কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে যুবদলের সাংগঠনিক সভাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে ককটেল বিস্ফোরণ, মোটরসাইকেলে আগুন ও দেশি অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়া হয়।

খবর প্রথম আলোর।

বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত উপজেলা সদরের মনোহরগঞ্জ বাজারে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মনোহরগঞ্জে বিএনপির রাজনীতি দুটি পক্ষে বিভক্ত। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম আনোয়ারুল আজিম। অন্য পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষ পরস্পরবিরোধী অবস্থানে আছে। দলীয় নেতা-কর্মীরাও দুই ধারায় বিভক্ত। বর্তমানে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলোর বেশির ভাগই আবুল কালামের অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে।

যুবদলের উপজেলা শাখার নেতা-কর্মীরা জানান, আজ বেলা আড়াইটার দিকে মনোহরগঞ্জ কলেজ মিলনায়তনে যুবদলের উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সভার আয়োজন করে আবুল কালামের অনুসারী নেতা-কর্মীরা। সেখানে যুবদলের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা শাখার বেশ কয়েকজন নেতা অংশ নেয়। আনোয়ারুল আজিমের অনুসারী নেতা-কর্মীরা তাদের প্রতিহত করার ঘোষণা দিলে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় কালামের অনুসারীরা মনোহরগঞ্জ কলেজের সামনে খোদাইভিটা এলাকায় এবং আজিমের অনুসারীরা মনোহরগঞ্জ উত্তর বাজার এলাকায় অবস্থান নেয়। আজিমের অনুসারীরা মিছিল বের করলে একপর্যায়ে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় অন্তত ৫টি মোটরসাইকেলে আগুন ও ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়। পরে সভা সংক্ষিপ্ত করে যুবদলের জেলা শাখার নেতারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় ৩ জন বাসিন্দা বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে দেশি অস্ত্র নিয়ে মহড়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাজারের ব্যবসায়ীরা ভয়ে দোকানপাট বন্ধ করে দেয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আবুল কালাম পক্ষের উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব আনান উল্লাহ চৌধুরী সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্বনির্ধারিত সাংগঠনিক সভাকে পণ্ড করতে তারা আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের সভা সফল হয়েছে। তাদের সঙ্গে দলে অনুপ্রবেশকারী বহিরাগত সন্ত্রাসীরাও ছিল। আমাদের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। অনেকের মোটরসাইকেলে আগুন ও ভাঙচুর করা হয়েছে। আমরা এসব নিয়ে বসেছি। পূর্ণাঙ্গ তথ্য পরে জানানো হবে।’

আজিমের অনুসারী যুবদলের উপজেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল আলম (বাচ্চু) বলেন, ‘মনোহরগঞ্জে বিএনপির অধিকাংশ নেতা-কর্মী আজিম ভাইয়ের সঙ্গে আছেন। জেলা যুবদলের নেতাদের উভয় পক্ষকে নিয়ে সাংগঠনিক সভা করার কথা থাকলেও একপর্যায়ে আমাদের নিষেধ করে দেন। তারা যাদের নিয়ে সভা করতে আসেন, বেশির ভাগই হাইব্রিড। দলের দুঃসময়ে তারা কেউ মাঠে ছিলেন না। তাই নেতা-কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে মিছিল বের করলে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার চেষ্টা করেন কালাম গ্রুপের লোকেরা। তবে শেষ পর্যন্ত আমাদের নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে তাদের সভা পণ্ড হয়ে যায়। এ ঘটনায় আমাদের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।’

জানতে চাইলে যুবদলের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা শাখার সদস্যসচিব ফরিদ উদ্দিন (শিবলু) প্রথম আলোকে বলেন, সভা পণ্ড হয়নি, সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। তাদের সাংগঠনিক দলের সদস্যদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মনোহরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপুল চন্দ্র দে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বলেন, এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের উত্তেজনার খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখে। এ ঘটনায় এখনো কোনো পক্ষ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।