হামিদ মোহাম্মদ, যুক্তরাজ্য
লন্ডনে বালাগঞ্জ এলাকার এক কমিউনিটি সংগঠনের সভায় একজন তাঁর বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল কামাল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অংশ। ওই সভায় আজিজুল কামালও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বক্তার কথা শুনে শিহরিত হয়ে ওঠেন।
পরবর্তীতে আজিজুল কামাল এ ঘটনাটি আমাকে বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলতে বলতে অনেকটা আন্দোলিত হয়ে। আরও বলেছিলেন, তাঁর সম্পর্কে এ রকম মূল্যায়নের কথা তিনি ওই প্রথম শোনেন। তিনি নিজেও ভাবেননি নিজেকে নিয়ে এভাবে। তাঁর চোখে তখন আনন্দের ঢেউ, মুখে বিজয়ের হাসি।
একটু থেমে তিনি আমাকে বললেন, যারা মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, তারা অনেকেই আলোচনার বাইরে রয়ে গেছেন। আমার চেয়ে আরও সাহসী বীরযোদ্ধার কাহিনি শুনুন। তারপর তিনি বলতে লাগলেন ছোটলেখা চাবাগানের যুদ্ধের বীরত্বপূর্ণ কাহিনি।
ছোটলেখা চাবাগানে দুই দফা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল মাত্র এক দিনের ব্যবধানে। আজিজুল কামাল তারিখ মনে করতে পারলেন না। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে ঘটেছিল এ বীরত্বপূর্ণ এ অভিযানের ঘটনা। তুমুল যুদ্ধের পর চাবাগান দখল করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
আজিজুল কামাল এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন মাত্র ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে। যুদ্ধে দুজন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং অনেক আহত হয়। বাকিরা পালিয়ে যাওয়ার সময় অস্ত্রশস্ত্র ফেলে যায়। এ যুদ্ধে মেশিনগানসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়েছিল। এর একদিন একরাত পরেই পাকিস্তানি সেনারা দ্বিগুণ শক্তি বৃদ্ধি করে পাল্টা আক্রমণ চালায়।
আজিজুল বললেন, মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে যুদ্ধের স্ট্রাটেজি ছিল ‘হিট অ্যান্ড রান’। কিন্তু অক্টোবর থেকে পলিসি ঠিক করা হয় ‘হিট অ্যান্ড অ্যাডভান্স’। সুতরাং চাবাগান দখলের পর মুক্তিবাহিনী দখলকৃত এলাকায় অবস্থান করছিল এবং দখল টিকিয়ে রাখতে মুক্তিবাহিনীও শক্তিবৃদ্ধি করে। কমান্ডার সালামের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের ২২ জনের আরেকটি দল তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। তবে সালাম তাঁর দলকে নিয়ে মূল দলের বাম পাশে অবস্থান নেন।
পরদিন ভোর ৫টা হবে তখন। পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ চালায় মর্টার ও ভারী অস্ত্রের সাহায্যে। এক পর্যায়ে সকাল ৭টার দিকে আজিজুল কামালের দল দেখলেন, তাদের পেছন থেকে গুলি আসছে। তিনি ও তাঁর দলের মুক্তিযোদ্ধারা মনে করলেন, বোধহয় তাদের অপর দল অর্থাৎ সালামের দল হয়তো ভুলক্রমে তাদের পেছনে এসে পড়েছে।
ওয়ারলেসে যোগাযোগ করে আজিজুলের দল জানল, না মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দল তাদের পেছনে আসেনি। তারাও জানাল, তাদেরও পেছন থেকে গুলি আসছে। এতে তাদের আর সন্দেহ রইল না যে, তারা দুই দলই পাকিস্তানি সেনা দ্বারা বেষ্টিত হয়ে পড়েছেন।
এদিকে পেছনে পাকিস্তানি সেনা চলে আসায় মুক্তিযোদ্ধাদের নিজেদের অস্ত্রের গোলাবারুদের জোগানও বন্ধ হয়ে যায়। দুটি দলেরই একই অবস্থা। হাতের মজুদ গোলাবারুদ শেষ হলে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে পড়া ছাড়া তাদের আর কোনো পথ খোলা রইল না। এ সময় আজিজুল কামালের দলের মজির উদ্দিন উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে বললেন, তিনি ও আমান উদ্দিন ক্রলিং করে পাকিস্তানি সেনাদের পেছনে গিয়ে তাদের আক্রমণ করবেন। এটা শুধু বুদ্ধির কথা নয়, নিশ্চিত মৃত্যু ঝুঁকি।
আজিজুল কামালের অনুমতি নিয়ে মজির উদ্দিন ও আমান উদ্দিন তাদের সাহসী পদক্ষেপ নিলেন। মজির উদ্দিনের বর্ণনানুযায়ী আজিজুল কামাল বললেন, ক্রলিং করে তারা দুজন পাকিস্তানি সেনাদের পেছনে বাংকারের চার–পাঁচ হাত দূরে পৌঁছে যান। এরপর তারা দুজনে চুড়ান্ত অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। মজির উদ্দিন তাদের পূর্ব প্রস্তুতি অনুযায়ী আমান উদ্দিনকে ইশারা দিলেন মর্টার শেল সরবরাহকারী পাকিস্তানি সেনাকে গুলি করার। আমান উদ্দিন পলকেই ওই পাকিস্তানি সেনার মাথায় গুলি করে তাকে হত্যা করেন। সঙ্গে সঙ্গেই মজির উদ্দিন লাফ দিয়ে জাপটে ধরেন মর্টারের শেল ছোড়ারত অপর পাকিস্তানিকে।
বিশালদেহী ওই পাকিস্তানিকে কাবু করা মজির উদ্দিনের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। ধস্তাধস্তির সময় আমান উদ্দিন ওই পাকিস্তানির মাথায় পিস্তল ধরে সারেন্ডার করার আহবান জানান। পাকিস্তানি সেনা আর উপায়ন্তর না দেখে দুই হাত তুলে সারেন্ডার করে। আটক পাকিস্তানি লেফটেন্যান্ট ছিল। নাম এম এইচ আনসারি।
এরপর দখলকৃত মর্টার দিয়ে পেছনে থাকা মূল পাকিস্তানি বাহিনির দিকেই পাল্টা আক্রমণ চালান মজির উদ্দিন। মর্টার আক্রমণের ফলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই পাকিস্তানি সেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে থাকে। মূল মর্টার ইউনিট হাতছাড়া হওয়ায় টিকতে না পেরে অস্ত্রশস্ত্রসহ কনভয় ফেলে অবশিষ্ট পাকিস্তানি সেনারা দৌড়ে পালিয়ে যায়।
মজির উদ্দিন ও আমান উদ্দিন ‘জয়বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে উল্লাস করতে থাকলে আজিজুল কামাল নিজের দল নিয়ে এবং সালাম কমান্ডার তাঁর দলকে নিয়ে অগ্রসর হয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ধাওয়া করেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ছোটলেখা চাবাগান পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে মুক্তিযোদ্ধাদের। পাকিস্তানি সেনাদের ফেলে যাওয়া অস্ত্রশস্ত্র তাদেরই ফেলে যাওয়া বড় লরি বোঝাই করে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। পাকিস্তানি সেনা সদস্য আনসারিকে ক্যাম্পে সোপর্দ করেন অধিনায়ক আজিজুল কামাল।
এ বিজয়ে উল্লসিত হয়ে ক্যাম্পের সকল মুক্তিযোদ্ধারা আনন্দে মেতে ওঠেন এবং আনন্দ উচ্ছাসে আপ্লুত অনেকেই মজির উদ্দিন ও আমান উদ্দিনকে তাদের বীরত্বে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মজির উদ্দিন ও আমান যে সাহসী কাজটি করেন তা শুধু বীরত্বপূর্ণ নয়, আজিজুল কামালসহ তাদের দলের ১১ জন এবং সালাম কমান্ডারের দলের ২২ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রাণ রক্ষা করতে পেরেছেন জান বাজি রেখে। আর তা সম্ভব হয়েছে তাদের দুজনের সাহসিকতার জন্য। দুটি বিষয়ই বীরত্ব ও কৃতিত্বপূর্ণ। আজিজুল কামাল কথা বলতে বলতে আক্ষেপ করে বললেন, মুক্তিযুদ্ধের পর এই অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা মজির ও আমান কোনো খেতাব পাননি বা সঠিকভাবে মূল্যায়িত হননি। এ রকম শত শত মুক্তিযোদ্ধা অবহেলার শিকার ও হতদরিদ্র্র অবস্থায় পরিবার পরিজনকে নিয়ে কষ্টে স্বাধীন দেশেই দিনযাপন করছে। তাদের সন্তানেরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ বেঁচে থাকার প্রকৃত অধিকার হারা, অবহেলিত এখনো। এই বীরদের চোখে যে স্বপ্ন ও বুকে যে সাহস ছিল তা আর নেই। তাদের সেই অসীম সাহসী নদী যেন শুকিয়ে গেছে।
বিজয়ের মাসে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল কামাল এই কথাগুলো বলতে বলতে নিজেকে দৃঢ় করে বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্ম দেশকে গড়ে তুলবেই, আমি আশাবাদী এরা মেধাবী ও সাহসী এবং রক্তের ঋণ তারা শোধ করবেই।
—হামিদ মোহাম্মদ, লন্ডন, যুক্তরাজ্য
লন্ডনে বালাগঞ্জ এলাকার এক কমিউনিটি সংগঠনের সভায় একজন তাঁর বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল কামাল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অংশ। ওই সভায় আজিজুল কামালও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বক্তার কথা শুনে শিহরিত হয়ে ওঠেন।
পরবর্তীতে আজিজুল কামাল এ ঘটনাটি আমাকে বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলতে বলতে অনেকটা আন্দোলিত হয়ে। আরও বলেছিলেন, তাঁর সম্পর্কে এ রকম মূল্যায়নের কথা তিনি ওই প্রথম শোনেন। তিনি নিজেও ভাবেননি নিজেকে নিয়ে এভাবে। তাঁর চোখে তখন আনন্দের ঢেউ, মুখে বিজয়ের হাসি।
একটু থেমে তিনি আমাকে বললেন, যারা মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, তারা অনেকেই আলোচনার বাইরে রয়ে গেছেন। আমার চেয়ে আরও সাহসী বীরযোদ্ধার কাহিনি শুনুন। তারপর তিনি বলতে লাগলেন ছোটলেখা চাবাগানের যুদ্ধের বীরত্বপূর্ণ কাহিনি।
ছোটলেখা চাবাগানে দুই দফা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল মাত্র এক দিনের ব্যবধানে। আজিজুল কামাল তারিখ মনে করতে পারলেন না। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে ঘটেছিল এ বীরত্বপূর্ণ এ অভিযানের ঘটনা। তুমুল যুদ্ধের পর চাবাগান দখল করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
আজিজুল কামাল এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন মাত্র ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে। যুদ্ধে দুজন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং অনেক আহত হয়। বাকিরা পালিয়ে যাওয়ার সময় অস্ত্রশস্ত্র ফেলে যায়। এ যুদ্ধে মেশিনগানসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়েছিল। এর একদিন একরাত পরেই পাকিস্তানি সেনারা দ্বিগুণ শক্তি বৃদ্ধি করে পাল্টা আক্রমণ চালায়।
আজিজুল বললেন, মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে যুদ্ধের স্ট্রাটেজি ছিল ‘হিট অ্যান্ড রান’। কিন্তু অক্টোবর থেকে পলিসি ঠিক করা হয় ‘হিট অ্যান্ড অ্যাডভান্স’। সুতরাং চাবাগান দখলের পর মুক্তিবাহিনী দখলকৃত এলাকায় অবস্থান করছিল এবং দখল টিকিয়ে রাখতে মুক্তিবাহিনীও শক্তিবৃদ্ধি করে। কমান্ডার সালামের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের ২২ জনের আরেকটি দল তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। তবে সালাম তাঁর দলকে নিয়ে মূল দলের বাম পাশে অবস্থান নেন।
পরদিন ভোর ৫টা হবে তখন। পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ চালায় মর্টার ও ভারী অস্ত্রের সাহায্যে। এক পর্যায়ে সকাল ৭টার দিকে আজিজুল কামালের দল দেখলেন, তাদের পেছন থেকে গুলি আসছে। তিনি ও তাঁর দলের মুক্তিযোদ্ধারা মনে করলেন, বোধহয় তাদের অপর দল অর্থাৎ সালামের দল হয়তো ভুলক্রমে তাদের পেছনে এসে পড়েছে।
ওয়ারলেসে যোগাযোগ করে আজিজুলের দল জানল, না মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দল তাদের পেছনে আসেনি। তারাও জানাল, তাদেরও পেছন থেকে গুলি আসছে। এতে তাদের আর সন্দেহ রইল না যে, তারা দুই দলই পাকিস্তানি সেনা দ্বারা বেষ্টিত হয়ে পড়েছেন।
এদিকে পেছনে পাকিস্তানি সেনা চলে আসায় মুক্তিযোদ্ধাদের নিজেদের অস্ত্রের গোলাবারুদের জোগানও বন্ধ হয়ে যায়। দুটি দলেরই একই অবস্থা। হাতের মজুদ গোলাবারুদ শেষ হলে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে পড়া ছাড়া তাদের আর কোনো পথ খোলা রইল না। এ সময় আজিজুল কামালের দলের মজির উদ্দিন উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে বললেন, তিনি ও আমান উদ্দিন ক্রলিং করে পাকিস্তানি সেনাদের পেছনে গিয়ে তাদের আক্রমণ করবেন। এটা শুধু বুদ্ধির কথা নয়, নিশ্চিত মৃত্যু ঝুঁকি।
আজিজুল কামালের অনুমতি নিয়ে মজির উদ্দিন ও আমান উদ্দিন তাদের সাহসী পদক্ষেপ নিলেন। মজির উদ্দিনের বর্ণনানুযায়ী আজিজুল কামাল বললেন, ক্রলিং করে তারা দুজন পাকিস্তানি সেনাদের পেছনে বাংকারের চার–পাঁচ হাত দূরে পৌঁছে যান। এরপর তারা দুজনে চুড়ান্ত অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। মজির উদ্দিন তাদের পূর্ব প্রস্তুতি অনুযায়ী আমান উদ্দিনকে ইশারা দিলেন মর্টার শেল সরবরাহকারী পাকিস্তানি সেনাকে গুলি করার। আমান উদ্দিন পলকেই ওই পাকিস্তানি সেনার মাথায় গুলি করে তাকে হত্যা করেন। সঙ্গে সঙ্গেই মজির উদ্দিন লাফ দিয়ে জাপটে ধরেন মর্টারের শেল ছোড়ারত অপর পাকিস্তানিকে।
বিশালদেহী ওই পাকিস্তানিকে কাবু করা মজির উদ্দিনের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। ধস্তাধস্তির সময় আমান উদ্দিন ওই পাকিস্তানির মাথায় পিস্তল ধরে সারেন্ডার করার আহবান জানান। পাকিস্তানি সেনা আর উপায়ন্তর না দেখে দুই হাত তুলে সারেন্ডার করে। আটক পাকিস্তানি লেফটেন্যান্ট ছিল। নাম এম এইচ আনসারি।
এরপর দখলকৃত মর্টার দিয়ে পেছনে থাকা মূল পাকিস্তানি বাহিনির দিকেই পাল্টা আক্রমণ চালান মজির উদ্দিন। মর্টার আক্রমণের ফলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই পাকিস্তানি সেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে থাকে। মূল মর্টার ইউনিট হাতছাড়া হওয়ায় টিকতে না পেরে অস্ত্রশস্ত্রসহ কনভয় ফেলে অবশিষ্ট পাকিস্তানি সেনারা দৌড়ে পালিয়ে যায়।
মজির উদ্দিন ও আমান উদ্দিন ‘জয়বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে উল্লাস করতে থাকলে আজিজুল কামাল নিজের দল নিয়ে এবং সালাম কমান্ডার তাঁর দলকে নিয়ে অগ্রসর হয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ধাওয়া করেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ছোটলেখা চাবাগান পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে মুক্তিযোদ্ধাদের। পাকিস্তানি সেনাদের ফেলে যাওয়া অস্ত্রশস্ত্র তাদেরই ফেলে যাওয়া বড় লরি বোঝাই করে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। পাকিস্তানি সেনা সদস্য আনসারিকে ক্যাম্পে সোপর্দ করেন অধিনায়ক আজিজুল কামাল।
এ বিজয়ে উল্লসিত হয়ে ক্যাম্পের সকল মুক্তিযোদ্ধারা আনন্দে মেতে ওঠেন এবং আনন্দ উচ্ছাসে আপ্লুত অনেকেই মজির উদ্দিন ও আমান উদ্দিনকে তাদের বীরত্বে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মজির উদ্দিন ও আমান যে সাহসী কাজটি করেন তা শুধু বীরত্বপূর্ণ নয়, আজিজুল কামালসহ তাদের দলের ১১ জন এবং সালাম কমান্ডারের দলের ২২ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রাণ রক্ষা করতে পেরেছেন জান বাজি রেখে। আর তা সম্ভব হয়েছে তাদের দুজনের সাহসিকতার জন্য। দুটি বিষয়ই বীরত্ব ও কৃতিত্বপূর্ণ। আজিজুল কামাল কথা বলতে বলতে আক্ষেপ করে বললেন, মুক্তিযুদ্ধের পর এই অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা মজির ও আমান কোনো খেতাব পাননি বা সঠিকভাবে মূল্যায়িত হননি। এ রকম শত শত মুক্তিযোদ্ধা অবহেলার শিকার ও হতদরিদ্র্র অবস্থায় পরিবার পরিজনকে নিয়ে কষ্টে স্বাধীন দেশেই দিনযাপন করছে। তাদের সন্তানেরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ বেঁচে থাকার প্রকৃত অধিকার হারা, অবহেলিত এখনো। এই বীরদের চোখে যে স্বপ্ন ও বুকে যে সাহস ছিল তা আর নেই। তাদের সেই অসীম সাহসী নদী যেন শুকিয়ে গেছে।
বিজয়ের মাসে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল কামাল এই কথাগুলো বলতে বলতে নিজেকে দৃঢ় করে বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্ম দেশকে গড়ে তুলবেই, আমি আশাবাদী এরা মেধাবী ও সাহসী এবং রক্তের ঋণ তারা শোধ করবেই।
—হামিদ মোহাম্মদ, লন্ডন, যুক্তরাজ্য
বন্ধ ঘোষণা করা ২টি কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী এলাকায় বিক্ষোভ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শ্রমিকেরা।
যোগ্যতার চাইতে প্রাপ্তি বেশি হয়ে গেলে তখন সে লাগামহীন হয়ে ওঠে। এ অনেকটা মাটি ও খুঁটির মতো অবস্থা। খুঁটি শক্ত না হলে ঘর নড়বড়ে হবে আবার মাটি উর্বর না হলে খাওয়াপড়া জুটবে না। মানুষের চিন্তার সমৃদ্ধির জন্য পড়াশোনা কিংবা জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই।
পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে থাকা সুস্পষ্ট লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।
কথাসাহিত্যিক ও গবেষক সিরাজুল ইসলাম মুনির সমকালীন বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে সুপরিচিত নাম। তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির সমৃদ্ধ বহুমাত্রিকতা সৃষ্টি করেছে শক্তিশালী স্বতন্ত্র অবস্থান। সাবলীল শব্দ ব্যঞ্জনার প্রকাশে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন জীবন, দেশাত্মবোধ বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন মাত্রাকে।