logo
খবর

অনিশ্চিত জীবনে আমিরাত থেকে ফেরা ৫৭ প্রবাসী

বিডিজেন ডেস্ক
বিডিজেন ডেস্ক২৬ নভেম্বর ২০২৪
Copied!
অনিশ্চিত জীবনে আমিরাত থেকে ফেরা ৫৭  প্রবাসী
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিক্ষোভ। ১৯ জুলাই ২০২৪। ছবি: দৈনিক পূর্বকোণ

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল আইন শহরে ২২ বছর ধরে বসবাস করছিলেন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার হরিশ খান পাড়ার বাসিন্দা সাইদুল হক সাঈদ। সেখানে ছিল তাঁর ২টি স্টিল ও ১টি গাড়ির ওয়ার্কশপ। এ ছাড়া, আবুধাবিতে ছিল তাঁর ফ্লাটের ব্যবসা।

সাঈদের ৪টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পূঁজি রয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা। তাতে কর্মরত আছেন প্রায় ৩৫ প্রবাসী। প্রবাসে তাঁর সঙ্গে ছিল পরিবারও। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান। সেখানে ছিল তাঁর সুখের সংসার।

কিন্তু বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে গত ১৯ জুলাই সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করেন কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি। ওই বিক্ষোভে ছিলেন সাঈদও। বিক্ষোভ করার সেখানে গ্রেপ্তার হন সাঈদসহ ৫৭ জন প্রবাসী। পরে সে দেশের আদালত তাদের সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দেয়।

পরবর্তীতে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এরপর ২৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে টেলিফোনে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। এ সময় আমিরাতে বিক্ষোভ করার অপরাধে দণ্ডিত বাংলাদেশিদের মুক্তি দিতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন ড. ইউনূস। তাঁর অনুরোধে সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ প্রবাসীর সাজা মওকুফ করে দেশে ফেরত পাঠায় সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার।

সাজাপ্রাপ্ত প্রবাসীরা কয়েক দফায় দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে প্রবাসী সাইদুল হক সাঈদ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। আমিরাতে তাঁর ব্যবসা–বাণিজ্য থাকায় তিনি পুনরায় ফিরতে চান সে দেশে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে আমিরাত সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনি সে দেশে যেতে পারছেন না।

এ অবস্থায় তিনি দেশে এক অনিশ্চিত জীবন পার করছেন। আদৌ আমিরাতে গিয়ে নিজেদের ব্যবসা করতে পারবেন কি না এ নিয়ে চরম অনিশ্চিয়তার মধ্যে রয়েছেন তিনি।

খবর চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বকোণের।

সাইদুল হক সাঈদের মতো দেশে এসে অনিশ্চিত জীবন অতিবাহিত করছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পূর্ব মেখল গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী গাজী মাহফুজুর রহমান।

আমিরাতের শারজাহে একটি গাড়ির গ্যারেজ ও একটি লন্ড্রি এবং আজমানে একটি গাড়ির গ্যারেজ ছিল তাঁর। ৫ বছর ধরে তিনি তিলে তিলে প্রতিষ্ঠান ৩টি গড়ে তোলেন। তাঁর ৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশি মুদ্রায় বর্তমান বাজার মূল্য হবে প্রায় ৩ কোটি টাকা। সেখানে কর্মরত রয়েছেন ২১ জন প্রবাসী।

গাজী মাহফুজুর রহমান দেশে চলে আসার কারণে তাঁর সবগুলো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনিশ্চিত অবস্থায় পড়ে গেছে। সেখানে কর্মরত কেউ কেউ ভিসা জটিলতায় পড়েছেন।

এ ছাড়া, আমিরাতে গাজী মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে তাঁর বাবা–মাও বসবাস করতেন। তারাও দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।

সাইদুল হক সাঈদ ও গাজী মাহফুজুর রহমানের মতো আমিরাত ফেরত ৫৭ প্রবাসী দেশে এসে এখন অনিশ্চিত জীবন পার করছেন। ইতিমধ্যে তাদের থেকে ৪৭ জন এবং একই সমস্যায় কাতার থেকে দেশে ফেরা অন্য ২ জন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের চট্টগ্রাম শাখায় লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদনকৃত ৪৯ জনের মধ্যে ৪৫ জনই আবার নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরতে চান। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ওই দেশে ফেরার নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা চরম অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে গেছেন।

প্রবাসী সাইদুল হক সাঈদ ও গাজী মাহফুজুর রহমান দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমিরাতে আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়ে গেছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমরা ফিরতে পারছি না। এ অবস্থায় দেশে এসে আমরা অনিশ্চিত জীবনযাপন করছি। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সরকার আমাদের সে দেশে পুনরায় ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করলে ৫৭ জন রেমিট্যান্সযোদ্ধা অনিশ্চিত জীবন থেকে রক্ষা পাবে।’

চট্টগ্রামের ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. এনায়েত উল্যাহ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের মধ্যে ৪৯ জন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন ওয়েলফেয়ার সেন্টার, চট্টগ্রামে লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদনকৃত ৪৯ জনের মধ্যে ৪৭ জন সংযুক্ত আরব আমিরাতের এবং ২ জন কাতারের। এর মধ্যে ৪৫ জন প্রবাসী পুনরায় স্ব-স্ব কর্মস্থলে ফিরতে চান। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সেসব দেশে ফেরার নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা ফিরে যেতে পারছেন না। এ অবস্থায় তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের প্রত্যাশা ও অভিব্যক্তি সরাসরি উপস্থাপন করতে চায়।’

প্রসঙ্গত, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিক্ষোভ করেন। পরে আমিরাতের আদালত ৫৭ জন বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। তাদের মধ্যে ৩ জনকে যাবজ্জীবন, ৫৩ জনকে ১০ বছর এবং বাকি ১ জনকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও সভা-সমাবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ। মিছিল, মিটিং বা প্রতিবাদ সমাবেশের চেষ্টা করা বা উস্কানি দিলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

সূত্র: দৈনিক পূর্বকোণ

আরও পড়ুন

মোবাইল ফোন নিয়ে বিতণ্ডার ঘটনায় নিখোঁজের ২ দিন পর প্রবাসীর লাশ উদ্ধার

মোবাইল ফোন নিয়ে বিতণ্ডার ঘটনায় নিখোঁজের ২ দিন পর প্রবাসীর লাশ উদ্ধার

মোবাইল ফোন নিয়ে বিতণ্ডার ঘটনায় নিখোঁজের দুই দিন পর ডোবা থেকে সামছুল হক (৩৬) নামের এক প্রবাসীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার স্বল্পেরচক এলাকার একটি পুকুর থেকে রোববার (১৩ অক্টোবর) লাশটি উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

১৩ মিনিট আগে

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে ইসির সঙ্গে জামায়াতের প্রতিনিধিদলের আলোচনা

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে ইসির সঙ্গে জামায়াতের প্রতিনিধিদলের আলোচনা

‘আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করেছি। তাদের [প্রবাসী] দুটি সমস্যার কথা তুলেছিলাম—একটা হচ্ছে আইডি কার্ড। এটা অবশ্যই হবে, যদিও কিছু জটিলতা আছে। তার বাইরে অন্য কোনো ডকুমেন্ট দিয়ে করা যায় কি না, আজ নির্বাচন কমিশন বলেছে যে, জন্মসনদের মাধ্যমেও ভোটার হওয়া সম্ভব। এতে একটা সমাধান পাওয়া যেতে পারে।’

২১ ঘণ্টা আগে

মানবপাচারের মামলায় প্রবাসী ও তার স্ত্রীকে অভিযুক্ত বানিয়ে আদালতে পুলিশের চার্জশিট

মানবপাচারের মামলায় প্রবাসী ও তার স্ত্রীকে অভিযুক্ত বানিয়ে আদালতে পুলিশের চার্জশিট

মানবপাচারের পৃথক ৩টি মামলায় এক প্রবাসী ও তার স্ত্রীকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। মামলার বাদীদের অভিযোগ, তদন্ত কর্মকর্তা দাবি অনুযায়ী ঘুষের টাকা না পেয়ে সাক্ষী (প্রবাসীর স্ত্রী) এবং তার প্রবাসী স্বামীকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।

২ দিন আগে

লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন আরও ৩০৯ বাংলাদেশি

লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন আরও ৩০৯ বাংলাদেশি

লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি ও আশপাশের এলাকায় অবৈধভাবে অবস্থানরত  ৩০৯ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সমন্বিত প্রচেষ্টায় প্রত্যাবাসন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।

৪ দিন আগে