সাবির মাহমুদ, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সিডনিতে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি নাইট– গ্র্যান্ড রিইউনিয়ন ২০২৫’ এবং প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর উদযাপন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এবারই প্রথম বর্তমান কার্যকরি পরিষদের উদ্যোগে এতবড় আয়োজন করা হয়।
গত শনিবার (১০ মে) গ্রানভিলের গ্র্যান্ড রয়্যাল হলে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
বেশ কিছুদিন ধরেই সিডনিজুড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অনুষ্ঠানটি ছিল আলোচনার শীর্ষে। নির্ধারিত দিনের অনেক আগেই সব টিকিট শেষ হয়ে যায়। প্রায় ৪০০ জনের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন হলটি পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় অনেককেই নিরাশ হতে হয়। এই অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশ থেকে আগত নব্বই দশকের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আগুন ও তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পী সিঁথি সাহা l
যারা প্রিয় শিক্ষাঙ্গণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালোবাসেন, যারা জীবনের উজ্জ্বল সময়টুকু কাটিয়েছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে, যাদের মনে পড়ে ফেলে আসা সেই দিনগুলোর কথা, মনে পড়ে সেই প্রিয় মুখগুলোর কথা – তারা সবাই প্রাণের টানে একে একে পরিবার পরিজন নিয়ে এসে উপস্থিত হয় গ্রানভিলের গ্র্যান্ড রয়্যাল হলে। তাদের সরব উপস্থিতিতে বিরাজ করে এক আনন্দময় উৎসবমুখর পরিবেশ।
হলে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে পরবর্তী প্রজন্মের পৃথ্বীর পরিকল্পনায় ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কানিতার নিখুঁত সৃষ্টি দৃষ্টিনন্দন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকন কার্জন হল ও অপরাজেয় বাংলার প্রতিকৃতিতে সজ্জিত স্টেজ ও ৩৬০ ডিগ্রি ফটো বুথ।
রেজিস্ট্রেশন ডেস্ক থেকে স্বাগত জানিয়ে প্রতিটি অ্যালামনিকে দেওয়া হয় চমৎকার একটি ক্রেস্ট, নেম কার্ড ও দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রকাশিত স্মরণিকা ‘নানান রঙের দিনগুলো’। অ্যালামনি চারুশিল্পী রফিকুর খানের করা স্মরণিকার প্রচ্ছদটি ছিল অপূর্ব।
সন্ধ্যা ৬টায় অ্যালামনি নার্গিস বানুর সঞ্চালনায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনা শুরু হয় দুই দেশের জাতীয় সংগীত দিয়ে। নতুন প্রজন্মের সোমাইতা, নোরা ও নাঈফা পরিবেশন করে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত। সমবেত কণ্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন অ্যালামনাই দলের সদস্য তামিমা শাহরিন ও মাসুদ মিথুন, সঙ্গে ছিলেন আজিজুন, রুমানা, স্মৃতি, অদিতি, নিলুফার ও তবলায় সাকিনা।
অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় ছোট্ট হাফিদ আবিয়ান। একক সংগীত পরিবেশন করেন সংগঠনের নিয়মিত শিল্পী তামিমা ও মাসুদ। রবীন্দ্র সংগীতের সাথে চমৎকার নৃত্য পরিবেশন করে পরবর্তী প্রজন্মের ঈষিকা ও তারা। কবিতা আবৃত্তি করেন লাবন্য শিল্পী। এরপর মঞ্চে আসেন ধ্রুপদী নাচে বিশেষ পারদর্শী, সিডনির প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী অর্পিতা সোম চৌধুরী। রাগপ্রধান নজরুল সঙ্গীতের সুরের তালে ও রঙিন আলোয় তার নাচে ছড়িয়ে দেন আনন্দের ছটা। সিডনির প্রখ্যাত সরোদ বাদক তানিম হায়াত খান রাজিত তার সরোদের সুরের মুর্ছনায় তৈরি করেন এক অপার্থিব মায়াবী পরিবেশ। এই পর্বটির সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন সাংস্কৃতিক সম্পাদক নুসরাত হুদা কান্তা।
আনুষ্ঠানিক পর্বে মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি কামরুল মান্নান আকাশ, সাধারণ সম্পাদক লিংকন শফিকউল্লাহ ও সম্মানিত অতিথি ড. জাকিয়া হোসেইন।
কামরুল মান্নান আকাশ সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এই প্রবাসে আমরা প্রত্যেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করি, তাই এর ঐতিহ্যের কথা, গৌরবের কথা ও এর সাহসী ছাত্রদের কথা সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে। প্রবীণদের প্রজ্ঞা ও তরুণদের উদ্যম এই সংগঠনটিকে নিয়ে যাবে এক অনন্য উচ্চতায়। আমাদের একটাই পরিচয় - আমরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং একই মায়ের সন্তান!’
তিনি কার্যকরী পরিষদের সকল সদস্যকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে অনুষ্ঠানটি সফল করে তোলার জন্য অভিনন্দন ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বিশেষ ধন্যবাদ জানান বাজেট ও ফিন্যান্স কমিটির আহসানুল হাসান হাদী, জাহিদ মাহমুদ, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক লিংকন শফিকউল্লাহকে।
ম্যাগাজিন সম্পাদনা পরিষদের সকল সদস্যকে চমৎকার এই প্রকাশনার জন্য ধন্যবাদ জানান। এরপর তিনি পরিষদ সদস্যদের মঞ্চে ডেকে পরিচয় করিয়ে দেন – সহসভাপতি গোলাম মওলা (অনুপস্থিত), সহসভাপতি খাইরুল চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক লিংকন শফিকউল্লাহ, কোষাধ্যক্ষ হালিমুসশান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সেলিমা বেগম, এডুকেশন ও রিসার্চ সম্পাদক সেলিম মমতাজ, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পাদক রফিক উদ্দিন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নুসরাত হুদা কান্তা, কার্যকরী পরিষদ সদস্য– নারগিস বানু, সাকিনা আক্তার, তানিয়া ফারজানা, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, হায়াত মাহমুদ, আহসানুল হাসান হাদী, জাহিদ মাহমুদ, মুনির হোসেইন (অনুপস্থিত) ও নুসরাত জাহান স্মৃতিকে।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি ও সিডনি ইউনিভার্সিটির মেডিসিন ও হেলথ ফ্যাকাল্টির সহযোগী অধ্যাপক ড. জাকিয়া হোসেইন। তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। একটি সফল অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য তিনি বর্তমান কার্যকরি পরিষদের সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানান। তাঁকে স্মারক ক্রেস্ট প্রদানের মাধ্যমে সম্মাননা জানানো হয়।
সাধারণ সম্পাদক লিংকন শফিকউল্লাহর বক্তব্যে উঠে আসে এই অনুষ্ঠানটি সফল করে তুলতে নিরলসভাবে কী পরিশ্রমটাই না করতে হয়েছে। তাকে সহযোগিতা করার জন্য কার্যকরী পরিষদের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। এর বাইরে রাজিত, পরবর্তী প্রজন্মের ফারহানসহ আরও অনেকেই সহায়তা করেছেন, তাদেরও ধন্যবাদ জানান।
লিংকন শফিকউল্লাহ বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানটি সফল করে তুলতে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী স্পন্সরেরা। তাদের উদার সহায়তার কারণে আমরা খুব সহজেই সুন্দরভাবে এটি করতে পেরেছি। প্রত্যেক স্পন্সরকে তাদের সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই।’
এরপর তিনি স্পন্সরদেরকে মঞ্চে ডেকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং সম্মাননা জানিয়ে তাদের হাতে স্মারক ক্রেস্ট তুলে দেন সভাপতি কামরুল মান্নান আকাশ।
মুখরোচক নৈশভোজের পরে শুরু হয় বহুল আকাঙ্ক্ষিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব। পুরো অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশ থেকে আগত নব্বই দশকের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আগুন। তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পী সিঁথি সাহাও ছিল অনেক পছন্দের তালিকায়। প্রথমে মঞ্চে আসে সিঁথি, তারা সুরেলা কণ্ঠ ও স্টেজ পারফরমেন্স ছিল মনমাতানো। তার আহ্বানে মঞ্চে এসে নাচে যোগ দেন তরুণ তরুণীরা। ‘ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখো’সহ অনেক জনপ্রিয় গান গেয়ে শোনান তিনি।
দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মঞ্চে আসেন সবার প্রিয় শিল্পী আগুন। শ্রোতারা দাঁড়িয়ে, করতালি দিয়ে বরণ করে নেন এই গুণী শিল্পীকে। তার যাদুকরী কণ্ঠে তিনি একের পর এক গেয়ে যান সেই সময়ের গান - বৃষ্টি ভেজা রাত, পথে পথে দিলাম ছড়াইয়ারে,পৃথিবীতে সুখ বলে যদি কিছু থেকে থাকে, এ হান্ড্রেড মাইলস এবং সিঁথির সাথে দ্বৈত সঙ্গীত সেই বিখ্যাত গান ‘ও আমার বন্ধু গো চিরসাথী পথ চলার’। তিনি গানে, কৌতুকে ও কথার মালায় মাতিয়ে রাখেন দর্শক শ্রোতাদের।
আগুন বলেন, ‘এটা আমার সেরা পারফরম্যান্সগুলোর একটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই নামটির সাথে কেমন যেন এক আবেগ ও ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। এখানে শ্রোতারা সবাই রুচিবান ও শিক্ষিত। এমন শ্রোতাদের গান শুনিয়ে এবং তাদের ভালোবাসা পেয়ে আমি সত্যিই অভিভূত!’
আগুনের শেষ গান ও সমাপ্তি ছিল একেবারেই অন্যরকম। আহমেদ ইমতিয়াজ বুল্বুলের সুরে মন ছুঁয়ে যাওয়া দেশাত্ববোধক গান ‘একাত্তরের মা জননী কোথায় তোমার মুক্তি-সেনার দল’–এর শেষে এসে আমার সোনার বাংলা দিয়ে সমাপনী, আগুনের স্যালুট এবং জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গাইতে হল থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার দৃশ্য ছিল এক অসাধারণ সংযোজনা। রাত ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এক নাগাড়ে গান শোনান আগুন।
ফ্লোর ম্যানেজমেন্টে ছিলেন লিংকন শফিকউল্লাহ এবং স্টেজ ম্যানেজমেন্টে ছিলেন জাহিদ মাহমুদ। শব্দ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার আত্তাবুর রহমান। যন্ত্র শিল্পীরা হলেন- লিড গিটারে সোহেল, বেস গিটারে আসাদুজ্জামান খালিদ, ড্রামে শাহরিয়ার জামাল, কি বোর্ডে রাস্নান জামান ও প্যাড ড্রামে আলী কাউসার। স্থির আলোকচিত্রী – জাহাঙ্গীর, ভিডিওতে এডওয়ার্ড অধিকারী।
রাত ১২টা ১ মিনিটে আগুন ও সিঁথিকে এবং উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন সভাপতি কামরুল মান্নান আকাশ।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সিডনিতে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি নাইট– গ্র্যান্ড রিইউনিয়ন ২০২৫’ এবং প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর উদযাপন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এবারই প্রথম বর্তমান কার্যকরি পরিষদের উদ্যোগে এতবড় আয়োজন করা হয়।
গত শনিবার (১০ মে) গ্রানভিলের গ্র্যান্ড রয়্যাল হলে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
বেশ কিছুদিন ধরেই সিডনিজুড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অনুষ্ঠানটি ছিল আলোচনার শীর্ষে। নির্ধারিত দিনের অনেক আগেই সব টিকিট শেষ হয়ে যায়। প্রায় ৪০০ জনের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন হলটি পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় অনেককেই নিরাশ হতে হয়। এই অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশ থেকে আগত নব্বই দশকের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আগুন ও তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পী সিঁথি সাহা l
যারা প্রিয় শিক্ষাঙ্গণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালোবাসেন, যারা জীবনের উজ্জ্বল সময়টুকু কাটিয়েছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে, যাদের মনে পড়ে ফেলে আসা সেই দিনগুলোর কথা, মনে পড়ে সেই প্রিয় মুখগুলোর কথা – তারা সবাই প্রাণের টানে একে একে পরিবার পরিজন নিয়ে এসে উপস্থিত হয় গ্রানভিলের গ্র্যান্ড রয়্যাল হলে। তাদের সরব উপস্থিতিতে বিরাজ করে এক আনন্দময় উৎসবমুখর পরিবেশ।
হলে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে পরবর্তী প্রজন্মের পৃথ্বীর পরিকল্পনায় ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কানিতার নিখুঁত সৃষ্টি দৃষ্টিনন্দন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকন কার্জন হল ও অপরাজেয় বাংলার প্রতিকৃতিতে সজ্জিত স্টেজ ও ৩৬০ ডিগ্রি ফটো বুথ।
রেজিস্ট্রেশন ডেস্ক থেকে স্বাগত জানিয়ে প্রতিটি অ্যালামনিকে দেওয়া হয় চমৎকার একটি ক্রেস্ট, নেম কার্ড ও দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রকাশিত স্মরণিকা ‘নানান রঙের দিনগুলো’। অ্যালামনি চারুশিল্পী রফিকুর খানের করা স্মরণিকার প্রচ্ছদটি ছিল অপূর্ব।
সন্ধ্যা ৬টায় অ্যালামনি নার্গিস বানুর সঞ্চালনায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনা শুরু হয় দুই দেশের জাতীয় সংগীত দিয়ে। নতুন প্রজন্মের সোমাইতা, নোরা ও নাঈফা পরিবেশন করে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত। সমবেত কণ্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন অ্যালামনাই দলের সদস্য তামিমা শাহরিন ও মাসুদ মিথুন, সঙ্গে ছিলেন আজিজুন, রুমানা, স্মৃতি, অদিতি, নিলুফার ও তবলায় সাকিনা।
অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় ছোট্ট হাফিদ আবিয়ান। একক সংগীত পরিবেশন করেন সংগঠনের নিয়মিত শিল্পী তামিমা ও মাসুদ। রবীন্দ্র সংগীতের সাথে চমৎকার নৃত্য পরিবেশন করে পরবর্তী প্রজন্মের ঈষিকা ও তারা। কবিতা আবৃত্তি করেন লাবন্য শিল্পী। এরপর মঞ্চে আসেন ধ্রুপদী নাচে বিশেষ পারদর্শী, সিডনির প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী অর্পিতা সোম চৌধুরী। রাগপ্রধান নজরুল সঙ্গীতের সুরের তালে ও রঙিন আলোয় তার নাচে ছড়িয়ে দেন আনন্দের ছটা। সিডনির প্রখ্যাত সরোদ বাদক তানিম হায়াত খান রাজিত তার সরোদের সুরের মুর্ছনায় তৈরি করেন এক অপার্থিব মায়াবী পরিবেশ। এই পর্বটির সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন সাংস্কৃতিক সম্পাদক নুসরাত হুদা কান্তা।
আনুষ্ঠানিক পর্বে মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি কামরুল মান্নান আকাশ, সাধারণ সম্পাদক লিংকন শফিকউল্লাহ ও সম্মানিত অতিথি ড. জাকিয়া হোসেইন।
কামরুল মান্নান আকাশ সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এই প্রবাসে আমরা প্রত্যেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করি, তাই এর ঐতিহ্যের কথা, গৌরবের কথা ও এর সাহসী ছাত্রদের কথা সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে। প্রবীণদের প্রজ্ঞা ও তরুণদের উদ্যম এই সংগঠনটিকে নিয়ে যাবে এক অনন্য উচ্চতায়। আমাদের একটাই পরিচয় - আমরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং একই মায়ের সন্তান!’
তিনি কার্যকরী পরিষদের সকল সদস্যকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে অনুষ্ঠানটি সফল করে তোলার জন্য অভিনন্দন ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বিশেষ ধন্যবাদ জানান বাজেট ও ফিন্যান্স কমিটির আহসানুল হাসান হাদী, জাহিদ মাহমুদ, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক লিংকন শফিকউল্লাহকে।
ম্যাগাজিন সম্পাদনা পরিষদের সকল সদস্যকে চমৎকার এই প্রকাশনার জন্য ধন্যবাদ জানান। এরপর তিনি পরিষদ সদস্যদের মঞ্চে ডেকে পরিচয় করিয়ে দেন – সহসভাপতি গোলাম মওলা (অনুপস্থিত), সহসভাপতি খাইরুল চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক লিংকন শফিকউল্লাহ, কোষাধ্যক্ষ হালিমুসশান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সেলিমা বেগম, এডুকেশন ও রিসার্চ সম্পাদক সেলিম মমতাজ, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পাদক রফিক উদ্দিন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নুসরাত হুদা কান্তা, কার্যকরী পরিষদ সদস্য– নারগিস বানু, সাকিনা আক্তার, তানিয়া ফারজানা, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, হায়াত মাহমুদ, আহসানুল হাসান হাদী, জাহিদ মাহমুদ, মুনির হোসেইন (অনুপস্থিত) ও নুসরাত জাহান স্মৃতিকে।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি ও সিডনি ইউনিভার্সিটির মেডিসিন ও হেলথ ফ্যাকাল্টির সহযোগী অধ্যাপক ড. জাকিয়া হোসেইন। তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। একটি সফল অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য তিনি বর্তমান কার্যকরি পরিষদের সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানান। তাঁকে স্মারক ক্রেস্ট প্রদানের মাধ্যমে সম্মাননা জানানো হয়।
সাধারণ সম্পাদক লিংকন শফিকউল্লাহর বক্তব্যে উঠে আসে এই অনুষ্ঠানটি সফল করে তুলতে নিরলসভাবে কী পরিশ্রমটাই না করতে হয়েছে। তাকে সহযোগিতা করার জন্য কার্যকরী পরিষদের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। এর বাইরে রাজিত, পরবর্তী প্রজন্মের ফারহানসহ আরও অনেকেই সহায়তা করেছেন, তাদেরও ধন্যবাদ জানান।
লিংকন শফিকউল্লাহ বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানটি সফল করে তুলতে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী স্পন্সরেরা। তাদের উদার সহায়তার কারণে আমরা খুব সহজেই সুন্দরভাবে এটি করতে পেরেছি। প্রত্যেক স্পন্সরকে তাদের সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই।’
এরপর তিনি স্পন্সরদেরকে মঞ্চে ডেকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং সম্মাননা জানিয়ে তাদের হাতে স্মারক ক্রেস্ট তুলে দেন সভাপতি কামরুল মান্নান আকাশ।
মুখরোচক নৈশভোজের পরে শুরু হয় বহুল আকাঙ্ক্ষিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব। পুরো অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশ থেকে আগত নব্বই দশকের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আগুন। তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পী সিঁথি সাহাও ছিল অনেক পছন্দের তালিকায়। প্রথমে মঞ্চে আসে সিঁথি, তারা সুরেলা কণ্ঠ ও স্টেজ পারফরমেন্স ছিল মনমাতানো। তার আহ্বানে মঞ্চে এসে নাচে যোগ দেন তরুণ তরুণীরা। ‘ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখো’সহ অনেক জনপ্রিয় গান গেয়ে শোনান তিনি।
দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মঞ্চে আসেন সবার প্রিয় শিল্পী আগুন। শ্রোতারা দাঁড়িয়ে, করতালি দিয়ে বরণ করে নেন এই গুণী শিল্পীকে। তার যাদুকরী কণ্ঠে তিনি একের পর এক গেয়ে যান সেই সময়ের গান - বৃষ্টি ভেজা রাত, পথে পথে দিলাম ছড়াইয়ারে,পৃথিবীতে সুখ বলে যদি কিছু থেকে থাকে, এ হান্ড্রেড মাইলস এবং সিঁথির সাথে দ্বৈত সঙ্গীত সেই বিখ্যাত গান ‘ও আমার বন্ধু গো চিরসাথী পথ চলার’। তিনি গানে, কৌতুকে ও কথার মালায় মাতিয়ে রাখেন দর্শক শ্রোতাদের।
আগুন বলেন, ‘এটা আমার সেরা পারফরম্যান্সগুলোর একটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই নামটির সাথে কেমন যেন এক আবেগ ও ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। এখানে শ্রোতারা সবাই রুচিবান ও শিক্ষিত। এমন শ্রোতাদের গান শুনিয়ে এবং তাদের ভালোবাসা পেয়ে আমি সত্যিই অভিভূত!’
আগুনের শেষ গান ও সমাপ্তি ছিল একেবারেই অন্যরকম। আহমেদ ইমতিয়াজ বুল্বুলের সুরে মন ছুঁয়ে যাওয়া দেশাত্ববোধক গান ‘একাত্তরের মা জননী কোথায় তোমার মুক্তি-সেনার দল’–এর শেষে এসে আমার সোনার বাংলা দিয়ে সমাপনী, আগুনের স্যালুট এবং জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গাইতে হল থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার দৃশ্য ছিল এক অসাধারণ সংযোজনা। রাত ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এক নাগাড়ে গান শোনান আগুন।
ফ্লোর ম্যানেজমেন্টে ছিলেন লিংকন শফিকউল্লাহ এবং স্টেজ ম্যানেজমেন্টে ছিলেন জাহিদ মাহমুদ। শব্দ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার আত্তাবুর রহমান। যন্ত্র শিল্পীরা হলেন- লিড গিটারে সোহেল, বেস গিটারে আসাদুজ্জামান খালিদ, ড্রামে শাহরিয়ার জামাল, কি বোর্ডে রাস্নান জামান ও প্যাড ড্রামে আলী কাউসার। স্থির আলোকচিত্রী – জাহাঙ্গীর, ভিডিওতে এডওয়ার্ড অধিকারী।
রাত ১২টা ১ মিনিটে আগুন ও সিঁথিকে এবং উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন সভাপতি কামরুল মান্নান আকাশ।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সিডনিতে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি নাইট– গ্র্যান্ড রিইউনিয়ন ২০২৫’ এবং প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর উদযাপন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এবারই প্রথম বর্তমান কার্যকরি পরিষদের উদ্যোগে এতবড় আয়োজন করা হয়।
কাতারে বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান দিগন্ত এক্সপ্রেস কন্ট্রাক্টিং অ্যান্ড হসপিটালিটি কোম্পানির সপ্তম বর্ষপূর্তি উদ্যাপন করা হয়েছে। সম্প্রতি কাতারের বাণিজ্যিক এলাকা নাজমার এয়ারপোর্ট রোড সংলগ্ন স্টিগেনবার্গার হোটেলের বল রুমে জমকালো এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মামুনি, আম্মা, মা, আম্মি, মাম্মি, মাতৃ, মাদার—সব আদুরে নাম গায়ে মেখে ক্যানসাসের অগাস্টা শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে একঝাঁক মায়ের ব্যতিক্রমী আয়োজন ‘বেস্ট মম এভার’। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস রাজ্যের ছায়াঘেরা অগাস্টায় পরিবার নিয়ে গত রোববার (১১ মে) সকাল থেকে মায়েরা অনুষ্ঠানস্থলে আসতে থাকেন।
বাংলাদেশ-জাপান ৬ষ্ঠ ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) জাপানের রাজধানী টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনায় বাংলাদেশ পক্ষের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম এবং জাপান পক্ষের নেতৃত্ব দেন জাপানের পররাষ্ট্রবিষয়ক সিনিয়র উপমন্ত্রী আকাহোরি তাকেশি।