রাশেদুর রহমান
বাংলাদেশকে ভারতের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি
বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ৬ ডিসেম্বর ভারত স্বীকৃতি দেয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দেশটির সংসদে এ ঘোষণা দেন।
ইন্দিরা গান্ধী সংসদে বিপুল হর্ষধ্বনির মধ্যে ঘোষণা দেন, ভারত বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ইন্দিরা গান্ধী এক বিবৃতিতে বলেন, বিরাট বাধার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রাম স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সংযোজন করেছে। সতর্কতার সঙ্গে বিচার-বিবেচনা করার পর ভারত বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের মন পড়ে রয়েছে এই নতুন রাষ্ট্রের জনক শেখ মুজিবুর রহমানের দিকে।’
পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে লেখা চিঠিতে ইন্দিরা গান্ধী লেখেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে ভারত সরকার স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এদিকে স্বীকৃতির খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠক বসে। বৈঠকে ভারতের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
কলকাতার বাংলাদেশ হাইকমিশনে এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্থার শাহীন সামাদ, শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়, শীলা মোমেন, শারমিন মুরশিদ প্রমুখ শিল্পীরা ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি পরিবেশন করেন।
সেনানিবাস ছাড়া যশোর মুক্ত
মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বিত যৌথ বাহিনী ৫ ডিসেম্বর রাতে যশোর সেনানিবাস অবরুদ্ধ করে পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। যৌথবাহিনী জানায়, আত্মসমর্পণ করলে পাকিস্তানিরা জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী ব্যবহার পাবে।
যৌথবাহিনীর অবরোধে যশোর সেনানিবাস ঢাকা ও খুলনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেনানিবাস এলাকা ছাড়া যশোর শহরসহ আশপাশের বেশির ভাগ এলাকা ৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনামুক্ত হয়। ৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার হায়াত তাঁর নিজের ব্রিগেড নিয়ে রাতের আঁধারে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে যান খুলনার দিকে। পালানোর সময় শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই হয়। ৭ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৮ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর এম এ মঞ্জুর (স্বাধীনতার ডর বীর উত্তম ও মেজর জেনারেল, ১৯৮১ সালে নিহত) ও মিত্রবাহিনীর নবম ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল দলবীর সিং যশোরে প্রবেশ করেন। তখনো তারা জানতেন না যে, যশোর সেনানিবাস শূন্য। তারা বিস্মিত হন কোনো প্রতিরোধ না দেখে।’
এ ছাড়া, এদিন মুক্ত হয় মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ফেনী, চাঁদপুরের কচুয়া, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ নিয়াজি এক নির্দেশে ঝিনাইদহ অবস্থান থেকে সরে এসে পাকিস্তানি বাহিনীকে ঢাকা রক্ষার নির্দেশ এবং সে অনুযায়ী তিনি ঢাকার পথে পেছনে এসে মেঘনার তীরে সেনা সমাবেশ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু তা আর তাদের পক্ষে করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কারণ ততক্ষণে ঢাকা-যশোর সড়ক মিত্রবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এদিকে পাকিস্তানিরা ঝিনাইদহ ছেড়ে যাওয়ায় ঝিনাইদহ হানাদার মুক্ত হয়।
৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর ত্রিমুখী আক্রমণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সুনামগঞ্জের দক্ষিণের সড়ক ও হাওর পথে পালিয়ে যায়। এতে মুক্ত হয় সুনামগঞ্জ।
৬ ডিসেম্বর ছাতক শহর হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে হানাদার বাহিনী সিলেটের বিশ্বনাথের লামাকাজী এলাকায় চলে যায়।
আবার সোভিয়েত ভেটো
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং দুই দেশের সেনা অপসারণের দাবি জানিয়ে ১১টি রাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে যে প্রস্তাব পেশ করে, এদিন আবার সোভিয়েত ভেটোয় তা বাতিল হয়ে যায়।
২৪ ঘণ্টায় সোভিয়েত ইউনিয়ন এ নিয়ে দুবার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বাধাগ্রস্ত ও বিলম্বিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্ররোচনায় ১১টি রাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবটি পেশ করে।
প্রস্তাবটি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ভোট দেয়নি।
সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশে হিংসাত্মক কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য পাকিস্তানি বাহিনীকে আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব তোলে।
রাতে নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাবটি বাতিল করে দেয়। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি জর্জ বুশ এবং ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেনের মধ্যে তীব্র বিতর্ক হয়।
জর্জ বুশ ভারতকে পাকিস্তানকে আক্রমণের জন্য দায়ী করেন। সমর সেন বাংলাদেশের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র কোনো নিন্দা না করায় দুঃখ প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘের একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে আনা দুটি প্রস্তাব বাতিল হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ সাধারণ পরিষদে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে মধ্যস্থতা করতে বলার কথা ভাবছে।
সেনা অপসারণের কথা না বলে শুধু যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি চূড়ান্ত প্রস্তাব গ্রহণের জন্য আজ নিরাপত্তা পরিষদের আবার বৈঠক বসার কথা।
যুক্তরাজ্যের সংসদের অধিবেশনে টোরি সদস্য ডানকান স্যান্ডস সোভিয়েত ভেটোর সমালোচনা করেন। তবে জন স্টোনহাউস যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকায় সরকারের প্রশংসা করেন।
ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টির দৈনিক মুখপত্র ল্যুমানিতে প্রকাশিত ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টির এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ পরিস্থিতির জন্য ইয়াহিয়া খানের তীব্র নিন্দা করা হয়।
বিবৃতিতে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্যাতনের সমালোচনা করে শেখ মুজিবের মুক্তি এবং যুদ্ধসংক্রান্ত রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য আলোচনা শুরু করার দাবি জানানো হয়।
পাকিস্তানে তৎপরতা
বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ায় পাকিস্তান এদিন ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান এ ঘোষণা দেয়।
ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী কৌশলগত কারণে পশ্চাদপসরণ করছে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ভারত, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১; যশোর গেজেটিয়ার; দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ, মর্নিং স্টার, ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন, ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১; স্বাধীনতাসংগ্রামে প্রবাসী বাঙালি, আবদুল মতিন, র্যাডিক্যাল পাবলিকেশনস, লন্ডন, যুক্তরাজ্য;
বাংলাদেশকে ভারতের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি
বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ৬ ডিসেম্বর ভারত স্বীকৃতি দেয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দেশটির সংসদে এ ঘোষণা দেন।
ইন্দিরা গান্ধী সংসদে বিপুল হর্ষধ্বনির মধ্যে ঘোষণা দেন, ভারত বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ইন্দিরা গান্ধী এক বিবৃতিতে বলেন, বিরাট বাধার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রাম স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সংযোজন করেছে। সতর্কতার সঙ্গে বিচার-বিবেচনা করার পর ভারত বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের মন পড়ে রয়েছে এই নতুন রাষ্ট্রের জনক শেখ মুজিবুর রহমানের দিকে।’
পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে লেখা চিঠিতে ইন্দিরা গান্ধী লেখেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে ভারত সরকার স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এদিকে স্বীকৃতির খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠক বসে। বৈঠকে ভারতের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
কলকাতার বাংলাদেশ হাইকমিশনে এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্থার শাহীন সামাদ, শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়, শীলা মোমেন, শারমিন মুরশিদ প্রমুখ শিল্পীরা ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি পরিবেশন করেন।
সেনানিবাস ছাড়া যশোর মুক্ত
মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বিত যৌথ বাহিনী ৫ ডিসেম্বর রাতে যশোর সেনানিবাস অবরুদ্ধ করে পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। যৌথবাহিনী জানায়, আত্মসমর্পণ করলে পাকিস্তানিরা জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী ব্যবহার পাবে।
যৌথবাহিনীর অবরোধে যশোর সেনানিবাস ঢাকা ও খুলনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেনানিবাস এলাকা ছাড়া যশোর শহরসহ আশপাশের বেশির ভাগ এলাকা ৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনামুক্ত হয়। ৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার হায়াত তাঁর নিজের ব্রিগেড নিয়ে রাতের আঁধারে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে যান খুলনার দিকে। পালানোর সময় শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই হয়। ৭ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৮ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর এম এ মঞ্জুর (স্বাধীনতার ডর বীর উত্তম ও মেজর জেনারেল, ১৯৮১ সালে নিহত) ও মিত্রবাহিনীর নবম ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল দলবীর সিং যশোরে প্রবেশ করেন। তখনো তারা জানতেন না যে, যশোর সেনানিবাস শূন্য। তারা বিস্মিত হন কোনো প্রতিরোধ না দেখে।’
এ ছাড়া, এদিন মুক্ত হয় মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ফেনী, চাঁদপুরের কচুয়া, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ নিয়াজি এক নির্দেশে ঝিনাইদহ অবস্থান থেকে সরে এসে পাকিস্তানি বাহিনীকে ঢাকা রক্ষার নির্দেশ এবং সে অনুযায়ী তিনি ঢাকার পথে পেছনে এসে মেঘনার তীরে সেনা সমাবেশ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু তা আর তাদের পক্ষে করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কারণ ততক্ষণে ঢাকা-যশোর সড়ক মিত্রবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এদিকে পাকিস্তানিরা ঝিনাইদহ ছেড়ে যাওয়ায় ঝিনাইদহ হানাদার মুক্ত হয়।
৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর ত্রিমুখী আক্রমণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সুনামগঞ্জের দক্ষিণের সড়ক ও হাওর পথে পালিয়ে যায়। এতে মুক্ত হয় সুনামগঞ্জ।
৬ ডিসেম্বর ছাতক শহর হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে হানাদার বাহিনী সিলেটের বিশ্বনাথের লামাকাজী এলাকায় চলে যায়।
আবার সোভিয়েত ভেটো
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং দুই দেশের সেনা অপসারণের দাবি জানিয়ে ১১টি রাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে যে প্রস্তাব পেশ করে, এদিন আবার সোভিয়েত ভেটোয় তা বাতিল হয়ে যায়।
২৪ ঘণ্টায় সোভিয়েত ইউনিয়ন এ নিয়ে দুবার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বাধাগ্রস্ত ও বিলম্বিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্ররোচনায় ১১টি রাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবটি পেশ করে।
প্রস্তাবটি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ভোট দেয়নি।
সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশে হিংসাত্মক কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য পাকিস্তানি বাহিনীকে আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব তোলে।
রাতে নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাবটি বাতিল করে দেয়। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি জর্জ বুশ এবং ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেনের মধ্যে তীব্র বিতর্ক হয়।
জর্জ বুশ ভারতকে পাকিস্তানকে আক্রমণের জন্য দায়ী করেন। সমর সেন বাংলাদেশের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র কোনো নিন্দা না করায় দুঃখ প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘের একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে আনা দুটি প্রস্তাব বাতিল হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ সাধারণ পরিষদে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে মধ্যস্থতা করতে বলার কথা ভাবছে।
সেনা অপসারণের কথা না বলে শুধু যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি চূড়ান্ত প্রস্তাব গ্রহণের জন্য আজ নিরাপত্তা পরিষদের আবার বৈঠক বসার কথা।
যুক্তরাজ্যের সংসদের অধিবেশনে টোরি সদস্য ডানকান স্যান্ডস সোভিয়েত ভেটোর সমালোচনা করেন। তবে জন স্টোনহাউস যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকায় সরকারের প্রশংসা করেন।
ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টির দৈনিক মুখপত্র ল্যুমানিতে প্রকাশিত ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টির এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ পরিস্থিতির জন্য ইয়াহিয়া খানের তীব্র নিন্দা করা হয়।
বিবৃতিতে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্যাতনের সমালোচনা করে শেখ মুজিবের মুক্তি এবং যুদ্ধসংক্রান্ত রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য আলোচনা শুরু করার দাবি জানানো হয়।
পাকিস্তানে তৎপরতা
বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ায় পাকিস্তান এদিন ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান এ ঘোষণা দেয়।
ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী কৌশলগত কারণে পশ্চাদপসরণ করছে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ভারত, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১; যশোর গেজেটিয়ার; দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ, মর্নিং স্টার, ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন, ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১; স্বাধীনতাসংগ্রামে প্রবাসী বাঙালি, আবদুল মতিন, র্যাডিক্যাল পাবলিকেশনস, লন্ডন, যুক্তরাজ্য;
যোগ্যতার চাইতে প্রাপ্তি বেশি হয়ে গেলে তখন সে লাগামহীন হয়ে ওঠে। এ অনেকটা মাটি ও খুঁটির মতো অবস্থা। খুঁটি শক্ত না হলে ঘর নড়বড়ে হবে আবার মাটি উর্বর না হলে খাওয়াপড়া জুটবে না। মানুষের চিন্তার সমৃদ্ধির জন্য পড়াশোনা কিংবা জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই।
পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে থাকা সুস্পষ্ট লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।
কথাসাহিত্যিক ও গবেষক সিরাজুল ইসলাম মুনির সমকালীন বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে সুপরিচিত নাম। তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির সমৃদ্ধ বহুমাত্রিকতা সৃষ্টি করেছে শক্তিশালী স্বতন্ত্র অবস্থান। সাবলীল শব্দ ব্যঞ্জনার প্রকাশে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন জীবন, দেশাত্মবোধ বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন মাত্রাকে।