logo
খবর

স্বাধীনতা

শরীফুল আলম, যুক্তরাষ্ট্র
শরীফুল আলম, যুক্তরাষ্ট্র১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Copied!
স্বাধীনতা
জাতীয় স্মৃতিসৌধ। প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ সফর করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গেও তিনি সাক্ষাৎ করেছেন। বেশ ভালো, এমনটাই তো হওয়া উচিত।

ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব ঢাকায় এসেই বলেছেন আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই, খুব ভালো কথা, আমরাও এমনটাও চাই।

রাষ্ট্র তো আর কুস্তির মঞ্চ না যে সেখানে হার/জিত নির্ধারণ হবে কুস্তির মাধ্যমে। তবে এ কথা সত্য যে সমগ্র দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় ভারত একটা অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করে রেখেছে। চীনকে কাউন্টার দিতে গিয়ে ভারত গোটা দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলোর ওপর দাদাগিরি দেখাচ্ছে। কিন্তু ভারত কি এটা বোঝেনা যে, চীন–আমেরিকা ওদের টাকা পয়সার অভাব নাই কিন্তু ভারতের টাকার অভাব আছে।

জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউএনডিপি এবং যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অক্সফোর্ড পভার্টি ও হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (ওপিএইচআই) সর্বশেষ (২০২৪) দারিদ্র্য সূচক অনুযায়ী ভারতের ২৩ কোটিরও বেশি মানুষ এখনো চরম দারিদ্রের মধ্যে রয়েছেন। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের ২৩ দশমিক ৪ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত বাদে অন্য চারটি দেশ হলো পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া ও কঙ্গো। (সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস)

চীন চাইলে সে যেকোনো দেশের অর্থনীতিকে ধাক্কা দিতে পারে কিন্তু ভারতের কি সেই সামর্থ আছে? চীন চাইলে সে যেকোনো দেশকে ঋণ কূটনীতিতে আটকে ফেলতে পারে। কিন্তু ভারতের কি সেই সামর্থ আছে?

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় মূলত ভারতই একমাত্র প্রধান সমস্যা। ভারত প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে বরাবরই হাই হর্স মনোভাব দেখায়। আজ এ কথা সত্য ও প্রমানিত যে, বাংলাদেশ এখন আর ভারতের ওপর কোনোভাবেই নির্ভরশীল নয়। সুতরাং আমাদের কনসিকোয়েন্স ফেস করার কোনো কারণও নেই।

ইদানীং ভারতের মিডিয়াগুলো যেভাবে মিথ্যাচার করছে আমাদের কিছু গরীব বুদ্ধিজীবীরা যদি ঠিকঠাক মতো শুধু মিথ্যার প্রতিবাদ করে এবং পত্রিকাগুলো যদি এর পাল্টা সেই দেশে কী কী অনিয়ম হচ্ছে তা লিখত, তবেই কিন্তু একটা ব্যালেন্স তৈরি হতো।

ভারত একদিকে আলোচনা করার জন্য ঢাকায় তার পররাষ্ট্রসচিবকে পাঠায় (সম্ভবত কিছু দিনের মধ্যে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ঢাকায় আসবেন), অন্যদিকে সে ঠিকই ডিসইনফরমেশন ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ এখন ভারতীয় দাদাগিরি এবং চোখ রাঙ্গানিকে আর ভয় পায় না। বাংলাদেশের সামনে চলার পথ এখন অনেক মসৃণ। হিন্দুরাষ্ট্র ভারত নিশ্চয় তা ইতিমধ্যে বুঝতে পারছে। ভারত সকাল/বিকেল শুধু চীন আর পাকিস্থানকে গালাগালি করে কিন্তু চীন যে ভারতের বিশাল অঞ্চল দখল করে নিয়েছে ভারত কি কিছু করতে পেরেছে?

ভারত পারে কেবল আমাদের মতো ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলোকে চোখ রাঙ্গাতে, মালদ্বীপে সেনাবাহিনী পাঠাতে। দালাইলামাকে যেভাবে ভারতে আশ্রয় দিয়েছে, ঠিক একই কায়দায় শেখ হাসিনাকেও আশ্রয় দিয়েছে। এতে করে দালাইলামা ইস্যুতে ভারত যেমন লাভবান হয়নি, হাসিনা ইস্যুতেও ভারত লাভবান হবে বলে মনে হয় না। মালদ্বীপের জনগণের চাপের মুখে ভারত সেখান থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে।

ভারতের নিজেরই তো অনেক সমস্যা। কাশ্মীর, পাঞ্জাব, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, তামিলনাড়ু, লাদাখ নিয়েই ভারত তো হিমশিম খাচ্ছে। আমার মনে হয় এই সাতটা প্রদেশ ভারত আর বেশি দিন ধরে রাখতে পারবে না। আর চরম হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা কখনোই আমাদের জন্য তাঁর লিবারেল প্রতিশ্রতি ছিল না। এই মমতাই কিছুদিন আগে আমাদের দেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর জন্য আবদার করেছেন। কত বড় তার স্পর্ধা, এতে করে তিনি একটা নন-ইফেক্টিভ রেটোরিক ব্যবহার করছেন এটা কি তিনি বুঝতে পারছেন?

যা হোক আমাদের নিজেদেরই এখনো অনেক প্রশ্নের সমাধান বাকি আছে। ইসকনের মতো একটা শক্তিশালী ননষ্টেট অ্যাক্টর হিসেবে চিন্ময় বাবু এসেছেন। পৃথিবীর বহু দেশে ইসকনের শাখা করা যাবে না, এটি মীমাংসিত। তাহলে বাংলাদেশে এই সংঘটনটি থাকবে কি থাকবে না তার সিদ্ধান্তও বাংলাদেশের। এখানে ভারত মাথা ঘামাবার কে? যা হোক এটা একটা সিরিয়াস নিরাপত্তাবিষয়ক কনসার্ন।

Shariful Alam

সরকার চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। সবশেষে বলি আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে থাকবে কি থাকবে না এই নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। তবে দুঃখ লাগে আমার অনেক আওয়ামী লীগ মনোভাবাপন্ন বন্ধুদের মুখে আজ পর্যন্ত জুলাই মাসের ঘটনা নিয়ে কোনো দুঃখ প্রকাশ তো দূরের কথা অনুশোচনাও করে নাই। অথচ সেই জুলাই মাসে একটি কমপ্লিট ফ্যাসিষ্ট জেনোসাইড হয়েছিল এটা সারা বিশ্বের কে না জানে। দলটি গণতন্ত্র হত্যা করেছিল, কোনো অনুশোচনা নেই। নির্বিচারে এতগুলো মানুষ হত্যা করল তার জন্যও কোনো অনুশোচনা নেই। বিচার বিভাগ ধ্বংস করল, বিদেশে টাকা পাচার করল, গুম করল, হত্যা করল, তারপরেও তাদের মুখে কোনো অনুশোচনা নেই। সুতরাং সেই দলটি সম্পর্কে দেশের জনগণই ভবিষ্যতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

একটা মজার ব্যপার উল্লেখ করে আজকের লেখাটি শেষ করব। কিছুদিন আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পরে শেখ হাসিনা ভারত থেকে ট্রাম্পকে এক শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন সেখানে নিচে লেখা ছিল, ‘প্রধানমন্ত্রী’। কী হাস্যকর, তাই না? জাতি হিসেবে আমরা আর কত নিচে নামব? আমাদের লজ্জাবোধ বলতে কি আর কিছুই অবশিষ্ট নাই?

—শরীফুল আলম, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।

ইমেইল: <[email protected]>

আরও পড়ুন

জুলাই সনদ কখনোই সংবিধানের ওপর প্রাধান্য পেতে পারে না: গণফোরাম

জুলাই সনদ কখনোই সংবিধানের ওপর প্রাধান্য পেতে পারে না: গণফোরাম

জুলাই সনদ একটি রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল। এই রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল কখনোই সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য পেতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় আপত্তির একটি জায়গা।’

৬ ঘণ্টা আগে

আসনভিত্তিক বা সংখ্যানুপাতিক কোনোটিই একেবারে নিখুঁত নয়: বদিউল আলম মজুমদার

আসনভিত্তিক বা সংখ্যানুপাতিক কোনোটিই একেবারে নিখুঁত নয়: বদিউল আলম মজুমদার

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তারা কমিশনের পক্ষ থেকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব করেছেন। এর মধ্যে নিম্নকক্ষ হবে বর্তমান আসনভিত্তিক। আর উচ্চকক্ষ হবে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর)। সংবিধান সংস্কার কমিশনও একই রকম প্রস্তাব করেছে।

৬ ঘণ্টা আগে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনার বিচার অবশ্যই হতে হবে: মির্জা ফখরুল

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনার বিচার অবশ্যই হতে হবে: মির্জা ফখরুল

গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার দাবি করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

১ দিন আগে

শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রকাশ করলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা: অন্তর্বর্তী সরকার

শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রকাশ করলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা: অন্তর্বর্তী সরকার

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার নিয়ে গণমাধ্যমকে সতর্ক করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং এক বিবৃতিতে এই সতর্কবার্তা জানিয়েছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার বক্তব্য কেউ ভবিষ্যতে প্রকাশ করলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১ দিন আগে