বিডিজেন ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্যে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে জন্ম হয়েছিল এক নতুন দেশের। সাতটি স্বাধীন রাজ্য বা আমিরাতের ফেডারেশন। নাম সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির অর্থনীতির ভিত্তি ছিল তেল থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব আয়।
১৮ শতকে এ অঞ্চলে ব্রিটেনের আনুষ্ঠানিক কোনো উপনিবেশ ছিল না। কিন্তু ব্রিটেনই ছিল ওই অঞ্চলে সর্বময় ক্ষমতাধর বিদেশি শক্তি। তখন আবুধাবি, দুবাই ও তাদের ছোট প্রতিবেশী আজমান, রাস আল খাইমা, শারজাহ, উম্ম আল কুওয়াইন এবং বাহরাইন ও কাতার বহি:শত্রুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ব্রিটেনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছিল। এই চুক্তির মাধ্যমে রাজ্যগুলোর প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্ব নেয় ব্রিটেন।
আবুধাবি, আজমান, রাস আল খাইমা, শারজাহ ও উম্ম আল কুওয়াইন ১৮২০ সালে এবং দুবাই ১৮৩৫ সালে ব্রিটিশদের সঙ্গে কৌশলগত এই চুক্তি করে। ফুজাইরা ১৯৫২ সালে এই চুক্তি করে। কৌশলগত এই চুক্তির বিনিময়ে ব্রিটিশ সরকার বহিরাক্রমণ থেকে আমিরাতগুলোর সুরক্ষার দায়িত্ব নেয়। অন্যদিকে আমিরাতগুলো ব্রিটিশ সরকারের অনুমতি ছাড়া অন্য কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ হারায়। এর মাধ্যমে আমিরাতগুলো ‘ট্রুসিয়াল স্টেট’ বা চুক্তিবদ্ধ রাজ্য হিসেবে পরিচিতি পায়।
এই আমিরাত বা রাজ্যগুলো উপকূলীয় জনবসতিকে কেন্দ্র করে ছিল। ওই জনবসতির নামেই আমিরাতগুলোর নামকরণ করা হয়।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত আমিরাতগুলো ব্রিটেনের প্রভাবাধীন ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তারা ব্রিটিশদের কাছ থেকে ক্রমশ স্বায়ত্তশাসন পেতে থাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় আমিরাতগুলো সম্মিলিতভাবে ১৯৭১ সালে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়। ওই বছরের ২ ডিসেম্বর ছয়টি আমিরাত—আবুধাবি, দুবাই, আজমান, ফুজাইরা, শারজাহ ও উম্ম আল কুওয়াইন একত্র হয়ে গঠন করে ফেডারেশন। এর নাম দেওয়া হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। দুই মাস পর সপ্তম আমিরাত হিসেবে ‘রাস আল খাইমা’ এই ফেডারেশনে যুক্ত হয়।
কাতার ও বাহরাইনেরও এই ফেডারেশনে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত তারা আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি আমিরাতের প্রতিটি শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয় পৃথক রাজতন্ত্রের মাধ্যমে। প্রতিটি আমিরাতের শাসনকর্তার পদবি হলো ‘আমির’। ফেডারেশনের নিয়ম অনুযায়ী আবুধাবির আমির সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একইভাবে দুবাইয়ের আমির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী হন। আবুধাবি শহর এই ফেডারেশনের রাজধানী।
ফেডারেশনের বৃহত্তমআমিরাত আবুধাবি। আমিরাতটি ফেডারেশনের মোট ভূমির ৮০ ভাগের বেশি নিয়ে গঠিত। অন্যদিকে দুবাই এই ফেডারেশনের বৃহত্তম ও জনবহুল শহর। পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র।
অবস্থান ও আয়তন
সংযুক্ত আরব আমিরাত এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে এবং আরব উপদ্বীপের পূর্ব অংশে অবস্থিত। মূলত পাথুরে মরুভূমি, উপকূলীয় সমভূমি এবং পাহাড়ের মিশ্র পরিবেশে গঠিত দেশ। এর উত্তর ও উত্তর পশ্চিমে আরব উপসাগর, পশ্চিম ও দক্ষিণে সৌদি আরব এবং দক্ষিণ–পূর্বে ওমান ও ওমান উপসাগর। আরব উপসাগরের কিছু দ্বীপসহ দেশটির মোট আয়তন ৭১ হাজার ২৩ দশমিক ৫ বর্গকিলোমিটার। দেশটির জনসংখ্যার অধিকাংশই প্রবাসী।
১৯৫০–এর দশকে পেট্রোলিয়াম আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে অন্তর্ভৃক্ত আমিরাতগুলো অনুন্নত এলাকার সমষ্টি ছিল। খনিজ তেলশিল্পের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে আমিরাতগুলোর দ্রুত উন্নতি ও আধুনিকায়ন ঘটে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী এবং জীবনযাত্রার মানের দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। খনিজ তেলের বেশির ভাগ আবুধাবি থেকে উত্তোলন করা হয়। ফলে আবুধাবি আমিরাত সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ও প্রভাবশালী আমিরাত। ফেডারেশনের অর্থনীতি প্রধানত আবুধাবির উৎপাদিত তেলের ওপর নির্ভরশীল। তবে দুবাইয়ের অর্থনীতি তেলের পাশাপাশি ব্যবসা ও পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল।
আরব আমিরাত তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেশটি পর্যটনশিল্প এবং পণ্য উৎপাদনের ওপর জোর দিয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছে অনেক দৃষ্টিনন্দন ও গগনচুম্বী ভবন। বিশ্বের সর্বোচ্চ অট্টালিকা ‘বুর্জ খলিফা’ দুবাই শহরেই।
পারস্য উপসাগরের কূলে ৫ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ। পামগাছের মতো দেখতে এই দ্বীপপুঞ্জের নাম ‘পাম জুমেইরা’। এটা পৃথিবীর বৃহত্তম কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ।
এ ছাড়া, প্রশস্ত রাস্তা ও সুপার হাইওয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে খ্যাতি আছে দেশটির।
এক নজরে সংযুক্ত আরব আমিরাত
সাতটি আমিরাতের একটি সাংবিধানিক ফেডারেশন সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির সংবিধানে পাঁচটি ফেডারেল কর্তৃপক্ষের বিধান রয়েছে। সেগুলো হলো:
১. সুপ্রিম কাউন্সিল।
২. প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট।
৩. মন্ত্রিসভা।
৪. ফেডারেল ন্যাশনাল কাউন্সিল।
৫. ফেডারেল বিচার বিভাগ।
প্রয়াত শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম প্রেসিডেন্ট। তিনি দেশটির স্থপতি হিসেবেও পরিচিত। ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাত গঠনের পর থেকে ২০০৪ সালে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এরপরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রয়াত শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।
দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। তিনি ২০২২ সালের ১৪ মে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি আবুধাবিরও শাসক।
বর্তমানে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শেখ মোহাম্মদ ইবনে রশিদ আল মাকতুম। তিনি ২০০৬ সাল থেকে এই দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি দুবাইয়েরও শাসক।
ফেডারেশনভুক্ত ৭ আমিরাতের নাম
আবুধাবি
আজমান
দুবাই
ফুজাইরা
রাস আল খাইমা
শারজাহ্
উম্ম আল কুওয়াইন
সময়
জিএমটি থেকে ৪ ঘন্টা এগিয়ে
ভাষা
আরবি
মুদ্রা
আরব আমিরাতি দিরহাম (AED) সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারি মুদ্রা। আনুষ্ঠানিকভাবে AED হিসেবে সংক্ষিপ্ত করা। দিরহাম ১০০ ফিলে বিভক্ত।
নোট ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ মূল্যের।
অর্থবছর
১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর
ফেডারেল বাজেট
২০২৪ সালের জন্য ফেডারেল বাজেট ৬৪ দশমিক ০৬০ বিলিয়ন দিনার। যা ২০২৩ সালের বাজেটের (৬৩ দশমিক ০৬৬ বিলিয়ন দিনার) চেয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি৷
মুদ্রাস্ফীতির হার
২০২১ সালে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ শতাংশ।
কর ব্যবস্থা
দেশটি ব্যক্তিদের ওপর আয়কর আরোপ করে না। তবে পণ্য ও পরিষেবা ক্রয়ের ওপর ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপ করে।
তেল ও গ্যাসের রিজার্ভ
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১০৭,০০০ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের মজুদ এবং ৭,৭২৬ বিলিয়ন ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে (ওপেকের বার্ষিক পরিসংখ্যান বুলেটিন ২০২১ অনুযায়ী)।
প্রধান বিমানবন্দর
জায়েদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
আল আইন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যাত্রীর সংখ্যা বিবেচনায় পৃথিবীর চতুর্থ ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
আল মাকতুম বিমানবন্দর
শারজাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
রাস আল খাইমা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
ফুজাইরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
প্রধান মহাসড়ক
১. ই১১-এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দীর্ঘতম মহাসড়ক। এটি আবুধাবির আমিরাতের আল সিলাহ থেকে রাস আল খাইমার সীমানা পর্যন্ত প্রসারিত। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নাম রয়েছে—আবুধাবিতে শেখ মাকতুম রোড, দুবাইয়ে শেখ জায়েদ রোড এবং রাস আল খাইমায় শেখ মুহাম্মদ বিন সালেম রোড।
২. ই৩১১–এমিরেটস রোড থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ রোড। এটি দুবাইকে বাকি আমিরাতের সঙ্গে যুক্ত করেছে।
৩. ই৬১১ সড়ককে এমিরেটস বাইপাস রোড বলা হয় এবং দুবাইয়ের এমিরেটস পেরিয়ে রাস আল খাইমাহ এমিরেট পর্যন্ত বিস্তৃত।
৪. শেখ খলিফা হাইওয়ে–এটি দুবাই ও ফুজাইরাহ আমিরাতকে যুক্ত করেছে।
সমুদ্রবন্দর
দেশটিতে বেশ কয়েকটি সমুদ্রবন্দর রয়েছে। প্রধান বন্দরগুলো হলো:
জায়েদ পোর্ট, আবুধাবি
খলিফা পোর্ট, আবুধাবি
ফ্রি পোর্ট, আবুধাবি
মুসাফাহ পোর্ট, আবুধাবি
জেবেল আলী পোর্ট, দুবাই
মিনা রশিদ, দুবাই
মিনা আল হামরিয়া, দুবাই
দুবাই ক্রিক ও ডিরা ওয়ারফেজ
শারজাহ কনটেইনার টার্মিনাল (এসটিসি), শারজাহ
পোর্ট খালিদ, হামরিয়া বন্দর ও খোর ফাক্কান কনটেইনার টার্মিনাল (কেসিটি) শারজাহ
সাকার বন্দর, রাস আল খাইমা
ফুজাইরা বন্দর
আন্তর্জাতিক ডায়ালিং কোড: +৯৭১
শহরগুলোর ডায়ালিং কোড
আবুধাবি ০২
আল আইন ০৩
দুবাই ০৪
শারজাহ, আজমান ও উম্ম আল কুওয়াইনের জন্য ০৬
রাস আল খাইমা ০৭
ফুজাইরা ও খোর ফাক্কানে জন্য ০৯
সরকারি ছুটি
দেশটির জাতীয় দিবস ২ ডিসেম্বর। এ উপলক্ষে ২ ও ৩ ডিসেম্বর দুই দিন সাধারণ ছুটি হিসেবে পালিত হয়।
অন্য সরকারি ছুটি
গ্রেগরিয়ান নববর্ষ
ঈদুল ফিতর
আরাফার দিন ও ঈদুল আজহা
হিজরী নববর্ষ
নবী মোহাম্মদের জন্মদিন।
কর্মদিবস
সরকারি ও আধা-সরকারি অফিসগুলো সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত চলে। শুধু শারজাহ সরকারি সংস্থাগুলো সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত খোলা থাকে।
বেসরকারি বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাগুলো শুধুমাত্র রোববারে বন্ধ থাকে। কিছু শনি ও রোববার দুই দিন বন্ধ থাকে।
সংবাদ সংস্থা
এমিরেটস নিউজ এজেন্সি (ডব্লিউএএম)। সরকারি সংবাদ সংস্থা এবং একাধিক ভাষায় সংবাদ প্রকাশ করে।
মধ্যপ্রাচ্যে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে জন্ম হয়েছিল এক নতুন দেশের। সাতটি স্বাধীন রাজ্য বা আমিরাতের ফেডারেশন। নাম সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির অর্থনীতির ভিত্তি ছিল তেল থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব আয়।
১৮ শতকে এ অঞ্চলে ব্রিটেনের আনুষ্ঠানিক কোনো উপনিবেশ ছিল না। কিন্তু ব্রিটেনই ছিল ওই অঞ্চলে সর্বময় ক্ষমতাধর বিদেশি শক্তি। তখন আবুধাবি, দুবাই ও তাদের ছোট প্রতিবেশী আজমান, রাস আল খাইমা, শারজাহ, উম্ম আল কুওয়াইন এবং বাহরাইন ও কাতার বহি:শত্রুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ব্রিটেনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছিল। এই চুক্তির মাধ্যমে রাজ্যগুলোর প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্ব নেয় ব্রিটেন।
আবুধাবি, আজমান, রাস আল খাইমা, শারজাহ ও উম্ম আল কুওয়াইন ১৮২০ সালে এবং দুবাই ১৮৩৫ সালে ব্রিটিশদের সঙ্গে কৌশলগত এই চুক্তি করে। ফুজাইরা ১৯৫২ সালে এই চুক্তি করে। কৌশলগত এই চুক্তির বিনিময়ে ব্রিটিশ সরকার বহিরাক্রমণ থেকে আমিরাতগুলোর সুরক্ষার দায়িত্ব নেয়। অন্যদিকে আমিরাতগুলো ব্রিটিশ সরকারের অনুমতি ছাড়া অন্য কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ হারায়। এর মাধ্যমে আমিরাতগুলো ‘ট্রুসিয়াল স্টেট’ বা চুক্তিবদ্ধ রাজ্য হিসেবে পরিচিতি পায়।
এই আমিরাত বা রাজ্যগুলো উপকূলীয় জনবসতিকে কেন্দ্র করে ছিল। ওই জনবসতির নামেই আমিরাতগুলোর নামকরণ করা হয়।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত আমিরাতগুলো ব্রিটেনের প্রভাবাধীন ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তারা ব্রিটিশদের কাছ থেকে ক্রমশ স্বায়ত্তশাসন পেতে থাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় আমিরাতগুলো সম্মিলিতভাবে ১৯৭১ সালে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়। ওই বছরের ২ ডিসেম্বর ছয়টি আমিরাত—আবুধাবি, দুবাই, আজমান, ফুজাইরা, শারজাহ ও উম্ম আল কুওয়াইন একত্র হয়ে গঠন করে ফেডারেশন। এর নাম দেওয়া হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। দুই মাস পর সপ্তম আমিরাত হিসেবে ‘রাস আল খাইমা’ এই ফেডারেশনে যুক্ত হয়।
কাতার ও বাহরাইনেরও এই ফেডারেশনে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত তারা আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি আমিরাতের প্রতিটি শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয় পৃথক রাজতন্ত্রের মাধ্যমে। প্রতিটি আমিরাতের শাসনকর্তার পদবি হলো ‘আমির’। ফেডারেশনের নিয়ম অনুযায়ী আবুধাবির আমির সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একইভাবে দুবাইয়ের আমির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী হন। আবুধাবি শহর এই ফেডারেশনের রাজধানী।
ফেডারেশনের বৃহত্তমআমিরাত আবুধাবি। আমিরাতটি ফেডারেশনের মোট ভূমির ৮০ ভাগের বেশি নিয়ে গঠিত। অন্যদিকে দুবাই এই ফেডারেশনের বৃহত্তম ও জনবহুল শহর। পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র।
অবস্থান ও আয়তন
সংযুক্ত আরব আমিরাত এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে এবং আরব উপদ্বীপের পূর্ব অংশে অবস্থিত। মূলত পাথুরে মরুভূমি, উপকূলীয় সমভূমি এবং পাহাড়ের মিশ্র পরিবেশে গঠিত দেশ। এর উত্তর ও উত্তর পশ্চিমে আরব উপসাগর, পশ্চিম ও দক্ষিণে সৌদি আরব এবং দক্ষিণ–পূর্বে ওমান ও ওমান উপসাগর। আরব উপসাগরের কিছু দ্বীপসহ দেশটির মোট আয়তন ৭১ হাজার ২৩ দশমিক ৫ বর্গকিলোমিটার। দেশটির জনসংখ্যার অধিকাংশই প্রবাসী।
১৯৫০–এর দশকে পেট্রোলিয়াম আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে অন্তর্ভৃক্ত আমিরাতগুলো অনুন্নত এলাকার সমষ্টি ছিল। খনিজ তেলশিল্পের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে আমিরাতগুলোর দ্রুত উন্নতি ও আধুনিকায়ন ঘটে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী এবং জীবনযাত্রার মানের দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। খনিজ তেলের বেশির ভাগ আবুধাবি থেকে উত্তোলন করা হয়। ফলে আবুধাবি আমিরাত সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ও প্রভাবশালী আমিরাত। ফেডারেশনের অর্থনীতি প্রধানত আবুধাবির উৎপাদিত তেলের ওপর নির্ভরশীল। তবে দুবাইয়ের অর্থনীতি তেলের পাশাপাশি ব্যবসা ও পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল।
আরব আমিরাত তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেশটি পর্যটনশিল্প এবং পণ্য উৎপাদনের ওপর জোর দিয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছে অনেক দৃষ্টিনন্দন ও গগনচুম্বী ভবন। বিশ্বের সর্বোচ্চ অট্টালিকা ‘বুর্জ খলিফা’ দুবাই শহরেই।
পারস্য উপসাগরের কূলে ৫ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ। পামগাছের মতো দেখতে এই দ্বীপপুঞ্জের নাম ‘পাম জুমেইরা’। এটা পৃথিবীর বৃহত্তম কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ।
এ ছাড়া, প্রশস্ত রাস্তা ও সুপার হাইওয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে খ্যাতি আছে দেশটির।
এক নজরে সংযুক্ত আরব আমিরাত
সাতটি আমিরাতের একটি সাংবিধানিক ফেডারেশন সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির সংবিধানে পাঁচটি ফেডারেল কর্তৃপক্ষের বিধান রয়েছে। সেগুলো হলো:
১. সুপ্রিম কাউন্সিল।
২. প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট।
৩. মন্ত্রিসভা।
৪. ফেডারেল ন্যাশনাল কাউন্সিল।
৫. ফেডারেল বিচার বিভাগ।
প্রয়াত শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম প্রেসিডেন্ট। তিনি দেশটির স্থপতি হিসেবেও পরিচিত। ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাত গঠনের পর থেকে ২০০৪ সালে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এরপরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রয়াত শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।
দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। তিনি ২০২২ সালের ১৪ মে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি আবুধাবিরও শাসক।
বর্তমানে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শেখ মোহাম্মদ ইবনে রশিদ আল মাকতুম। তিনি ২০০৬ সাল থেকে এই দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি দুবাইয়েরও শাসক।
ফেডারেশনভুক্ত ৭ আমিরাতের নাম
আবুধাবি
আজমান
দুবাই
ফুজাইরা
রাস আল খাইমা
শারজাহ্
উম্ম আল কুওয়াইন
সময়
জিএমটি থেকে ৪ ঘন্টা এগিয়ে
ভাষা
আরবি
মুদ্রা
আরব আমিরাতি দিরহাম (AED) সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারি মুদ্রা। আনুষ্ঠানিকভাবে AED হিসেবে সংক্ষিপ্ত করা। দিরহাম ১০০ ফিলে বিভক্ত।
নোট ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ মূল্যের।
অর্থবছর
১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর
ফেডারেল বাজেট
২০২৪ সালের জন্য ফেডারেল বাজেট ৬৪ দশমিক ০৬০ বিলিয়ন দিনার। যা ২০২৩ সালের বাজেটের (৬৩ দশমিক ০৬৬ বিলিয়ন দিনার) চেয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি৷
মুদ্রাস্ফীতির হার
২০২১ সালে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ শতাংশ।
কর ব্যবস্থা
দেশটি ব্যক্তিদের ওপর আয়কর আরোপ করে না। তবে পণ্য ও পরিষেবা ক্রয়ের ওপর ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপ করে।
তেল ও গ্যাসের রিজার্ভ
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১০৭,০০০ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের মজুদ এবং ৭,৭২৬ বিলিয়ন ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে (ওপেকের বার্ষিক পরিসংখ্যান বুলেটিন ২০২১ অনুযায়ী)।
প্রধান বিমানবন্দর
জায়েদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
আল আইন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যাত্রীর সংখ্যা বিবেচনায় পৃথিবীর চতুর্থ ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
আল মাকতুম বিমানবন্দর
শারজাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
রাস আল খাইমা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
ফুজাইরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
প্রধান মহাসড়ক
১. ই১১-এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দীর্ঘতম মহাসড়ক। এটি আবুধাবির আমিরাতের আল সিলাহ থেকে রাস আল খাইমার সীমানা পর্যন্ত প্রসারিত। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নাম রয়েছে—আবুধাবিতে শেখ মাকতুম রোড, দুবাইয়ে শেখ জায়েদ রোড এবং রাস আল খাইমায় শেখ মুহাম্মদ বিন সালেম রোড।
২. ই৩১১–এমিরেটস রোড থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ রোড। এটি দুবাইকে বাকি আমিরাতের সঙ্গে যুক্ত করেছে।
৩. ই৬১১ সড়ককে এমিরেটস বাইপাস রোড বলা হয় এবং দুবাইয়ের এমিরেটস পেরিয়ে রাস আল খাইমাহ এমিরেট পর্যন্ত বিস্তৃত।
৪. শেখ খলিফা হাইওয়ে–এটি দুবাই ও ফুজাইরাহ আমিরাতকে যুক্ত করেছে।
সমুদ্রবন্দর
দেশটিতে বেশ কয়েকটি সমুদ্রবন্দর রয়েছে। প্রধান বন্দরগুলো হলো:
জায়েদ পোর্ট, আবুধাবি
খলিফা পোর্ট, আবুধাবি
ফ্রি পোর্ট, আবুধাবি
মুসাফাহ পোর্ট, আবুধাবি
জেবেল আলী পোর্ট, দুবাই
মিনা রশিদ, দুবাই
মিনা আল হামরিয়া, দুবাই
দুবাই ক্রিক ও ডিরা ওয়ারফেজ
শারজাহ কনটেইনার টার্মিনাল (এসটিসি), শারজাহ
পোর্ট খালিদ, হামরিয়া বন্দর ও খোর ফাক্কান কনটেইনার টার্মিনাল (কেসিটি) শারজাহ
সাকার বন্দর, রাস আল খাইমা
ফুজাইরা বন্দর
আন্তর্জাতিক ডায়ালিং কোড: +৯৭১
শহরগুলোর ডায়ালিং কোড
আবুধাবি ০২
আল আইন ০৩
দুবাই ০৪
শারজাহ, আজমান ও উম্ম আল কুওয়াইনের জন্য ০৬
রাস আল খাইমা ০৭
ফুজাইরা ও খোর ফাক্কানে জন্য ০৯
সরকারি ছুটি
দেশটির জাতীয় দিবস ২ ডিসেম্বর। এ উপলক্ষে ২ ও ৩ ডিসেম্বর দুই দিন সাধারণ ছুটি হিসেবে পালিত হয়।
অন্য সরকারি ছুটি
গ্রেগরিয়ান নববর্ষ
ঈদুল ফিতর
আরাফার দিন ও ঈদুল আজহা
হিজরী নববর্ষ
নবী মোহাম্মদের জন্মদিন।
কর্মদিবস
সরকারি ও আধা-সরকারি অফিসগুলো সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত চলে। শুধু শারজাহ সরকারি সংস্থাগুলো সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত খোলা থাকে।
বেসরকারি বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাগুলো শুধুমাত্র রোববারে বন্ধ থাকে। কিছু শনি ও রোববার দুই দিন বন্ধ থাকে।
সংবাদ সংস্থা
এমিরেটস নিউজ এজেন্সি (ডব্লিউএএম)। সরকারি সংবাদ সংস্থা এবং একাধিক ভাষায় সংবাদ প্রকাশ করে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের শীর্ষস্থানীয় খুচরা পণ্য বিক্রেতা কোম্পানি লুলু গ্রুপ পবিত্র রমজান উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য ঘোষণা করেছে চমকপ্রদ অফার। খাবার, হোম ফার্নিশিং, ইলেকট্রনিক্সসহ বিভিন্ন ধরনের সাড়ে ৫ হাজারের বেশি পণ্যে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যাবে। গ্রাহকদের সুবিধার্থে ৩০০ অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দামও স
অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে মালয়েশিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। আজ শনিবার ভোরের দিকে দেশটির ক্লাং এলাকার মেরু মার্কেট ভবনে অভিযান চালিয়ে ৮৫ বাংলাদেশিসহ অন্তত ৫৯৮ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সৌদির বিমানবন্দরগুলো দিয়ে ২০২৪ সালে রেকর্ড ১২ কোটি ৮০ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেছে। যা এর আগের বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি। সৌদির পরিসংখ্যান দপ্তরের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়ছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সৌদি গেজেট।
পবিত্র রমজান মাসে কুয়েতে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খতিবদের জন্য ছুটির নতুন নিয়ম জারি করেছে দেশটির সরকার। এই নিয়ম অনুযায়ী, রমজানের শেষ ১০ দিন তারা কোনো ছুটি নিতে পারবেন না।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের শীর্ষস্থানীয় খুচরা পণ্য বিক্রেতা কোম্পানি লুলু গ্রুপ পবিত্র রমজান উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য ঘোষণা করেছে চমকপ্রদ অফার। খাবার, হোম ফার্নিশিং, ইলেকট্রনিক্সসহ বিভিন্ন ধরনের সাড়ে ৫ হাজারের বেশি পণ্যে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যাবে। গ্রাহকদের সুবিধার্থে ৩০০ অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দামও স
৫ মিনিট আগে