logo
খবর

তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শেষ হবে অক্টোবরে, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ফ্লাইট শুরুর আশা

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহুল আলোচিত তৃতীয় টার্মিনাল ২০২৫ সালের প্রখমার্ধে পুরোপুরি চালু করতে সব কাজ গুছিয়ে নিচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

প্রতিবেদক, বিডিজেন২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Copied!
তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শেষ হবে অক্টোবরে, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ফ্লাইট শুরুর আশা
ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহুল আলোচিত তৃতীয় টার্মিনাল ২০২৫ সালের প্রখমার্ধে পুরোপুরি চালু করতে সব কাজ গুছিয়ে নিচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ এ বছরের অক্টোবরের মধ্যেই শেষ হচ্ছে। আর ২০২৫ সালে প্রথমার্ধে থার্ড টার্মিনাল থেকে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হতে পারে বলে বেবিচক কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তারা জানান, তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। প্রকল্পের সময়সীমা অনুযায়ী অক্টোবরেই শেষ হবে। অক্টোবরে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টার্মিনালের দায়িত্ব বুঝে নেবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর আগামী বছর থেকে ফ্লাইট শিডিউল ঠিক করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারিতে পুরোদমে চালু হবে এ টার্মিনাল।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপরই তৃতীয় টার্মিনালের কাজ যথাসময়ে শেষ করা নিয়ে তৈরি হয়েছিল এক ধরনের অনিশ্চয়তা। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কিছুদিন পর আবার তৃতীয় টার্মিনালের কাজ স্বাভাবিক গতিতে চলছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প এলাকায় টার্মিনাল ভবনের ওপর দৃষ্টিনন্দন নকশার কাজ সবার নজর কাড়ছে। ভেতরে বাইরে ছোটখাট বিভিন্ন ধরনের ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া তৃতীয় টার্মিনাল পরিদর্শন করে কাজের অগ্রগতি, মান এবং সময়মতো কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

বেবিচক চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, তৃতীয় টার্মিনালের কাজ ইতিমধ্যে ৯৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সার্বিক কাজের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষজনক। অবশিষ্ট কাজসমূহ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছি।

কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অক্টোবরেই সব কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান, প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। টার্মিনাল ভবন বুঝে পাওয়ার পর আমরা ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নেব।

কনসালটেন্সি ফার্ম নিপ্পন কোইয়ের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, টার্মিনালে অপারেশন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তার জন্য ৬ হাজার দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য প্রায় ৪ হাজার কর্মীর প্রয়োজন হবে।

বেবিচক কর্মকর্তারা জানান, যেহেতু এত লোকবল অক্টোবরের মধ্যে পাওয়া যাবে না, তাই প্রথম কয়েক মাসে টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু নাও হতে পারে। শুরুর কয়েক মাস বেবিচক ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস টার্মিনালটি পরিচালনা করবে। আগামী বছরের প্রথম দিকে প্রয়োজনীয়সংখ্যক দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে এবং আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আরও ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। আর বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালে দিনে ৩০টির বেশি উড়োজাহাজ সংস্থার ১২০ থেকে ১৩০টি বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। প্রতিদিন এসব উড়োজাহাজের প্রায় ২০ হাজার যাত্রী বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল ব্যবহার করেন। এই হিসাবে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীর সেবা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উন্নয়নমূলক কাজের অংশ হিসেবে ২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর তড়িঘড়ি করে টার্মিনালটির আংশিক উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ২০২৪ সালের অক্টোবরে তৃতীয় টার্মিনাল থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করা যাবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, অক্টোবরের মধ্যে তৃতীয় টার্মিনালের ফিজিক্যাল পার্ট শেষ হয়ে যাবে। ডিসেম্বর বা ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনা করা যাবে। শাহজালালের প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালের অধিকাংশ কাজ ম্যানুয়ালি হয়। তৃতীয় টার্মিনালে সবকিছু অনলাইনভিত্তিক হবে। এ জন্য বেবিচকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

বেবিচক জানায়, ২০১৭ সালে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। তবে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এই নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।

বেবিচক সূত্র জানায়, বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরে দুটি টার্মিনালে জায়গা রয়েছে ১ লাখ বর্গমিটারের কিছু বেশি। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে এরসঙ্গে যুক্ত হবে আরও ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার স্থান। তিনতলা টার্মিনাল ভবনে থাকছে ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৪টি ডিপারচার ও ৬৪টি অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ডেস্ক। নিরাপত্তা নিশ্চিতে থাকবে ২৭টি ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, ৪০টি স্ক্যানিং মেশিন, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১৬টি ক্যারোসেল ও ১১টি বডি স্ক্যানার।

তৃতীয় টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করা যাবে। রানওয়েতে উড়োজাহাজের অপেক্ষা কমাতে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি হাইস্পিড ট্যাক্সিওয়ে। পণ্য আমদানি ও রপ্তানির জন্য নির্মাণ করা হয়েছে দুটি ভবন। একসঙ্গে ১ হাজার ৩৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তিনতলা ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ।

টার্মিনালের মোট ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজের মধ্যে প্রথম ধাপে চালু হবে ১২টি। বহির্গমনের জন্য মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টারের মধ্যে ১৫টি থাকবে সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টার। ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারও থাকবে।

তৃতীয় টার্মিনাল এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে যাত্রীদের ভেতরে ঢুকতে ও বের হতে সুবিধা হয়। টার্মিনালটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ভূগর্ভস্থ রেলপথ এবং বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের সঙ্গে একটি টানেলের মাধ্যমে সংযুক্ত হবে। মেট্রোরেলের একটি রুটের সঙ্গেও টার্মিনাল যুক্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়া, হজযাত্রীরা আশকোনা হজ ক্যাম্প থেকে আরেকটি টানেল দিয়ে তৃতীয় টার্মিনালে যেতে পারবেন।

অন্যদিকে, ফ্রান্সের সহায়তায় আধুনিক প্রযুক্তির রাডারসহ অন্য প্রয়োজনীয় আকাশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংযোজন করা হয়েছে এ টার্মিনালে।

নতুন টার্মিনাল সম্পর্কে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ

টার্মিনালটির যাত্রী সক্ষমতা হবে ১ কোটি ৬০ লাখ। এখন যে দুটি টার্মিনালে আছে তার সক্ষমতা ৮০ লাখ যাত্রী। ফলে তৃতীয় টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হলে বছরে ২ কোটি ৪০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

টার্মিনালটির ফ্লোর আয়তন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। বিদ্যমান টার্মিনাল ১ ও ২–এর মোট ফ্লোর স্পেস ১ লাখ বর্গমিটার।

নতুন টার্মিনালে মোট বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে ২৬টি। টার্মিনাল ১ ও ২–এ ব্রিজ আছে ৮টি।

নতুন টার্মিনালে মোট ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্কিং করা যাবে। আগের দুটিতে রাখা যেত ২৯টি উড়োজাহাজ।

টার্মিনাল ১ ও ২–এ লাগেজ কনভেয়ার বেল্ট সবমিলে আছে ৮টি। সেখানে তৃতীয় টার্মিনালে এ ধরনের বেল্ট আছে ১৬টি।

পুরোনো টার্মিনালে মোট চেক ইন কাউন্টার আছে ৬২টি আর ইমিগ্রেশন কাউন্টার ১০৭টি। তৃতীয় টার্মিনালে চেক ইন কাউন্টার ১১৫টি আর ইমিগ্রেশন কাউন্টার ১২৮টি।

আরো পড়ুন

আন্দোলনে ১৫৮১ নিহতের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ

আন্দোলনে ১৫৮১ নিহতের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ১ হাজার ৫৮১ জন নিহতের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আজ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।

হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ নিহত

হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ নিহত

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহর নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেছে সংগঠনটি। শনিবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে তারা।

২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা ডিএইচএলের

২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা ডিএইচএলের

আন্তর্জাতিক এক্সপ্রেস সার্ভিস প্রোভাইডার ডিএইচএল এক্সপ্রেস বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনের বার্ষিক ভাড়া সমন্বয়ের ঘোষণা দিয়েছে। জার্মানিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি এবার ভাড়া বাড়িয়েছে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। ক্রমবর্ধমান পরিচালন খরচ সমন্বয়ের জন্য ডিএইচএল এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ভাড়ার নতুন হার কার্যকর

বাংলাদেশে রোববার ৪ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট ধীরগতির থাকবে

বাংলাদেশে রোববার ৪ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট ধীরগতির থাকবে

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা স্টেশনে সাবমেরিন ক্যাবল সিস্টেমের রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য বাংলাদেশে ২৯ সেপ্টেম্বর চার ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট ধীরগতির থাকবে।