logo
খবর

ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করলে ‘সরকার থেকে বেরিয়ে আসা উচিত’, বিবিসি বাংলাকে মির্জা ফখরুল

বিডিজেন ডেস্ক
বিডিজেন ডেস্ক২৪ জানুয়ারি ২০২৫
Copied!
ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করলে ‘সরকার থেকে বেরিয়ে আসা উচিত’, বিবিসি বাংলাকে মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির। ছবি: বিবিসি বাংলার সৌজন্যে

বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করলে, সরকার থেকে বেরিয়ে এসে তা করা উচিত হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন মির্জা ফখরুল।

সাক্ষাৎকারে ভারত বিষয়ে বিএনপির অবস্থান, আগামী নির্বাচন নিয়ে দলের প্রস্তুতি, দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ওঠা চাঁদাবাজি-দখলদারির অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের নতুন দল গঠন, আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণসহ আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বিবিসির সঙ্গে কথা বলেছেন মির্জা ফখরুল।

বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে, তা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসার আগেও হতে পারে বলে সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন মির্জা ফখরুল। তারেক রহমান কবে নাগাদ দেশে ফিরতে পারেন, ধারণা দিয়েছেন সে বিষয়ে। এ ছাড়া, আগামী নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভূমিকা কী হতে পারে, সে বিষয়েও কথা বলেছেন তিনি।

দুই পর্বে বিএনপির মহাসচিবের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির। এর আগে প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয়েছে। এখন দ্বিতীয় পর্বটি প্রকাশ করা হলো:

বিবিসি বাংলা: শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের একটা অবনতি দেখা গেছে। সম্প্রতি আমরা বেশ কয়েকবার এটা দেখেছি এবং ভারত সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হয়েছে যে নির্বাচিত সরকার আসার আগপর্যন্ত এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। তো ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আপনাদের দলীয় অবস্থানটা কী?

বিএনপি মহাসচিব: আমরা সব সময় যেটা বলে এসেছি, সেটাই। আমরা ভারতকে আমাদের প্রতিবেশী মনে করি। একাত্তর সালের যুদ্ধে আমাদের সহযোগিতা করেছে, সে জন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু বিগত নির্বাচনগুলোয় ভারতের ভূমিকা কখনোই বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে ছিল না। বিগত নির্বাচনগুলোয় ভারত অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে যে পতিত আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকার ছিল, তার পক্ষ অবলম্বন করেছিল। যেটা আমরা মনে করি যে ভারতের একটা ভুল রাজনীতি হয়েছে। কূটনীতির ক্ষেত্রে তারা একটা বড় ভুল করেছে। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা আমাদের দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি একজন প্রতিবেশী হিসেবে, তবে কখনোই আমার স্বার্থকে বিপন্ন করে নয়। আমার স্বার্থ পুরোপুরি ঠিক রেখে আমার তার সঙ্গে যতটুকু সম্পর্ক রাখা দরকার, ততটুকুই সম্পর্ক রাখার পক্ষে আমরা।

বিবিসি বাংলা: ছাত্র আন্দোলনের নেতারা একটা রাজনৈতিক দল গঠন করছেন, আপনি নিজেও বলছিলেন, তাঁরা একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন।

বিএনপি মহাসচিব: হ্যাঁ, এটা পত্রপত্রিকায় আসছে এবং তারা বলেছে।

বিবিসি বাংলা: তো এই যে রাজনৈতিক দল গঠন করা, এটাকে আপনারা কীভাবে দেখছেন?

বিএনপি মহাসচিব: না, করতেই পারে। এটা তো তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সে ক্ষেত্রে আমরা তাদের স্বাগত জানাব। কিন্তু একটা কথা অলরেডি উঠে আসছে মিডিয়াতে। কিংস পার্টি বলে একটা কথা উঠছে। আমি মনে করি এখান থেকে তাদের বেরিয়ে আসা উচিত। অর্থাৎ সরকারের কোনো সাহায্য না নিয়ে তারা যদি দল গঠন করতে চায়, সেটা তাদের জন্যই ভালো হবে।

বিবিসি বাংলা: সেটা কীভাবে হতে পারে?

বিএনপি মহাসচিব: তারা নিজেরাই দল গঠন করবে? কেন, অন্য দলগুলো কীভাবে দল গঠন করেছে?

বিবিসি বাংলা: সরকারে তাদের যারা আছেন, তাদের সেখান থেকে সরে যাওয়া উচিত?

বিএনপি মহাসচিব: উচিত অবশ্যই এবং সরকারের কোনো সুবিধাই তাদের নেওয়া উচিত না।

বিবিসি বাংলা: আপনি কি মনে করেন যে সরকারের সুবিধা নিয়ে এখন তারা এটা করছেন?

বিএনপি মহাসচিব: না, দল তো তারা গঠন করছে, তাদের প্রতিনিধিরা সরকারে আছে। দ্যাটস এনাফ। হেলিকপ্টারে করে গিয়ে আপনার শীতবস্ত্র দিচ্ছে বিভিন্ন এলাকাতে। আপনার অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ওপরে, জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ওপরে নানা রকম প্রভাব তো তারা বিস্তার করছেই।

বিবিসি বাংলা: আপনাদের সাবেক জোটসঙ্গী জামায়াত। জামায়াতের সঙ্গে আপনাদের সম্প্রতি একটা বিভেদ বা বলা যায় যে অনেক ক্ষেত্রে কথা-কাটাকাটি...

বিএনপি মহাসচিব: আপনি জামায়াতকে আমাদের জোট বলছেন..

বিবিসি বাংলা: সাবেক জোটসঙ্গী বলেছি।

বিএনপি মহাসচিব: হ্যাঁ, সাবেক।

বিবিসি বাংলা: আমি বলেছি সাবেক।

বিএনপি মহাসচিব: দ্যাটস দ্য এক্সাক্ট ওয়ার্ড (হাসি)। এখন কিন্তু আমরা কারও সঙ্গে জোটবদ্ধ নই। আমরা আছি যুগপৎ আন্দোলনে। আমাদের সঙ্গে যে দলগুলা আছে, আমরা যুগপৎ আন্দোলনে আছি। কিন্তু কোনো জোট আমাদের সঙ্গে নেই।

বিবিসি বাংলা: এটা আপনি বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন যে এখন আপনাদের আর জোট নেই। সে জন্যই আমি বলছি, সাবেক জোটসঙ্গী। তাদের সঙ্গে আপনাদের জোট তো ছিল। একসময় জামায়াত আপনাদের প্রতীকে নির্বাচনও করেছে।

বিএনপি মহাসচিব: গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে, নির্বাচনে এই জোটবদ্ধ হওয়াটা ইলেকশনের আগে এটা কমন ব্যাপার। সব দেশে, পৃথিবীর সব জায়গায় আছে। ভারতেও মুসলিম লীগ আর কমিউনিস্ট পার্টি একসঙ্গে জোট বাঁধে। ভারতে যে ইলেকশন হয়, যখন আরকি। অনেকগুলো জায়গায় দেখবেন জোট বাঁধে, আবার ভেঙে যায়। কংগ্রেস আবার তৃণমূলের সঙ্গে জোট বাঁধে। এটা নির্বাচনের স্বার্থে আপনার ইলেকটোরাল অ্যালায়েন্স যেটাকে বলা হয়, সেটা তারা করে। এটা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে প্রচলিত আছে।

বিবিসি বাংলা: আপনি বলছেন, এটা নির্বাচনী জোট ছিল। আদর্শের দিক থেকে আপনাদের কোনো রকম সম্পর্ক আছে?

বিএনপি মহাসচিব: না, না। কোনো রকম সম্পর্ক ছিল না। আমাদের তো খুব পরিষ্কার যেটা আমরা বলি যে আমরা এখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

বিবিসি বাংলা: আপনাদের এখন যেমন বিভেদ বলি, বা বিএনপি এবং জামায়াতের নেতারা নানা বিষয় নিয়ে দেখা যাচ্ছে যে পাল্টা কথাবার্তা চলছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে কি জামায়াত আপনাদের একটা মূল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছে?

বিএনপি মহাসচিব: আমরা মনে করি না। রাজনৈতিক দলগুলো তো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই, যখন ইলেকশন আসবে, তখন তো সবাই সবার প্রতিপক্ষ তো হবেই এবং রাজনীতির ক্ষেত্রেও প্রতিপক্ষ হতে পারে। আমরা মনে করি না। এখন কোনো রাজনৈতিক দল আমাদের প্রতিপক্ষ আছে, আমরা মনে করি না।

বিবিসি বাংলা: কিন্তু আপনাদের বিষয়ে বেশ কঠোর কথাবার্তা বলতে দেখা গেছে। আমি যদি একটা উদাহরণ দিই, সম্প্রতি জামায়াতের আমির একটা অনুষ্ঠানে বলেছেন যে এক চাঁদাবাজ চলে গেছে, আরেকজন চাঁদাবাজিতে লেগে গেছে, এ ধরনের কথা আরকি।

বিএনপি মহাসচিব: সেটা তো তারাও হতে পারে।

বিবিসি বাংলা: আপনাদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছে।

বিএনপি মহাসচিব: আমাদের তো নাম ধরে বলেননি। আমি রিঅ্যাক্ট করব না এই জন্য যে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নাই এটার মধ্যে। যারা চাঁদাবাজি করছে, দে উইল আনসার ফর দ্যাট।

Fakrul

বিবিসি বাংলা: কিন্তু আমি যদি বলি যে এর মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এটা এসেছে যে আপনার দলের, বিএনপির বিভিন্ন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এসেছে, দখলের অভিযোগ এসেছে।

বিএনপি মহাসচিব: তারা আমাদের দলের মধ্যে নেই। আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি, প্রায় দেড় হাজারের বেশি এসব মানুষকে আমরা দল থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছি।

বিবিসি বাংলা: আপনারা অনেককে বহিষ্কার করেছেন, এটা সত্যি। কিন্তু এটা তারপরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না কেন? এখনো কিন্তু এটা হচ্ছে, অভিযোগ বারবার আসছে।

বিএনপি মহাসচিব: না, আমাদের দলের লোকেরা এটা করছে এখনো এ ধরনের কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ আমরা পাইনি। যদি পাই, আমরা সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

বিবিসি বাংলা: কিন্তু অভিযোগ আসছে।

বিএনপি মহাসচিব: আমাদের কাছে যদি আসে, সুনির্দিষ্টভাবে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

বিবিসি বাংলা: দলীয়ভাবে আপনাদের নেতা-কর্মীদের কাছে আপনারা কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন?

বিএনপি মহাসচিব: এটা আপনি খুব ভালো করেই জানেন যে আমাদের অ্যাকটিং চেয়ারম্যান দিয়েছেন। আমরা বলেছি, সব সময় বলছি। গত দুই-তিনটি মিটিংয়েও আমরা একই কথা বলেছি যে এসব কোনো রকমে বরদাশত করা হবে না।

বিবিসি বাংলা: নির্বাচনে যদি ভোটারদের আস্থার কথা বলা হয়। রাজনৈতিক দলগুলো বা এর আগের অভিজ্ঞতা থেকে ভোটারদের একটা ভয় থাকে চাঁদাবাজি বা দখলের মতো বিষয়গুলো নিয়ে। এর আগে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় হয়েছে। আওয়ামী লীগ তো করেছেই, এর আগেও হয়েছে। ভবিষ্যতে যে এ ধরনের কিছু হবে না বা বিএনপি যে এ ধরনের বিষয়গুলো আর সামনে করবে না বা প্রশ্রয় দেবে না, এই আস্থা আপনারা কীভাবে অর্জন করবেন?

বিএনপি মহাসচিব: এই প্রশ্নটা আমি মনে করি যে আপেক্ষিক প্রশ্ন। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলোতে আমরা সব সময় কাজ করি জনগণের সমর্থন লাভের জন্য। জনগণের সমর্থন তো আমরা অতীতেও লাভ করেছি। আমাদের আস্থা আছে যে সামনের নির্বাচনেও জনগণের সমর্থন লাভ করব। আমরা যদি খারাপ কাজ করি, তাহলে আমাদের তারা ভোট দেবে না তো। ওই জন্যই ভোটটা চাই তো আমরা যে জনগণ ডিসাইড করুক, আমাদের ভোট দেবে কি দেবে না। ভোট দিলে না আপনি নির্ধারণ করবেন। নির্বাচন হোক। জনগণ কাকে বেছে নেয়, দেখা যাক।

বিবিসি বাংলা: আপনারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলছেন। জুলাই-আগস্টের কথা এসেছে। যদি জুলাই-আগস্টে নির্বাচন হয়, সময় তো খুব বেশি নেই। এর মধ্যে আপনাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। তো এখন যদি নির্বাচন হয় দ্রুততম সময়ের মধ্যে, সে ক্ষেত্রে দলের নেতৃত্বে নির্বাচন কীভাবে হবে?

বিএনপি মহাসচিব: আপনি দেখেছেন, গতবার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০১৮–তে যখন উনি জেলে ছিলেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে ছিলেন। আমাদের অসংখ্য নেতা জেলে ছিল, আমাদের প্রার্থীরা জেলে ছিল প্রায় ৩০-৩২ জন। তার মধ্যেও কিন্তু আমরা নির্বাচন করেছি ২০১৮–তে। তো আমরা নির্বাচনের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকি। আমাদের দল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত সব সময় থাকে। তো ওই নিয়ে আমার মনে হয় চিন্তার কোনো কারণ নেই।

বিবিসি বাংলা: তাঁর (তারেক রহমানের) অনুপস্থিতিতেও সেটা হতে পারে?

বিএনপি মহাসচিব: কেন পারে না? আমরা করেছি তো। ২০১৮–তে করেছি না?

বিবিসি বাংলা: তিনি (তারেক রহমানের) কবে ফিরবেন কোনো ধারণা দেওয়া যায়?

বিএনপি মহাসচিব: হ্যাঁ, অবশ্যই। তাঁর কয়েকটা কেস বাকি আছে, এই কেসগুলা শেষ হলেই তিনি উপযুক্ত সময় চলে আসবেন।

বিবিসি বাংলা: আগামী নির্বাচনে আপনাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভূমিকাটা কী হবে?

বিএনপি মহাসচিব: তিনি তো অসুস্থ। অত্যন্ত অসুস্থ। জানেন, তিনি লন্ডনে আছেন। তিনি যদি সুস্থ হয়ে আসেন, ডাক্তাররা যদি অ্যালাও করেন এবং তিনি যদি নিজে পারেন শারীরিকভাবে অবশ্যই তিনি অ্যাকটিভ রোল প্লে করবেন।

বিবিসি বাংলা: আপনারা নির্বাচনের কথা বলছেন। যেহেতু দ্রুত নির্বাচন করতে চান, তার মানে আপনারা প্রস্তুতি নেওয়াও শুরু করেছেন ধরে নিতে পারি।

বিএনপি মহাসচিব: হ্যাঁ, আমাদের তো কাউন্সিল হচ্ছে। প্রতিটি জেলাতেই আমাদের কাউন্সিলের জন্য প্রস্তুতি চলছে। আগামী এক মাসের মধ্যে প্রায় সব জেলাতে আমাদের কাউন্সিল হয়ে যাবে। এরপরেই আমরা ন্যাশনাল কাউন্সিল করব। সংগঠন এমনিতেই আছে, তখন সংগঠন আরও শক্তিশালী হয়ে যাবে। এবং নির্বাচনের জন্য তো আমরা প্রস্তুত, আপনাকে আগেও বলেছি, আমরা সব সময় থাকি।

বিবিসি বাংলা: আপনাদের এখন যাদের নমিনেশন দেবেন, মনোনয়ন দেবেন, সে ক্ষেত্রে কী চিন্তা করছেন? কী ধরনের প্রার্থীদের আপনারা দেবেন?

বিএনপি মহাসচিব: জনগণের কাছে যারা প্রিয় হবেন বলে আমরা মনে করব, যারা গ্রহণযোগ্য হবেন, তারাই নমিনেশন পাবেন এবং আমাদের দলে সেই সিস্টেমই চালু আছে। নিচের থেকে, যেসব এলাকাগুলো থেকে যারা ইলেকশন করে আসবেন, তাঁদের সেই এলাকার জনগণের বা আমাদের পার্টির যে সাবজেক্ট কমিটি আছে, যারা ডিসাইড করে আরকি, তাদের মতামত নিয়েই নমিনেশন দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে আমরা বেস্ট ক্যান্ডিডেটকেই নমিনেশন দেওয়ার চেষ্টা করি।

বিবিসি বাংলা: একটু পুরোনো প্রসঙ্গে ফিরে যাই। আপনি বলছিলেন যে বিএনপি দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন-প্রতিবাদ চালিয়ে গেছে। বলছিলেন, অনেকের জেল হয়েছে, গুম হয়েছে। কিন্তু সেই দীর্ঘ সময়ে সফলতা, সরকার পতন তো হয়নি। সরকার পতনের কথা অনেকবার বলেছেন, কিন্তু হয়নি। শেষ পর্যন্ত জুলাইতে এসে ছাত্র আন্দোলনের মুখে সরকার পতন হলো। আপনারা কেন এর আগে সফল হলেন না?

বিএনপি মহাসচিব: এটা আমরা সব সময় বলে এসেছি, বাংলাদেশের ইতিহাসে দেখা গেছে, শুরু থেকেই, পাকিস্তান আমল থেকেই, যখন পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে, তখন থেকেই দেখবেন যে ছাত্ররাই মূলত ভ্যানগার্ডের ভূমিকাটা পালন করেছে। বাহান্ন সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করেন আপনি চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, পরবর্তীকালে উনসত্তরের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান, এরপরে সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ—ছাত্ররা কিন্তু সামনের সারিতে সব সময়। বাংলাদেশের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে তরুণ-যুবক-ছাত্ররা যখন আপনার ফাইনালি নেমে আসে, তখনই আন্দোলন সফল হয়। আমরা ১৫ বছর ধরে আন্দোলন করছি, লড়াই করছি, কষ্ট করছি, গুম হয়েছি, খুন হয়েছে। তারপরও এটা সত্য কথা আমরা গভর্নমেন্টকে ফেলে দিতে পারিনি। তার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ যেটা ছিল বলে আমার মনে হয়েছে যে ছাত্র বা তরুণেরা তখন পর্যন্ত সেভাবে আন্দোলনে নেমে আসেনি। আমি নিজেই বহুবার বলেছি যে কোথায় সেসব ছাত্ররা, যারা অতীতে পতন ঘটিয়েছে স্বৈরাচারী সরকারের? যারা একটা যুদ্ধ করেছে, দেশ স্বাধীন করেছে, সেই ছাত্রদের সামনে দেখতে পাই না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটাও মিছিল বের হয়নি গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য। ভোট দিতে পারেনি, তার বিরুদ্ধে তাদের কোনো প্রতিবাদ ছিল না গত তিন টার্ম ইলেকশনে এবং মেজর কোনো ন্যাশনাল ইস্যুতে তাদের আমরা বেরিয়ে আসতে দেখিনি। এবারও দেখুন, এই আন্দোলনটা শুরু হয়েছে কিন্তু তাদের ইন্টারেস্টের জায়গায়। অর্থাৎ চাকরির জন্য কোটা সিস্টেম নিয়ে আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল। সেখান থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত। একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে হাসিনার পতন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার দাবি নিয়ে কিন্তু আন্দোলন শুরু হয়নি। এটা সবশেষে তিন-চার দিন আগে থেকে তারা হাসিনার পতনের আন্দোলন শুরু করেছে।
সুতরাং এই বিষয়ে কেন জানি না, মিডিয়া থেকেও একটা কথা উঠছে যে জুলাই-আগস্টেই একমাত্র আন্দোলন হয়েছে বলি। এটা তৈরি হয়েছে, স্পার্ক একটা। একটা স্ফুলিঙ্গের দরকার ছিল। সেই স্ফুলিঙ্গটা ছাত্ররা জ্বালিয়েছে। সে জন্য গোটা জাতি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমরাও কৃতজ্ঞ এবং আমরা মনে করি যে তারা ভ্যানগার্ডের কাজটা করতে সক্ষম হয়েছে।

বিবিসি বাংলা: সেসময় আপনাদের সঙ্গে কি যোগাযোগ হয়েছিল?

বিএনপি মহাসচিব: অবশ্যই। সব সময় যোগাযোগ ছিল। সেই সময়ে আমাদের যে হিসাব, প্রায় ৪২২ জনের মতো আমাদের ছেলেরা প্রাণ দিয়েছে এই আন্দোলনে। আমাদের প্রায় চার-পাঁচ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।

আমাদের সব বড় নেতারাই তো জেলে চলে গিয়েছিল সেসময়ে। সরকার ধরে নিয়ে গিয়েছিল, সিনিয়র লিডার্স, স্ট্যান্ডিং কমিটির মেম্বারস। প্রায় সাড়ে তিন হাজার এই ঢাকা জেলে ছিল ওই আন্দোলনের সময়।

বিবিসি বাংলা: আপনারা তখন তাহলে সামনে আসেননি কেন?

বিএনপি মহাসচিব: আমরাই তো সামনে। সব সময় সামনে।

বিবিসি বাংলা: ঘোষণাগুলো, কর্মসূচিগুলো আসছিল ছাত্রদের কাছ থেকে।

বিএনপি মহাসচিব: না, আমরা তো আমাদের ঘোষণা করছিলাম। কেন, ওই সারা দিন ধরে প্রেসক্লাবের সামনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেছে, আমরাই তো ছিলাম। আন্দোলন তো মাঠে আমরাই করছিলাম। আমাদের ছেলেরা করছিল, আমরাও করছিলাম।

বিবিসি বাংলা: কিন্তু বলছি, সরকার পতনের যে ডাক।

বিএনপি মহাসচিব: সেই ডাক আমরা ১৫ বছর আগে থেকে দিচ্ছি। তখনো দিয়েছি। প্রত্যেকটা প্রেস কনফারেন্সে আমি প্রতিদিন, আমি একা প্রেস কনফারেন্স করেছি আপনার সরকার পতনের ডাক দিয়ে। আপনি খেয়াল করেন, সে সময়টা, দেখেন। ৪ তারিখে দিয়েছি, ৩ তারিখে দিয়েছি।

বিবিসি বাংলা: আপনারা সব দলকে নিয়ে একটা ঐকমত্যের সরকারের কথা বলেছিলেন, আগে একটা কথা এসেছিল।

বিএনপি মহাসচিব: আছে, আমরা বলছি।

বিবিসি বাংলা: সেই অবস্থান কি আপনাদের এখনো আছে?

বিএনপি মহাসচিব: হ্যাঁ। নির্বাচনের পরে, অবশ্যই, অবশ্যই। জাতীয় সরকার বলেছি আমরা।

বিবিসি বাংলা: যদি সেটা হয়, সে ক্ষেত্রে বিরোধী দলের ভূমিকাটা তাহলে কীভাবে আসবে?

বিএনপি মহাসচিব: বিরোধী দল নিশ্চয় অনেক থাকবে, যারা আমাদের সঙ্গে আসবেন না, তাঁরা বিরোধী দলে থাকবেন।

বিবিসি বাংলা: আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আওয়ামী লীগ নিয়ে তো নানা আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের বাইরে, আওয়ামী লীগের সঙ্গেও অনেক রাজনৈতিক দল ছিল। যাদের এখন ওভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না, তাদের বিষয়ে আপনাদের অবস্থানটা কী? যারা আওয়ামী লীগের মিত্র ছিল।

বিএনপি মহাসচিব: দোসর তো ছিল তারা। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল মানে আওয়ামী লীগের দোসর ছিল, ফ্যাসিস্টের দোসর ছিল। একই কাজ করেছে তারা। সো ইক্যুয়ালি দে আর রেসপন্সিবল ফর দিজ জেনোসাইড।

বিবিসি বাংলা: তাদের নির্বাচনে আসা নিয়ে কী বলবেন?

বিএনপি মহাসচিব: আমি ভাই আগেই বলেছি, এগুলো ব্যাপারে তো আমরা কথা বলব না। কারণ, আপনাকে প্রথম দিকেই বলেছি যে এটা পিপল উইল ডিসাইড, পলিটিক্যাল পার্টি কে কোনটা থাকবে না থাকবে। এটা তাদের ব্যাপার।

বিবিসি বাংলা: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিবিসি বাংলাকে সময় দেওয়ার জন্য।

বিএনপি মহাসচিব: থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ।

আরও পড়ুন

আরও পড়ুন

গুতেরেসের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকেও দ্রুত নির্বাচনের কথা বলেছে বিএনপি

গুতেরেসের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকেও দ্রুত নির্বাচনের কথা বলেছে বিএনপি

নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কারগুলো আগে করে বাকিগুলো সংসদের মাধ্যমে করার ব্যাপারে বিএনপির অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন বলে জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, 'সংস্কারগুলো চলমান প্রক্রিয়া, সেই বিষয়গুলো আমরা বলে এসেছি।'

৪ ঘণ্টা আগে

রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, এটি সেই জায়গা যেখানে বাজেট কাটছাঁটের প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে বিশেষ করে যাদের সহায়তা পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে জরুরি। কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতারে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

১ দিন আগে

রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল নিশ্চিতে সবকিছু করবে জাতিসংঘ: গুতেরেস

রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল নিশ্চিতে সবকিছু করবে জাতিসংঘ: গুতেরেস

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গা জনগণের দুর্ভোগ এড়াতে প্রয়োজনীয় তহবিল নিশ্চিতে সংস্থাটি সম্ভাব্য সবকিছু করবে। শুক্রবার কক্সবাজারের বালুখালী-১৮ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

১ দিন আগে

বাংলাদেশের সংস্কার ও পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিবের সংহতি

বাংলাদেশের সংস্কার ও পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিবের সংহতি

বাংলাদেশের সংস্কার ও পরিবর্তন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে এক বৈঠকে এই অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।

২ দিন আগে