logo
খবর

বিজয়ের মাস: ২ ডিসেম্বর ১৯৭১

রাশেদুর রহমান০২ ডিসেম্বর ২০২৪
Copied!
বিজয়ের মাস: ২ ডিসেম্বর ১৯৭১
প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে দিশেহারা পাকিস্তান সেনাবাহিনী

মুক্তিবাহিনী এদিন যশোর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলের আরও কয়েকটি থানা দখল করে। ৮ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে সরে গিয়ে যশোর ও মাগুরা শহরের দিকে সমবেত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা নাভারন-সাতক্ষীরা সড়ক থেকে পাকিস্তানি সেনাদের হটিয়ে দেন। সাতক্ষীরা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে ভোমরা-সাতক্ষীরা সড়কে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর এদিন তুমুল যুদ্ধ হয়। সাতক্ষীরা শহর মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিক থেকে ঘিরে রাখেন। কুষ্টিয়ার জীবননগরের উত্তর-পূর্বে আবদুলবাড়িয়া মুক্তিবাহিনীর দখল করে। চুয়াডাঙ্গার দখল নিয়ে এদিন যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। দামুড়হুদার কাছে এবং দর্শনাতেও যুদ্ধ চলমান ছিল।

৬ নম্বর সেক্টরে রংপুর অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধারা কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী দখল করে এগিয়ে এসে লালমনিরহাট বিমানবন্দরটিকে ঘিরে একে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন।

দিনাজপুর অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী ভারতীয় সেনা-সহায়তায় বালুরঘাট-হিলি সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীকে আক্রমণ করে। বেলা ১টা থেকে পাকিস্তানি সেনারা ভারতের ভেতরে গোলাবর্ষণ শুরু করে। তার পাল্টা জবাবও আসতে থাকে। পাকিস্তানি গোলা থামিয়ে দেওয়ার জন্য যৌথ বাহিনী হিলি সীমান্তের দিকে এগিয়ে যায়। হিলিতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের তারা উত্তর দিকে ঘিরে ফেলে। বাসুদেবপুর থেকে পাকিস্তানি বাহিনী বিতাড়িত হয়। হিলির দক্ষিণে যৌথ বাহিনী ও পাকিস্তানি বাহিনী মুখোমুখি থাকে।

১ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা চট্টগ্রাম বন্দরে অভিযান চালান। তাদের অভিযানে বন্দরের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে কয়েকটি বোমা বিস্ফোরিত হলে সেখানকার ৫টি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ধ্বংস বা ক্ষতির শিকার হয়। একটি পেট্রলপাম্পও যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সিলেট অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধারা মৌলভীবাজারে শমসেরনগর বিমানবন্দরের কাছাকাছি পৌঁছে যান। এ অঞ্চলে ক্যাপ্টেন আবদুর রবের নেতৃত্বে ৪ নম্বর সেক্টরের গণবাহিনীর সদস্যরা আগের দিন কানাইঘাট দখলের অভিযান শুরু করেছিলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী তিন দিক থেকে আক্রমণ করলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে পালিয়ে যায়। আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এলেও পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিবাহিনীর ওপর পালটা আক্রমণ অব্যাহত রাখে। আখাউড়া রেল স্টেশনে চলে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রচণ্ড সম্মুখযুদ্ধ। পাকিস্তানিরা এই যুদ্ধে ট্যাংক ব্যবহার করে।

বগুড়া অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী সারিয়াকান্দি থানায় ২২ জনকে খতম করে। ২ জন পাকিস্তানি সেনা পালাতে না পেরে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

মুক্তিযুদ্ধের অগ্রযাত্রা রুখতেই পর্যবেক্ষক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ২ ডিসেম্বর দিল্লিতে বলেন, মুক্তিবাহিনীর অগ্রযাত্রা রুখতেই পূর্ববঙ্গে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক মোতায়েনের কথা বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, অভিযোগ উঠেছে, ভারত থেকে মুক্তিবাহিনীকে কাজ চালাতে দেওয়া হচ্ছে। পূর্ববঙ্গের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত এতই দীর্ঘ যে তাদের আটকানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সেনা ফিরিয়ে নিলেই কেবল সমস্যার সমাধান হতে পারে। ইন্দিরা তাঁর বাসভবনে সমবেত কংগ্রেস কর্মীদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।

২ ডিসেম্বর ৩টি পাকিস্তানি স্যাবর জেট দুপুরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা বিমান ঘাঁটিতে বোমা ফেলে যায়। খবরটি দিল্লিতে পৌঁছামাত্র প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম এক জরুরি বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মানেকশ ও প্রতিরক্ষাসচিব কে বি লালসহ ঊর্ধ্বতন সেনা, বিমান ও নৌ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর নির্দেশ দেওয়া হয়, আগরতলার বিমানঘাঁটি ও শহরে পাকিস্তানি হামলার জবাব দিতে তারা যেন পাকিস্তানি এলাকায় ঢুকে পড়ে।

উত্তেজনা কমাতে যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা নিতে চায়

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র চার্লস ব্রে ওয়াশিংটনে বলেন, উত্তেজনা যাতে প্রশমিত হয়, যুক্তরাষ্ট্র তেমন ব্যবস্থা নিতে চায়। ভারতকে আক্রমণকারী বললে উত্তেজনা প্রশমনে সহায়ক হবে না।

রেডিও পাকিস্তান এদিন জানায়, ইয়াহিয়া খান সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতাদের কাছে পাঠানো এক নোটে ২২ নভেম্বর থেকে পূর্ব পাকিস্তানে ভারতের অঘোষিত যুদ্ধের বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। নোটটি কবে পাঠানো হয়েছে তা বলা হয়নি।

মুজিবনগরে একটি সূত্র জানায়, দিল্লির পাকিস্তান হাইকমিশনের অবশিষ্ট বাঙালি কূটনীতিক রিয়াজ রহমান সম্প্রতি বদলি হয়ে ইসলামাবাদ চলে গেছেন। তিনি পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরীর জামাতা। দিল্লির পাকিস্তানি হাইকমিশনের রিয়াজ রহমানই একমাত্র কূটনীতিক, যিনি বাংলাদেশের পক্ষে যোগ না দিয়ে পাকিস্তানে চলে গেলেন।

সূত্র: স্বাধীনতাসংগ্রামে প্রবাসী বাঙালি, আবদুল মতিন, র‌্যাডিক্যাল পাবলিকেশনস, লন্ডন, যুক্তরাজ্য; আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ভারত, ৩ ও ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১; দ্য গার্ডিয়ান, লন্ডন, যুক্তরাজ্য, ২ ডিসেম্বর ১৯৭১

আরও পড়ুন

জুলাই সনদ কখনোই সংবিধানের ওপর প্রাধান্য পেতে পারে না: গণফোরাম

জুলাই সনদ কখনোই সংবিধানের ওপর প্রাধান্য পেতে পারে না: গণফোরাম

জুলাই সনদ একটি রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল। এই রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল কখনোই সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য পেতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় আপত্তির একটি জায়গা।’

৬ ঘণ্টা আগে

আসনভিত্তিক বা সংখ্যানুপাতিক কোনোটিই একেবারে নিখুঁত নয়: বদিউল আলম মজুমদার

আসনভিত্তিক বা সংখ্যানুপাতিক কোনোটিই একেবারে নিখুঁত নয়: বদিউল আলম মজুমদার

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তারা কমিশনের পক্ষ থেকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব করেছেন। এর মধ্যে নিম্নকক্ষ হবে বর্তমান আসনভিত্তিক। আর উচ্চকক্ষ হবে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর)। সংবিধান সংস্কার কমিশনও একই রকম প্রস্তাব করেছে।

৬ ঘণ্টা আগে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনার বিচার অবশ্যই হতে হবে: মির্জা ফখরুল

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনার বিচার অবশ্যই হতে হবে: মির্জা ফখরুল

গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার দাবি করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

১ দিন আগে

শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রকাশ করলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা: অন্তর্বর্তী সরকার

শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রকাশ করলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা: অন্তর্বর্তী সরকার

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার নিয়ে গণমাধ্যমকে সতর্ক করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং এক বিবৃতিতে এই সতর্কবার্তা জানিয়েছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার বক্তব্য কেউ ভবিষ্যতে প্রকাশ করলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১ দিন আগে