logo
খবর

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১: নিরাপত্তা পরিষদে ভুট্টোর নাটক

বিডিজেন ডেস্ক
বিডিজেন ডেস্ক১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Copied!
১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১: নিরাপত্তা পরিষদে ভুট্টোর নাটক
জাতিসংঘে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো, ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১। ছবি: সংগৃহীত

নিরাপত্তা পরিষদে ভুট্টোর নাটক

পাকিস্তানের কোয়ালিশন সরকারের সহকারী প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রধান ও জাতিসংঘে পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো এদিন নাটকীয়ভাবে সব কয়টি খসড়া প্রস্তাব ছিঁড়ে সদলবল নিরাপত্তা পরিষদ থেকে বেরিয়ে যান। এর আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়।

আগের দিন নিরাপত্তা পরিষদের স্বল্পস্থায়ী এক বৈঠকে পোল্যান্ড একটি প্রস্তাব পেশ করে। প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। এ ছাড়া শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির আদেশ দিতেও বলা হয়।

আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি জেনেভা থেকে বিবৃতিতে জানায়, লড়াইয়ে অংশ নেননি, এমন যে কারও ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আশ্রয় নেওয়ার অধিকার আছে।

বাংলাদেশ সরকার একতরফাভাবে ঘোষণা করে যে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য না হলেও এর সনদ এবং জেনেভা চুক্তিকে সম্মান দেবে। মানবিক অধিকারসংবলিত সনদকেও বাংলাদেশ পূর্ণ মর্যাদা দিচ্ছে।

সপ্তম নৌবহর মোকাবিলায় সোভিয়েত রণতরি

সপ্তম নৌবহর মোকাবিলায় সোভিয়েত রণতরিবাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ১৫ ডিসেম্বর পারমাণবিক শক্তিচালিত বিমানবাহী জাহাজ এন্টারপ্রাইজের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরের একাংশ বঙ্গোপসাগরে এসে হাজির হয়। বহরে ছিল আক্রমণক্ষম হেলিকপ্টারবাহী জাহাজ ত্রিপোলিসহ কয়েকটি রণতরি। ত্রিপোলিতে ছিল ২৩টি হেলিকপ্টার, অন্য জাহাজে ছিল ডেস্ট্রয়ার এবং উপকূলে অবতরণের উপযোগী জলযান।

সপ্তম নৌবহরের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এদিন ২০টি সোভিয়েত রণতরি ভারত মহাসাগরে এসে জড়ো হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্ররা বলেন, ৯ ডিসেম্বর জাপানের দক্ষিণতম প্রান্ত এবং কোরিয়া উপদ্বীপের মধ্যবর্তী সুসিমা প্রণালির ভেতর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রবাহী একটি সোভিয়েত ফ্রিগেড এবং ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণক্ষম ডুবোজাহাজও বঙ্গোপসাগরে রওনা দিয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ভারতীয় নৌবাহিনীর সমর্থনে সোভিয়েত রণতরি ভারত মহাসাগরে অবস্থান নিলে সপ্তম নৌবহর তার দিক পরিবর্তন করে।
ভারতের এক সরকারি মুখপাত্র বলেন, প্রথমে বলা হয়েছিল মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধার করতে নৌবহর আসছে। তবে এখন বলা হচ্ছে, রক্তপাতের আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় পাকিস্তানি বাহিনী ও বিহারিদের অপসারণের জন্যই ওই নৌবহর আসছে।

মানেকশর নির্দেশ, নিয়াজির আরজি

ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল মানেকশ ১৫ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের জন্য শেষবারের মতো নির্দেশ দেন। এর আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজি বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল হার্বাট ডি স্পিভাকের মাধ্যমে দিল্লির যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে যুদ্ধবিরতির আরজি পাঠান। নিয়াজির বার্তায় সাক্ষী হিসেবে সই করেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। দিল্লির যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সেটি ভারতের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মানেকশের কাছে পাঠায়। জেনারেল মানেকশ সঙ্গে সঙ্গে বিকেল ৫টা থেকে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকায় বিমান হামলা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের মাধ্যমে তাঁর উত্তরে মানেকশ যুদ্ধবিরতির বদলে আত্মসমর্পণ করতে বলেন। তিনি জানান, বিমানবাহিনীর আক্রমণ বন্ধ থাকলেও স্থলবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর অভিযান চলবে। সকাল ৯টার মধ্যে শর্তহীন আত্মসমর্পণ না করলে আবার বিমান হামলা শুরু হবে। তারা আত্মসমর্পণ করলে জেনেভা কনভেনশনের পূর্ণ সুযোগ প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।

ঢাকার উপকণ্ঠে যৌথ বাহিনী

মুক্তিবাহিনী ও মিত্র ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গড়া যৌথ বাহিনী এদিন ঢাকার দুই মাইলের মধ্যে বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে গোলাবর্ষণ শুরু করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী দিনভর পাল্টা জবাব দেয়। মেঘনার দক্ষিণ তীরে দাউদকান্দি থেকে যৌথ বাহিনী নদী পেরিয়ে এসে চারদিক থেকে ঢাকা নগরীকে এঁটে ধরে।

মুক্তিবাহিনী সাভার মুক্ত করলে পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটে এসে ঢাকার প্রবেশপথ মিরপুর সেতুতে প্রতিবন্ধকতা গড়ে তোলে। রাতে ভারতীয় বাহিনী সাভার থেকে ঢাকায় যাত্রা শুরু করে। কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে টাঙ্গাইল থেকে আসা একটি দল পথে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়। দিবাগত রাত দুইটার দিকে মীরপুর সেতুর কাছে যৌথ বাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের মুখোমুখি হয়। তারা সেতু দখলের জন্য প্রথমে কমান্ডো পদ্ধতিতে আক্রমণ শুরু করে। ওপাশ থেকে পাকিস্তানি বাহিনী মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ করতে থাকে। যৌথ বাহিনীর আরেকটি দল এসে পশ্চিম দিক থেকে আক্রমণ চালায়। সারারাত প্রচণ্ড যুদ্ধ চলে।

ঢাকার বাসাবোতে মুক্তিবাহিনীর এস ফোর্সের মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর তীব্র আক্রমণ শুরু করে। যৌথ বাহিনীর আরেক দল চট্টগ্রামের পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দূরে এসে পৌঁছায়।

আলবদর বাহিনীর সদস্যরা বিকেলে হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফজলে রাব্বিকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ভারত, ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১

আরও পড়ুন

সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাবে মালয়েশিয়া: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাবে মালয়েশিয়া: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

মালয়েশিয়ায় উগ্রবাদী মতাদর্শ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক ৩৬ বাংলাদেশির মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তিকে ফেরত পাঠানো হতে পারে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ঢাকায় এ কথা বলেন।

১৫ ঘণ্টা আগে

ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যায় ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যায় ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যা মামলায় ৩ অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এ ছাড়া, মামলা থেকে খালাস পেয়েছে ৪ জন।

১ দিন আগে

বিটিআরসির নতুন নীতিমালা নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ

বিটিআরসির নতুন নীতিমালা নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ

বিটিআরসির নতুন নীতিমালা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সবার সঙ্গে আলোচনা করে নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

১ দিন আগে

গুমে সেনাসদস্যদের সংশ্লিষ্টতা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: সেনাসদর

গুমে সেনাসদস্যদের সংশ্লিষ্টতা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: সেনাসদর

গুমের ঘটনায় সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সেনাসদর। সেনাবাহিনীতে থাকা সদস্যদের মধ্যে যারা বিভিন্ন সংস্থায় ডেপুটেশনে কর্মরত, তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ উঠেছে।

১ দিন আগে