logo
খবর

রাশিয়ায় গিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ছেলেদের খুঁজছে বাংলাদেশি পরিবারগুলো

বিডিজেন ডেস্ক
বিডিজেন ডেস্ক১২ এপ্রিল ২০২৫
Copied!
রাশিয়ায় গিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ছেলেদের খুঁজছে বাংলাদেশি পরিবারগুলো
ইউক্রেনের মারিউপোল অঞ্চলে যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ সেনারা। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

কাজের জন্য মরিয়া বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি তরুণের অভিযোগ, রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োজিত করে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে ২২ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যুর খবর সামনে আসায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছে।

খবর বার্তা সংস্থা এএফপির।

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় বাংলাদেশি দূতাবাস জানিয়েছে, ডজনখানেক পরিবার তাদের ছেলেদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সবার একই অভিযোগ, রুশ সেনাবাহিনীতে যুক্ত করে এই ছেলেদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

মোহাম্মদ আকরাম হোসেন নামের এক ব্যক্তি দাবি করেছেন, তিনি ও তাঁর শ্যালক বিদেশে কর্মী সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি তাঁদের সাইপ্রাসে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু পরে রাশিয়ায় পাঠানো হয়। আকরাম বলেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছে যাব, এটা আমরা জানতাম না।’

রাশিয়া থেকে দেশে ফিরতে সক্ষম হওয়া ২৬ বছরের এক তরুণ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘বিদেশে কর্মী পাঠানোর কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠান বলেছিল, শুধু রাশিয়ার জন্য কাজের ভিসা পাওয়া যেতে পারে। তাই আমরা যেতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু আমরা কখনো কল্পনা করিনি যে এভাবে আমাদের (যুদ্ধক্ষেত্রে) ফেলে যাওয়া হবে।’

বাংলাদেশে বেকারত্বের হার আগে থেকেই বেশি। সরকারকে হটাতে গত বছর অনুষ্ঠিত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অর্থনীতিও ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এতে কাজের খোঁজে বিদেশে যেতে আগ্রহী ব্যক্তিদের সংখ্যা বেড়েছে।

এরই মধ্যে গত ২৭ মার্চ খবর আসে, রুশ বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে ২২ বছরের মোহাম্মদ ইয়াসিন শেখ নিহত হয়েছেন। তার পরিবার সংবাদমাধ্যমকে এ কথা জানায়। এরপরই রাশিয়ায় আসা বাংলাদেশিদের উদ্বিগ্ন স্বজনেরা মস্কোয় বাংলাদেশি কূটনীতিকদের কাছে বার্তা পাঠাতে শুরু করেন।

ইয়াসিনের স্বজন আবুল হাশেম বলেন, ‘মার্চের শেষ দিকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি চলার সময় ইয়াসিনের এক বন্ধু বাড়িতে ফোন করেন। তিনি ইয়াসিনের মৃত্যুর খবর দেন। পরে আমরা রুশ কমান্ডারের কাছ থেকেও ফোন পাই।’

আবুল হাশেম এএফপিকে আরও বলেন, ‘ইয়াসিনের ওই বন্ধু বাংলাদেশি। তিনিও রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছেন।’

মরদেহের অপেক্ষা

ইয়াসিনের পরিবার জানায়, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন ইয়াসিন। ওই সময় দালালের মাধ্যমে বিদেশে যেতে বাড়ি থেকে টাকা নিয়েছিলেন তিনি। দালাল বলেছিলেন, রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে একটি চীনা প্রতিষ্ঠানে বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির (ইলেকট্রিশিয়ান) কাজ দেওয়া হবে তাকে। কিন্তু ডিসেম্বরে তাকে রুশ বাহিনীতে যোগ দিতে হয়।

এ বিষয়ে আবুল হাশেম বলেন, ‘আমরা ওকে (ইয়াসিন) পাঠানোর জন্য অনেক টাকা খরচ করেছি। আর এখন আমরা ওর মরদেহ পাওয়ার অপেক্ষা করছি। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি, যাতে ইয়াসিনের মা শেষবারের জন্য ছেলের মুখটা দেখতে পারেন।’

ইয়াসিনের পরিবারের এমন দাবি এএফপির পক্ষ থেকে আলাদা করে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে মস্কোয় বাংলাদেশের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ফরহাদ হোসেন জানান, (বাংলাদেশি) হতাহত হওয়া নিয়ে খবর দূতাবাস জেনেছে।

ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘ইয়াসিন শেখের বিষয়ে আমরা কয়েক দিন আগে জেনেছি। আমরা বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’ দূতাবাস ইয়াসিনের মৃত্যু কিংবা অন্য কোনো বাংলাদেশির হতাহত হওয়ার ঘটনার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি। দূতাবাস মস্কোর কাছ থেকে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া পাওয়ার অপেক্ষায় আছে বলেও জানান তিনি।

তবে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশিরা যে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, সেটা নিশ্চিত করেছেন ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘ছেলেদের বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জানার প্রত্যাশায় আমরা বাবা-মায়েদের কাছ থেকে অনুরোধ পাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা ডজনখানেক অনুরোধের জবাব দিয়েছি।’

সংখ্যা নিয়ে অস্পষ্টতা

ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে রুশ বাহিনী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। মস্কোর পক্ষ থেকে সেনা সংগ্রহে বিশ্বজুড়ে অনুসন্ধান তৎপরতা চালাতেও দেখা গেছে। তবে যুদ্ধে কতজন বিদেশি সেনা অংশ নিয়েছে, কতজন যুদ্ধবন্দী হিসেবে আটক আছে, সেসব বিষয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন—কেউই স্পষ্ট করে কিছুই জানায়নি।

শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ থেকে সেনা সংগ্রহ করেছে মস্কো। মূলত কাজ জুটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের রাশিয়ায় নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রতিশ্রুত কাজ না দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে সেনাবাহিনীতে। পাঠানো হয়েছে ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে।

ফরহাদ হোসেন এএফপিকে বলেন, রুশ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে মস্কোর পক্ষে যারা লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন, তারা সবাই চুক্তিতে সই করার পর যুদ্ধক্ষেত্রে গেছে। তারা বেতনভুক্ত ও যুদ্ধের নিয়মে পরিচালিত।

তবে ঠিক কত বাংলাদেশি তরুণ রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়ছে, সেটা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেননি ফরহাদ হোসেন। যদিও বাংলাদেশের একটি সংবাদপত্র সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, সংখ্যাটি শতাধিক হবে।

পালিয়ে দেশে ফেরা

ঢাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এসপি মুস্তাফিজুর রহমান জানান, মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একজন বাংলাদেশি নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ–সংক্রান্ত আরও ৬ মামলার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।

মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, অন্য অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলছে। রাশিয়ায় মানবপাচারে সক্রিয় থাকা চক্রের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশকে প্রথম সতর্ক করা ব্যক্তিদের একজন আকরাম হোসেন। তিনি নিজেকে রুশ সেনাবাহিনী থেকে পালিয়া আসা ব্যক্তি হিসেবে দাবি করে বলেন, পাচারকারীরা তাকে রাশিয়ায় পাঠিয়েছিল।

আকরাম জানান, ১০ জন বাংলাদেশির একটা ছোট্ট দল ছিল তাদের। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তাদের ওমরাহ ভিসায় আগে সৌদি আরবে নেওয়া হয়। কয়েক সপ্তাহ সেখানে রাখার পর রাশিয়ায় উড়িয়ে নেওয়া হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর রুশ ভাষায় লেখা একটি চুক্তিপত্র দেওয়া হয় তাকে।

এই বাংলাদেশি বলেন, তিনি রুশ ভাষা জানেন না। তাই চুক্তিপত্রে কী লেখা ছিল, সেটি বুঝতে পারেননি। তবে সই করে দিয়েছিলেন।

এরপর সেন্ট পিটার্সবার্গ শহর থেকে তাদের বাসে করে একটি সেনা ক্যাম্পে নেওয়া হয়। সেখানে এক রাত রাখা হয় তাদের, জানান আকরাম। তিনি বলেন, পরদিন সকালে তাদের কয়েকজনকে সামরিক ইউনিফর্ম দেওয়া হয়। সেটি পরার পর তাদের প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

তবে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার আগে সেনেগালের কয়েকজনের সঙ্গে ক্যাম্প থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন আকরাম। পরে অনেক কষ্টে আকাশপথে বাড়ি (বাংলাদেশে) ফিরে আসেন।

দেশে ফেরার আকুতি

আকরাম বলেন, ‘কয়েক হাজার ডলার খরচ করে তবেই আমি দেশে ফিরেছি। যদিও আমার শ্যালক এখনো রাশিয়ায় রয়ে গেছে। সেখানে সে রুশ সেনাবাহিনীতে আছে।’

আকরামের শ্যালক নিয়মিত বাড়িতে ফোন করেন। যোগাযোগ রাখেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে পরিবারকে অনুরোধ জানান, এমনটাই বলছিলেন রাশিয়াফেরত আকরাম।

আরও পড়ুন

জুলাই সনদ কখনোই সংবিধানের ওপর প্রাধান্য পেতে পারে না: গণফোরাম

জুলাই সনদ কখনোই সংবিধানের ওপর প্রাধান্য পেতে পারে না: গণফোরাম

জুলাই সনদ একটি রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল। এই রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল কখনোই সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য পেতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় আপত্তির একটি জায়গা।’

৬ ঘণ্টা আগে

আসনভিত্তিক বা সংখ্যানুপাতিক কোনোটিই একেবারে নিখুঁত নয়: বদিউল আলম মজুমদার

আসনভিত্তিক বা সংখ্যানুপাতিক কোনোটিই একেবারে নিখুঁত নয়: বদিউল আলম মজুমদার

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তারা কমিশনের পক্ষ থেকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব করেছেন। এর মধ্যে নিম্নকক্ষ হবে বর্তমান আসনভিত্তিক। আর উচ্চকক্ষ হবে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর)। সংবিধান সংস্কার কমিশনও একই রকম প্রস্তাব করেছে।

৬ ঘণ্টা আগে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনার বিচার অবশ্যই হতে হবে: মির্জা ফখরুল

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনার বিচার অবশ্যই হতে হবে: মির্জা ফখরুল

গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার দাবি করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

১ দিন আগে

শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রকাশ করলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা: অন্তর্বর্তী সরকার

শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রকাশ করলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা: অন্তর্বর্তী সরকার

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার নিয়ে গণমাধ্যমকে সতর্ক করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং এক বিবৃতিতে এই সতর্কবার্তা জানিয়েছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার বক্তব্য কেউ ভবিষ্যতে প্রকাশ করলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১ দিন আগে