বিডিজেন ডেস্ক
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নয়নাভিরাম পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্র পহেলগামে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সন্দেহভাজন বিদ্রোহীরা অন্তত ২৬ জন পর্যটককে হত্যা করেছে।
গত ২৫ বছরে এটি কাশ্মীরে ঘটা সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা, যা কি না ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও খারাপ দিকে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
খবে কাতারভাত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার।
হামলাটি ঘটেছে কাশ্মীরের দক্ষিণ অনন্তনাগ জেলায়। হামলার সময় পুরো অঞ্চলটি পর্যটকে ভরপুর ছিল।
যদিও গত তিন দশক ধরে কাশ্মীর বিদ্রোহ ও সংঘাতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তবু প্রতিবছরের মতো এবারও লাখ লাখ পর্যটক এখানে ছুটি কাটাতে এসেছেন।
হামলার পরপরই পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে এবং হামলাকারীদের ধরতে অভিযান শুরু করে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সেখানে উড়ে যান।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন এবং আজ বুধবার সকালে এই হামলার জবাব কীভাবে দেওয়া হবে, তা ঠিক করতে জরুরি বৈঠক করেন।
ঘটনাটি এমন সময়েই ঘটেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারতে সফরে আছেন। তিনি সোমবার এসেছেন এবং বৃহস্পতিবার (আগামীকাল) তাঁর ফিরে যাওয়ার কথা।
এই হামলায় কী কী ঘটেছে, কারা হতাহত হয়েছেন, কারা এর পেছনে আছে, কেন এই হামলা হলো, এর পটভূমি কী এবং এর ফলে কাশ্মীর ও গোটা অঞ্চলের জন্য কী বার্তা বহন করছে—সব বিষয় নিয়েই এখন বিশ্লেষণ চলছে।
ভারত কীভাবে এই ঘটনার জবাব দেবে, তা নিয়েও অনেক আলোচনা চলছে।
হতাহত সম্পর্কে কী জানা গেছে
এই হামলায় অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছে এবং আরও অনেকেই আহত হয়েছে।
নিহত ব্যক্তিদের সবাই ওই এলাকায় বেড়াতে যাওয়া সাধারণ নাগরিক।
তাদের মধ্যে নববিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে হানিমুনে যাওয়া হরিয়ানার একজন নৌবাহিনীর কর্মকর্তাও আছেন।
এ ছাড়া, মারা গেছেন অন্ধ্র প্রদেশের পাণ্ডুরঙ্গপুরম এলাকার ৬৮ বছর বয়সী এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আরও আছেন কর্ণাটকের এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, ওডিশার এক হিসাবরক্ষক, উত্তর প্রদেশের একজন সিমেন্ট ব্যবসায়ী এবং কেরালার এক বিদেশফেরত নাগরিক। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বিদেশিও ছিলেন। তিনি নেপালের নাগরিক।
এই হামলার দায় কি কেউ স্বীকার করেছে?
‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামের একটি গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। ধারণা করা হয়, গোষ্ঠীটি পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার শাখা।
টিআরএফ এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, কাশ্মীরে ভারত সরকার বাইরের রাজ্যের হাজার হাজার বাসিন্দাকে যে পারমিট দিচ্ছে, তার প্রতিবাদে এই হামলা চালানো হয়েছে।
এসব পারমিট ভারতীয় নাগরিকদের কাশ্মীরে বসবাস ও কাজ করার অনুমতি দেয়। তবে আল–জাজিরা স্বাধীনভাবে এই বিবৃতির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
ভারত সরকার ২০১৯ সালে কাশ্মীরের আধা স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা বাতিল করে এবং অঞ্চলটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে দেয়।
এই সিদ্ধান্তের ফলে কাশ্মীরে রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে যায় এবং সরকারের পক্ষ থেকে অ-কাশ্মীরিদের বসবাসের অনুমতি দেওয়ার পথ খুলে যায়, যা কিনা আগে নিষিদ্ধ ছিল।
ভারতীয় কর্মকর্তারা আল–জাজিরাকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা সন্দেহ করছেন, হামলায় চারজন অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন পাকিস্তান থেকে এসেছেন এবং বাকি দুজন ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বাসিন্দা।
এর আগে কি কখনো পর্যটকদের ওপর এমন হামলা হয়েছিল?
কাশ্মীরে বহু বছর ধরে সংঘাত চললেও সরাসরি পর্যটকদের ওপর হামলা খুব কমই হয়েছে।
১৯৯৫ সালে পহেলগামে আল-ফারান নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ৬ জন বিদেশি পর্যটককে অপহরণ করেছিল।
তাদের মধ্যে একজনকে হত্যা করা হয়, একজন পালিয়ে যান এবং বাকি ৫ জনের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
২০০০ সালে পহেলগামের নুনওয়ান এলাকায় এক হামলায় ৩২ জন নিহত হয়। তাদের মধ্যে ২১ জন ছিলেন হিন্দু তীর্থযাত্রী।
এর এক বছর পর, একই এলাকায় শেশনাগ হ্রদের কাছে আরেক হামলায় ১৩ জন নিহত হয়। তাঁদের মধ্যে ১১ জন ছিলেন তীর্থযাত্রী, বাকি দুজন স্থানীয় বাসিন্দা।
২০১৭ সালে অনন্তনাগ জেলায় এক গুলির ঘটনায় ৮ জন হিন্দু তীর্থযাত্রী নিহত হয়।
গত বছরের জুন মাসে জম্মুর দক্ষিণাংশের কাঠুয়ায় এক তীর্থযাত্রীবাহী বাসে হামলা হলে সেটি খাদে পড়ে যায় এবং ৮ জন তীর্থযাত্রী নিহত হয়।
কিন্তু এবারের, অর্থাৎ মঙ্গলবারের হামলাটি সম্ভবত ২০০০ সালের নুনওয়ানের হামলার পর থেকে পর্যটকদের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।
সামগ্রিকভাবে কাশ্মীরে ২০০১ সালের অক্টোবর মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্য পরিষদের বাইরে বোমা হামলায় ৩৫ জন নিহত হওয়ার পর এমন ভয়াবহ প্রাণহানির ঘটনা আর দেখা যায়নি।
এই হামলার ধরন ও ভয়াবহতা বেঁচে যাওয়া মানুষ ও স্থানীয় রাজনীতিকদের হতবাক করে দিয়েছে।
গুজরাটের ৬৫ বছর বয়সী পর্যটক বিনু বাই গুলিবিদ্ধ হয়ে অনন্তনাগ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পহেলগামে গিয়েছিলাম, আমি তখন মাঠে চেয়ার বসে ছিলাম।
হঠাৎ তিনটা গুলির শব্দ শুনলাম। মুহূর্তেই চারদিকে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। সবাই দৌড়াতে শুরু করে। তখনই একটি গুলি আমার হাতে এসে লাগে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, কাশ্মীর এখন শান্তিপূর্ণ। ভাবতেই পারিনি এমন কিছু হবে।’
স্থানীয় বিরোধী দলের সঙ্গে যুক্ত তরুণ রাজনীতিক ইলতিজা মুফতি বলেন, পহেলগামে সাধারণত ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী টহল দেয়।
এমন একটি জায়গায়, বিশেষ করে বাইসারানে এ ধরনের হামলা হওয়া খুবই অবাক করার মতো। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সমাজে এ ধরনের হামলার কোনো জায়গা নেই।’
ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া কী?
কাশ্মীরের এই ভয়াবহ হামলার পর দেশের পক্ষ থেকে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, তা ঠিক করতে বুধবার ভারতের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সৌদি আরব সফরে জেদ্দায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে নৈশভোজের কথা ছিল। কিন্তু তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত ভারতে ফিরে আসেন।
মোদি এক টুইটে লেখেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা করছি। যাঁরা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা। আহত ব্যক্তিরা যেন দ্রুত সুস্থ হন, সেই প্রার্থনা করছি। ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। যারা এই নৃশংস হামলার পেছনে আছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে…কাউকে ছাড়া হবে না!’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও দ্রুত শ্রীনগরে পৌঁছান এবং সেখানকার শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এদিকে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, কাশ্মীর থেকে ২০১৯ সালে বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর যে ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতি’র দাবি করা হচ্ছে, তা বাস্তবে ফাঁকা বুলি ছাড়া আর কিছু নয়।
রাহুল গান্ধী বলেন, ‘গোটা দেশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক—এমন খালি দাবি না করে সরকারকে এখন দায়িত্ব নিতে হবে এবং এমন নৃশংস ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সেই জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে নিরীহ ভারতীয়দের আর প্রাণ হারাতে না হয়।’
ভারত কি পাকিস্তানে হামলা চালাবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নৃশংস হামলার জবাবে ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো না কোনো ধরনের পাল্টা ব্যবস্থা থাকতে পারে।
নয়াদিল্লিভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক ‘সেন্টার ফর ল্যান্ড ওয়ারফেয়ার স্টাডিজ’-এর (ক্লস) পরিচালক তারা কার্থা বলেন, ‘এটি একপ্রকার যুদ্ধ ঘোষণা। আমরা একে সেভাবেই দেখছি। এটা এমন এক সময় ঘটল, যখন কিছুদিন আগেই পাকিস্তানের সেনাপ্রধান একটি বিতর্কিত ভাষণ দিয়েছিলেন।’
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সচিবালয়ে একসময় দায়িত্ব পালন করে আসা তারা কার্থা পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ১৬ এপ্রিল দেওয়া এক বক্তব্যের কথা বলছিলেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ওই বক্তব্যে আসিম মুনির ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের অনুঘটক দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রতি আবারও সমর্থন জানিয়েছেন এবং মুসলমানদের ‘হিন্দুদের থেকে আলাদা পরিচয়’–এর কথা জোর দিয়ে বলেন।
তারা কার্থার মতে, পহেলগামে যা ঘটেছে, তা মুনিরের ওই বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের ধারার সঙ্গে মিলে যায়। তিনি বলেন, ‘শুধু পাকিস্তান যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই হামলার কঠোর নিন্দা করে এবং জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলেই একটি বড় ধরনের সংকট এড়ানো সম্ভব হতে পারে।’
পাকিস্তান সরকার বুধবার ভোরে এই বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে।
তাতে বলা হয়, ‘ভারত অধিকৃত অবৈধ জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’
ভারত ও পাকিস্তান—উভয়েই পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের দাবি করে এবং উভয় দেশ কাশ্মীরের একটি করে অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
পাকিস্তানের এই বিবৃতি ভারতের জনমনে সৃষ্ট ক্ষোভ প্রশমিত করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, সরকার এখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দেশবাসীর চাপের মুখে রয়েছে।
কেউ কেউ হঠাৎ করে উত্তেজিত প্রতিক্রিয়ার দেখানোর বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন।
দিল্লিভিত্তিক অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাবা নকভি বলেন, ভারতের তুলনায় পাকিস্তান অনেক বেশি অস্থিতিশীল। তাই ভারতের প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত ভাবনাচিন্তাপূর্ণ ও স্থির।
সাবা নকভি বলেন, ‘ভারতের ক্ষেত্রে অনেকেই ভাবেন, বিজেপি সরকার হয়তো বিমান থেকে বোমা ফেলবে, আর তাহলেই সব প্রতিশোধ নেওয়া এত সহজ নয়।
কাশ্মীরের জন্য এই হামলার অর্থ কী?
কাশ্মীরের রাজনীতিক ও নাগরিক সমাজের নেতারা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এমন ধরনের হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় কাশ্মীরের সাধারণ মানুষেরই।
বিরোধী দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) তরুণ বিধায়ক ওহিদ উর রহমান পাড়া আল–জাজিরাকে বলেন, ‘এটি সন্ত্রাসী হামলা। আমি এটাকে অন্যভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারছি না। যারা এই কাজ করেছে, তারা কাশ্মীরিদের, আমাদের অর্থনীতিকে এবং গত কয়েক মাসে ফিরে আসা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ধ্বংস করতে চায়।’
কাশ্মীরের অর্থনীতিতে পর্যটনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি অঞ্চলটির মোট জিডিপির প্রায় ৭ শতাংশ যোগ করে।
এ ছাড়া, পর্যটকের ভিড়কে ভারতের শাসকদল বিজেপি রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেও ব্যবহার করে—তারা বলে, কাশ্মীরে শান্তি ফিরে এসেছে।
বাস্তবতা হলো, পহেলগামে হামলার আগেও কাশ্মীরের পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক ছিল না।
২০১৯ সালে ভারতের সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর থেকে রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর কঠোর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে।
হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এমন কিছু আইন দিয়ে, যেগুলোর আওতায় কাউকে বিচারের আগেই দীর্ঘদিন আটক রাখা যায়।
গত বছরের অক্টোবরে প্রায় এক দশক পর কাশ্মীরে আবার স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত এক প্রশাসক নির্বাচনের সুযোগ তৈরি হয়। সেই নির্বাচনে স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনপ্রিয় প্রাদেশিক রাজনীতিক ওমর আবদুল্লাহ বড় জয় পান।
তবে তিনি প্রকৃতপক্ষে খুব সীমিত ক্ষমতা পান। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার মনোনীত লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনেক বড় বড় সিদ্ধান্তের ক্ষমতা নিজের হাতে রেখেছেন।
তবুও পহেলগামে হামলার পর কাশ্মীরের হোটেল ব্যবসায়ী ও ট্যুর অপারেটররা পর্যটকদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন এবং হামলাকারীদের নিন্দা করেছেন।
পহেলগামের হোটেল ব্যবসায়ী ও হোটেলমালিকদের সংগঠনের সাবেক সভাপতি আবদুল ওয়াহিদ মালিক বলেন, ‘এই হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
এই মুহূর্তে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, মানুষের প্রাণহানি। এখন আমাদের মূল চিন্তা পর্যটন নয়।’
মঙ্গলবারের হামলার পর রামবান এলাকায় ভূমিধসের কারণে কাশ্মীর ভূখন্ডের সঙ্গে জম্মুর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে আতঙ্কগ্রস্ত পর্যটকেরা এলাকায় আটকে পড়েছেন, বিমান ভাড়াও অনেক বেড়ে গেছে।
এই অবস্থায় ওয়াহিদ মালিক জানতে পারেন, একটি পর্যটক পরিবার আটকে পড়েছে। তিনি তাদের জন্য নিজের হোটেলে চারটি কক্ষের ব্যবস্থা করেন।
ওয়াহিদ মালিক বলেন, ‘তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। এই হামলা আমাদের মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে।’
কাশ্মীরের পর্যটন ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বুধবার বিক্ষোভ ও স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালন করে। অনেক সাধারণ বাসিন্দাও হামলার ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত।
শ্রীনগরের ৩১ বছর বয়সী বাসিন্দা নাদিয়া ফারুক বলেন, ‘কাশ্মীর মানুষ সাধারণত অতিথিপরায়ণ ও আন্তরিক—এই পরিচয়েই পরিচিত। এত প্রাণহানির ঘটনায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। আমরা শান্তি চাই, রক্তপাতের শেষ চাই। আমরা শোকাচ্ছন্ন।’
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নয়নাভিরাম পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্র পহেলগামে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সন্দেহভাজন বিদ্রোহীরা অন্তত ২৬ জন পর্যটককে হত্যা করেছে।
গত ২৫ বছরে এটি কাশ্মীরে ঘটা সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা, যা কি না ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও খারাপ দিকে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
খবে কাতারভাত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার।
হামলাটি ঘটেছে কাশ্মীরের দক্ষিণ অনন্তনাগ জেলায়। হামলার সময় পুরো অঞ্চলটি পর্যটকে ভরপুর ছিল।
যদিও গত তিন দশক ধরে কাশ্মীর বিদ্রোহ ও সংঘাতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তবু প্রতিবছরের মতো এবারও লাখ লাখ পর্যটক এখানে ছুটি কাটাতে এসেছেন।
হামলার পরপরই পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে এবং হামলাকারীদের ধরতে অভিযান শুরু করে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সেখানে উড়ে যান।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন এবং আজ বুধবার সকালে এই হামলার জবাব কীভাবে দেওয়া হবে, তা ঠিক করতে জরুরি বৈঠক করেন।
ঘটনাটি এমন সময়েই ঘটেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারতে সফরে আছেন। তিনি সোমবার এসেছেন এবং বৃহস্পতিবার (আগামীকাল) তাঁর ফিরে যাওয়ার কথা।
এই হামলায় কী কী ঘটেছে, কারা হতাহত হয়েছেন, কারা এর পেছনে আছে, কেন এই হামলা হলো, এর পটভূমি কী এবং এর ফলে কাশ্মীর ও গোটা অঞ্চলের জন্য কী বার্তা বহন করছে—সব বিষয় নিয়েই এখন বিশ্লেষণ চলছে।
ভারত কীভাবে এই ঘটনার জবাব দেবে, তা নিয়েও অনেক আলোচনা চলছে।
হতাহত সম্পর্কে কী জানা গেছে
এই হামলায় অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছে এবং আরও অনেকেই আহত হয়েছে।
নিহত ব্যক্তিদের সবাই ওই এলাকায় বেড়াতে যাওয়া সাধারণ নাগরিক।
তাদের মধ্যে নববিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে হানিমুনে যাওয়া হরিয়ানার একজন নৌবাহিনীর কর্মকর্তাও আছেন।
এ ছাড়া, মারা গেছেন অন্ধ্র প্রদেশের পাণ্ডুরঙ্গপুরম এলাকার ৬৮ বছর বয়সী এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আরও আছেন কর্ণাটকের এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, ওডিশার এক হিসাবরক্ষক, উত্তর প্রদেশের একজন সিমেন্ট ব্যবসায়ী এবং কেরালার এক বিদেশফেরত নাগরিক। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বিদেশিও ছিলেন। তিনি নেপালের নাগরিক।
এই হামলার দায় কি কেউ স্বীকার করেছে?
‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামের একটি গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। ধারণা করা হয়, গোষ্ঠীটি পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার শাখা।
টিআরএফ এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, কাশ্মীরে ভারত সরকার বাইরের রাজ্যের হাজার হাজার বাসিন্দাকে যে পারমিট দিচ্ছে, তার প্রতিবাদে এই হামলা চালানো হয়েছে।
এসব পারমিট ভারতীয় নাগরিকদের কাশ্মীরে বসবাস ও কাজ করার অনুমতি দেয়। তবে আল–জাজিরা স্বাধীনভাবে এই বিবৃতির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
ভারত সরকার ২০১৯ সালে কাশ্মীরের আধা স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা বাতিল করে এবং অঞ্চলটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে দেয়।
এই সিদ্ধান্তের ফলে কাশ্মীরে রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে যায় এবং সরকারের পক্ষ থেকে অ-কাশ্মীরিদের বসবাসের অনুমতি দেওয়ার পথ খুলে যায়, যা কিনা আগে নিষিদ্ধ ছিল।
ভারতীয় কর্মকর্তারা আল–জাজিরাকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা সন্দেহ করছেন, হামলায় চারজন অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন পাকিস্তান থেকে এসেছেন এবং বাকি দুজন ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বাসিন্দা।
এর আগে কি কখনো পর্যটকদের ওপর এমন হামলা হয়েছিল?
কাশ্মীরে বহু বছর ধরে সংঘাত চললেও সরাসরি পর্যটকদের ওপর হামলা খুব কমই হয়েছে।
১৯৯৫ সালে পহেলগামে আল-ফারান নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ৬ জন বিদেশি পর্যটককে অপহরণ করেছিল।
তাদের মধ্যে একজনকে হত্যা করা হয়, একজন পালিয়ে যান এবং বাকি ৫ জনের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
২০০০ সালে পহেলগামের নুনওয়ান এলাকায় এক হামলায় ৩২ জন নিহত হয়। তাদের মধ্যে ২১ জন ছিলেন হিন্দু তীর্থযাত্রী।
এর এক বছর পর, একই এলাকায় শেশনাগ হ্রদের কাছে আরেক হামলায় ১৩ জন নিহত হয়। তাঁদের মধ্যে ১১ জন ছিলেন তীর্থযাত্রী, বাকি দুজন স্থানীয় বাসিন্দা।
২০১৭ সালে অনন্তনাগ জেলায় এক গুলির ঘটনায় ৮ জন হিন্দু তীর্থযাত্রী নিহত হয়।
গত বছরের জুন মাসে জম্মুর দক্ষিণাংশের কাঠুয়ায় এক তীর্থযাত্রীবাহী বাসে হামলা হলে সেটি খাদে পড়ে যায় এবং ৮ জন তীর্থযাত্রী নিহত হয়।
কিন্তু এবারের, অর্থাৎ মঙ্গলবারের হামলাটি সম্ভবত ২০০০ সালের নুনওয়ানের হামলার পর থেকে পর্যটকদের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।
সামগ্রিকভাবে কাশ্মীরে ২০০১ সালের অক্টোবর মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্য পরিষদের বাইরে বোমা হামলায় ৩৫ জন নিহত হওয়ার পর এমন ভয়াবহ প্রাণহানির ঘটনা আর দেখা যায়নি।
এই হামলার ধরন ও ভয়াবহতা বেঁচে যাওয়া মানুষ ও স্থানীয় রাজনীতিকদের হতবাক করে দিয়েছে।
গুজরাটের ৬৫ বছর বয়সী পর্যটক বিনু বাই গুলিবিদ্ধ হয়ে অনন্তনাগ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পহেলগামে গিয়েছিলাম, আমি তখন মাঠে চেয়ার বসে ছিলাম।
হঠাৎ তিনটা গুলির শব্দ শুনলাম। মুহূর্তেই চারদিকে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। সবাই দৌড়াতে শুরু করে। তখনই একটি গুলি আমার হাতে এসে লাগে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, কাশ্মীর এখন শান্তিপূর্ণ। ভাবতেই পারিনি এমন কিছু হবে।’
স্থানীয় বিরোধী দলের সঙ্গে যুক্ত তরুণ রাজনীতিক ইলতিজা মুফতি বলেন, পহেলগামে সাধারণত ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী টহল দেয়।
এমন একটি জায়গায়, বিশেষ করে বাইসারানে এ ধরনের হামলা হওয়া খুবই অবাক করার মতো। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সমাজে এ ধরনের হামলার কোনো জায়গা নেই।’
ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া কী?
কাশ্মীরের এই ভয়াবহ হামলার পর দেশের পক্ষ থেকে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, তা ঠিক করতে বুধবার ভারতের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সৌদি আরব সফরে জেদ্দায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে নৈশভোজের কথা ছিল। কিন্তু তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত ভারতে ফিরে আসেন।
মোদি এক টুইটে লেখেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা করছি। যাঁরা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা। আহত ব্যক্তিরা যেন দ্রুত সুস্থ হন, সেই প্রার্থনা করছি। ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। যারা এই নৃশংস হামলার পেছনে আছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে…কাউকে ছাড়া হবে না!’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও দ্রুত শ্রীনগরে পৌঁছান এবং সেখানকার শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এদিকে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, কাশ্মীর থেকে ২০১৯ সালে বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর যে ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতি’র দাবি করা হচ্ছে, তা বাস্তবে ফাঁকা বুলি ছাড়া আর কিছু নয়।
রাহুল গান্ধী বলেন, ‘গোটা দেশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক—এমন খালি দাবি না করে সরকারকে এখন দায়িত্ব নিতে হবে এবং এমন নৃশংস ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সেই জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে নিরীহ ভারতীয়দের আর প্রাণ হারাতে না হয়।’
ভারত কি পাকিস্তানে হামলা চালাবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নৃশংস হামলার জবাবে ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো না কোনো ধরনের পাল্টা ব্যবস্থা থাকতে পারে।
নয়াদিল্লিভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক ‘সেন্টার ফর ল্যান্ড ওয়ারফেয়ার স্টাডিজ’-এর (ক্লস) পরিচালক তারা কার্থা বলেন, ‘এটি একপ্রকার যুদ্ধ ঘোষণা। আমরা একে সেভাবেই দেখছি। এটা এমন এক সময় ঘটল, যখন কিছুদিন আগেই পাকিস্তানের সেনাপ্রধান একটি বিতর্কিত ভাষণ দিয়েছিলেন।’
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সচিবালয়ে একসময় দায়িত্ব পালন করে আসা তারা কার্থা পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ১৬ এপ্রিল দেওয়া এক বক্তব্যের কথা বলছিলেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ওই বক্তব্যে আসিম মুনির ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের অনুঘটক দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রতি আবারও সমর্থন জানিয়েছেন এবং মুসলমানদের ‘হিন্দুদের থেকে আলাদা পরিচয়’–এর কথা জোর দিয়ে বলেন।
তারা কার্থার মতে, পহেলগামে যা ঘটেছে, তা মুনিরের ওই বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের ধারার সঙ্গে মিলে যায়। তিনি বলেন, ‘শুধু পাকিস্তান যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই হামলার কঠোর নিন্দা করে এবং জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলেই একটি বড় ধরনের সংকট এড়ানো সম্ভব হতে পারে।’
পাকিস্তান সরকার বুধবার ভোরে এই বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে।
তাতে বলা হয়, ‘ভারত অধিকৃত অবৈধ জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’
ভারত ও পাকিস্তান—উভয়েই পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের দাবি করে এবং উভয় দেশ কাশ্মীরের একটি করে অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
পাকিস্তানের এই বিবৃতি ভারতের জনমনে সৃষ্ট ক্ষোভ প্রশমিত করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, সরকার এখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দেশবাসীর চাপের মুখে রয়েছে।
কেউ কেউ হঠাৎ করে উত্তেজিত প্রতিক্রিয়ার দেখানোর বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন।
দিল্লিভিত্তিক অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাবা নকভি বলেন, ভারতের তুলনায় পাকিস্তান অনেক বেশি অস্থিতিশীল। তাই ভারতের প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত ভাবনাচিন্তাপূর্ণ ও স্থির।
সাবা নকভি বলেন, ‘ভারতের ক্ষেত্রে অনেকেই ভাবেন, বিজেপি সরকার হয়তো বিমান থেকে বোমা ফেলবে, আর তাহলেই সব প্রতিশোধ নেওয়া এত সহজ নয়।
কাশ্মীরের জন্য এই হামলার অর্থ কী?
কাশ্মীরের রাজনীতিক ও নাগরিক সমাজের নেতারা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এমন ধরনের হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় কাশ্মীরের সাধারণ মানুষেরই।
বিরোধী দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) তরুণ বিধায়ক ওহিদ উর রহমান পাড়া আল–জাজিরাকে বলেন, ‘এটি সন্ত্রাসী হামলা। আমি এটাকে অন্যভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারছি না। যারা এই কাজ করেছে, তারা কাশ্মীরিদের, আমাদের অর্থনীতিকে এবং গত কয়েক মাসে ফিরে আসা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ধ্বংস করতে চায়।’
কাশ্মীরের অর্থনীতিতে পর্যটনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি অঞ্চলটির মোট জিডিপির প্রায় ৭ শতাংশ যোগ করে।
এ ছাড়া, পর্যটকের ভিড়কে ভারতের শাসকদল বিজেপি রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেও ব্যবহার করে—তারা বলে, কাশ্মীরে শান্তি ফিরে এসেছে।
বাস্তবতা হলো, পহেলগামে হামলার আগেও কাশ্মীরের পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক ছিল না।
২০১৯ সালে ভারতের সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর থেকে রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর কঠোর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে।
হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এমন কিছু আইন দিয়ে, যেগুলোর আওতায় কাউকে বিচারের আগেই দীর্ঘদিন আটক রাখা যায়।
গত বছরের অক্টোবরে প্রায় এক দশক পর কাশ্মীরে আবার স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত এক প্রশাসক নির্বাচনের সুযোগ তৈরি হয়। সেই নির্বাচনে স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনপ্রিয় প্রাদেশিক রাজনীতিক ওমর আবদুল্লাহ বড় জয় পান।
তবে তিনি প্রকৃতপক্ষে খুব সীমিত ক্ষমতা পান। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার মনোনীত লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনেক বড় বড় সিদ্ধান্তের ক্ষমতা নিজের হাতে রেখেছেন।
তবুও পহেলগামে হামলার পর কাশ্মীরের হোটেল ব্যবসায়ী ও ট্যুর অপারেটররা পর্যটকদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন এবং হামলাকারীদের নিন্দা করেছেন।
পহেলগামের হোটেল ব্যবসায়ী ও হোটেলমালিকদের সংগঠনের সাবেক সভাপতি আবদুল ওয়াহিদ মালিক বলেন, ‘এই হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
এই মুহূর্তে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, মানুষের প্রাণহানি। এখন আমাদের মূল চিন্তা পর্যটন নয়।’
মঙ্গলবারের হামলার পর রামবান এলাকায় ভূমিধসের কারণে কাশ্মীর ভূখন্ডের সঙ্গে জম্মুর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে আতঙ্কগ্রস্ত পর্যটকেরা এলাকায় আটকে পড়েছেন, বিমান ভাড়াও অনেক বেড়ে গেছে।
এই অবস্থায় ওয়াহিদ মালিক জানতে পারেন, একটি পর্যটক পরিবার আটকে পড়েছে। তিনি তাদের জন্য নিজের হোটেলে চারটি কক্ষের ব্যবস্থা করেন।
ওয়াহিদ মালিক বলেন, ‘তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। এই হামলা আমাদের মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে।’
কাশ্মীরের পর্যটন ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বুধবার বিক্ষোভ ও স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালন করে। অনেক সাধারণ বাসিন্দাও হামলার ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত।
শ্রীনগরের ৩১ বছর বয়সী বাসিন্দা নাদিয়া ফারুক বলেন, ‘কাশ্মীর মানুষ সাধারণত অতিথিপরায়ণ ও আন্তরিক—এই পরিচয়েই পরিচিত। এত প্রাণহানির ঘটনায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। আমরা শান্তি চাই, রক্তপাতের শেষ চাই। আমরা শোকাচ্ছন্ন।’
ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে দেশটির সঙ্গে তৃতীয় দফায় বৈঠক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার (২৬ এপ্রিল) ওমানের রাজধানী মাসকাটে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে আলোচনায় অগ্রগতির কথা জানিয়েছে দুই দেশই। একই সঙ্গে আগামী সপ্তাহে আবারও আলোচনায় বসার বিষয়ে একমত হয়েছে তারা।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে এ সমস্যা নিয়ে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে। নিজেরাই বিষয়গুলো মিটিয়ে ফেলবে। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বহনকারী বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদি
পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে অংশ নিতে রোম সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গতকাল শনিবার (২৬ এপ্রিল) বৈঠক করেছেন। ভ্যাটিকানের বিশাল গির্জার ভেতরে তাঁরা একান্তে বৈঠক করেন।
ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে দেশটির সঙ্গে আলোচনায় বসেছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার (২৬ এপ্রিল) ওমানের রাজধানী মাসকাটে দুই পক্ষের মধ্যে এ আলোচনা শুরু হয় বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল। এ নিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো দুই দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসলেন।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে এ সমস্যা নিয়ে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে। নিজেরাই বিষয়গুলো মিটিয়ে ফেলবে। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বহনকারী বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদি
২০ ঘণ্টা আগে