রহমান মৃধা, সুইডেন
মানুষের জীবনে কিছু স্মৃতি এমনভাবে হৃদয়ে গেঁথে থাকে, যা সময়ের স্রোতে কখনো মলিন হয় না। ১৯৭১ সালের সেই অন্ধকার দিনগুলোর স্মৃতি আজও বাংলাদেশের মানুষের মনে জ্বলন্ত এক ক্ষতের মতো। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুরতা, মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা গ্রামের পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি আর লুটপাটের বিভীষিকা—এসব যেন এক অম্লান অধ্যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলের তাণ্ডব দেখার পর সেই স্মৃতিগুলো যেন আবারও ফিরে এল। লস অ্যাঞ্জেলেসে আমার ছোট বোন জলি এবং তাঁর পরিবার এই ভয়াবহ দাবানলের শিকার। তাদের জন্য গভীর দুশ্চিন্তা নিয়ে আমি যখন সেই আগুনের লেলিহান শিখা আর মানুষের অসহায় চেহারা দেখি, তখন ১৯৭১ সালের সেই দিনগুলোর চিত্র যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
আমি তখন একজন শিশু মুক্তিযোদ্ধা। নহাটা গ্রামে আমাদের বাড়ি ছিল। সেখানেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তাণ্ডব দেখে আমি বড়দের সঙ্গে জীবন বাজি রেখে সেই বিভীষিকাময় দিনগুলো পার করেছি। গ্রামের বাড়িঘর পুড়ে ছাই, মানুষের দিশেহারা ছুটে চলা, আর চারপাশে ধ্বংসের চিহ্ন—এসব দৃশ্য আজও মনের গহীনে জ্বলজ্বল করে।
১৯৭১: নহাটা গ্রাম পুড়ে ছাই
নহাটা গ্রামে ছিল আমার বাপ-চাচাদের বড় বড় গুদামঘর। যা শুধু সম্পত্তি নয়, সবার জীবনের আশা-ভরসা ছিল। পাকিস্তানি হানাদারেরা সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে দেয়। সেই আগুন শুধু ঘর নয়, মাসের পর মাস আমাদের স্বপ্ন, আমাদের শিকড় পুড়িয়ে দিয়েছিল। তাণ্ডবের ফাঁকে দুষ্কৃতকারীরা সব লুটে নিয়ে যায়। তখন আমি নিজেই ছিলাম এক শিশু মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধের মাঠে নয়, বরং বেঁচে থাকার সংগ্রামে। পরিবারের বড়রা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, আর আমি মাকে আর ছোট ভাইবোনদের নিয়ে সেই যুদ্ধে জীবন বাজি রেখে টিকে থাকার চেষ্টা করেছিলাম।
নহাটা গ্রাম ছিল একসময় সচ্ছলতার প্রতীক। ছোট্ট এই গ্রামে ছিল বাপ-চাচাদের বড় বড় গুদামঘর। এই গুদামগুলোতে জমা থাকত বছরের ফসল, ব্যবসার মালামাল। পাকিস্তানি সেনারা একদিন আচমকা হামলা চালিয়ে পুরো গ্রামটিকে জ্বালিয়ে দেয়। ঘরবাড়ি, ফসলের গুদাম, বাজারের প্রতিটি দোকান—সব কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
আগুনের শিখায় শুধু জ্বলে ওঠেনি গাছপালা বা স্থাপত্য, বরং পুড়ে গিয়েছিল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা। মাসের পর মাস ধরে পুড়ছিল সেই গ্রাম। ধোঁয়া আর ছাইয়ের মাঝে বেঁচে থাকা মানুষগুলো যেন প্রাণহীন হয়ে পড়েছিল। সেই ফাঁকে কিছু দুষ্কৃতকারী এই ভস্মীভূত ধ্বংসাবশেষ থেকে লুটপাট করত। ঘরবাড়ি হারানো মানুষের চোখে তখন শুধুই জল, আর মনে কেবল একটাই প্রশ্ন—কেন এই নিষ্ঠুরতা?
২০২৫: লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল
আজ ৫৪ বছর পর লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল দেখে সেই স্মৃতি যেন তাজা হয়ে ফিরে এল। আগুনের লেলিহান শিখায় যেন তখনকার সেই ভস্মীভূত নহাটা গ্রামকে দেখতে পাই। আজ লস অ্যাঞ্জেলেসেও মানুষ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করছে, কেউ পরিবার নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে, আবার কেউ নিঃস্ব হয়ে সব হারিয়েছে। তবে এক বিষাদময় মিল এখানেও দেখছি—অমানবিক মানুষের আচরণ। তখন যেমন লুটপাটকারীরা যুদ্ধের সুযোগ নিয়েছিল, আজ ক্যালিফোর্নিয়ার এই সংকটেও কিছু মানুষ দুর্যোগে সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছে। এখানে অবশ্য কোনো যুদ্ধ নেই, কোনো সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত হামলা নেই। তবে প্রকৃতির এই অপ্রতিরোধ্য শক্তি মানুষের গৃহস্থালি, স্বপ্ন, আর আশাকে তেমনই পুড়িয়ে দিচ্ছে।
আগুনের শিখায় এখানকার বনভূমি জ্বলছে, ঘরবাড়ি ভস্মীভূত হচ্ছে, আর আকাশে ভাসছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি, রাস্তা আর আশ্রয়হীন মানুষের অসহায়তা আমাকে ১৯৭১-এর স্মৃতির গভীরে টেনে নিয়ে গেল। সেদিন যেমন নহাটা গ্রামে মানুষ এক পা সামনে বাড়াতে ভয় পেত, আজকের লস অ্যাঞ্জেলেসের মানুষ তেমনই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত।
তুলনা: একই আগুন, ভিন্ন প্রেক্ষাপট
তবু একটা পার্থক্য আছে। ১৯৭১ সালের সেই আগুন ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আগুন। আমাদের হৃদয়ে ছিল স্বাধীনতার পবিত্র মন্ত্র। কিন্তু এখানে লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল প্রকৃতির এক নির্মম প্রতিশোধ। তবে তাণ্ডব আর লুটপাট দুই ক্ষেত্রেই যেন মানুষকে কেবল অসহায়ই করে তোলে।
নহাটা গ্রামের আগুন ছিল মানবসৃষ্ট, পাকিস্তানি সেনাদের পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ। অন্যদিকে, লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল অনেকাংশে প্রাকৃতিক, যদিও মানুষের উদাসীনতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের হাত ধরে এটি আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
তবে ধ্বংসের ধরণে রয়েছে এক আশ্চর্য মিল। দুই ক্ষেত্রেই মানুষ হারিয়েছে তাদের ঘরবাড়ি, সম্পদ ও স্বপ্ন। ১৯৭১ সালে আমরা দেখেছিলাম, আগুনের ফাঁকে দুষ্কৃতকারীরা লুটপাট চালিয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলেও কিছু মানুষ অন্যের দুরবস্থার সুযোগ নিতে পিছপা হয়নি।
আবেগের দিক থেকে অভিন্ন
১৯৭১ সালে আমরা ভেঙেছি, কিন্তু হেরে যাইনি। সেই সময়ও আমাদের হৃদয়ে আশা ছিল, আর আজও আমি আশাবাদী। যেমন জলি এবং তাঁর পরিবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তেমনই আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। আমাদের সন্তানদের এই ইতিহাস জানাতে হবে, কারণ এগুলো শুধু স্মৃতি নয়, এগুলো শিক্ষা।
এ দুই ঘটনাকে যখন মনে করি, তখন একটাই প্রশ্ন মনে জাগে—কেন মানুষ বারবার ধ্বংসের মুখোমুখি হয়? নহাটার মানুষ সেই আগুনের পরেও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণ করেছে, ক্ষত সারিয়ে তুলেছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের মানুষও একদিন ঘুরে দাঁড়াবে। তবে এইসব ধ্বংস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতি এবং মানবতার প্রতি আমাদের দায়িত্বের কথা।
শিক্ষা ও আশা
আজ এই দাবানল আমার কাছে শুধু একটি ঘটনা নয়; এটি স্মরণ করিয়ে দেয় মানুষকে, তার শক্তি এবং তার দুর্বলতাকে। তখন যেমন আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, তেমনই আজকের এই আধুনিক বিশ্বে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
নহাটা গ্রাম কিংবা লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল—দুই ক্ষেত্রেই ধ্বংসের পেছনে রয়েছে মানুষ এবং প্রকৃতির সম্পর্কের একটি গভীর সংকট। এখন সময় এসেছে, এই সংকট থেকে শিক্ষা নেওয়ার। ১৯৭১ সালে আমরা শিখেছিলাম ঐক্য এবং প্রতিরোধের মর্ম। লস অ্যাঞ্জেলেস তথা ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষকেও শিখতে হবে, কীভাবে প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া যায়।
তবে সব ধ্বংসের শেষে একটি আশার আলো থাকে। যেমন নহাটা গ্রাম পুড়ে গিয়েও নতুন করে বাঁচতে শিখেছে, তেমনি লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল পেরিয়েও মানুষ ঘুরে দাঁড়াবে।
হৃদয়ের গভীর থেকে একটি বার্তা
‘আমরা মানুষ, আমাদের মধ্যে মানবিকতা জাগ্রত থাকুক, যেন দুর্যোগের মুখেও আমরা আশার আলো জ্বালাতে পারি। আগুন কখনো স্বপ্নকে ভস্ম করতে পারে না।’
এইসব স্মৃতি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ধ্বংস এবং পুনর্গঠন মানুষের জীবনের চিরন্তন চক্র। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিখে, আমরা যেন ভবিষ্যৎকে আরও মানবিক এবং সংবেদনশীল করে তুলতে পারি।
—রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
ইমেইল: [email protected]
মানুষের জীবনে কিছু স্মৃতি এমনভাবে হৃদয়ে গেঁথে থাকে, যা সময়ের স্রোতে কখনো মলিন হয় না। ১৯৭১ সালের সেই অন্ধকার দিনগুলোর স্মৃতি আজও বাংলাদেশের মানুষের মনে জ্বলন্ত এক ক্ষতের মতো। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুরতা, মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা গ্রামের পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি আর লুটপাটের বিভীষিকা—এসব যেন এক অম্লান অধ্যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলের তাণ্ডব দেখার পর সেই স্মৃতিগুলো যেন আবারও ফিরে এল। লস অ্যাঞ্জেলেসে আমার ছোট বোন জলি এবং তাঁর পরিবার এই ভয়াবহ দাবানলের শিকার। তাদের জন্য গভীর দুশ্চিন্তা নিয়ে আমি যখন সেই আগুনের লেলিহান শিখা আর মানুষের অসহায় চেহারা দেখি, তখন ১৯৭১ সালের সেই দিনগুলোর চিত্র যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
আমি তখন একজন শিশু মুক্তিযোদ্ধা। নহাটা গ্রামে আমাদের বাড়ি ছিল। সেখানেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তাণ্ডব দেখে আমি বড়দের সঙ্গে জীবন বাজি রেখে সেই বিভীষিকাময় দিনগুলো পার করেছি। গ্রামের বাড়িঘর পুড়ে ছাই, মানুষের দিশেহারা ছুটে চলা, আর চারপাশে ধ্বংসের চিহ্ন—এসব দৃশ্য আজও মনের গহীনে জ্বলজ্বল করে।
১৯৭১: নহাটা গ্রাম পুড়ে ছাই
নহাটা গ্রামে ছিল আমার বাপ-চাচাদের বড় বড় গুদামঘর। যা শুধু সম্পত্তি নয়, সবার জীবনের আশা-ভরসা ছিল। পাকিস্তানি হানাদারেরা সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে দেয়। সেই আগুন শুধু ঘর নয়, মাসের পর মাস আমাদের স্বপ্ন, আমাদের শিকড় পুড়িয়ে দিয়েছিল। তাণ্ডবের ফাঁকে দুষ্কৃতকারীরা সব লুটে নিয়ে যায়। তখন আমি নিজেই ছিলাম এক শিশু মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধের মাঠে নয়, বরং বেঁচে থাকার সংগ্রামে। পরিবারের বড়রা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, আর আমি মাকে আর ছোট ভাইবোনদের নিয়ে সেই যুদ্ধে জীবন বাজি রেখে টিকে থাকার চেষ্টা করেছিলাম।
নহাটা গ্রাম ছিল একসময় সচ্ছলতার প্রতীক। ছোট্ট এই গ্রামে ছিল বাপ-চাচাদের বড় বড় গুদামঘর। এই গুদামগুলোতে জমা থাকত বছরের ফসল, ব্যবসার মালামাল। পাকিস্তানি সেনারা একদিন আচমকা হামলা চালিয়ে পুরো গ্রামটিকে জ্বালিয়ে দেয়। ঘরবাড়ি, ফসলের গুদাম, বাজারের প্রতিটি দোকান—সব কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
আগুনের শিখায় শুধু জ্বলে ওঠেনি গাছপালা বা স্থাপত্য, বরং পুড়ে গিয়েছিল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা। মাসের পর মাস ধরে পুড়ছিল সেই গ্রাম। ধোঁয়া আর ছাইয়ের মাঝে বেঁচে থাকা মানুষগুলো যেন প্রাণহীন হয়ে পড়েছিল। সেই ফাঁকে কিছু দুষ্কৃতকারী এই ভস্মীভূত ধ্বংসাবশেষ থেকে লুটপাট করত। ঘরবাড়ি হারানো মানুষের চোখে তখন শুধুই জল, আর মনে কেবল একটাই প্রশ্ন—কেন এই নিষ্ঠুরতা?
২০২৫: লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল
আজ ৫৪ বছর পর লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল দেখে সেই স্মৃতি যেন তাজা হয়ে ফিরে এল। আগুনের লেলিহান শিখায় যেন তখনকার সেই ভস্মীভূত নহাটা গ্রামকে দেখতে পাই। আজ লস অ্যাঞ্জেলেসেও মানুষ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করছে, কেউ পরিবার নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে, আবার কেউ নিঃস্ব হয়ে সব হারিয়েছে। তবে এক বিষাদময় মিল এখানেও দেখছি—অমানবিক মানুষের আচরণ। তখন যেমন লুটপাটকারীরা যুদ্ধের সুযোগ নিয়েছিল, আজ ক্যালিফোর্নিয়ার এই সংকটেও কিছু মানুষ দুর্যোগে সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছে। এখানে অবশ্য কোনো যুদ্ধ নেই, কোনো সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত হামলা নেই। তবে প্রকৃতির এই অপ্রতিরোধ্য শক্তি মানুষের গৃহস্থালি, স্বপ্ন, আর আশাকে তেমনই পুড়িয়ে দিচ্ছে।
আগুনের শিখায় এখানকার বনভূমি জ্বলছে, ঘরবাড়ি ভস্মীভূত হচ্ছে, আর আকাশে ভাসছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি, রাস্তা আর আশ্রয়হীন মানুষের অসহায়তা আমাকে ১৯৭১-এর স্মৃতির গভীরে টেনে নিয়ে গেল। সেদিন যেমন নহাটা গ্রামে মানুষ এক পা সামনে বাড়াতে ভয় পেত, আজকের লস অ্যাঞ্জেলেসের মানুষ তেমনই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত।
তুলনা: একই আগুন, ভিন্ন প্রেক্ষাপট
তবু একটা পার্থক্য আছে। ১৯৭১ সালের সেই আগুন ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আগুন। আমাদের হৃদয়ে ছিল স্বাধীনতার পবিত্র মন্ত্র। কিন্তু এখানে লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল প্রকৃতির এক নির্মম প্রতিশোধ। তবে তাণ্ডব আর লুটপাট দুই ক্ষেত্রেই যেন মানুষকে কেবল অসহায়ই করে তোলে।
নহাটা গ্রামের আগুন ছিল মানবসৃষ্ট, পাকিস্তানি সেনাদের পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ। অন্যদিকে, লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল অনেকাংশে প্রাকৃতিক, যদিও মানুষের উদাসীনতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের হাত ধরে এটি আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
তবে ধ্বংসের ধরণে রয়েছে এক আশ্চর্য মিল। দুই ক্ষেত্রেই মানুষ হারিয়েছে তাদের ঘরবাড়ি, সম্পদ ও স্বপ্ন। ১৯৭১ সালে আমরা দেখেছিলাম, আগুনের ফাঁকে দুষ্কৃতকারীরা লুটপাট চালিয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলেও কিছু মানুষ অন্যের দুরবস্থার সুযোগ নিতে পিছপা হয়নি।
আবেগের দিক থেকে অভিন্ন
১৯৭১ সালে আমরা ভেঙেছি, কিন্তু হেরে যাইনি। সেই সময়ও আমাদের হৃদয়ে আশা ছিল, আর আজও আমি আশাবাদী। যেমন জলি এবং তাঁর পরিবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তেমনই আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। আমাদের সন্তানদের এই ইতিহাস জানাতে হবে, কারণ এগুলো শুধু স্মৃতি নয়, এগুলো শিক্ষা।
এ দুই ঘটনাকে যখন মনে করি, তখন একটাই প্রশ্ন মনে জাগে—কেন মানুষ বারবার ধ্বংসের মুখোমুখি হয়? নহাটার মানুষ সেই আগুনের পরেও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণ করেছে, ক্ষত সারিয়ে তুলেছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের মানুষও একদিন ঘুরে দাঁড়াবে। তবে এইসব ধ্বংস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতি এবং মানবতার প্রতি আমাদের দায়িত্বের কথা।
শিক্ষা ও আশা
আজ এই দাবানল আমার কাছে শুধু একটি ঘটনা নয়; এটি স্মরণ করিয়ে দেয় মানুষকে, তার শক্তি এবং তার দুর্বলতাকে। তখন যেমন আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, তেমনই আজকের এই আধুনিক বিশ্বে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
নহাটা গ্রাম কিংবা লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল—দুই ক্ষেত্রেই ধ্বংসের পেছনে রয়েছে মানুষ এবং প্রকৃতির সম্পর্কের একটি গভীর সংকট। এখন সময় এসেছে, এই সংকট থেকে শিক্ষা নেওয়ার। ১৯৭১ সালে আমরা শিখেছিলাম ঐক্য এবং প্রতিরোধের মর্ম। লস অ্যাঞ্জেলেস তথা ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষকেও শিখতে হবে, কীভাবে প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া যায়।
তবে সব ধ্বংসের শেষে একটি আশার আলো থাকে। যেমন নহাটা গ্রাম পুড়ে গিয়েও নতুন করে বাঁচতে শিখেছে, তেমনি লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল পেরিয়েও মানুষ ঘুরে দাঁড়াবে।
হৃদয়ের গভীর থেকে একটি বার্তা
‘আমরা মানুষ, আমাদের মধ্যে মানবিকতা জাগ্রত থাকুক, যেন দুর্যোগের মুখেও আমরা আশার আলো জ্বালাতে পারি। আগুন কখনো স্বপ্নকে ভস্ম করতে পারে না।’
এইসব স্মৃতি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ধ্বংস এবং পুনর্গঠন মানুষের জীবনের চিরন্তন চক্র। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিখে, আমরা যেন ভবিষ্যৎকে আরও মানবিক এবং সংবেদনশীল করে তুলতে পারি।
—রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
ইমেইল: [email protected]
মালয়েশিয়ার উত্তরে ব্যস্ত ইস্ট-ওয়েস্ট হাইওয়েতে একটি বাস ও মিনিভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে। বাসটিতে সুলতান ইদ্রিস এডুকেশন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ছিলেন। আজ সোমবার (৯ জুন) ভোরে এ ঘটনা ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসীবিরোধী অভিযানের জেরে টানা তৃতীয় দিনের মতো গতকাল রোববারও (৮ জুন) বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
গ্রেটা থুনবার্গের গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী জাহাজ ম্যাডলিনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরায়েল। জাহাজটিকে ইসরায়েলি উপকূলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ও কর্মস্থল হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা ইলন মাস্কের স্টারলিংক ইন্টারনেটে নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে বলে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তাদের কথা উপেক্ষা করে হোয়াইট হাউস কমপ্লেক্সে স্থাপন করা হয় স্টারলিংকের ইন্টারনেট সংযোগ।