সহিদুল আলম স্বপন, জেনেভা, সুইজারল্যান্ড
মিয়ানমার আবারও এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘ চার বছর পর সম্প্রতি জান্তা সরকার ঘোষণা দিয়েছে, তারা দেশটিতে জারি থাকা জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার এবং আগামী ডিসেম্বরে একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই ঘোষণা শুধু মিয়ানমারের জন্যই নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনীতি এবং বিশেষ করে প্রতিবেশী বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও গভীরভাবে প্রভাব ফেলবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই নির্বাচন কতটা বিশ্বাসযোগ্য হবে এবং এটি কি আদৌ মিয়ানমারকে গণতন্ত্রের পথে ফেরাবে, নাকি এটি হবে জান্তা সরকারের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার একটি কৌশল মাত্র?
জান্তা সরকারের উত্থান এবং বর্তমান পরিস্থিতি
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে মিয়ানমারের সামরিক সরকার। সে সময় নোবেলজয়ী অং সান সুচি'র সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা নেয় তারা। এরপর থেকেই দেশটিতে চলছে গৃহযুদ্ধ। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।
গণতন্ত্রপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো, জাতিগত বিদ্রোহী গ্রুপ এবং সাধারণ জনগণ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। হাজার হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ ঘরছাড়া হয়। জাতিসংঘের মতে, প্রায় ২০ লাখ মানুষ গৃহচ্যুত এবং মানবিক বিপর্যয় অব্যাহত রয়েছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনী চাপে রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিরোধ বাহিনী দেশের নানা প্রান্তে সফল অভিযান পরিচালনা করছে, এমনকি কয়েকটি সীমান্ত এলাকা থেকে সরকারি বাহিনীকে হটিয়েও দিয়েছে। এ অবস্থায় জান্তা সরকার জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার ও নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছে—যা অনেকেই একটি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন।
নির্বাচনের বাস্তবতা: গণতন্ত্র না প্রতারণা?
জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের ঘোষণা শুনতে আশাব্যঞ্জক মনে হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। নির্বাচনের জন্য যে রাজনৈতিক পরিবেশ প্রয়োজন—মুক্ত গণমাধ্যম, বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ভোটারদের মতপ্রকাশের অধিকার—তা এখনো অনুপস্থিত। এনএলডি নেত্রী অং সান সু চি এখনো কারাবন্দী এবং দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ। বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চলছে।
সেনাবাহিনী সম্ভবত এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করতে চায়, যেখানে ‘গণতন্ত্রের’ মোড়কে আসলে তাদের অনুগত রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকবে। এটি হবে এক ধরণের নির্বাচনী ছদ্মবেশ। এ ধরনের নির্বাচন দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে না, বরং সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গ: রোহিঙ্গা সংকট ও সীমান্ত নিরাপত্তা
বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক বহুদিন ধরে জটিল, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে। ২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নিধনের’ অভিযানের ফলে প্রায় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এখনো তারা কক্সবাজার ও ভাসানচরে মানবেতর অবস্থায় আছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কয়েকবার শুরু হলেও বাস্তবে তার অগ্রগতি শূন্য।
জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার এবং নির্বাচনের পর মিয়ানমার যদি আংশিকভাবে স্থিতিশীল হয়, তবে প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা কিছুটা হলেও বাড়তে পারে। তবে যদি নতুন সরকার সেনাবাহিনীর ক্রীড়নক হয়, তাহলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাস্তবিক কোনো অগ্রগতি হবে না। বরং এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সীমান্তে গোলাগুলি, গুলির শব্দে সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ প্রায়শই সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এই বাস্তবতায়, একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন মিয়ানমারের নিরাপত্তা কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে পারে কি না, তা বাংলাদেশ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
আসিয়ান (ASEAN) দীর্ঘদিন ধরেই মিয়ানমার সংকটে মধ্যস্থতা করে আসছে। তবে জান্তা সরকারের অনমনীয় মনোভাবের কারণে সংগঠনটির প্রয়াস সফল হয়নি। এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আসিয়ান কী ভূমিকা নেয়, সেটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সংস্থাটি ইতিমধ্যেই জান্তা সরকারকে কিছু ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈঠক থেকে বিরত রেখেছে।
পশ্চিমা বিশ্ব—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)—মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তারা সু চির মুক্তি ও গণতন্ত্র ফেরানোর দাবি জানিয়ে আসছে। তবে চীন ও রাশিয়ার অবস্থান ভিন্ন। চীন মিয়ানমারে অবকাঠামো প্রকল্প ও খনিজ সম্পদে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে এবং তারা স্থিতিশীলতা ও জান্তা সরকারের সঙ্গেই সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।
এই জটিল কূটনৈতিক বাস্তবতায় নির্বাচন একটি মোড় পরিবর্তনের সুযোগ হলেও তা বাস্তবিক পরিবর্তন আনবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
সম্ভাব্য পরিণতি ও সুপারিশ
বাংলাদেশের করণীয়: মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজর রাখা জরুরি। নির্বাচন যদি অগণতান্ত্রিক হয় এবং সহিংসতা বাড়ে, তাহলে নতুন করে শরণার্থীর ঢল নামার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য সীমান্ত এলাকায় প্রস্তুতি নিতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে চাপ বাড়াতে হবে। নির্বাচনকে ঘিরে নতুন সরকার গঠিত হলে, কূটনৈতিক যোগাযোগ জোরদার করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা: নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাপ বাড়াতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান এবং জান্তা সরকারের প্রতি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের নিশ্চয়তা ছাড়া মিয়ানমারের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা স্থগিত রাখা উচিত।
মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ: যদি নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে এটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক রূপান্তরের সূচনা হতে পারে। তবে যদি এটি কেবল জান্তার মুখোশে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার কৌশল হয়, তাহলে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ আরও তীব্র হতে পারে এবং আঞ্চলিক অস্থিরতা বাড়বে।
মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার এবং আসন্ন নির্বাচন নিঃসন্দেহে এক বড় মাইলফলক। তবে এর বাস্তবতা, উদ্দেশ্য এবং পরিণতি নিয়ে গভীর সংশয় রয়েছে। বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য এটি শুধু একটি সংবাদ নয়, বরং একটি কৌশলগত চ্যালেঞ্জ। সময় এসেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি আরও কার্যকর, সুসংগঠিত ও সক্রিয় করার। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় এই নির্বাচন হবে শুধু একটি ভুয়া উৎসব—যা রক্ত, নিপীড়ন ও অবিশ্বাসের ওপর নির্মিত এক প্রহসনের নাম।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*লেখক সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংকিং আর্থিক অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং কলামিস্ট ও কবি
মিয়ানমার আবারও এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘ চার বছর পর সম্প্রতি জান্তা সরকার ঘোষণা দিয়েছে, তারা দেশটিতে জারি থাকা জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার এবং আগামী ডিসেম্বরে একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই ঘোষণা শুধু মিয়ানমারের জন্যই নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনীতি এবং বিশেষ করে প্রতিবেশী বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও গভীরভাবে প্রভাব ফেলবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই নির্বাচন কতটা বিশ্বাসযোগ্য হবে এবং এটি কি আদৌ মিয়ানমারকে গণতন্ত্রের পথে ফেরাবে, নাকি এটি হবে জান্তা সরকারের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার একটি কৌশল মাত্র?
জান্তা সরকারের উত্থান এবং বর্তমান পরিস্থিতি
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে মিয়ানমারের সামরিক সরকার। সে সময় নোবেলজয়ী অং সান সুচি'র সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা নেয় তারা। এরপর থেকেই দেশটিতে চলছে গৃহযুদ্ধ। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।
গণতন্ত্রপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো, জাতিগত বিদ্রোহী গ্রুপ এবং সাধারণ জনগণ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। হাজার হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ ঘরছাড়া হয়। জাতিসংঘের মতে, প্রায় ২০ লাখ মানুষ গৃহচ্যুত এবং মানবিক বিপর্যয় অব্যাহত রয়েছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনী চাপে রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিরোধ বাহিনী দেশের নানা প্রান্তে সফল অভিযান পরিচালনা করছে, এমনকি কয়েকটি সীমান্ত এলাকা থেকে সরকারি বাহিনীকে হটিয়েও দিয়েছে। এ অবস্থায় জান্তা সরকার জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার ও নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছে—যা অনেকেই একটি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন।
নির্বাচনের বাস্তবতা: গণতন্ত্র না প্রতারণা?
জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের ঘোষণা শুনতে আশাব্যঞ্জক মনে হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। নির্বাচনের জন্য যে রাজনৈতিক পরিবেশ প্রয়োজন—মুক্ত গণমাধ্যম, বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ভোটারদের মতপ্রকাশের অধিকার—তা এখনো অনুপস্থিত। এনএলডি নেত্রী অং সান সু চি এখনো কারাবন্দী এবং দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ। বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চলছে।
সেনাবাহিনী সম্ভবত এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করতে চায়, যেখানে ‘গণতন্ত্রের’ মোড়কে আসলে তাদের অনুগত রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকবে। এটি হবে এক ধরণের নির্বাচনী ছদ্মবেশ। এ ধরনের নির্বাচন দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে না, বরং সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গ: রোহিঙ্গা সংকট ও সীমান্ত নিরাপত্তা
বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক বহুদিন ধরে জটিল, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে। ২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নিধনের’ অভিযানের ফলে প্রায় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এখনো তারা কক্সবাজার ও ভাসানচরে মানবেতর অবস্থায় আছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কয়েকবার শুরু হলেও বাস্তবে তার অগ্রগতি শূন্য।
জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার এবং নির্বাচনের পর মিয়ানমার যদি আংশিকভাবে স্থিতিশীল হয়, তবে প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা কিছুটা হলেও বাড়তে পারে। তবে যদি নতুন সরকার সেনাবাহিনীর ক্রীড়নক হয়, তাহলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাস্তবিক কোনো অগ্রগতি হবে না। বরং এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সীমান্তে গোলাগুলি, গুলির শব্দে সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ প্রায়শই সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এই বাস্তবতায়, একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন মিয়ানমারের নিরাপত্তা কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে পারে কি না, তা বাংলাদেশ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
আসিয়ান (ASEAN) দীর্ঘদিন ধরেই মিয়ানমার সংকটে মধ্যস্থতা করে আসছে। তবে জান্তা সরকারের অনমনীয় মনোভাবের কারণে সংগঠনটির প্রয়াস সফল হয়নি। এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আসিয়ান কী ভূমিকা নেয়, সেটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সংস্থাটি ইতিমধ্যেই জান্তা সরকারকে কিছু ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈঠক থেকে বিরত রেখেছে।
পশ্চিমা বিশ্ব—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)—মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তারা সু চির মুক্তি ও গণতন্ত্র ফেরানোর দাবি জানিয়ে আসছে। তবে চীন ও রাশিয়ার অবস্থান ভিন্ন। চীন মিয়ানমারে অবকাঠামো প্রকল্প ও খনিজ সম্পদে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে এবং তারা স্থিতিশীলতা ও জান্তা সরকারের সঙ্গেই সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।
এই জটিল কূটনৈতিক বাস্তবতায় নির্বাচন একটি মোড় পরিবর্তনের সুযোগ হলেও তা বাস্তবিক পরিবর্তন আনবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
সম্ভাব্য পরিণতি ও সুপারিশ
বাংলাদেশের করণীয়: মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজর রাখা জরুরি। নির্বাচন যদি অগণতান্ত্রিক হয় এবং সহিংসতা বাড়ে, তাহলে নতুন করে শরণার্থীর ঢল নামার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য সীমান্ত এলাকায় প্রস্তুতি নিতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে চাপ বাড়াতে হবে। নির্বাচনকে ঘিরে নতুন সরকার গঠিত হলে, কূটনৈতিক যোগাযোগ জোরদার করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা: নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাপ বাড়াতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান এবং জান্তা সরকারের প্রতি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের নিশ্চয়তা ছাড়া মিয়ানমারের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা স্থগিত রাখা উচিত।
মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ: যদি নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে এটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক রূপান্তরের সূচনা হতে পারে। তবে যদি এটি কেবল জান্তার মুখোশে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার কৌশল হয়, তাহলে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ আরও তীব্র হতে পারে এবং আঞ্চলিক অস্থিরতা বাড়বে।
মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার এবং আসন্ন নির্বাচন নিঃসন্দেহে এক বড় মাইলফলক। তবে এর বাস্তবতা, উদ্দেশ্য এবং পরিণতি নিয়ে গভীর সংশয় রয়েছে। বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য এটি শুধু একটি সংবাদ নয়, বরং একটি কৌশলগত চ্যালেঞ্জ। সময় এসেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি আরও কার্যকর, সুসংগঠিত ও সক্রিয় করার। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় এই নির্বাচন হবে শুধু একটি ভুয়া উৎসব—যা রক্ত, নিপীড়ন ও অবিশ্বাসের ওপর নির্মিত এক প্রহসনের নাম।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*লেখক সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংকিং আর্থিক অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং কলামিস্ট ও কবি
চলতি বছরের এপ্রিলে যুক্তরাজ্যের এঙ্গলিয়া রাসকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আমি এক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গিয়েছিলাম, যা আজও মনে করলে শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে। নির্ধারিত নির্বাচনী বাজেটের বাইরে অসতর্কতাবশত মাত্র ৫ পাউন্ড বেশি খরচ হওয়ায় আমার প্রার্থীতা প্রায় বাতিল হওয়ার পরিস্থিতি হয়েছিল।
আফগানিস্থানে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এর জন্য অবশ্য সেখানকার অসম আইনকানুনই দায়ী। ফায়ার ফাইটার ও অন্য রেসকিউ পুরুষ সদস্যদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা ছিল, তারা কেউ যেন কোনো নারীর শরীর স্পর্শ না করে। এ কারণে অনেক আহত নারীকে উদ্ধার করা হয়নি।
রকি পর্বতমালার এই কোণে প্রকৃতি আমাদের শেখায়—সুন্দরতা, শান্তি এবং সৃষ্টির নিখিলতা কোনো বইয়ে লেখা থাকে না। তাকে অনুভব করতে হয়, তাকে হৃদয়ে ধারণ করতে হয়। আর সেই অনুভূতিই আমাদের মানবিকতা এবং জীবনের গভীরতাকে এক নতুন মাত্রা দেয়।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস দেশ ও জাতির এক গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়বাহী প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু করার পর থেকে এটি কেবল যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমই নয়, বরং প্রবাসী বাংলাদেশিদের আবেগের এক বড় প্রতীক।
চলতি বছরের এপ্রিলে যুক্তরাজ্যের এঙ্গলিয়া রাসকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আমি এক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গিয়েছিলাম, যা আজও মনে করলে শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে। নির্ধারিত নির্বাচনী বাজেটের বাইরে অসতর্কতাবশত মাত্র ৫ পাউন্ড বেশি খরচ হওয়ায় আমার প্রার্থীতা প্রায় বাতিল হওয়ার পরিস্থিতি হয়েছিল।
৩ ঘণ্টা আগে