন। সেখানকার যেকোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি পেতেন বিশেষ অতিথির আমন্ত্রণ। 'মনের মানুষ' চলচ্চিত্র এলো আবুধাবিতে। গৌতম ঘোষ প্রধান অতিথি। এ সময় তিনি ভারতীয় দূতাবাসে গৌতম ঘোষের ওপর স্বাগত বক্তব্য দেন। এসব অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গে আমরাও চলেছি। সুতরাং এমন দুর্লভ সম্মান বা ভালোবাসা থেকে আমরাও বঞ্চিত হইনি।
শেখ খলিফা বিন যায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজটি আবুধাবি সরকারের আনুকূল্যে গড়া বাঙালিদের সামাজিক প্রতিষ্ঠান। এখানে তিনি লম্বা একটি সময় পার করেন। একটানা ১২ বছর কাজ করেন অধ্যক্ষের পদে। বর্ণাঢ্য এই জীবনের শেষ লগ্নে তার অর্জন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা। গালফ নিউজ মীর আনিসুল হাসানের কর্মময় জীবনের ওপর বিদায়কালে প্রকাশ করে বিরাট সাক্ষাৎকার। বলা যায়, এটাও তার জীবনের হিমালয় সমান প্রাপ্তি।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবির শেখ খলিফা বিন যায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ছিলেন মীর আনিসুল হাসান। এ ধরনের কর্মে রাজনীতি, সমাজনীতি, যুদ্ধনীতি সবই থাকে। তবে মীর আনিসুল হাসানের প্রশাসনিক শক্তির অন্তরালে ছিল এক কাব্যিক বোধ। অবসর নিয়ে মীর হাসান এখন বাংলাদেশে। সম্প্রতি বিডিজেন২৪–এর পক্ষ থেকে তার সঙ্গে আমার কথা হয়। সেই কথোপকথনে উঠে এসেছে তার প্রবাসজীবনের কিছু কাহিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই মীর আনিসুল হাসান দেশে একটা কলেজে কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর অন্য কলেজেও শিক্ষকতা করেছেন তিনি। মানুষ গড়ার কারিগর হয়ে সমাজের জন্য কিছু করার ইচ্ছে তার। শুরু করলেন যাত্রা। কিন্তু তাতে ছন্দপতন ঘটল। আবুধাবির হাতছানি তাকে দেশে থাকতে দিল না।
আবুধাবি এসে দেখলেন কোনো তেমন কিছুই ওইভাবে তৈরি হয়ে ওঠেনি। তবে প্রতিষ্ঠানটির জন্য এগিয়ে এসেছেন শিক্ষামনস্ক প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সর্বোপরি বাংলাদেশ দূতাবাস, শিক্ষক ও অভিভাবকদের রয়েছে যুগপৎ ভূমিকা। শুরুতে নারী শিক্ষক এবং এককালের প্রথম পুরুষ-শিক্ষক মীর আনিসুল হাসানও বেতন সমর্পণ করেছেন স্কুলের উন্নয়নে। স্কুলের কার্যক্রমের পরিধি ক্রমে বাড়ছে। এক পর্যায়ে স্কুলের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতির পিতা শেখ যায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান জমি দান করেন। সেখানেই গড়ে ওঠে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ভবন। এ সময়ই কলেজের কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।
সেই সময় স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ওয়ালি–উজ জামান। ৩টি শিফট চলে। তত দিনে বাংলাদেশি পুরুষ শিক্ষকদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র হয়ে ৬ বছর চাকরি করে ফেলেছেন মীর আনিসুল হাসান। স্কুল ও কলেজের কার্যক্রম চলতে থাকে। একটা শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে শিশুরা পড়ছে। পাশাপাশি খেলাধূলা, দৌড়াদৌড়ি করছে। আনন্দময় শৈশব তাদের। তরুণ শিক্ষক মীর আনিসুল হাসান হারিয়ে গেলেন শিক্ষা ও সৃজনের আনন্দের মাঝে। এক সময় তিনি ইংরেজি শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান।
এলো ২০০০ সাল। অধ্যক্ষ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে মীর আনিসুল হাসানকে দায়িত্ব দিলেন ইভনিং শিফটের ইনচার্জ হিসেবে। তখন ইভনিং শিফটে কলেজের ছেলেমেয়েরা পড়ত।
ওই সময় মীর আনিসুলের সিনিয়র শায়লা ছিলেন কো-অর্ডিনেটর। তিনি পারিবারিক কারণে কানাডা চলে যান। ওই পদে মীর হাসানকে স্বাগত জানানো হয়। শুরুতে ওই দায়িত্ব নিতে কিছুটা ইতস্তত বোধ করছিলেন তিনি। কো–অর্ডিনেটরের দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পরই আবার তিনি ভাইস প্রিন্সিপাল পদে পদোন্নতি পান। অধ্যক্ষ ওয়ালি–উজ জামানের আশা পূরণ হয়। তিনি হাসানকে বলেছিলেন, নিকটতম সময়ে আমি তোমাকে ভাইস প্রিন্সিপাল পদে দেখতে চাই।
তত দিনে ওয়ালি–উজ জামান বিলেত চলে গেছেন। এরপর অনেক বার মীর আনিসুল হাসান অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেন, অধ্যক্ষের শূন্যতায়। একের পর প্রিন্সিপাল আসে যায়। মীর আনিসুল হাসান হাল ধরে থাকেন। যখনই দরকার পড়ে অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। এ জন্য কখনো কখনো রসিকতা করে তিনি নিজেই বলতেন, আমি হচ্ছি অভিনেতা। ভারপ্রাপ্ত/অস্থায়ী প্রিন্সিপাল।
২০১২ সালে তিনি স্থায়ীভাবে অধ্যক্ষের পদে অধিষ্ঠিত হন। এর আগেই আমিরাতের মিনিস্ট্রি অব এডুকেশনের লাইসেন্সও পেয়ে যান তিনি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অধ্যক্ষের পদে কাজ করে অবসর নিয়ে দেশে চলে এসেছেন তিনি।
মীর আনিসুল হাসানের প্রশাসনিক শক্তির উৎস ছিল এক কাব্যিক বোধ। এটা এক ধরনের কল্পনা-শক্তি যাকে তিনি আবেগ বলেন। এ থেকেই তিনি বাঙালি সাংস্কৃতিক চেতনায় ঋদ্ধ হয়েছেন এবং আবেগী কবিতাকে নিয়ে গেছেন সৃজনশীল শিক্ষার বাঁকে।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করেছেন দেশপ্রেম সিক্ত সাংস্কৃতিক চেতনায়। শিখিয়েছেন বাংলা ও ইংরেজি কবিতা আবৃত্তি, দুই ভাষায় বক্তৃতা ও উপস্থাপনা। অঙ্গভঙ্গি ও স্বরক্ষেপণ সহকারে আবৃত্তি করার একটি অনুশীলন বা শৈলী দাঁড় করিয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ‘অলঙ্কারপুর্ণ আবৃত্তি’ বা ‘সাড়ম্বর ভাষণ’–এ অংশ নিয়েছে তার শিক্ষার্থীরা। তারই আন্তরিক তালিমে জয়ের মুকুট ছিনিয়ে এনেছে এই প্রতিষ্ঠান।

মীর আনিসুল একজন ঈর্ষণীয় সংগঠক। ২০০৩ সালে তার নেতৃত্বে ইকো ক্লাব গঠিত হলে তিনি তার কো-অর্ডিনেটর নিযুক্ত হন। অর্জন করেন যায়েদ ফিউচার এনার্জি পুরস্কার। অভিযান চালিয়ে যান।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে ‘টেকসই উদ্যোগ’–এর জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতিষ্ঠানটি প্রথম পুরস্কার পায়। এটা ছিল স্বর্ণখচিত ক্রেস্ট। আর এর পুরস্কার মূল্য ছিল এক লাখ আমেরিকান ডলার। এ প্রতিযোগিতায় সারা বিশ্বের কমিউনিটি স্কুল অংশগ্রহণ করে।
যায়েদ ফিউচার এনার্জি পুরস্কার প্রাপ্তির অনুরণন শেষ হয় না। খোদ আমিরাতের শিক্ষামন্ত্রী মুগীর তার সফরসঙ্গীসহ আসেন বাংলাদেশ স্কুলে। আবুধাবি এডুকেশন কাউন্সিলের পক্ষ থেকে তাকে উপহার দেওয়া হয় অপূর্ব একটি স্মৃতি চিহ্ন। তিনি ভেতরে নয় শুধু, বাইরে থেকেও মর্যাদা ছিনিয়ে আনেন।
ওই বছর আবুধাবির খুব নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইসলামিয়া ইংলিশ স্কুল তাকে প্রধান অতিথি করে। ভালোবাসার হাত তাকে বড় বেশি টানে।
ভালো উপস্থাপক হিসেবে মীর আনিসুল হাসানের নাম ছিল সর্বজনবিদিত। নিজ প্রতিষ্ঠানের উপস্থাপনা ছাড়াও কমিউনিটির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাংলা ও ইংরেজিতে ভিন্ন মাত্রায় তুলে ধরেছেন তিনি। তার জ্ঞানযোগ এবং তাল লয় নির্ভর উপস্থাপনা সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে।
১৯৯৭ সালে তিনি প্রবাসী বাঙালিদের জন্য অনুষ্ঠান আমিরাত বাংলায় যোগদান করেন ও দীর্ঘদিন সংবাদপাঠক হিসেবে কাজ করেছেন। এখানেও তিনি সফল।
২০০৩ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ইউনেসকোর আমন্ত্রণে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ আমেরিকান কমিউনিটি স্কুলে যোগ দেন। এ সময় 'আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি' গানটি ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে পরিবেশন করেন। গানটির ইংরেজি অনুবাদ তার বক্তব্যে তুলে ধরেন এবং এ জন্যে অনেক প্রশংসা অর্জন করেন।
ইন্ডিয়া সোশ্যাল সেন্টারে কলকাতার বাঙালিরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেন। সেখানকার যেকোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি পেতেন বিশেষ অতিথির আমন্ত্রণ। 'মনের মানুষ' চলচ্চিত্র এলো আবুধাবিতে। গৌতম ঘোষ প্রধান অতিথি। এ সময় তিনি ভারতীয় দূতাবাসে গৌতম ঘোষের ওপর স্বাগত বক্তব্য দেন। এসব অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গে আমরাও চলেছি। সুতরাং এমন দুর্লভ সম্মান বা ভালোবাসা থেকে আমরাও বঞ্চিত হইনি।
শেখ খলিফা বিন যায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজটি আবুধাবি সরকারের আনুকূল্যে গড়া বাঙালিদের সামাজিক প্রতিষ্ঠান। এখানে তিনি লম্বা একটি সময় পার করেন। একটানা ১২ বছর কাজ করেন অধ্যক্ষের পদে। বর্ণাঢ্য এই জীবনের শেষ লগ্নে তার অর্জন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা। গালফ নিউজ মীর আনিসুল হাসানের কর্মময় জীবনের ওপর বিদায়কালে প্রকাশ করে বিরাট সাক্ষাৎকার। বলা যায়, এটাও তার জীবনের হিমালয় সমান প্রাপ্তি।
বর্ষাকালে (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) সোহরা জলপ্রপাত তার পূর্ণ রূপে ফেটে পড়ে। জলরাশির গর্জনে যেন পাহাড় কেঁপে ওঠে, আর সেই কম্পন মনে জাগায় এক গভীর প্রশান্তি। সূর্য যখন পশ্চিমে ঢলে পড়ে, তখন ঝরনার ওপর সোনালি আলো পড়ে পাহাড়টাকে রাঙিয়ে দেয় কমলা ও সোনার আভায়।
রোমান্টিক কোনো গল্প বা ভ্রমণ, ভৌতিক কাহিনি, গ্রাম আর শহরের যেকোনো প্রেক্ষাপট কত সহজ সুন্দর করে লিখেছেন তিনি। আবার ‘এই সব দিন রাত্রি’তে তিনি মিশে আছেন, থাকবেন আজীবন। শুভ জন্মদিন প্রিয় লেখক। পৃথিবীতে আপনি না থাকলে সাহিত্যের প্রতি এত তীব্র ভালোবাসা আমার কোনোদিন হতো না।
এই ঘটনাপ্রবাহ একটি বৃহত্তর বাস্তবতা নির্দেশ করে—বিশ্বের মহানগরগুলোতে নেতৃত্বের বৈচিত্র্য ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। লন্ডনের মেয়র একজন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মুসলিম, আর এখন নিউইয়র্কের মেয়রও আফ্রিকান-ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত মুসলিম।
ফ্রান্সে নির্বাচন মানেই শুধু পোস্টার, লিফলেট বা স্লোগানের প্রতিযোগিতা নয়। এখানে নির্বাচন শুরু হওয়ার অন্তত দুই মাস আগেই প্রার্থীরা তাদের প্রচারণার পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি তৈরি করেন। কোথায় কোথায় সভা হবে, কোন অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কবে মতবিনিময় হবে, কোন সমস্যা বা উন্নয়ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।