
রহমান মৃধা

জন্মের মুহূর্ত থেকেই মানুষের চারপাশে এক অদৃশ্য শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়—‘ভবিষ্যৎ’। শিশুটি কথা বলতে শেখেনি, অথচ তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। কোন স্কুলে পড়বে, কোন ভাষা শিখবে, কোন পেশায় যাবে—সব কিছু যেন ঠিক হয়ে যায় জন্মের আগেই। তার জীবনের প্রথম কান্না থেকেই শুরু হয় এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতা, যার নাম ‘আগামীকাল’।
বাবা-মা ভাবে, সন্তান যেন ‘ভালো ভবিষ্যৎ’ পায়; শিক্ষক শেখায় পরীক্ষায় ভালো করতে, যেন ভবিষ্যতে সফল হয়। সমাজ বলে, নিরাপদ পেশা নাও—ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে। এভাবেই জীবনের প্রতিটি ধাপ ভবিষ্যতের নামে পরিকল্পিত হয়ে ওঠে, অথচ বর্তমান থাকে উপেক্ষিত, নিঃশব্দ ও অপূর্ণ।
এই কেস স্টাডির কেন্দ্রীয় চরিত্রকে আমরা বলি প্লাবন—এক সাধারণ তরুণ, যার জীবন প্রতীক হয়ে ওঠে আধুনিক সমাজের ভবিষ্যৎ-নেশার। প্লাবনের জন্মের সময় বাবা বলেছিলেন, ‘ছেলেটাকে ইঞ্জিনিয়ার বানাব।’ স্কুলে শিক্ষক বলেছিলেন, ‘তুমি যদি এই পরীক্ষায় ভালো না কর, তোমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’ প্লাবন ছোটবেলায় আকাশ দেখতে ভালোবাসত, কিন্তু সবাই বলত, ‘এইসব দেখার সময় নেই, বই খোল, ভবিষ্যৎ গড়।”
তারপর বছর গড়াল। প্লাবন মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয়—সব স্তরে ছুটল ‘ভবিষ্যৎ গড়ার’ দৌড়ে। কিন্তু প্রতিটি সফলতার পরও তার ভেতরে এক অদৃশ্য শূন্যতা জমতে লাগল। কারণ সে যা করছে, তা বর্তমানের আনন্দ বা তৃপ্তির জন্য নয়—সবই ‘আগামীকাল’-এর নামে। তার প্রতিটি সকাল শুরু হয় ভবিষ্যতের চিন্তায়, প্রতিটি রাত ঘুমিয়ে পড়ে অনিশ্চয়তার ভয়ে।
শেষ পর্যন্ত প্লাবন একদিন থেমে গিয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করল—‘যে ভবিষ্যতের জন্য আমি বেঁচে আছি, সেটি কখন আসবে? আমি তো সবসময় ভবিষ্যতের অপেক্ষায় থেকেছি, অথচ আজও সেটি “আগামীকাল”। তাহলে কি আমি আসলে কখনো বাঁচিনি?’
এটাই সেই ‘ভবিষ্যতের প্লাবন’—যেখানে মানুষ নিজের আজকে ডুবিয়ে ফেলে আগামীকালের স্বপ্নে। এই প্লাবন শুধু এক ব্যক্তির নয়, এক প্রজন্মের বাস্তবতা। আমরা জন্মের পর থেকেই এমন এক সময়চক্রে বন্দী হয়ে যাই, যেখানে জীবনের মূল্য নির্ধারিত হয় ভবিষ্যতের সম্ভাবনায়, বর্তমানের অভিজ্ঞতায় নয়।
প্লাবনের এই যাত্রা আমাদের সকলের প্রতিফলন; আসুন দেখি, তার জীবনের এই শিক্ষা কীভাবে আমাদের আজকে এবং আগামীকালের সঙ্গে জড়িত।
মানুষ চিরকাল ‘আগামীকাল’ নামের এক অলৌকিক প্রতিশ্রুতির পেছনে ছুটে বেড়ায়। আজকের ক্লান্তি, অনিশ্চয়তা বা ভয় থেকে বাঁচতে আমরা বারবার নিজেদের সান্ত্বনা দিই—‘আগামীকাল সব ঠিক হবে।’ কিন্তু সত্যি বলতে, সেই আগামীকাল কখনো আসে না। প্রতিটি আগামীকাল এসে আজ হয়ে যায়, আর আমরা আবারও নতুন এক আগামীকালের অপেক্ষায় থাকি। সময়ের এই নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ যেন আমাদের বোঝাতে চায়—ভবিষ্যৎ কোনো আলাদা সময় নয়, বরং আজকেরই রূপান্তর, আজকেরই পরিণতি।

জীবনের আসল অলৌকিকতা এখানেই যে, আমরা সময়কে ধরতে পারি কেবল আজকের মধ্যে। যে আজকে বাঁচতে জানে, সে-ই ভবিষ্যৎকে গড়তে জানে। একজন কৃষক আজ বীজ বোনে এই বিশ্বাসে যে, কাল ফসল হবে, কিন্তু ফসল জন্মায় না কোনো অলৌকিক আগামীকাল থেকে—বরং আজকের শ্রম, ঘাম ও যত্ন থেকেই। একজন লেখক আজ লিখতে সাহস করেন, চিন্তা করেন, প্রশ্ন তোলেন—তার লেখাই আগামী দিনের সমাজে আলো জ্বালে। একজন প্রেমিক আজ ভালোবাসে, ক্ষমা করে, ফিরে আসে—তার আজকের ভালোবাসাই পরিণত হয় স্থায়ী সম্পর্কের দৃঢ়তায়। সবকিছুর মূলে তাই আজ, যা আমাদের হাতে একমাত্র নিশ্চিত ও বাস্তব সম্পদ।
তবুও মানুষ আজকে অবহেলা করে। আমরা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করি, ভবিষ্যতের জন্য ভয় পাই, ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করি; অথচ সেই ভবিষ্যৎ গঠনের উপাদান—আজ—আমরা অজান্তে নষ্ট করে ফেলি। এই হারানোই মানুষের অস্তিত্বের অন্তর্নিহিত ট্র্যাজেডি। যে দিনটি আমরা বাঁচতে পারতাম, তা পরিকল্পনা ও আশঙ্কার ভারে চাপা পড়ে যায়। জীবনের আসল সৃজনশীলতা, আসল আনন্দ, আসল দায়িত্ব—সবই গড়ে ওঠে এই বর্তমান মুহূর্তের বুকে।
দার্শনিক হাইডেগার বলেছিলেন, মানুষ আসলে ‘অস্তিত্বের অপেক্ষায় থাকা প্রাণী’—সে চিরকাল কিছু একটা ঘটার অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু জীবন কোনো অপেক্ষা নয়; জীবন নিজেই এক অবিরাম ‘এখন’-এর ধারা। রবীন্দ্রনাথও বলেছিলেন, ‘কাল যদি আসে, আজকের হাতে তারই বীজ।’ এই বীজই আমাদের বাঁচার দায়—যদি আজ মাটি না ছোঁও, তবে আগামীকাল কেবলই শূন্য মাঠ।
আমরা যদি আজ ন্যায় হারাই, আগামীকাল ন্যায়বিচার পাব না। আজ যদি ভালোবাসতে না পারি, আগামীকাল সম্পর্ক টিকবে না। আজ যদি দায়িত্ব ভুলে যাই, আগামীকাল ভেঙে পড়বে প্রতিষ্ঠান, সমাজ, রাষ্ট্র—সবকিছু। কারণ আগামীকাল জন্ম নেয় আজকের ভেতর থেকে; এটি আলাদা কোনো সময় নয়, বরং আজকের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি কাজ ও প্রতিটি অনুভূতির ধারাবাহিক ফল।
‘আগামী কাল শুধু আজকের জন্য’—এই বাক্য তাই কেবল সময়চেতনার কথা নয়, এটি এক নৈতিক দর্শন। এটি আমাদের শেখায়, ভবিষ্যতের দায় আজকের হাতে। আজকের অন্যায়, আজকের অবহেলা, আজকের দুর্বলতা—সবই আগামীকালের বিপর্যয়ের বীজ বয়ে আনে। আবার আজকের সততা, আজকের পরিশ্রম, আজকের ভালোবাসা—সবই আগামীকালের আলোর উৎস হয়ে ওঠে।
তাই আজকে বাঁচো গভীরভাবে, সচেতনভাবে, সততার সঙ্গে। আজকেই করো জীবনের কেন্দ্র। মনোযোগ দিয়ে কাজ কর, ভালোবাসো, ক্ষমা কর, সৎ থেক—তবেই আগামীকাল তোমার নিজের হাতে তৈরি হবে। কারণ সত্যিকার অর্থে, আগামীকাল বলে কিছু নেই—শুধু আছে আজ, আর আজের ভেতরেই লুকিয়ে আছে সব আগামীকালের প্রতিশ্রুতি, সব সম্ভাবনা, সব মুক্তি।
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের যাত্রা তাই আসলে একটাই প্রশ্নে এসে ঠেকে—‘আমি কি আজকে বেঁচে আছি, নাকি আগামীকালের জন্য শুধু প্রস্তুতি নিচ্ছি?’
যেদিন মানুষ এই প্রশ্নের সামনে সৎভাবে দাঁড়াতে পারবে, সেদিনই সে বুঝবে—আগামীকাল শুধু আজকের জন্য।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*লেখক গবেষক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। ইমেইল: [email protected]

জন্মের মুহূর্ত থেকেই মানুষের চারপাশে এক অদৃশ্য শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়—‘ভবিষ্যৎ’। শিশুটি কথা বলতে শেখেনি, অথচ তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। কোন স্কুলে পড়বে, কোন ভাষা শিখবে, কোন পেশায় যাবে—সব কিছু যেন ঠিক হয়ে যায় জন্মের আগেই। তার জীবনের প্রথম কান্না থেকেই শুরু হয় এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতা, যার নাম ‘আগামীকাল’।
বাবা-মা ভাবে, সন্তান যেন ‘ভালো ভবিষ্যৎ’ পায়; শিক্ষক শেখায় পরীক্ষায় ভালো করতে, যেন ভবিষ্যতে সফল হয়। সমাজ বলে, নিরাপদ পেশা নাও—ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে। এভাবেই জীবনের প্রতিটি ধাপ ভবিষ্যতের নামে পরিকল্পিত হয়ে ওঠে, অথচ বর্তমান থাকে উপেক্ষিত, নিঃশব্দ ও অপূর্ণ।
এই কেস স্টাডির কেন্দ্রীয় চরিত্রকে আমরা বলি প্লাবন—এক সাধারণ তরুণ, যার জীবন প্রতীক হয়ে ওঠে আধুনিক সমাজের ভবিষ্যৎ-নেশার। প্লাবনের জন্মের সময় বাবা বলেছিলেন, ‘ছেলেটাকে ইঞ্জিনিয়ার বানাব।’ স্কুলে শিক্ষক বলেছিলেন, ‘তুমি যদি এই পরীক্ষায় ভালো না কর, তোমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’ প্লাবন ছোটবেলায় আকাশ দেখতে ভালোবাসত, কিন্তু সবাই বলত, ‘এইসব দেখার সময় নেই, বই খোল, ভবিষ্যৎ গড়।”
তারপর বছর গড়াল। প্লাবন মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয়—সব স্তরে ছুটল ‘ভবিষ্যৎ গড়ার’ দৌড়ে। কিন্তু প্রতিটি সফলতার পরও তার ভেতরে এক অদৃশ্য শূন্যতা জমতে লাগল। কারণ সে যা করছে, তা বর্তমানের আনন্দ বা তৃপ্তির জন্য নয়—সবই ‘আগামীকাল’-এর নামে। তার প্রতিটি সকাল শুরু হয় ভবিষ্যতের চিন্তায়, প্রতিটি রাত ঘুমিয়ে পড়ে অনিশ্চয়তার ভয়ে।
শেষ পর্যন্ত প্লাবন একদিন থেমে গিয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করল—‘যে ভবিষ্যতের জন্য আমি বেঁচে আছি, সেটি কখন আসবে? আমি তো সবসময় ভবিষ্যতের অপেক্ষায় থেকেছি, অথচ আজও সেটি “আগামীকাল”। তাহলে কি আমি আসলে কখনো বাঁচিনি?’
এটাই সেই ‘ভবিষ্যতের প্লাবন’—যেখানে মানুষ নিজের আজকে ডুবিয়ে ফেলে আগামীকালের স্বপ্নে। এই প্লাবন শুধু এক ব্যক্তির নয়, এক প্রজন্মের বাস্তবতা। আমরা জন্মের পর থেকেই এমন এক সময়চক্রে বন্দী হয়ে যাই, যেখানে জীবনের মূল্য নির্ধারিত হয় ভবিষ্যতের সম্ভাবনায়, বর্তমানের অভিজ্ঞতায় নয়।
প্লাবনের এই যাত্রা আমাদের সকলের প্রতিফলন; আসুন দেখি, তার জীবনের এই শিক্ষা কীভাবে আমাদের আজকে এবং আগামীকালের সঙ্গে জড়িত।
মানুষ চিরকাল ‘আগামীকাল’ নামের এক অলৌকিক প্রতিশ্রুতির পেছনে ছুটে বেড়ায়। আজকের ক্লান্তি, অনিশ্চয়তা বা ভয় থেকে বাঁচতে আমরা বারবার নিজেদের সান্ত্বনা দিই—‘আগামীকাল সব ঠিক হবে।’ কিন্তু সত্যি বলতে, সেই আগামীকাল কখনো আসে না। প্রতিটি আগামীকাল এসে আজ হয়ে যায়, আর আমরা আবারও নতুন এক আগামীকালের অপেক্ষায় থাকি। সময়ের এই নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ যেন আমাদের বোঝাতে চায়—ভবিষ্যৎ কোনো আলাদা সময় নয়, বরং আজকেরই রূপান্তর, আজকেরই পরিণতি।

জীবনের আসল অলৌকিকতা এখানেই যে, আমরা সময়কে ধরতে পারি কেবল আজকের মধ্যে। যে আজকে বাঁচতে জানে, সে-ই ভবিষ্যৎকে গড়তে জানে। একজন কৃষক আজ বীজ বোনে এই বিশ্বাসে যে, কাল ফসল হবে, কিন্তু ফসল জন্মায় না কোনো অলৌকিক আগামীকাল থেকে—বরং আজকের শ্রম, ঘাম ও যত্ন থেকেই। একজন লেখক আজ লিখতে সাহস করেন, চিন্তা করেন, প্রশ্ন তোলেন—তার লেখাই আগামী দিনের সমাজে আলো জ্বালে। একজন প্রেমিক আজ ভালোবাসে, ক্ষমা করে, ফিরে আসে—তার আজকের ভালোবাসাই পরিণত হয় স্থায়ী সম্পর্কের দৃঢ়তায়। সবকিছুর মূলে তাই আজ, যা আমাদের হাতে একমাত্র নিশ্চিত ও বাস্তব সম্পদ।
তবুও মানুষ আজকে অবহেলা করে। আমরা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করি, ভবিষ্যতের জন্য ভয় পাই, ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করি; অথচ সেই ভবিষ্যৎ গঠনের উপাদান—আজ—আমরা অজান্তে নষ্ট করে ফেলি। এই হারানোই মানুষের অস্তিত্বের অন্তর্নিহিত ট্র্যাজেডি। যে দিনটি আমরা বাঁচতে পারতাম, তা পরিকল্পনা ও আশঙ্কার ভারে চাপা পড়ে যায়। জীবনের আসল সৃজনশীলতা, আসল আনন্দ, আসল দায়িত্ব—সবই গড়ে ওঠে এই বর্তমান মুহূর্তের বুকে।
দার্শনিক হাইডেগার বলেছিলেন, মানুষ আসলে ‘অস্তিত্বের অপেক্ষায় থাকা প্রাণী’—সে চিরকাল কিছু একটা ঘটার অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু জীবন কোনো অপেক্ষা নয়; জীবন নিজেই এক অবিরাম ‘এখন’-এর ধারা। রবীন্দ্রনাথও বলেছিলেন, ‘কাল যদি আসে, আজকের হাতে তারই বীজ।’ এই বীজই আমাদের বাঁচার দায়—যদি আজ মাটি না ছোঁও, তবে আগামীকাল কেবলই শূন্য মাঠ।
আমরা যদি আজ ন্যায় হারাই, আগামীকাল ন্যায়বিচার পাব না। আজ যদি ভালোবাসতে না পারি, আগামীকাল সম্পর্ক টিকবে না। আজ যদি দায়িত্ব ভুলে যাই, আগামীকাল ভেঙে পড়বে প্রতিষ্ঠান, সমাজ, রাষ্ট্র—সবকিছু। কারণ আগামীকাল জন্ম নেয় আজকের ভেতর থেকে; এটি আলাদা কোনো সময় নয়, বরং আজকের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি কাজ ও প্রতিটি অনুভূতির ধারাবাহিক ফল।
‘আগামী কাল শুধু আজকের জন্য’—এই বাক্য তাই কেবল সময়চেতনার কথা নয়, এটি এক নৈতিক দর্শন। এটি আমাদের শেখায়, ভবিষ্যতের দায় আজকের হাতে। আজকের অন্যায়, আজকের অবহেলা, আজকের দুর্বলতা—সবই আগামীকালের বিপর্যয়ের বীজ বয়ে আনে। আবার আজকের সততা, আজকের পরিশ্রম, আজকের ভালোবাসা—সবই আগামীকালের আলোর উৎস হয়ে ওঠে।
তাই আজকে বাঁচো গভীরভাবে, সচেতনভাবে, সততার সঙ্গে। আজকেই করো জীবনের কেন্দ্র। মনোযোগ দিয়ে কাজ কর, ভালোবাসো, ক্ষমা কর, সৎ থেক—তবেই আগামীকাল তোমার নিজের হাতে তৈরি হবে। কারণ সত্যিকার অর্থে, আগামীকাল বলে কিছু নেই—শুধু আছে আজ, আর আজের ভেতরেই লুকিয়ে আছে সব আগামীকালের প্রতিশ্রুতি, সব সম্ভাবনা, সব মুক্তি।
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের যাত্রা তাই আসলে একটাই প্রশ্নে এসে ঠেকে—‘আমি কি আজকে বেঁচে আছি, নাকি আগামীকালের জন্য শুধু প্রস্তুতি নিচ্ছি?’
যেদিন মানুষ এই প্রশ্নের সামনে সৎভাবে দাঁড়াতে পারবে, সেদিনই সে বুঝবে—আগামীকাল শুধু আজকের জন্য।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
*লেখক গবেষক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। ইমেইল: [email protected]
এক বিকেলে করিন বসেছিল এক কফি শপে। জানালার বাইরের তুষার গলে পানিতে পরিণত হচ্ছে, আর তার আঙুল কাপের গায়ে স্থির হয়ে আছে অনেকক্ষণ। অপর প্রান্তের মানুষটি নিজের সাফল্যের গল্প বলছে—করিন হালকা হেসে শুনছে, কিন্তু ভেতরে প্রশ্ন জাগে, ‘কেউ কি আজকাল ভালোবাসে, নাকি শুধু নিজেদের প্রমাণ করে?’
মূলত নেতৃত্ব মানে দায়িত্ব, দূরদর্শিতা ও জবাবদিহিতা। একজন নেতা সেই ব্যক্তি যিনি একটি দিকনির্দেশনা স্থির করেন এবং তার ফল বহন করেন। নারীরা প্রতিদিনই এটি করেন—বোর্ডরুম, শ্রেণিকক্ষ, হাসপাতাল, সংসদ কিংবা ঘরে। তবুও তাদের কর্তৃত্বকে প্রায়ই ‘উপহার’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, নেতৃত্ব হিসেবে নয়।
আমি একজন ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে আমার। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বলতেই হয়—বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বেশ হতাশাজনক।
শেষ পর্যন্ত প্লাবন একদিন থেমে গিয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করল—‘যে ভবিষ্যতের জন্য আমি বেঁচে আছি, সেটি কখন আসবে? আমি তো সবসময় ভবিষ্যতের অপেক্ষায় থেকেছি, অথচ আজও সেটি “আগামীকাল”। তাহলে কি আমি আসলে কখনো বাঁচিনি?’