রাশেদুর রহমান
৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সব রণক্ষেত্রে মুক্তিবাহিনী ও মিত্র ভারতীয় বাহিনীর সম্ন্বয়ে গড়া যৌথবাহিনীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। পাকিস্তানি বাহিনী সর্বত্র পিছু হটছিল। সীমান্ত শহর দর্শনা সম্মিলিত বাহিনীর দখলে চলে আসে। এদিন মিত্র ভারতীয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী বাংলাদেশে পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও করাচি-শত্রুর ঘাঁটিতে ঘাঁটিতে চলে বোমাবর্ষণ। ঢাকা ও চট্টগ্রামের আকাশে চলে জোর বিমান যুদ্ধ।
এদিকে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধের প্রথম দিনই মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় ভারতীয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। চারদিক থেকে যৌথ বাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল রাজধানী ঢাকা দখল এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা। প্রথম দিনের যুদ্ধেই বিভিন্ন সেক্টরে পাকিস্তানি বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর অর্ধেকের বেশি বিমান এদিন বিধ্বস্ত হয়।
২ নম্বর সেক্টরে কুমিল্লার দেবীদ্বার ৪ ডিসেম্বর মুক্ত হয়। আগের দিন যৌথ বাহিনী দেবীদ্বারসহ কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানিদের আক্রমণ করেছিল। ভারতের ২৩ মাউন্টেন ডিভিশনের মেজর জেনারেল আর ডি বিহারের নেতৃত্বে বৃহত্তর কুমিল্লায় অভিযান চলে। মিত্রবাহিনীর একটি ট্যাংকবহর বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া হয়ে দেবীদ্বারে আসে। সে খবর পেয়ে পাকিস্তানিরা রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসে পালিয়ে যায়।
৪ ডিসেম্বর রাতে আখাউড়াতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহনীর প্রচণ্ড গোলা বিনিময় হয়। যাকে সামরিক পরিভাষায় বলা হয় ‘এক্সেঞ্জ অব স্মল আর্মস ফায়ার’। সারারাত যুদ্ধের পর ৫ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী। মূলত, ত্রিমুখী আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল পেট্রুম খান দলবলসহ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। সেদিন মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর হাতে পাকিস্তানি সেনাদের একটি অংশ আত্মসমর্পণ করে, কিছু সেনা গুলি খেয়ে মারা যায়, কিছু সেনা আখাউড়া রেললাইন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে পালিয়ে যায়। কিছু সৈন্য তিতাস নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মারা যায়।
৬ নম্বর সেক্টরের দিনাজপুরের ফুলবাড়ী এদিন মুক্ত হয়। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গড়া যৌথ বাহিনী ৩ ডিসেম্বর ফুলবাড়ীর বেতদিঘী, কাজিয়াল, এলুয়াড়ী, জলপাইতলী, পানিকাটা, রুদ্রানী, আমড়া ও রানীনগর এলাকার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনী যৌথ বাহিনীর ফুলবাড়ী শহরে আগমন রোধ করতে শহরের পশ্চিম পাশে ছোট যমুনা নদীর ওপর লোহার সেতুর পূর্ব অংশ ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে পালিয়ে যায়।
১১ নম্বর সেক্টরে জামালপুরের বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর ৪ ডিসেম্বর মুক্ত হয়। কামালপুর সীমান্ত ঘাঁটির প্রতিরক্ষা অবস্থানে নিয়োজিত পাকিস্তানি সেনারা এদিন যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ৩ ডিসেম্বর কামালপুর সীমান্ত ঘাঁটিতে অবরুদ্ধ পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। বকশীগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা বশীর আহমদ (স্বাধীনতার পর বীর প্রতীক) সে চিঠি নিয়ে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে যান। চিঠি পেয়ে ক্যাম্পের অধিনায়ক আহসান মালিক অগ্নিমূর্তি ধারণ করে। বশীরের ফিরতে দেরি হওয়ায় আরেকটি চিঠি দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা সঞ্জুকে পাঠানো হয়। অবশেষে বালুচ, পাঠান, পাঞ্জাবিসহ ১৬২ জন সেনার একটি দল ৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। শত্রুমুক্ত হয় ধানুয়া কামালপুর।
পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণই লক্ষ্য
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এদিন কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণই তাদের লক্ষ্য। ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার স্থাপনে সহায়তা করতে চায়।
দিল্লিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, তাদের সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে এবং মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম এদিন রাজ্যসভা ও লোকসভায় বিশেষ অধিবেশনে জানান, ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে একযোগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করছে। তারা বাংলাদেশের সাতটি অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। শত্রুর প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় বড় ফাটল ধরিয়েছে। কয়েকটি শহরের পতন হয়েছে।
চীন-ভারত সীমান্তের পূর্ব বা পশ্চিমে চীনা সেনা সমাবেশের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভারতের বিরুদ্ধে সম্প্রসারণশীল মনোভাবের অভিযোগ এনেছে চীন। ভারতকে সমর্থন জানানোয় সোভিয়েত ইউনিয়নের সমালোচনা করে চীন। একই সঙ্গে তারা পাকিস্তানের সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায়।
নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক
মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকতে ৪ ডিসেম্বর উদ্যোগ নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ ৮টি দেশ জরুরি বৈঠক ডাকার জন্য অনুরোধ জানিয়ে পরিষদের সভাপতি সিয়েরা লিয়নের রাষ্ট্রদূত ইসমাইল টেলর কামারাকে চিঠি দেয়। চিঠিতে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, ইতালি, জাপান, আর্জেন্টিনা, নিকারাগুয়া ও সোমালিয়া। জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী পরিষদের সভাপতির কাছে বৈঠকের শুরুতেই বাংলাদেশের প্রতিনিধিকে বক্তব্য পেশ করতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট এক প্রতিবেদনে নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, ভারত-পাকিস্তানের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
ডেনমার্ক সফররত সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি কোসিগিন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সংঘর্ষ এড়াতে তারা সাধ্যমতো সব চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পূর্ববঙ্গে গণতন্ত্রকে হত্যা করে এ সংকট ডেকে আনা হয়েছে। ডেনিস সংবাদ সংস্থা তাঁর এক সফরসঙ্গীর মন্তব্য উদ্ধৃত করে জানায়, এ যুদ্ধে এখনই হস্তক্ষেপ করার কোনো সম্ভাবনা আছে বলে সোভিয়েত ইউনিয়ন মনে করে না।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ, সেক্টরভিতিক ইতিহাস; আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ভারত, ৫ ও ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সব রণক্ষেত্রে মুক্তিবাহিনী ও মিত্র ভারতীয় বাহিনীর সম্ন্বয়ে গড়া যৌথবাহিনীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। পাকিস্তানি বাহিনী সর্বত্র পিছু হটছিল। সীমান্ত শহর দর্শনা সম্মিলিত বাহিনীর দখলে চলে আসে। এদিন মিত্র ভারতীয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী বাংলাদেশে পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও করাচি-শত্রুর ঘাঁটিতে ঘাঁটিতে চলে বোমাবর্ষণ। ঢাকা ও চট্টগ্রামের আকাশে চলে জোর বিমান যুদ্ধ।
এদিকে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধের প্রথম দিনই মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় ভারতীয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। চারদিক থেকে যৌথ বাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল রাজধানী ঢাকা দখল এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা। প্রথম দিনের যুদ্ধেই বিভিন্ন সেক্টরে পাকিস্তানি বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর অর্ধেকের বেশি বিমান এদিন বিধ্বস্ত হয়।
২ নম্বর সেক্টরে কুমিল্লার দেবীদ্বার ৪ ডিসেম্বর মুক্ত হয়। আগের দিন যৌথ বাহিনী দেবীদ্বারসহ কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানিদের আক্রমণ করেছিল। ভারতের ২৩ মাউন্টেন ডিভিশনের মেজর জেনারেল আর ডি বিহারের নেতৃত্বে বৃহত্তর কুমিল্লায় অভিযান চলে। মিত্রবাহিনীর একটি ট্যাংকবহর বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া হয়ে দেবীদ্বারে আসে। সে খবর পেয়ে পাকিস্তানিরা রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসে পালিয়ে যায়।
৪ ডিসেম্বর রাতে আখাউড়াতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহনীর প্রচণ্ড গোলা বিনিময় হয়। যাকে সামরিক পরিভাষায় বলা হয় ‘এক্সেঞ্জ অব স্মল আর্মস ফায়ার’। সারারাত যুদ্ধের পর ৫ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী। মূলত, ত্রিমুখী আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল পেট্রুম খান দলবলসহ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। সেদিন মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর হাতে পাকিস্তানি সেনাদের একটি অংশ আত্মসমর্পণ করে, কিছু সেনা গুলি খেয়ে মারা যায়, কিছু সেনা আখাউড়া রেললাইন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে পালিয়ে যায়। কিছু সৈন্য তিতাস নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মারা যায়।
৬ নম্বর সেক্টরের দিনাজপুরের ফুলবাড়ী এদিন মুক্ত হয়। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গড়া যৌথ বাহিনী ৩ ডিসেম্বর ফুলবাড়ীর বেতদিঘী, কাজিয়াল, এলুয়াড়ী, জলপাইতলী, পানিকাটা, রুদ্রানী, আমড়া ও রানীনগর এলাকার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনী যৌথ বাহিনীর ফুলবাড়ী শহরে আগমন রোধ করতে শহরের পশ্চিম পাশে ছোট যমুনা নদীর ওপর লোহার সেতুর পূর্ব অংশ ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে পালিয়ে যায়।
১১ নম্বর সেক্টরে জামালপুরের বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর ৪ ডিসেম্বর মুক্ত হয়। কামালপুর সীমান্ত ঘাঁটির প্রতিরক্ষা অবস্থানে নিয়োজিত পাকিস্তানি সেনারা এদিন যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ৩ ডিসেম্বর কামালপুর সীমান্ত ঘাঁটিতে অবরুদ্ধ পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। বকশীগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা বশীর আহমদ (স্বাধীনতার পর বীর প্রতীক) সে চিঠি নিয়ে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে যান। চিঠি পেয়ে ক্যাম্পের অধিনায়ক আহসান মালিক অগ্নিমূর্তি ধারণ করে। বশীরের ফিরতে দেরি হওয়ায় আরেকটি চিঠি দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা সঞ্জুকে পাঠানো হয়। অবশেষে বালুচ, পাঠান, পাঞ্জাবিসহ ১৬২ জন সেনার একটি দল ৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। শত্রুমুক্ত হয় ধানুয়া কামালপুর।
পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণই লক্ষ্য
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এদিন কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণই তাদের লক্ষ্য। ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার স্থাপনে সহায়তা করতে চায়।
দিল্লিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, তাদের সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে এবং মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম এদিন রাজ্যসভা ও লোকসভায় বিশেষ অধিবেশনে জানান, ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে একযোগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করছে। তারা বাংলাদেশের সাতটি অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। শত্রুর প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় বড় ফাটল ধরিয়েছে। কয়েকটি শহরের পতন হয়েছে।
চীন-ভারত সীমান্তের পূর্ব বা পশ্চিমে চীনা সেনা সমাবেশের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভারতের বিরুদ্ধে সম্প্রসারণশীল মনোভাবের অভিযোগ এনেছে চীন। ভারতকে সমর্থন জানানোয় সোভিয়েত ইউনিয়নের সমালোচনা করে চীন। একই সঙ্গে তারা পাকিস্তানের সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায়।
নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক
মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকতে ৪ ডিসেম্বর উদ্যোগ নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ ৮টি দেশ জরুরি বৈঠক ডাকার জন্য অনুরোধ জানিয়ে পরিষদের সভাপতি সিয়েরা লিয়নের রাষ্ট্রদূত ইসমাইল টেলর কামারাকে চিঠি দেয়। চিঠিতে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, ইতালি, জাপান, আর্জেন্টিনা, নিকারাগুয়া ও সোমালিয়া। জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী পরিষদের সভাপতির কাছে বৈঠকের শুরুতেই বাংলাদেশের প্রতিনিধিকে বক্তব্য পেশ করতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট এক প্রতিবেদনে নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, ভারত-পাকিস্তানের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
ডেনমার্ক সফররত সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি কোসিগিন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সংঘর্ষ এড়াতে তারা সাধ্যমতো সব চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পূর্ববঙ্গে গণতন্ত্রকে হত্যা করে এ সংকট ডেকে আনা হয়েছে। ডেনিস সংবাদ সংস্থা তাঁর এক সফরসঙ্গীর মন্তব্য উদ্ধৃত করে জানায়, এ যুদ্ধে এখনই হস্তক্ষেপ করার কোনো সম্ভাবনা আছে বলে সোভিয়েত ইউনিয়ন মনে করে না।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ, সেক্টরভিতিক ইতিহাস; আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ভারত, ৫ ও ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
দাবি মেনে নেওয়ায় গাজীপুর নগরের কোনাবাড়ী এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছে শ্রমিকেরা। এর ফলে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর সোমবার বেলা দেড়টার দিকে সড়কটিতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বন্ধ ঘোষণা করা ২টি কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী এলাকায় বিক্ষোভ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শ্রমিকেরা।
যোগ্যতার চাইতে প্রাপ্তি বেশি হয়ে গেলে তখন সে লাগামহীন হয়ে ওঠে। এ অনেকটা মাটি ও খুঁটির মতো অবস্থা। খুঁটি শক্ত না হলে ঘর নড়বড়ে হবে আবার মাটি উর্বর না হলে খাওয়াপড়া জুটবে না। মানুষের চিন্তার সমৃদ্ধির জন্য পড়াশোনা কিংবা জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই।
পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে থাকা সুস্পষ্ট লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।