logo
খবর

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ‘ব্ল্যাক আউট’, কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন গ্রামের মানুষ

বিডিজেন ডেস্ক
বিডিজেন ডেস্ক১৮ অক্টোবর ২০২৪
Copied!
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ‘ব্ল্যাক আউট’, কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন গ্রামের মানুষ
প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

পল্লী বিদ্যুতের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি এবং মামলায় অভিযুক্ত করার প্রতিবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ ব্ল্যাক আউট (শাটডাউন) করে রেখেছিলেন পল্লী বিদ্যুতের বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে জেলায় জেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিলেন গ্রামের মানুষ। সারা দেশেও বিদ্যুৎ বন্ধের শঙ্কা তৈরি হয়।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সমিতির ২০ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেন সমিতির কর্মচারীরা।

আরইবির অধীন কাজ করে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। সমিতির কর্মকর্তা–কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। দেশের মোট বিদ্যুৎ সরবরাহের ৫৫ শতাংশ আরইবির অধীন।

আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি একীভূতকরণ এবং অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নসহ চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগের দাবিতে মুক্তিকামী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা–কর্মচারীর ব্যানারে এ আন্দোলন হচ্ছে।

আন্দোলনকারীদের পক্ষে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয়েছে, ২০ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাঁদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরইবি চেয়ারম্যানের অপসারণ, চাকরি অবসায়নের আদেশ ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তাঁরা। না হলে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করতে বাধ্য হবেন তাঁরা।

রাত সাড়ে নয়টায় আরইবির সদস্য (বিতরণ) দেবাশীষ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে সমিতির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। অচল পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছিল। তবে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সবার সহায়তায় সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে।’

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চাকরিচ্যুতির খবর আসতে থাকে বিভিন্ন সমিতিতে। বৃহস্পতিবার সকালে নেত্রকোনা জেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী মহাব্যবস্থাপক মনির হোসেনকে চাকরিচ্যুতির পর আটক করে বারহাট্টা থানায় নিয়ে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কিছুক্ষণ পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যেই নেত্রকোনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেন সমিতির কর্মচারীরা। এরপর একের পর এক জেলায় বিদ্যুৎ বন্ধ হতে থাকে। বিকেলের দিকে আন্দোলনের সমন্বয়কদের একজন রাজন কুমার দাশকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে সাদাপোশাকের লোকজন নিয়ে যান।

সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলনের সংগঠকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। শিগগিরই তাঁদের সঙ্গে বসে ন্যায্য দাবির বিষয়ে আলোচনা হবে, এটি রোববারও হতে পারে। তাঁরা ইতিমধ্যে আন্দোলন স্থগিত করেছেন।

আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ৩৩ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়। জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে নেত্রকোনা, ঢাকার আশপাশের উপজেলা, বরিশাল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, মুন্সিগঞ্জ, মাগুরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঝালকাঠি, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, বাগেরহাট, হবিগঞ্জ, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, কক্সবাজার, রাজবাড়ী, নওগাঁ, গোপালগঞ্জ, ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, পাবনা, ঝিনাইদহ, কুড়িগ্রাম, ফরিদপুর ও যশোর জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারীরা।

অবশ্য বৃহস্পতিবার রাত নয়টা পর্যন্ত প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, ২০টি জেলায় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার খবর পাওয়া গেছে।

রোববার পর্যন্ত স্থগিত আন্দোলন

রাতে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, সরকারের আশ্বাসে বিদ্যুৎ চালুর পরও তাঁদের চারজন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় আটক করা হচ্ছে।

আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল হাকিম রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, আটক ব্যক্তিদের সকালের মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আন্দোলন রোববার পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। তবে চাকরিচ্যুতির আদেশ ও মামলা প্রত্যাহার এবং কর্মকর্তাদের মুক্তির দাবি মানা না হলে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে।

সিলেটে ‘ব্ল্যাক আউট’

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতাধীন ২৬টি সাবস্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে বিপাকে পড়েন অন্তত সাড়ে ৪ লাখের বেশি গ্রাহক।

পরে রাত সাড়ে ৭টার দিকে আশ্বাসের প্রেক্ষিতে শাটডাউন স্থগিত করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতাধীন গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ, ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ ও দক্ষিণসুরমা উপজেলা পুরোপুরি শাটডাউন করে দেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এ ছাড়া, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর আওতাধীন আরও ৫টি উপজেলায় শাটডাউন করা না হলেও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল বিভিন্ন এলাকা। লোডশেডিংও ছিল দিনভর।

সিলেট পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, নিম্নমানের মিটার ও মালামাল ক্রয়, লোকবল সংকট, অনিয়মিত কর্মকর্তাদের নিয়মিত করাসহ কয়েকটি দাবি নিয়ে কয়েক দিন আগে থেকে আন্দোলন করছিলেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে গঠিত একটি কমিটি কাজ করছিল।

এরই মধ্যে বুধবার সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার পদমর্যদার কয়েকজন কর্মকর্তাকে একটি পক্ষ চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়। আরও কয়েকজনকে মামলার অভিযুক্ত করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে সিলেটেও কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রতিবাদ করছিলেন।

বৃহস্পতিবার সকালে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সিলেটের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মচারীরা। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন বিদ্যুতের সিনিয়র কর্মকর্তারা। আলোচনা চলাকালেই বিক্ষুব্ধ কর্মচারীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতাধীন ২৬টি সাব-স্টেশন বন্ধ করে দেন। যার ফলে ৮টি উপজেলার প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

এদিকে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করায় বিপাকে পড়েন গ্রাহকেরা। সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আব্দুল হক বলেন, বিকেল ৪টার পর থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। উপজেলার কোথাও বিদ্যুৎ ছিল না। এতে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

গোলাপগঞ্জ উপজেলার রণিখাই এলাকার বাসিন্দা আজমল হোসাইন বলেন, হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যায়। কোনো নোটিশ করা হয়নি আগে। পরে জানতে পারলাম বিদ্যুতের লোকজন আন্দোলন করছেন। এজন্য বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন।

সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সহকারী জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মুনতাসীর মজুমদার বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তার আওতাধীন ২৬টি সাব স্টেশনের মধ্যে সবকটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে ৭টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়।

এদিকে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর সাবস্টেশনগুলো শাটডাউন করা না হলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গ্রাহকেরা। সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর অধীনে ৮টি সাবস্টেশন রয়েছে। এই সাবস্টেশনগুলো থেকে ৫টি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

আরও পড়ুন

শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের কাছে বাংলাদেশের চিঠি, জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের কাছে বাংলাদেশের চিঠি, জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারতের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।

১০ মিনিট আগে

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ৪ ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ৪ ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক

দাবি মেনে নেওয়ায় গাজীপুর নগরের কোনাবাড়ী এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছে শ্রমিকেরা। এর ফলে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর সোমবার বেলা দেড়টার দিকে সড়কটিতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

২৮ মিনিট আগে

গাজীপুরে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ

গাজীপুরে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ

বন্ধ ঘোষণা করা ২টি কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী এলাকায় বিক্ষোভ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শ্রমিকেরা।

৩ ঘণ্টা আগে

হার মানা হার

হার মানা হার

যোগ্যতার চাইতে প্রাপ্তি বেশি হয়ে গেলে তখন সে লাগামহীন হয়ে ওঠে। এ অনেকটা মাটি ও খুঁটির মতো অবস্থা। খুঁটি শক্ত না হলে ঘর নড়বড়ে হবে আবার মাটি উর্বর না হলে খাওয়াপড়া জুটবে না। মানুষের চিন্তার সমৃদ্ধির জন্য পড়াশোনা কিংবা জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই।

২ দিন আগে