logo
সুপ্রবাস

ফিনল্যান্ডে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দুজন বাংলাদেশি জয়ী

জামান সরকার, হেলসিংকি (ফিনল্যান্ড) থেকে১৭ এপ্রিল ২০২৫
Copied!
ফিনল্যান্ডে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দুজন বাংলাদেশি জয়ী
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের একাংশ

ফিনল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছে কাউন্টি ও পৌরসভা নির্বাচন (Alue- ja kuntavaalit)। গত রোববার (১৩ এপ্রিল) এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ও গণতান্ত্রিক চেতনায় পরিপূর্ণ।

জাতীয় পর্যায়ের দ্বিস্তর বিশিষ্ট এই নির্বাচনে ভোটারেরা স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক সেবা ও স্থানীয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ খাতসমূহে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ ও সাফল্য

২০২৫ সালের এই নির্বাচনে মোট ১৩ জন ফিনল্যান্ডপ্রবাসী বাংলাদেশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এটা প্রমাণ করে, ফিনল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটি এখন শুধু অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও সক্রিয় ও সচেতন।

অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশি প্রার্থীদের তালিকা

হেলসিংকি সিটি

আব্দুল কুদ্দুস খান–ওপেন পার্টি

মজিবুর দফতরি–গ্রিন পার্টি

তাসলিমা জামান–ন্যাশনাল কোয়ালিশন পার্টি

এস্পো সিটি

মিয়াজ নজরুল ইসলাম–সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি

কিঞ্চিৎ ঋদ্ধিমান–সেন্টার পার্টি

সুবীর তিতোভ – ফিনস পার্টি

কেরাভা সিটি

শামসুল আলম–বাম জোট (বিজয়ী)

পিয়েতারসারি সিটি

রিয়াজ হাওলাদার–সুইডিশ পিপলস পার্টি (বিজয়ী)

সৈয়দ মাহমুদুল হাসান–সুইডিশ পিপলস পার্টি

তাম্পেরে সিটি

এস এম শফিকুল আলম–গ্রিন পার্টি

কোকোলা সিটি

মাসুক করিম–সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি

লাপ্পেরান্তে সিটি

দিদার হোসেন–ন্যাশনাল কোয়ালিশন পার্টি

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রবাসী বাংলাদেশি
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রবাসী বাংলাদেশি

নির্বাচিত প্রবাসী প্রতিনিধি

তবে সব ছাপিয়ে আলোচনায় ছিল বাংলাদেশ কমিউনিটি। কেরাভা পৌরসভা থেকে শামসুল আলম টানা তৃতীয়বারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে রেকর্ড গড়েছেন।

এদিকে প্রথমবারের নির্বাচনেই নজর কাড়েন রিয়াজ হাওলাদার। পিয়েতারসারি মিউনিসিপ্যাল থেকে সুইডিশ পিপলস পার্টির হয়ে পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তিনি।

শামসুল আলম, কেরাভা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

রিয়াজ হাওলাদার, পিয়েতারসারি সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পদে জয়ী হয়েছেন।

মিয়াজ নজরুল ইসলাম, এসপো সিটি করপোরেশনে ডেপুটি কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

হেলসিংকি মিউনিসিপ্যাল থেকে ওপেন পার্টির প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস খান সর্বোচ্চ ভোট পেয়েও দলীয় আনুপাতিক হিসেবে পরাজিত হন। এস্পো সিটির মিয়াজ নজরুল ইসলামও ভালো অবস্থানে থেকেও জয়ী হতে পারেননি। তবে তিনি ডেপুটি কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

এই বিজয় নিঃসন্দেহে ফিনল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য একটি গর্বের অধ্যায়। অভিবাসী সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ দেশটির বহুজাতিক সমাজ ব্যবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।

পৌরসভা নির্বাচনের সার্বিক চিত্র

ভোট গণনায় ছিল টানটান উত্তেজনা। শতভাগ গণনা শেষে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। তবে আনুপাতিক হারের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ আসন পেয়েছে সেন্টার পার্টি। ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল কোয়ালিশন পার্টি পিছিয়ে পড়েছে, আর ফিনস পার্টিকে পড়তে হয়েছে বিপাকে।

পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল

সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (SDP): ২৩.০% ভোট, ১,৭০২ আসন।

ন্যাশনাল কোয়ালিশন পার্টি (Kokoomus): ২১.৯% ভোট, ১,৫৯৩ আসন।

সেন্টার পার্টি (Keskusta): ১৬.৪% ভোট, ২,৬২৩ আসন।

গ্রিন পার্টি (Vihreät): ১০.৫% ভোট, ৪১৭ আসন।

বাম জোট (Vasemmistoliitto): ৯.৩% ভোট, ৫৩৫ আসন।

ফিনস পার্টি (Perussuomalaiset): ৭.৬% ভোট, ৬৪৯ আসন

মোট বৈধ ভোট দিয়েছেন: ২৪ লাখ ১৩ হাজার ১৪৮ জন
ভোটার উপস্থিতির হার: ৫৪.২%

কাউন্টি নির্বাচনের ফলাফল

সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি: ২২.৫% ভোট, ৩২০ আসন।

ন্যাশনাল কোয়ালিশন পার্টি: ২০.৪% ভোট, ২৮১ আসন।

সেন্টার পার্টি: ১৯.৪% ভোট, ৩০৪ আসন।

বাম জোট: ৯.১% ভোট, ১১৭ আসন।

গ্রিন পার্টি: ৯.১% ভোট, ১০৭ আসন।

ফিনস পার্টি: ৭.৮% ভোট, ১০৬ আসন।

মোট বৈধ ভোট: ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭২০
ভোটার উপস্থিতির হার: ৫১.৭%

ফিনল্যান্ডে দল ও প্রার্থী নির্বাচনের পদ্ধতি: অনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে গণতন্ত্রের নিখুঁত চিত্র

ফিনল্যান্ডে স্থানীয় ও আঞ্চলিক নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচন এবং জয়-পরাজয়ের হিসাব হয় এক বিশেষ ধরণনের পদ্ধতিতে, যার নাম অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি (Proportional Representation System)। এই ব্যবস্থায় প্রতিটি দলের জনপ্রিয়তা অনুযায়ী আসন বণ্টন এবং নির্বাচনে ভোটারদের সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়।

কীভাবে ভোট হয়?
ভোটাররা সাধারণত সরাসরি একটি দলের তালিকা থেকে একজন নির্দিষ্ট প্রার্থীকে ভোট দেন। অর্থাৎ, একজন ভোটার তার পছন্দের দলের ভেতর থেকেও প্রার্থীর নাম নির্ধারণ করে ভোট প্রদান করেন। ফলে ভোটটি যায় দুই জায়গায়—একদিকে নির্দিষ্ট প্রার্থীর ঝুলিতে, অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট দলের মোট ভোটসংখ্যায় যুক্ত হয়।

কতজন প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারে একটি দল?
প্রতিটি দল সর্বোচ্চ মোট আসনের দেড়গুণ সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি এস্পো সিটি কাউন্সিলে ১০০টি আসন থাকে, তাহলে প্রতিটি দল সর্বোচ্চ ১৫০ জন প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারে।

ভোটের ভিত্তিতে আসন বণ্টন
নির্বাচনের ফলাফলে প্রতিটি দলের মোট প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে আসন সংখ্যা নির্ধারিত হয়। যেমন, কোনো সিটি করপোরেশনের ১০০টি আসনের মধ্যে যদি সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (SDP) পায় ৩১% ভোট, তাহলে দলটি পাবে ৩১টি আসন। একইভাবে, ন্যাশনাল কোয়ালিশন পার্টি (Kokoomus) যদি পায় ১৮% ভোট, তবে তাদের ভাগে যাবে ১৮টি আসন। এভাবেই গ্রিন পার্টি, সেন্টার পার্টি, ফিনস পার্টিসহ অন্যান্য দল নিজেদের ভোটের অনুপাতে আসন লাভ করে।

প্রার্থী নির্বাচনের চূড়ান্ত ধাপ
একবার যখন কোনো দলের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক আসন নির্ধারিত হয়, তখন সেই দলের প্রার্থীদের মধ্যে যারা ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন, তারাই কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

রিজার্ভড প্রার্থী কারা?
প্রার্থী তালিকায় অনেকের নামের পাশে দেখা যায় ‘রিজার্ভড প্রার্থী’। এর অর্থ, তারা নির্বাচনে সরাসরি জয়ী হননি। তবে নির্বাচিত কাউন্সিলর অনুপস্থিত থাকলে, দল চাইলে তার জায়গায় এসব প্রতিস্থাপক প্রার্থী দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তারা মূলত ‘প্রক্সি’ বা বিকল্প হিসেবে বিবেচিত।

গণতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষার মডেল
এই পুরো ব্যবস্থাটি নিশ্চিত করে যে, জনমত যথাযথভাবে প্রতিফলিত এবং স্থানীয় প্রশাসনে দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে হয়েছে। এটি ফিনল্যান্ডের রাজনৈতিক পরিপক্বতা ও অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থার একটি সফল দৃষ্টান্ত।

আরও পড়ুন

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে জোহরান মামদানির ঐতিহাসিক জয়

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে জোহরান মামদানির ঐতিহাসিক জয়

এই নির্বাচন শুধু একটি শহরের নেতৃত্ব বদলে দেয়নি, এটি বদলে দিয়েছে রাজনৈতিক বাস্তবতা ও কল্পনার সীমানা। নিউইয়র্ক—যে শহরকে বলা হয় বিশ্বের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রাজধানী, যেখানে ইসরায়েলের বাইরে সবচেয়ে বড় ইহুদি জনগোষ্ঠী বাস করে।

৭ দিন আগে

বাহরাইনে প্রবাসীদের জন্য সচেতনতামূলক মোবাইল কনস্যুলার ক্যাম্প

বাহরাইনে প্রবাসীদের জন্য সচেতনতামূলক মোবাইল কনস্যুলার ক্যাম্প

বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রবাসীদের জন্য এক বিশেষ সচেতনতামূলক মোবাইল কনস্যুলার ক্যাম্প।

১৩ দিন আগে

কুয়েতস্থ প্রবাসী লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনী

কুয়েতস্থ প্রবাসী লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনী

কুয়েতে ঈদুল আজহা উপলক্ষে কুয়েতপ্রবাসী লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির উদ্যোগে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

১৪ দিন আগে

একটা মৃত্যু চেয়েছি

একটা মৃত্যু চেয়েছি

একটা মৃত্যু চেয়েছি— নীরব, নিরুচ্চার, যেখানে শব্দেরা আর খোঁচা দেবে না, প্রশ্নেরা চোখে চোখ রাখবে না আর।

১৪ দিন আগে