রহমান মৃধা, সুইডেন
আজকের পৃথিবী, আজকের সমাজ কি আমাদের পরিচয় হতে পারে? মানবতা, সহানুভূতি, ভালোবাসা—আমরা কি এখনো সেই মূল্যবোধগুলো ধারণ করি? কিংবা আমাদের মধ্যে এতটুকু মর্যাদাবোধও কি রয়ে গেছে? আজকের পৃথিবীতে, যেখানে টাকা একমাত্র জীবনের অগ্রাধিকার, সেখানে আমরা ভুলে যাচ্ছি, মানুষের আসল মূল্য কোনো টাকায় নির্ধারিত নয়।
তবুও, আজও আমরা দেখি, রিকশাচালক, গাড়িচালক, ট্যাক্সিচালক—এদের কেউ কখনো সমাজে নিম্নবর্গীয়, কেউ উচ্চবর্গীয়। এদের হাতেই তো চলছে জীবন, চলেছে সমাজের দিন-রাত। কিন্তু, কীভাবে তারা একে অপরের চেয়ে কম মূল্যবান হয়ে থাকে?
একই কাজ, একই পরিশ্রম, তবু ভেদাভেদ কেন? কীভাবে সম্ভব? একই কাজ, একই শ্রম, একজন ঘোড়ার গাড়িচালক কিংবা রিকশাচালক যদি সমাজের দৃষ্টিতে তুচ্ছ হয়ে যায়, অথচ অন্যদিকে একজন বিমানচালক, ট্যাক্সিচালক, বড় গাড়িচালক এত উঁচু মর্যাদা পান? তাদের মর্যাদার ভিত্তি কী আসলে, তাদের কাজের পরিশ্রম, নাকি শুধু অর্থের বৈভব? মানুষ কেন তার আত্মসম্মানকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়?
আমরা তো মানুষ! আমাদের কি টাকার অভাবে আমাদের মানবিকতা, নৈতিকতা, মর্যাদা বিক্রি করতে হবে? কিন্তু আমরা দেখতে পাই, আমাদের দেশের প্রতিটি স্তরের মানুষ, চাইলেও নিজের মর্যাদার পেছনে ছুটতে পারে না। তারা এতটাই দরিদ্র, এতটাই নিঃস্ব, যে টাকার জন্য নিজেকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়।
মানুষ মানুষের জন্য, কিন্তু কেন আজও এই বিভাজন?
আমরা যদি কেবল নিজের ঘরে চোখ মেলি, নিজেদের পরিবেশে একবার দেখি, তবে কি আমাদের হৃদয়ে কোনো দুঃখ, কোনো কষ্ট স্পর্শ করে না? কেন, আমরা যারা নিজেদের শ্রেণি-বৈষম্য থেকে মুক্ত ভাবি, তাদের অবস্থা কখনোই ভেবে দেখিনি। বৈষম্য শুধু সমাজের উঁচু স্তরের মানুষের পছন্দ নয়, এ এক শক্তিশালী সংস্কৃতি, যার শিকড় অনেক গভীরে।
আমাদের সমাজে কাজের মর্যাদা নেই, অর্থের মর্যাদা আছে আর সমাজের বাকি অংশ সব উপেক্ষিত। যখন একজন রিকশাচালক সারা দিন জীবনের অভাবের সঙ্গে লড়ে, তখন অন্য দিকে একজন ট্যাক্সিচালক একটি শালীন জীবনযাপন করে। কিন্তু তাদের শ্রমের মূল্য কি একই নয়? সমাজে, কীভাবে পার্থক্য তৈরি হচ্ছে—এটি এক গভীর প্রশ্ন।
টাকা ছাড়া কেউ কি মানুষ নয়? যখন রিকশাচালক, সিএনজি বা অটোরিকশার চালক, নৌকার মাঝি কিংবা গরীব মানুষের চোখে অভাব আর দুঃখের ছাপ চলে আসে, তখন তার হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যায়। তার সাধ্যের মধ্যে কিছুই নেই, কিন্তু তার ভেতরে এক অনন্ত ত্যাগ ও বিশ্বাস থাকে।
আমাদের যদি কোনো দৃষ্টিকোণ থেকে সবার কষ্ট না দেখা হয়, তবে আমাদের সামনে যে বিশাল অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে, তাতে কখনোই মানবতা বাঁচবে না।
দেখুন, এই বিভাজন শুধুমাত্র অর্থ বা শ্রেণি নয়, আমাদের নৈতিকতা, আমাদের মানবিকতা, পৃথিবীকে দেখতে পাওয়া—এটা এক অমানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জন্ম নিচ্ছে। আমরা যাদেরকে গাড়ির চালক বলি, তাদের চেয়ে কি আমরা একজন ঘোড়ার গাড়িচালককে কম জানব? কেন তাকে অধিকারহীন, শ্রেণিহীন বা অপমানিত হতে হবে?
যে সমাজে মানুষের মূল্যায়ন শুধুমাত্র অর্থের মাধ্যমে হয়, সে সমাজ কখনোই প্রকৃত মানবিক সমাজ হতে পারে না।
মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবিক মর্যাদার চ্যালেঞ্জ
আজ থেকে শুরু করা উচিত আমাদের নতুন দৃষ্টি। আমাদের জীবন যেদিন অর্থের চেয়ে বেশি মূল্যবান হবে, সেদিন থেকে পৃথিবীটা এক নতুন দিকে ফিরে যাবে। আমরা যদি চাই সমাজে সত্যিকারের পরিবর্তন, তবে আমাদের সকলের একটাই স্লোগান হওয়া উচিত—মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।
এটি যখন সমাজের সকল স্তরের মানুষের অভ্যন্তরে প্রতিফলিত হবে, তখন আর কোনো বিভাজন থাকবে না, না শ্রেণিভেদ, না ধনী-দরিদ্র, না কাজে শ্রদ্ধা—সবাই হবে সমান। শুধু অর্থ নয়, আমাদের মানবিকতা হবে সেই একমাত্র মাপকাঠি যা আমাদের মানুষ হিসেবে পরিচিত করবে।
এই চেতনাবোধ যদি আমরা সবাই নিজেদের মধ্যে জাগ্রত করতে পারি, তবে সমাজের মধ্যে বিভাজন অদৃশ্য হয়ে যাবে, এবং পৃথিবী হবে সত্যিকারের এক মানবিক বাসস্থান, যেখানে সবাই সমান। আজকের পৃথিবীটাই আমাদের পছন্দের পৃথিবী হবে, যেখানে মানুষ মানুষের জন্য এবং জীবন জীবনের জন্য।
—রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
[email protected]
আজকের পৃথিবী, আজকের সমাজ কি আমাদের পরিচয় হতে পারে? মানবতা, সহানুভূতি, ভালোবাসা—আমরা কি এখনো সেই মূল্যবোধগুলো ধারণ করি? কিংবা আমাদের মধ্যে এতটুকু মর্যাদাবোধও কি রয়ে গেছে? আজকের পৃথিবীতে, যেখানে টাকা একমাত্র জীবনের অগ্রাধিকার, সেখানে আমরা ভুলে যাচ্ছি, মানুষের আসল মূল্য কোনো টাকায় নির্ধারিত নয়।
তবুও, আজও আমরা দেখি, রিকশাচালক, গাড়িচালক, ট্যাক্সিচালক—এদের কেউ কখনো সমাজে নিম্নবর্গীয়, কেউ উচ্চবর্গীয়। এদের হাতেই তো চলছে জীবন, চলেছে সমাজের দিন-রাত। কিন্তু, কীভাবে তারা একে অপরের চেয়ে কম মূল্যবান হয়ে থাকে?
একই কাজ, একই পরিশ্রম, তবু ভেদাভেদ কেন? কীভাবে সম্ভব? একই কাজ, একই শ্রম, একজন ঘোড়ার গাড়িচালক কিংবা রিকশাচালক যদি সমাজের দৃষ্টিতে তুচ্ছ হয়ে যায়, অথচ অন্যদিকে একজন বিমানচালক, ট্যাক্সিচালক, বড় গাড়িচালক এত উঁচু মর্যাদা পান? তাদের মর্যাদার ভিত্তি কী আসলে, তাদের কাজের পরিশ্রম, নাকি শুধু অর্থের বৈভব? মানুষ কেন তার আত্মসম্মানকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়?
আমরা তো মানুষ! আমাদের কি টাকার অভাবে আমাদের মানবিকতা, নৈতিকতা, মর্যাদা বিক্রি করতে হবে? কিন্তু আমরা দেখতে পাই, আমাদের দেশের প্রতিটি স্তরের মানুষ, চাইলেও নিজের মর্যাদার পেছনে ছুটতে পারে না। তারা এতটাই দরিদ্র, এতটাই নিঃস্ব, যে টাকার জন্য নিজেকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়।
মানুষ মানুষের জন্য, কিন্তু কেন আজও এই বিভাজন?
আমরা যদি কেবল নিজের ঘরে চোখ মেলি, নিজেদের পরিবেশে একবার দেখি, তবে কি আমাদের হৃদয়ে কোনো দুঃখ, কোনো কষ্ট স্পর্শ করে না? কেন, আমরা যারা নিজেদের শ্রেণি-বৈষম্য থেকে মুক্ত ভাবি, তাদের অবস্থা কখনোই ভেবে দেখিনি। বৈষম্য শুধু সমাজের উঁচু স্তরের মানুষের পছন্দ নয়, এ এক শক্তিশালী সংস্কৃতি, যার শিকড় অনেক গভীরে।
আমাদের সমাজে কাজের মর্যাদা নেই, অর্থের মর্যাদা আছে আর সমাজের বাকি অংশ সব উপেক্ষিত। যখন একজন রিকশাচালক সারা দিন জীবনের অভাবের সঙ্গে লড়ে, তখন অন্য দিকে একজন ট্যাক্সিচালক একটি শালীন জীবনযাপন করে। কিন্তু তাদের শ্রমের মূল্য কি একই নয়? সমাজে, কীভাবে পার্থক্য তৈরি হচ্ছে—এটি এক গভীর প্রশ্ন।
টাকা ছাড়া কেউ কি মানুষ নয়? যখন রিকশাচালক, সিএনজি বা অটোরিকশার চালক, নৌকার মাঝি কিংবা গরীব মানুষের চোখে অভাব আর দুঃখের ছাপ চলে আসে, তখন তার হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যায়। তার সাধ্যের মধ্যে কিছুই নেই, কিন্তু তার ভেতরে এক অনন্ত ত্যাগ ও বিশ্বাস থাকে।
আমাদের যদি কোনো দৃষ্টিকোণ থেকে সবার কষ্ট না দেখা হয়, তবে আমাদের সামনে যে বিশাল অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে, তাতে কখনোই মানবতা বাঁচবে না।
দেখুন, এই বিভাজন শুধুমাত্র অর্থ বা শ্রেণি নয়, আমাদের নৈতিকতা, আমাদের মানবিকতা, পৃথিবীকে দেখতে পাওয়া—এটা এক অমানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জন্ম নিচ্ছে। আমরা যাদেরকে গাড়ির চালক বলি, তাদের চেয়ে কি আমরা একজন ঘোড়ার গাড়িচালককে কম জানব? কেন তাকে অধিকারহীন, শ্রেণিহীন বা অপমানিত হতে হবে?
যে সমাজে মানুষের মূল্যায়ন শুধুমাত্র অর্থের মাধ্যমে হয়, সে সমাজ কখনোই প্রকৃত মানবিক সমাজ হতে পারে না।
মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবিক মর্যাদার চ্যালেঞ্জ
আজ থেকে শুরু করা উচিত আমাদের নতুন দৃষ্টি। আমাদের জীবন যেদিন অর্থের চেয়ে বেশি মূল্যবান হবে, সেদিন থেকে পৃথিবীটা এক নতুন দিকে ফিরে যাবে। আমরা যদি চাই সমাজে সত্যিকারের পরিবর্তন, তবে আমাদের সকলের একটাই স্লোগান হওয়া উচিত—মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।
এটি যখন সমাজের সকল স্তরের মানুষের অভ্যন্তরে প্রতিফলিত হবে, তখন আর কোনো বিভাজন থাকবে না, না শ্রেণিভেদ, না ধনী-দরিদ্র, না কাজে শ্রদ্ধা—সবাই হবে সমান। শুধু অর্থ নয়, আমাদের মানবিকতা হবে সেই একমাত্র মাপকাঠি যা আমাদের মানুষ হিসেবে পরিচিত করবে।
এই চেতনাবোধ যদি আমরা সবাই নিজেদের মধ্যে জাগ্রত করতে পারি, তবে সমাজের মধ্যে বিভাজন অদৃশ্য হয়ে যাবে, এবং পৃথিবী হবে সত্যিকারের এক মানবিক বাসস্থান, যেখানে সবাই সমান। আজকের পৃথিবীটাই আমাদের পছন্দের পৃথিবী হবে, যেখানে মানুষ মানুষের জন্য এবং জীবন জীবনের জন্য।
—রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
[email protected]
যোগ্যতার চাইতে প্রাপ্তি বেশি হয়ে গেলে তখন সে লাগামহীন হয়ে ওঠে। এ অনেকটা মাটি ও খুঁটির মতো অবস্থা। খুঁটি শক্ত না হলে ঘর নড়বড়ে হবে আবার মাটি উর্বর না হলে খাওয়াপড়া জুটবে না। মানুষের চিন্তার সমৃদ্ধির জন্য পড়াশোনা কিংবা জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই।
পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে থাকা সুস্পষ্ট লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।
কথাসাহিত্যিক ও গবেষক সিরাজুল ইসলাম মুনির সমকালীন বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে সুপরিচিত নাম। তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির সমৃদ্ধ বহুমাত্রিকতা সৃষ্টি করেছে শক্তিশালী স্বতন্ত্র অবস্থান। সাবলীল শব্দ ব্যঞ্জনার প্রকাশে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন জীবন, দেশাত্মবোধ বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন মাত্রাকে।