নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে চীনা প্রযুক্তির সক্ষমতা দারুণভাবে প্রমাণিত। বিশেষ করে ৬ মে দিবাগত রাতে পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর পাকিস্তান বিমান বাহিনী যে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়, তাতে চীনা প্রযুক্তি আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর চীনা প্রযুক্তির যুদ্ধ বিমান চেংদু জে-১০ ভারতের ৫টি যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করা হয়। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর দাবি, তারা ভারতের যে ৫টি যুদ্ধ বিমান ঘায়েল করে তার ৩টি ছিল ফ্রান্সের দাসল্ট কোম্পানির অত্যাধুনিক রাফায়েল যুদ্ধ বিমান। বাকি ২টির একটি রাশিয়ার সুখোই-৩০ ও একটি মিগ-২৯।
ঘটনাটি সামরিক বাণিজ্যের দুনিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ফ্রান্স থেকে কেনা রাফায়েল যুদ্ধ বিমানকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর মেরুদণ্ডই বলা হচ্ছে ইদানীং। বছর দুই-এক আগেই ফ্রান্স থেকে ৩৬টি রাফায়েল যুদ্ধ বিমান ভারতীয় বিমান বাহিনীর বহরে যুক্ত হয়। ভারত নাকি আরও ২৬টি রাফায়েল কেনার চুক্তি করেছে ফ্রান্সে। পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর দাবি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ স্বীকার বা অস্বীকার কিছুই করেনি তাৎক্ষণিক ভাবে। সংবাদমাধ্যমে যুদ্ধ বিমানের বেশ কিছু খণ্ডাংশের ছবি প্রকাশিত হয়। তবে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন অন্তত ২টি রাফায়েল ধ্বংস হওয়ার কথা বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রও রয়টার্সকে অন্তত ২টি রাফায়েল যুদ্ধ বিমান চীনের জে-১০ যুদ্ধ বিমান দিয়ে ঘায়েল হওয়ার কথা বলেছে।
চীনা সামরিক প্রযুক্তি নিয়ে পশ্চিমা দুনিয়ার এক ধরনের উন্নাসিকতা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। বিশেষ করে চীনা যুদ্ধাস্ত্র ও প্রযুক্তি যুদ্ধের ময়দানে পরীক্ষিত নয়, এমন এক ধরনের ধারণা পোষণ করেই আসছিলেন সবাই। এবারের ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ৩ দিনের সংঘাত চীনা প্রযুক্তি নিয়ে রীতিমতো বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। জে-১০ যুদ্ধ বিমান চীনেরই আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপের পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাফায়েল ঘায়েল হয়েছে বলেই জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
চীনের তৈরি জে-১০ যুদ্ধ বিমান নিয়েও চলেছে আলোচনা। বিশেষ করে এই মাল্টিরোল যুদ্ধ বিমান যে আকাশ যুদ্ধে পশ্চিমা প্রযুক্তিকে ভালোভাবেই টেক্কা দিতে সক্ষম সেটি প্রমাণ হয়ে গেছে। চীন এই যুদ্ধ বিমান এখনো পর্যন্ত শুধুমাত্র পাকিস্তানের কাছেই বিক্রি করেছে। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বহরে ফ্রান্সের এক সময়ের বিখ্যাত মিরেজ-২০০০, যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৬ এর মতো যুদ্ধ বিমান থাকলেও ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতে পাকিস্তান পুরোমাত্রায় নির্ভরশীল ছিল চীনা প্রযুক্তির যুদ্ধ বিমানের ওপর। পাকিস্তানের বহরে জে-১০ ছাড়াও আছে চীনের সঙ্গে যৌথ প্রযুক্তিতে তৈরি করা জেএফ থান্ডার-১৭ যুদ্ধ বিমান।
জে-১০ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই এই যুদ্ধ বিমানের অতীত ইতিহাসও আলোচনায় এসেছে। এ নিয়ে কিছুটা বিতর্কও আছে। ২০০৬ সালের দিকে চীন যখন ৪.৫ প্রজন্মের এই যুদ্ধ বিমান তৈরি করে তখন থেকেই পশ্চিমা দেশগুলোর গণমাধ্যমগুলো অভিযোগ করে আসছে, এই যুদ্ধ বিমানের কিছু প্রযুক্তি ও গঠন ইসরায়েলের কাছ থেকে সংগ্রহ করা। চীন অবশ্য বরাবরই দাবি করে এসেছে, এই জে-১০ যুদ্ধ বিমান তাদের নিজেদের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা ও চীনা অ্যারোস্পেস বিজ্ঞানীদের সক্ষমতার উদাহরণ।
কী সেই ইতিহাস
জে-১০ নিয়ে যে ইতিহাস প্রচলিত, সেটি বেশ চমকপ্রদ। এই ইতিহাসে বরাবরই এসেছে ইসরায়েলের নাম। এই ইতিহাসে ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণও আছে। আশির দশকে পৃথিবীর একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্রের অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি (আইএআই) ‘লাভি’ নামের একটি যুদ্ধ বিমান তৈরির প্রকল্প শুরু করে। ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রকল্পে মোটা অংকের অর্থায়ন করেছিল। লাভির যে মডেলটি ইসরায়েলি অ্যারোস্পেস বিজ্ঞানিরা নকশা করেছিলেন, সেটি ছিল আকারে ছোট, হালকা ও উচ্চগতি ও ক্ষমতা সম্পন্ন যুদ্ধ বিমান। আশির দশকের প্রেক্ষাপটে সেটি ছিল পুরোপুরি ভবিষ্যৎমুখী পরিকল্পনা। লাভির ক্যানার্ড ও ডেল্টা উইং কাঠামো ছিল সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা। বেশ কয়েক বছর গবেষণা ও চেষ্টার পর আইএআই লাভির দুটি প্রোটোটাইপ (নমুনা) তৈরি করতে সক্ষম হয়। তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের মাথা ব্যথার কারণ হয় দ্রুতই। যুক্তরাষ্ট্র তখন নিজেদের এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান সামরিক বাজারে এনেছে। যুক্তরাষ্ট্র লাভিকে এফ-১৬ এর প্রতিদ্বন্দ্বী বা হুমকি হিসেবে মনে করেছিল। সে কারণেই আইএআইকে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি অন্য সামরিক প্রকল্পেও অর্থায়ন কমিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৮৭ সালে প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যায়। ইসরায়েলের লাভির স্বপ্ন অধরা স্বপ্ন হয়েই থেকে যায়।
জে-১০ প্রকল্প যেভাবে শুরু করে চীন
১৯৮৮ সালের দিকে চীন নিজেদের মাল্টিরোল যুদ্ধ বিমান জে-১০ নিয়ে কাজ শুরু করে। তাদের স্বপ্ন ও লক্ষ্য ছিল একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুদ্ধ বিমানের উদ্ভাবন করা। চীন সেই লক্ষ্য কাজ শুরু করে। কিন্তু তারা যখন জে-১০ যুদ্ধ বিমানের কাঠামো ও নকশা তৈরি করে, সেটি ইসরায়েলের লাভির সঙ্গে আশ্চর্যজনকভাবে মিলে যায়। বিশেষ করে জে-১০ এর ডেল্টা উইং, ক্যানার্ড ফিন, এয়ার ইনটেক নকশা—সবই লাভির সঙ্গে মিলে যায়। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মনে গভীর সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তাদের ধারণা, ইসরায়েল হয়তো লাভির প্রযুক্তি বিপুল অর্থের বিনিময়ে চীনের কাছে বিক্রি করেছে। অথবা, চীন কোনোভাবে এই প্রযুক্তি গোয়েন্দাসূত্রে হাতে পেয়ে গেছে। ইসরায়েল কখনোই চীনের কাছে প্রযুক্তি হস্তান্তর বা রপ্তানির বিষয়টি স্বীকার করেনি। চীন তো এটিকে নিজেদের সক্ষমতার নিদর্শন হিসবেই দাবি করে এসেছে সব সময়।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া
২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, চীন ইসরায়েলের লাভি যুদ্ধ বিমানের প্রযুক্তির সুবিধা নিয়েছে। এমনকি ইসরায়েলি অ্যারোস্পেস প্রকৌশলীরা চীনের জে-১০ প্রকল্পে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছে বলেও সেই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। যদিও কোনো কিছুই প্রমাণ করা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র আশির দশকে ইসরায়েলের আইএআইর লাভি যুদ্ধ বিমান তৈরির প্রকল্পে ১.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিল। এই বিনিয়োগের ফল চীনের হাতে চলে যাওয়ায় তারা ছিল ক্ষুব্ধ। এর সঙ্গে এফ-১৬ এর ওপর হুমকি তো ছিলই। সব মিলিয়ে জে-১০ কে যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই সন্দেহের চোখে দেখে এসেছে।
জে-১০ নিয়ে বিতর্কের নিষ্পত্তি কখনোই হয়নি। হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। ১৯৮৮ সালে শুরু করা এই প্রকল্পে অনেক আগেই সফল চীন। এই যুদ্ধ বিমান তাদের সামরিক বাণিজ্যের উৎস। এখনো পর্যন্ত একমাত্র পাকিস্তানই এই যুদ্ধ বিমান কিনে ব্যবহার করছে। ভবিষ্যতে এই যুদ্ধ বিমান কেনার কথা ভাবছে বেশ কয়েকটি দেশ। মিসর, সৌদি আরব ও বাংলাদেশ নিজেদের বিমান বাহিনীর বহরে এই জে-১০ যুদ্ধ বিমান সংযোজনের বিষয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছে।
যুদ্ধ বিমান একটি দেশের সামরিক প্রযুক্তির উৎকর্ষতার প্রতীক। চীন জে-১০ দিয়ে সেটি প্রমাণ করেছে। সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের পর এই জে-১০ যুদ্ধ বিমান এখন আকাশ যুদ্ধে শক্তিমত্তার নিদর্শনও। তবে ইসরায়েলের ‘কখনো আলোর মুখ না দেখা’ যুদ্ধ বিমান লাভির সঙ্গে চীনের এই জে-১০ এর প্রযুক্তিগত সাদৃশ্য শুধু সামরিক প্রযুক্তির অনুলিপিই নয়। এর সঙ্গে মিশে আছে ভূ-রাজনৈতিক কূটকৌশল, সামরিক প্রযুক্তিতে সক্ষমতা অর্জনের সামর্থ্য ও চীনের কূটনীতির জটিল ইতিহাস। আজ জে-১০ আধুনিক আকাশ যুদ্ধে প্রমাণিত শক্তিমত্তা আর লাভি ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাওয়া ইসরায়েলি আক্ষেপ।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে চীনা প্রযুক্তির সক্ষমতা দারুণভাবে প্রমাণিত। বিশেষ করে ৬ মে দিবাগত রাতে পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর পাকিস্তান বিমান বাহিনী যে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়, তাতে চীনা প্রযুক্তি আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর চীনা প্রযুক্তির যুদ্ধ বিমান চেংদু জে-১০ ভারতের ৫টি যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করা হয়। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর দাবি, তারা ভারতের যে ৫টি যুদ্ধ বিমান ঘায়েল করে তার ৩টি ছিল ফ্রান্সের দাসল্ট কোম্পানির অত্যাধুনিক রাফায়েল যুদ্ধ বিমান। বাকি ২টির একটি রাশিয়ার সুখোই-৩০ ও একটি মিগ-২৯।
ঘটনাটি সামরিক বাণিজ্যের দুনিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ফ্রান্স থেকে কেনা রাফায়েল যুদ্ধ বিমানকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর মেরুদণ্ডই বলা হচ্ছে ইদানীং। বছর দুই-এক আগেই ফ্রান্স থেকে ৩৬টি রাফায়েল যুদ্ধ বিমান ভারতীয় বিমান বাহিনীর বহরে যুক্ত হয়। ভারত নাকি আরও ২৬টি রাফায়েল কেনার চুক্তি করেছে ফ্রান্সে। পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর দাবি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ স্বীকার বা অস্বীকার কিছুই করেনি তাৎক্ষণিক ভাবে। সংবাদমাধ্যমে যুদ্ধ বিমানের বেশ কিছু খণ্ডাংশের ছবি প্রকাশিত হয়। তবে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন অন্তত ২টি রাফায়েল ধ্বংস হওয়ার কথা বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রও রয়টার্সকে অন্তত ২টি রাফায়েল যুদ্ধ বিমান চীনের জে-১০ যুদ্ধ বিমান দিয়ে ঘায়েল হওয়ার কথা বলেছে।
চীনা সামরিক প্রযুক্তি নিয়ে পশ্চিমা দুনিয়ার এক ধরনের উন্নাসিকতা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। বিশেষ করে চীনা যুদ্ধাস্ত্র ও প্রযুক্তি যুদ্ধের ময়দানে পরীক্ষিত নয়, এমন এক ধরনের ধারণা পোষণ করেই আসছিলেন সবাই। এবারের ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ৩ দিনের সংঘাত চীনা প্রযুক্তি নিয়ে রীতিমতো বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। জে-১০ যুদ্ধ বিমান চীনেরই আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপের পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাফায়েল ঘায়েল হয়েছে বলেই জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
চীনের তৈরি জে-১০ যুদ্ধ বিমান নিয়েও চলেছে আলোচনা। বিশেষ করে এই মাল্টিরোল যুদ্ধ বিমান যে আকাশ যুদ্ধে পশ্চিমা প্রযুক্তিকে ভালোভাবেই টেক্কা দিতে সক্ষম সেটি প্রমাণ হয়ে গেছে। চীন এই যুদ্ধ বিমান এখনো পর্যন্ত শুধুমাত্র পাকিস্তানের কাছেই বিক্রি করেছে। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বহরে ফ্রান্সের এক সময়ের বিখ্যাত মিরেজ-২০০০, যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৬ এর মতো যুদ্ধ বিমান থাকলেও ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতে পাকিস্তান পুরোমাত্রায় নির্ভরশীল ছিল চীনা প্রযুক্তির যুদ্ধ বিমানের ওপর। পাকিস্তানের বহরে জে-১০ ছাড়াও আছে চীনের সঙ্গে যৌথ প্রযুক্তিতে তৈরি করা জেএফ থান্ডার-১৭ যুদ্ধ বিমান।
জে-১০ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই এই যুদ্ধ বিমানের অতীত ইতিহাসও আলোচনায় এসেছে। এ নিয়ে কিছুটা বিতর্কও আছে। ২০০৬ সালের দিকে চীন যখন ৪.৫ প্রজন্মের এই যুদ্ধ বিমান তৈরি করে তখন থেকেই পশ্চিমা দেশগুলোর গণমাধ্যমগুলো অভিযোগ করে আসছে, এই যুদ্ধ বিমানের কিছু প্রযুক্তি ও গঠন ইসরায়েলের কাছ থেকে সংগ্রহ করা। চীন অবশ্য বরাবরই দাবি করে এসেছে, এই জে-১০ যুদ্ধ বিমান তাদের নিজেদের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা ও চীনা অ্যারোস্পেস বিজ্ঞানীদের সক্ষমতার উদাহরণ।
কী সেই ইতিহাস
জে-১০ নিয়ে যে ইতিহাস প্রচলিত, সেটি বেশ চমকপ্রদ। এই ইতিহাসে বরাবরই এসেছে ইসরায়েলের নাম। এই ইতিহাসে ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণও আছে। আশির দশকে পৃথিবীর একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্রের অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি (আইএআই) ‘লাভি’ নামের একটি যুদ্ধ বিমান তৈরির প্রকল্প শুরু করে। ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রকল্পে মোটা অংকের অর্থায়ন করেছিল। লাভির যে মডেলটি ইসরায়েলি অ্যারোস্পেস বিজ্ঞানিরা নকশা করেছিলেন, সেটি ছিল আকারে ছোট, হালকা ও উচ্চগতি ও ক্ষমতা সম্পন্ন যুদ্ধ বিমান। আশির দশকের প্রেক্ষাপটে সেটি ছিল পুরোপুরি ভবিষ্যৎমুখী পরিকল্পনা। লাভির ক্যানার্ড ও ডেল্টা উইং কাঠামো ছিল সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা। বেশ কয়েক বছর গবেষণা ও চেষ্টার পর আইএআই লাভির দুটি প্রোটোটাইপ (নমুনা) তৈরি করতে সক্ষম হয়। তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের মাথা ব্যথার কারণ হয় দ্রুতই। যুক্তরাষ্ট্র তখন নিজেদের এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান সামরিক বাজারে এনেছে। যুক্তরাষ্ট্র লাভিকে এফ-১৬ এর প্রতিদ্বন্দ্বী বা হুমকি হিসেবে মনে করেছিল। সে কারণেই আইএআইকে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি অন্য সামরিক প্রকল্পেও অর্থায়ন কমিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৮৭ সালে প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যায়। ইসরায়েলের লাভির স্বপ্ন অধরা স্বপ্ন হয়েই থেকে যায়।
জে-১০ প্রকল্প যেভাবে শুরু করে চীন
১৯৮৮ সালের দিকে চীন নিজেদের মাল্টিরোল যুদ্ধ বিমান জে-১০ নিয়ে কাজ শুরু করে। তাদের স্বপ্ন ও লক্ষ্য ছিল একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুদ্ধ বিমানের উদ্ভাবন করা। চীন সেই লক্ষ্য কাজ শুরু করে। কিন্তু তারা যখন জে-১০ যুদ্ধ বিমানের কাঠামো ও নকশা তৈরি করে, সেটি ইসরায়েলের লাভির সঙ্গে আশ্চর্যজনকভাবে মিলে যায়। বিশেষ করে জে-১০ এর ডেল্টা উইং, ক্যানার্ড ফিন, এয়ার ইনটেক নকশা—সবই লাভির সঙ্গে মিলে যায়। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মনে গভীর সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তাদের ধারণা, ইসরায়েল হয়তো লাভির প্রযুক্তি বিপুল অর্থের বিনিময়ে চীনের কাছে বিক্রি করেছে। অথবা, চীন কোনোভাবে এই প্রযুক্তি গোয়েন্দাসূত্রে হাতে পেয়ে গেছে। ইসরায়েল কখনোই চীনের কাছে প্রযুক্তি হস্তান্তর বা রপ্তানির বিষয়টি স্বীকার করেনি। চীন তো এটিকে নিজেদের সক্ষমতার নিদর্শন হিসবেই দাবি করে এসেছে সব সময়।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া
২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, চীন ইসরায়েলের লাভি যুদ্ধ বিমানের প্রযুক্তির সুবিধা নিয়েছে। এমনকি ইসরায়েলি অ্যারোস্পেস প্রকৌশলীরা চীনের জে-১০ প্রকল্পে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছে বলেও সেই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। যদিও কোনো কিছুই প্রমাণ করা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র আশির দশকে ইসরায়েলের আইএআইর লাভি যুদ্ধ বিমান তৈরির প্রকল্পে ১.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিল। এই বিনিয়োগের ফল চীনের হাতে চলে যাওয়ায় তারা ছিল ক্ষুব্ধ। এর সঙ্গে এফ-১৬ এর ওপর হুমকি তো ছিলই। সব মিলিয়ে জে-১০ কে যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই সন্দেহের চোখে দেখে এসেছে।
জে-১০ নিয়ে বিতর্কের নিষ্পত্তি কখনোই হয়নি। হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। ১৯৮৮ সালে শুরু করা এই প্রকল্পে অনেক আগেই সফল চীন। এই যুদ্ধ বিমান তাদের সামরিক বাণিজ্যের উৎস। এখনো পর্যন্ত একমাত্র পাকিস্তানই এই যুদ্ধ বিমান কিনে ব্যবহার করছে। ভবিষ্যতে এই যুদ্ধ বিমান কেনার কথা ভাবছে বেশ কয়েকটি দেশ। মিসর, সৌদি আরব ও বাংলাদেশ নিজেদের বিমান বাহিনীর বহরে এই জে-১০ যুদ্ধ বিমান সংযোজনের বিষয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছে।
যুদ্ধ বিমান একটি দেশের সামরিক প্রযুক্তির উৎকর্ষতার প্রতীক। চীন জে-১০ দিয়ে সেটি প্রমাণ করেছে। সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের পর এই জে-১০ যুদ্ধ বিমান এখন আকাশ যুদ্ধে শক্তিমত্তার নিদর্শনও। তবে ইসরায়েলের ‘কখনো আলোর মুখ না দেখা’ যুদ্ধ বিমান লাভির সঙ্গে চীনের এই জে-১০ এর প্রযুক্তিগত সাদৃশ্য শুধু সামরিক প্রযুক্তির অনুলিপিই নয়। এর সঙ্গে মিশে আছে ভূ-রাজনৈতিক কূটকৌশল, সামরিক প্রযুক্তিতে সক্ষমতা অর্জনের সামর্থ্য ও চীনের কূটনীতির জটিল ইতিহাস। আজ জে-১০ আধুনিক আকাশ যুদ্ধে প্রমাণিত শক্তিমত্তা আর লাভি ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাওয়া ইসরায়েলি আক্ষেপ।
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সোমবার (১২ মে) রাত সোয়া ৯টার দিকে নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
চীনের তৈরি যুদ্ধ বিমান জে-১০ এবারের ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে আকাশে পাকিস্তানের সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে প্রমাণিত। চীনের এই মাল্টিরোল যুদ্ধ বিমান নিয়ে বিস্মিত পশ্চিমা দুনিয়াও। ১৯৮৮ সালে শুরু হওয়া জে-১০ যুদ্ধ বিমান তৈরির ইতিহাসটা কিন্তু একটু জটিলই...
যুদ্ধের কারণে স্থগিত হয়ে গেছে পিএসএল। ফিরতে হয়েছে রিশাদ হোসেনকে। তবে দুবাই বিমান বন্দরে বাংলাদেশি সাংবাদিকদের দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিছু কথা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। বিব্রত হয়েছেন পিএসএলের বিদেশি দুই ক্রিকেটার। রিশাদ এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন