বিডিজেন ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস কর্তৃপক্ষ অভিবাসন বিষয়ে দেশটির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহৎ এ শহরের প্রশাসন নিজেদের ‘স্যাঙ্কচুয়ারি সিটি’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিস এ খবর দিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস নগর কাউন্সিল একটি ‘স্যাঙ্কচুয়ারি সিটি’ অধ্যাদেশ পাস করেছে। নিজেদের ‘স্যাঙ্কচুয়ারি সিটি’ ঘোষণা করার অর্থ হলো, স্থানীয় প্রশাসন থেকে কেন্দ্রীয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে অভিবাসন বিষয়ে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হবে না
লস অ্যাঞ্জেলেসের সরকারি স্কুলব্যবস্থাও নিজেদের ‘স্যাঙ্কচুয়ারি’ অবস্থান পুনর্নিশ্চিত করেছে। এর ফলে বৈধ নথিবিহীন অভিবাসীরা সরকারি স্কুলে বিনা বাধায় শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পাবে।
৫ নভেম্বরের ভোটে জিতে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে হোয়াইট হাউসে ফিরতে পারলে গণহারে অবৈধ ও অনিবন্ধিত অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করবেন।
ট্রাম্প এরই মধ্যে সীমান্ত দেখভালের জন্য বেছে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবীণ অভিবাসন কর্মকর্তা টম হোম্যানকে।
এক দশকের কিছু আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্যাঙ্কচুয়ারি সিটি’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়। কোনো এলাকা ‘স্যাঙ্কচুয়ারি’ ঘোষণা করার অর্থ হলো, স্থানীয় প্রশাসন থেকে কেন্দ্রীয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে খুব সামান্য সহায়তা করা হবে।
যদিও এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো আইন জারি হয়নি। ‘স্যাঙ্কচুয়ারি’ হতে নগর কর্তৃপক্ষ নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যেমন আইনে বিভিন্ন বিধি অন্তর্ভুক্ত করা বা স্থানীয় পুলিশি কার্যক্রমে পরিবর্তন আনা।
‘স্যাঙ্কচুয়ারি’ অধ্যাদেশ পাস হলে নগর কর্তৃপক্ষ ও সংস্থাগুলো কেন্দ্রীয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পর্কে তথ্য দিতে বাধ্য থাকে না।
লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন ব্যাস ওই অধ্যাদেশে সই করলে এটি কার্যকর হবে।
বোস্টন ও নিউইয়র্ক সিটিসহ যুক্তরাষ্ট্রের আরও কয়েকটি নগর কর্তৃপক্ষ একই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
২০১৬ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বেশ কয়েকটি স্কুল নিজেদের ‘স্যাঙ্কচুয়ারি’ বা ‘অভয়ারণ্য’ ঘোষণা করে। শিক্ষার্থীদের বিতাড়ন আটকাতে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।
ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদেও অভিবাসীদের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত ছিলেন। এবারও তিনি একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নিজ প্রতিশ্রুতি পূরণে তিনি বেছে নিয়েছেন টম হোম্যানকে। তাঁকে ট্রাম্পের ‘সীমান্ত জার’ ডাকা হচ্ছে। এ বিষয়ে হোম্যান বারবার বলেছেন, নগরগুলো নিজেদের ‘স্যাঙ্কচুয়ারি’ ঘোষণা করে ভবিষ্যৎ ট্রাম্প প্রশাসনকে তাদের লক্ষ্য পূরণে আটকে রাখতে পারবে না।
১১ নভেম্বর ফক্স টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হোম্যান বলেন, ‘কেউ আমাদের “অভিবাসী অপরাধী”দের বিতাড়ন করা থেকে থামাতে পারবে না। আমরা হয় আপনাকে সঙ্গে নিয়ে অথবা আপনাকে ছাড়াই এ কাজ করতে চলেছি।
প্রথম দফায় সব অভিবাসীকে কেন যুক্তরাষ্ট্রছাড়া করতে পারেননি ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথাবার্তা এবং আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তাঁদের দেশছাড়া করার ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতিতে আতঙ্কে আছেন অনেকে। ইতিমধ্যে ট্রাম্প ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ীও হয়েছেন। তবে প্রথম মেয়াদে হোয়াইট হাউসে থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসীদের ব্যাপক সংখ্যায় বের করে দেওয়ার তাঁর পরিকল্পনা থেমে গিয়েছিল।
খবর সংবাদমাধ্যম সিএনএনের।
এটিও বিস্ময়ের যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন অভিবাসীবিরোধী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে এবং ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির অনুরূপ অনেককে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। এ প্রশাসন কত অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রছাড়া করেছে, সে বিষয়ে অনেক তথ্যই অজানা।
ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে অভিবাসনের ওপর বিশেষ মনোযোগ দেন। চেষ্টা করেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের। বাইরের দেশ, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো থেকে লোকজনের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে আসা সীমিত করেন। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্টোর নাগরিক ও বিশ্ববাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের স্বাগত না জানানোর ইঙ্গিত দেন।
ওই মেয়াদে ট্রাম্প ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পর্যন্ত অভিবাসীবিরোধী তল্লাশি চালানোর অনুমতি দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বিভাগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টম হোম্যান বলেন, আগামী জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হবেন বলেই তাঁর বিশ্বাস।
সোমবার ফক্স নিউজকে হোম্যান বলেন, দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান প্রথম মেয়াদের মতোই হতে পারে। তবে এবার বেশি সংখ্যায় অভিবাসীদের বের করে দেওয়া হতে পারে।
হোম্যান বলেন, ‘(ট্রাম্পের) প্রথম মেয়াদে যা হয়েছে, এবারও সেটিই হতে চলেছে; বরং তার চেয়ে বেশি কিছু। কেননা, বাইডেন প্রশাসনের অধীন দেশে এখন এক কোটি অবৈধ অভিবাসী বসবাস করছেন।’
ওবামা কেন ট্রাম্পের চেয়ে বেশি অভিবাসী ফেরত পাঠান
এখনকার মতো প্রথম মেয়াদেও ট্রাম্প অভিবাসীদের ব্যাপকভাবে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। অঙ্গীকার অনুযায়ী অনেককে নিজেদের দেশে ফেরতও পাঠান তিনি; যা সংখ্যায় হবে ১৫ লাখের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের নীতিবিশ্লেষক ক্যাথলিন বুশ–জোসেফ এ তথ্য দিয়েছেন।
কিন্তু এর আগে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর প্রথম দফার শাসনামলে প্রায় ২৯ লাখ অভিবাসীকে বের করে দেন। সে হিসাবে ট্রাম্প প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট থাকাকালে অর্ধেকসংখ্যক অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠান। ওবামার দ্বিতীয় মেয়াদেও ১৯ লাখ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হয়। অর্থাৎ অভিবাসী বিতাড়নে ট্রাম্পের চেয়ে ওবামাই ছিলেন এগিয়ে।
বুশ–জোসেফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলে গেছেন ১৪ লাখ ৯০ হাজার অভিবাসী। করোনা মহামারি চলাকালে ট্রাম্প আমলের গৃহীত নীতি অনুসারে সীমান্ত থেকে যে লাখ লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ফেরত যেতে বাধ্য করা হয়, এ পরিসংখ্যানে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বাইডেনের মেয়াদের অধিকাংশ সময় ওই নীতি কার্যকর ছিল।
বুশ–জোসেফের তথ্য অনুযায়ী, বাইডেনের শাসনামলে মূলত সীমান্ত এলাকার অভিবাসীদের ওপর মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে ট্রাম্প ও ওবামার সময় যেসব অভিবাসীকে বের করে দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ছিলেন দেশের ভেতরে বসবাসকারীও।
ওবামার সময় অভিবাসী ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে মেক্সিকো থেকে আসা একক ব্যক্তিরা গুরুত্ব পেয়েছিলেন বলে জানান ক্যাথলিন বুশ-জোসেফ। তবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অনিবন্ধিত অভিবাসীরা মূলত বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ও পরিবারভুক্ত লোকজন। এটি তাঁদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া জটিল করে তুলেছে। এ জটিলতা শুধু আইনগত দিক থেকেই নয়; বরং অনেক দেশ এমন প্রত্যাবাসন মেনে নেবে না, সেদিক থেকেও। অবশ্য বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তির আওতায় মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্র থেকে অন্য দেশের অভিবাসীদেরও গ্রহণ করা শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অভিবাসীদের মধ্যে ১৩ লাখ লোককে এরই মধ্যে দেশ ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হলেও তাঁদের প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হয়নি বলে জানান বুশ–জোসেফ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে সরকারই অভিবাসন বিষয়টিকে মোকাবিলা করুক, তাদের সেকেলে মার্কিন অভিবাসনব্যবস্থা ও জনবলঘাটতির মুখে পড়তে হয়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যাপক সংখ্যায় অভিবাসী বের করে দেওয়ার বিষয়টি বারবারই আটকে যাওয়ার পেছনে আছে আরও নানা কারণ। এ প্রসঙ্গে লিবারটারিয়ান ক্যাটো ইনস্টিটিউটের ইমিগ্রেশন স্টাডিজ বিভাগের পরিচালক ডেভিড বায়ার বলছিলেন, স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী অনেক সংস্থা এ বিষয়ে ফেডারেল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালে এ অবস্থার শুরু হয় এবং ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তা আরও বেড়ে যায়।
অনিচ্ছাকৃত পরিণতি
বায়ারের গবেষণা বলছে, অভিবাসীদের বিষয়ে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি কিছু অনিচ্ছাকৃত পরিণতি ডেকে আনে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড আছে—এমন ব্যক্তিদের অপসারণের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরিবর্তে ট্রাম্প জননিরাপত্তার জন্য হুমকি, এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিবাসনবিষয়ক পদক্ষেপ গ্রহণে কম গুরুত্ব দেন। আবার দেশে বসবাসরত সব অবৈধ অভিবাসীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টিতেও অগ্রাধিকার দেননি তিনি। এতে ট্রাম্পের বিতর্কিত ‘পরিবার–বিচ্ছিন্নতা’ নীতির জন্ম হয়।
বায়ার যুক্তি দেন, অপরাধের রেকর্ড আছে—এমন ব্যক্তিদের ধরায় গুরুত্ব না দিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দিয়ে আটকশিবিরগুলো ভরে ফেলে ট্রাম্প প্রশাসন। এটি যুক্তরাষ্ট্রে আরও মানুষকে অপরাধে জড়িয়ে পড়তে সহায়তা করেছে।
পৃথক আরেক গবেষণায় বায়ার দেখেছেন, ট্রাম্পের সময় যাঁরা অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন, তাঁদের ব্যাপক সংখ্যায় আটকশিবিরে রাখা হয়েছে। এতেও দেশ থেকে সেই সময় অভিবাসী বিতাড়ন আক্ষরিক অর্থে বাড়েনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস কর্তৃপক্ষ অভিবাসন বিষয়ে দেশটির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহৎ এ শহরের প্রশাসন নিজেদের ‘স্যাঙ্কচুয়ারি সিটি’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিস এ খবর দিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস নগর কাউন্সিল একটি ‘স্যাঙ্কচুয়ারি সিটি’ অধ্যাদেশ পাস করেছে। নিজেদের ‘স্যাঙ্কচুয়ারি সিটি’ ঘোষণা করার অর্থ হলো, স্থানীয় প্রশাসন থেকে কেন্দ্রীয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে অভিবাসন বিষয়ে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হবে না
লস অ্যাঞ্জেলেসের সরকারি স্কুলব্যবস্থাও নিজেদের ‘স্যাঙ্কচুয়ারি’ অবস্থান পুনর্নিশ্চিত করেছে। এর ফলে বৈধ নথিবিহীন অভিবাসীরা সরকারি স্কুলে বিনা বাধায় শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পাবে।
৫ নভেম্বরের ভোটে জিতে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে হোয়াইট হাউসে ফিরতে পারলে গণহারে অবৈধ ও অনিবন্ধিত অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করবেন।
ট্রাম্প এরই মধ্যে সীমান্ত দেখভালের জন্য বেছে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবীণ অভিবাসন কর্মকর্তা টম হোম্যানকে।
এক দশকের কিছু আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্যাঙ্কচুয়ারি সিটি’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়। কোনো এলাকা ‘স্যাঙ্কচুয়ারি’ ঘোষণা করার অর্থ হলো, স্থানীয় প্রশাসন থেকে কেন্দ্রীয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে খুব সামান্য সহায়তা করা হবে।
যদিও এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো আইন জারি হয়নি। ‘স্যাঙ্কচুয়ারি’ হতে নগর কর্তৃপক্ষ নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যেমন আইনে বিভিন্ন বিধি অন্তর্ভুক্ত করা বা স্থানীয় পুলিশি কার্যক্রমে পরিবর্তন আনা।
‘স্যাঙ্কচুয়ারি’ অধ্যাদেশ পাস হলে নগর কর্তৃপক্ষ ও সংস্থাগুলো কেন্দ্রীয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পর্কে তথ্য দিতে বাধ্য থাকে না।
লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন ব্যাস ওই অধ্যাদেশে সই করলে এটি কার্যকর হবে।
বোস্টন ও নিউইয়র্ক সিটিসহ যুক্তরাষ্ট্রের আরও কয়েকটি নগর কর্তৃপক্ষ একই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
২০১৬ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বেশ কয়েকটি স্কুল নিজেদের ‘স্যাঙ্কচুয়ারি’ বা ‘অভয়ারণ্য’ ঘোষণা করে। শিক্ষার্থীদের বিতাড়ন আটকাতে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।
ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদেও অভিবাসীদের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত ছিলেন। এবারও তিনি একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নিজ প্রতিশ্রুতি পূরণে তিনি বেছে নিয়েছেন টম হোম্যানকে। তাঁকে ট্রাম্পের ‘সীমান্ত জার’ ডাকা হচ্ছে। এ বিষয়ে হোম্যান বারবার বলেছেন, নগরগুলো নিজেদের ‘স্যাঙ্কচুয়ারি’ ঘোষণা করে ভবিষ্যৎ ট্রাম্প প্রশাসনকে তাদের লক্ষ্য পূরণে আটকে রাখতে পারবে না।
১১ নভেম্বর ফক্স টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হোম্যান বলেন, ‘কেউ আমাদের “অভিবাসী অপরাধী”দের বিতাড়ন করা থেকে থামাতে পারবে না। আমরা হয় আপনাকে সঙ্গে নিয়ে অথবা আপনাকে ছাড়াই এ কাজ করতে চলেছি।
প্রথম দফায় সব অভিবাসীকে কেন যুক্তরাষ্ট্রছাড়া করতে পারেননি ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথাবার্তা এবং আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তাঁদের দেশছাড়া করার ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতিতে আতঙ্কে আছেন অনেকে। ইতিমধ্যে ট্রাম্প ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ীও হয়েছেন। তবে প্রথম মেয়াদে হোয়াইট হাউসে থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসীদের ব্যাপক সংখ্যায় বের করে দেওয়ার তাঁর পরিকল্পনা থেমে গিয়েছিল।
খবর সংবাদমাধ্যম সিএনএনের।
এটিও বিস্ময়ের যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন অভিবাসীবিরোধী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে এবং ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির অনুরূপ অনেককে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। এ প্রশাসন কত অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রছাড়া করেছে, সে বিষয়ে অনেক তথ্যই অজানা।
ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে অভিবাসনের ওপর বিশেষ মনোযোগ দেন। চেষ্টা করেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের। বাইরের দেশ, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো থেকে লোকজনের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে আসা সীমিত করেন। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্টোর নাগরিক ও বিশ্ববাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের স্বাগত না জানানোর ইঙ্গিত দেন।
ওই মেয়াদে ট্রাম্প ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পর্যন্ত অভিবাসীবিরোধী তল্লাশি চালানোর অনুমতি দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বিভাগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টম হোম্যান বলেন, আগামী জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হবেন বলেই তাঁর বিশ্বাস।
সোমবার ফক্স নিউজকে হোম্যান বলেন, দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান প্রথম মেয়াদের মতোই হতে পারে। তবে এবার বেশি সংখ্যায় অভিবাসীদের বের করে দেওয়া হতে পারে।
হোম্যান বলেন, ‘(ট্রাম্পের) প্রথম মেয়াদে যা হয়েছে, এবারও সেটিই হতে চলেছে; বরং তার চেয়ে বেশি কিছু। কেননা, বাইডেন প্রশাসনের অধীন দেশে এখন এক কোটি অবৈধ অভিবাসী বসবাস করছেন।’
ওবামা কেন ট্রাম্পের চেয়ে বেশি অভিবাসী ফেরত পাঠান
এখনকার মতো প্রথম মেয়াদেও ট্রাম্প অভিবাসীদের ব্যাপকভাবে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। অঙ্গীকার অনুযায়ী অনেককে নিজেদের দেশে ফেরতও পাঠান তিনি; যা সংখ্যায় হবে ১৫ লাখের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের নীতিবিশ্লেষক ক্যাথলিন বুশ–জোসেফ এ তথ্য দিয়েছেন।
কিন্তু এর আগে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর প্রথম দফার শাসনামলে প্রায় ২৯ লাখ অভিবাসীকে বের করে দেন। সে হিসাবে ট্রাম্প প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট থাকাকালে অর্ধেকসংখ্যক অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠান। ওবামার দ্বিতীয় মেয়াদেও ১৯ লাখ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হয়। অর্থাৎ অভিবাসী বিতাড়নে ট্রাম্পের চেয়ে ওবামাই ছিলেন এগিয়ে।
বুশ–জোসেফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলে গেছেন ১৪ লাখ ৯০ হাজার অভিবাসী। করোনা মহামারি চলাকালে ট্রাম্প আমলের গৃহীত নীতি অনুসারে সীমান্ত থেকে যে লাখ লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ফেরত যেতে বাধ্য করা হয়, এ পরিসংখ্যানে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বাইডেনের মেয়াদের অধিকাংশ সময় ওই নীতি কার্যকর ছিল।
বুশ–জোসেফের তথ্য অনুযায়ী, বাইডেনের শাসনামলে মূলত সীমান্ত এলাকার অভিবাসীদের ওপর মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে ট্রাম্প ও ওবামার সময় যেসব অভিবাসীকে বের করে দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ছিলেন দেশের ভেতরে বসবাসকারীও।
ওবামার সময় অভিবাসী ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে মেক্সিকো থেকে আসা একক ব্যক্তিরা গুরুত্ব পেয়েছিলেন বলে জানান ক্যাথলিন বুশ-জোসেফ। তবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অনিবন্ধিত অভিবাসীরা মূলত বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ও পরিবারভুক্ত লোকজন। এটি তাঁদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া জটিল করে তুলেছে। এ জটিলতা শুধু আইনগত দিক থেকেই নয়; বরং অনেক দেশ এমন প্রত্যাবাসন মেনে নেবে না, সেদিক থেকেও। অবশ্য বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তির আওতায় মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্র থেকে অন্য দেশের অভিবাসীদেরও গ্রহণ করা শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অভিবাসীদের মধ্যে ১৩ লাখ লোককে এরই মধ্যে দেশ ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হলেও তাঁদের প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হয়নি বলে জানান বুশ–জোসেফ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে সরকারই অভিবাসন বিষয়টিকে মোকাবিলা করুক, তাদের সেকেলে মার্কিন অভিবাসনব্যবস্থা ও জনবলঘাটতির মুখে পড়তে হয়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যাপক সংখ্যায় অভিবাসী বের করে দেওয়ার বিষয়টি বারবারই আটকে যাওয়ার পেছনে আছে আরও নানা কারণ। এ প্রসঙ্গে লিবারটারিয়ান ক্যাটো ইনস্টিটিউটের ইমিগ্রেশন স্টাডিজ বিভাগের পরিচালক ডেভিড বায়ার বলছিলেন, স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী অনেক সংস্থা এ বিষয়ে ফেডারেল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালে এ অবস্থার শুরু হয় এবং ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তা আরও বেড়ে যায়।
অনিচ্ছাকৃত পরিণতি
বায়ারের গবেষণা বলছে, অভিবাসীদের বিষয়ে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি কিছু অনিচ্ছাকৃত পরিণতি ডেকে আনে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড আছে—এমন ব্যক্তিদের অপসারণের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরিবর্তে ট্রাম্প জননিরাপত্তার জন্য হুমকি, এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিবাসনবিষয়ক পদক্ষেপ গ্রহণে কম গুরুত্ব দেন। আবার দেশে বসবাসরত সব অবৈধ অভিবাসীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টিতেও অগ্রাধিকার দেননি তিনি। এতে ট্রাম্পের বিতর্কিত ‘পরিবার–বিচ্ছিন্নতা’ নীতির জন্ম হয়।
বায়ার যুক্তি দেন, অপরাধের রেকর্ড আছে—এমন ব্যক্তিদের ধরায় গুরুত্ব না দিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দিয়ে আটকশিবিরগুলো ভরে ফেলে ট্রাম্প প্রশাসন। এটি যুক্তরাষ্ট্রে আরও মানুষকে অপরাধে জড়িয়ে পড়তে সহায়তা করেছে।
পৃথক আরেক গবেষণায় বায়ার দেখেছেন, ট্রাম্পের সময় যাঁরা অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন, তাঁদের ব্যাপক সংখ্যায় আটকশিবিরে রাখা হয়েছে। এতেও দেশ থেকে সেই সময় অভিবাসী বিতাড়ন আক্ষরিক অর্থে বাড়েনি।
এসব দেশের কোনো নাগরিককে বিয়ে করলেই দ্রুত আপনি পেয়ে যেতে পারেন সেই দেশের নাগরিকত্ব।
সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আবাসন, শ্রম ও সীমান্ত নিরাপত্তা আইন মেনে চলা নিশ্চিত করতে এ অভিযান চালানো হয়েছে।
কুয়েতের একটি তদন্ত কমিটি ২ হাজার ৮৯৯ কুয়েতির নাগরিকত্ব বাতিল করেছে। এ সিদ্ধান্তটি এখন অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদের কাছে পাঠানো হবে।
কুয়েতে ১০ হাজার নার্স নিয়োগে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ থেকে তালিকা পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন।