হামিদ মোহাম্মদ, যুক্তরাজ্য
ছোট গল্প
মধুমালা মিষ্টির দোকান যেদিন যাত্রা শুরু করল, সেদিন মানুষের ভিড় দেখে বিজয় পাল চমকে গেল। এত দিন এত মানুষ কোথায় ছিল? এরা তো এই এলাকারই লোক! তাদের আলাইঘর বা মিষ্টির দোকান চল্লিশ বছরের পুরোনো, এভাবে তো মানুষ ভিড় করেনি, লাইন ধরেনি মিষ্টি কিনতে।
বিজয় পালের মিষ্টির দোকানের নাম নেই। কোনো সাইনবোর্ডও নেই। কিন্তু লোকে ‘মহাজানের মিষ্টির দোকান’ নামেই চেনে। সারা সিলেট তথা পুরো তল্লাটে এই দোকান চেনে না, এমন মানুষ কম। রমজান মাস এলেই ইফতারের বিশেষ আইটেম জিলেপি কিংবা রসগোল্লার জন্য কাছের শহর থেকেও লোকজন আসে। তাদের দোকানের বিখ্যাত মিষ্টির নামডাক কতকালের!
মধুমালা দোকানটি যখন উদ্ধোধন হয় সেদিন নিমন্ত্রণ পেয়েছিল বিজয়। সামাজিকতা রক্ষার্থে সে গিয়েছিল। মিষ্টির একটি প্যাকেট উপহার হিসাবে এনেছিল। এনে মুখে দিয়ে ওয়াক থু করে ফেলে দিয়েছি।
ছোট ভাই ঝলক জিজ্ঞেস করে, কী হলো দাদা!
বিজয় আস্তে করে বলল, রাখ, চিনির ভান্ড আস্ত। ছানার পাত্তাই নেই।
শাখা দোকানটি দিয়েছে পাশের বনগাঁ গ্রামের কলেজের অধ্যয়ন সমাপ্ত করা দুই যুবক। ব্যবসাটি নাকি চুক্তিভিত্তিক। মিষ্টি এখানে বানানো হবে না, প্রতিদিন ভ্যানগাড়িতে মিষ্টির চালান দিয়ে যাবে শহর থেকে কোম্পানির লোকজন। মাসিক নিয়মে হিশাব-নিকাশ। আর সুযোগটা তৈরি হয়েছে গত বছর ১০ মাইল দূরের বড় সড়কের সাথে এলজিডির নতুন পাকা সড়ক শ্যামগঞ্জ বাজারকে সংযুক্ত করায়। এ ছাড়া, দুই বছর হয় পল্লি বিদ্যুৎ আসায় বাজারের অবস্থা এখন দিনরাত সমান। ঝলমল করে দোকানপাট, বেড়ে গেছে মানুষের আনাগোনা। বলতে গেলে মানুষে গমগমই করে।
সামনে এক মাস পর রমজান মাস। রমজান মাসের ব্যবসাকে লক্ষ্য করেই মধুমালা খোলা হয়েছে। আগেভাগে কাস্টমার ধরতে হবে। এই উদ্দেশ্যে মধুমালার আগাম যাত্রা শুরু।
রমজান মাস অনেক দূরে, আজই এত লোকের ভিড়? বিজয় পালের এমন প্রশ্ন জাগা অমূলক নয়। এ এক নতুন দৃশ্য। তার চোখের পাতা এ দৃশ্যের প্রতি হা করে আছে। চোখ কপাল থেকে যেন আলগা হয়ে আছে এমনভাবে, দুই পাতা এক হচ্ছে না। তাকিয়েই আছে উৎফুল্ল আর উৎসুক মানুষের দিকে। তাকাতে তাকাতে যখন চোখ বুজল, তখন তার ঘুমোতে ইচ্ছে হলো। কেন জানি ঘুম এল বুঝতে পারে না।
ঘুম আসার এ সময়টিতে অন্যদিন সে কাসার থাল ভরে ভাত খেত। পেটে ক্ষুধায় চিমচিম করা পেট তখন ভাত পেয়ে, সারাদেহ ঝিম ধরে ঘুম এলে, বুঝত পেট ঠাণ্ডা। কিন্তু আজকে সে রকম নয়, মিষ্টির গন্ধে, না অন্য কোনো কারণে ঘুম এল, এটা ভাবতে ভাবতেই বাড়ি পৌঁছে যায় বিজয়। তেল চিটচিটে বালিশের গন্ধ তার নাকে কোমল আবেশ না ছড়ালেও ঘুম এসে গেল।
মিষ্টির সুনাম রয়েছে বাঙ্গালমুলুকে। টাঙ্গাইলের চমচম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানার মিষ্টি, বগুড়ার দই, ঢাকার মরণচাঁদের রসগোল্লা আর রসমালাই কত কী। খেলে জিহ্বায় লেগে থাকে ঘিয়ের ভাজা স্বাদ। সেই দিন পাল্টে গিয়ে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ে ফুলমালা, কাঞ্চনমালা, মধুমালা নামের মিষ্টির দোকানের শাখা জেলা থেকে জেলায়। শুরু নাকি চট্টগ্রাম থেকে। যতসব বাহারি মিষ্টির দোকান, রঙবেরঙের মিষ্টি। নতুন নতুন নামধারী মিষ্টি দেখতেও চোখ ঝলসে ওঠে। আগে যে সব ঐতিহ্যবাহী দোকান ছিল, সেগুলো সেই অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ, কোনো শাখা ছিল না, এখন আবার শাখা। বড় বড় পুঁজি নিয়ে নেমেছেন চাটগাঁইয়া সদাগররা। মিষ্টি আর পারিবারিক ব্যবসা নয়, সদাগরী ব্যবসা।
বিজয় পালরা ছিল তিন ভাই। ঝলক পাল ও তিলক পাল বাকি দুইভাই। তাদের বাবা আদিত্য পাল, দাদা সত্যপদ পাল। তিন পুরুষ সম্পর্কে বিজয় পালের জানা। এর আগের ইতিহাস তারা কেউ বলতে পারে না। তিন গ্রামের মধ্যখানে ভটেরখাল নামক নদীর পূব থেকে দক্ষিণমুখী বাঁকে গড়ে উঠেছে শ্যামগঞ্জবাজার। পূবপারে কামারদের গ্রাম বনগাঁ, পাশে নমশূদ্রদের বিষ্ণপুর এবং পশ্চিম পারে বিজয়দের গ্রাম পালনগর।
শোনা গল্প, এই তিন গ্রামের নিজ নিজ পেশার মানুষেরা তাদের পসর সাজিয়ে বসতেন নদীর মোড়ের উঁচু তীরে। তাও প্রতিদিন ভোরবেলা। সূর্য ওঠার মঙ্গে সঙ্গে হাট বসত, মাথার ওপর সূর্য আসার আগেই শেষ। বসবার জায়গাটি দিয়েছিলেন পালনগর গ্রামের অবস্থাসম্পন্ন গেরস্ত শ্যামচরণ দাস। নদী থেকে সদ্যধরা তাজা মাছ, মাঠ থেকে তুলে আনা কুয়াশামাখা শাকসবজি আনাজপাতি, কামারদের তৈরি দা–কাস্তে, যত কৃষিযন্ত্রপাতি মিলত হাটে। ধীরে ধীরে দোকানপাট ওঠে। নাম হয়ে যায় শ্যামগঞ্জ।
এই শ্যামগঞ্জ বাজারে ছিল বিজয়দের একটি ভিটে। দোকান তোলার সাধ্য ছিল না। বিজয়ের দাদামশাই সত্যবাবু বসতেন পেরা সর্ষের তেলের ভাণ্ড বা হাঁচি নিয়ে। টিনের তৈরি বেলি দিয়ে মেপে মেপে সর্ষের তেল বিক্রি করতেন। সর্ষে তেলেরও ইতিহাস আছে। বাড়ির পূবপাশে মেদল হাওরের জমিতে কার্তিক মাস এলে বিজয়ের দাদা সর্ষে বুনতেন। দেখতে দেখতে হলুদ হয়ে যেত মাঠ। তারপর সর্ষে পেকে এলে মাঠ থেকে এনে মাড়াই হতো উঠোনে। গরু দিয়ে মাড়াই। বিজয়ের ভাষ্যমতে ‘আমরা তিন ভাই সেই মাড়াই গরুর পেছনে ঘুরতাম হেই হেই করে। দাদা ও বাবা তেল বিক্রি করতেন বাজারের ভিটেতে বসে। আমরা নেংটিপরা তিন ভাই কাচুমাচু করে বসতাম পাশে। বেলি দিয়ে মেপে তেল বেচার পর বেলিতে যে তেল লেগে থাকতো, সেই তেল গা-গতর আর মাথার চুলে দেওয়ার জন্য চলত কাড়াকাড়ি। দাদু ধমক দিতেন। বলতেন, তোমরা অন্য কিছু করো, যাও এখান থেকে। কিছু সময়ের জন্য সরে গেলেও আবার হামলে পড়তাম। তেল ব্যবসার কারণে আমাদের পরিচয়টাও এক সময় হয়ে যায় ‘তেলি পাল’। মিষ্টির দোকানের রমরমা ব্যবসার দীর্ঘদিনেও সে পরিচয় আর বদল হয়নি।
একদিন বিজয়ের ছোট ঝলক পাল এক বুদ্ধি আটল। বুদ্ধিটা হলো, কলার পাতা এবং কচুপাতা হাটবারে বিক্রি করা গলি গলি হেঁটে। কলা ও কচুপাতা দিয়ে মলা-তামাক, শুঁটকিসহ আরও নানা সওদা পেঁচিয়ে বা মুড়িয়ে দোকানিরা বিক্রি করে। যেই ভাবা তেমনি নেমে যায় তিন ভাই এই দূর্দান্ত ব্যবসায়। কয়েক হাটবার পেরোনোর পর ব্যবসা যখন জমে ওঠে, দাদুও খুশি হলেন নাতিদের এই নতুন ব্যবসাটিতে, বাঁধা দিলেন না।
হঠাৎ দেখা গেল বাজারে প্লাস্টিকের বোতলে তেল বিক্রি হচ্ছে। ৫ লিটার, ৩ লিটার এবং ১ লিটারের বোতল। স্বচ্ছ প্লাস্টিক। দেখতে ভারী সুন্দর, বোতলের ভেতরে তেল টলটল করছে। কয়েক বছর হয় দেশ স্বাধীন হয়েছে। একাত্তরের যুদ্ধের ধকল সয়ে মানুষ মাত্র ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তখনই বিদেশি এই পণ্যের আর্বিভাব। তেলটির নাম পামওয়েল। বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা। এরপর এল সানফ্লাওয়ার। আস্তে আস্তে আরও অনেক তেল—তীর মার্কা, নৌকা মার্কা, জাহাজ মার্কা। আরও আরও বহু মার্কার তেল, বাজার সয়লাব। দাদুর পেরা তেলের কদর নেমে গেল খুচরা ক্রেতা পর্যন্ত।
বিজয়ের দাদু তেল বিক্রি বন্ধ করে দিলেন। সঙ্গে বন্ধ হলো সরিষাচাষ। বিজয়রা তিন ভাই প্রায় বেকার। ঘানিতে সরিষা মাড়াইয়ের সময় বিজয়রা তিন ভাই গরুর পিছে হেঁটে গরুকে হাঁটাত। একটা কিছুতে ওরা ব্যস্ত থাকলে ওদের দাদুও খুশি হতেন। কলাপাতা বিক্রিও বন্ধ। বাজারের দোকানে দোকানে এখন পুরোনো খবরের কাগজ দিয়ে সওদা পেঁচিয়ে বা মুড়িয়ে দেওয়া হয়। আস্তে আস্তে কাগজের ঠোঙ্গার প্রচলন হলো।
বিজয়ের দাদু বসে থাকার পাত্র নন। তিনি শুরু করলেন মিষ্টির ব্যবসা। বাজারের ভিটেয় তুললেন দোকান। একচালা টিনের ঘর। সামনে বারান্দাও সমান লম্বা। কোণায় চায়ের কেতলি বসানোর মাটির চূলা। পাশে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে জিলেপি বানানোর লোহার চ্যাপ্টা কড়াই। পুরোদস্তুর চা-মিষ্টির দোকান, রমরমা ব্যবসা।
বিজয় বলল, ‘যখন আমাদের চোখ অন্ধকার হওয়ার পালা, তখন দাদু আলো জ্বালালেন। আনন্দের কী বন্যা তখন বয়ে এল, গতি পেল আমাদের হঠাৎ থেমে যাওয়া জীবন। বাবা হাল ধরলেন এই মিষ্টির ব্যবসায়। এমনিতেই আমাদের কৃষিজীবী পরিবারে গোপালন হতো। দাদু মিষ্টির দুধ সংগ্রহের জন্য গ্রামে গ্রামে ধর্ণা দেওয়ার চেয়ে গোপালন বাড়িয়ে দিলেন। বছরের ভেতরেই গবাদিপশু এখন আমাদের চল্লিশটির কাছাকাছি। বেশির ভাগ দুধেল গাই। দুধ দই খাই কত? উৎসবের বান যেন ডেকে এল আমাদের জীবনে। দোকানদারদের মহাজন বলা হতো এ অঞ্চলে। তাই, দিনে দিনে দাদুর মিষ্টির দোকানের নাম রটে গেল মহাজনের মিষ্টি।’
চল্লিশ বছর পেরোনো দাদার মিষ্টির ব্যবসায় আবার আঘাত। এই আঘাতের চট সইতে গিয়েই বিজয় পালের ঘুম নামে চোখে। মধ্য রাতে ঘুম ছাড়ে চোখ থেকে। চোখ দুটো ঝেড়ে ঠান্ডা জল ঢেলে মুখটা ভিজিয়ে নিল বিজয় পাল।
মনে পড়ে, এক সময় কোনো কোনো দিন সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে মিষ্টি বিক্রি বেড়ে যেত। আগের দিনে মাটির হাঁড়ি দিয়ে মিষ্টি বিক্রির চল ছিল। মিষ্টি বেশি বিক্রির দিনে হাঁড়ি ফুরিয়ে যেত। তার বাবা কিছু বলতে চাইলে দাদু বাধা দিতেন। বলতেন, কী অলক্ষুণে কথা।
শুনেছি, সন্ধ্যাকালে নাকি জ্বিন-পরি বা ভূতরা মিষ্টি খেতে দোকানে দোকানে ঘোরে। সব দোকানে তারা সওদাপাতি কেনাকেটা করে না, যে দোকানে এমন বেসামাল বিক্রি হয়, বুঝতে হবে লক্ষীর পা পড়েছে। বিজয় পাল চোখ বুজে ভাবতে থাকে, তাহলে এই লক্ষী কি এখন মধুমালা মিষ্টির দোকানে আছর করল? এরা মানুষ, নাকি অন্য কিছু লাইনে দাঁড়ানো! যাদের তার দাদু এতদিন পোষ মানিয়ে এসেছিলেন! দাদু নেই বলে এরা পিছ দিয়েছে আমাদের। প্রতিযোগিতায় যদি টিকতে না-পারে? এমন করে ভাবতে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বিজয় পাল স্থির হয় এক সময়।
পরের দিন বিজয় ঘর থেকে ফ্রেম করা দাদুর একখান ছবি এনে দোকানের ভেতরের দেয়ালে ক্যাশ বাক্সের পেছনে টাঙিয়ে তাতে এক গাছি কাগজের ফুলের মালা যত্ন করে ঝুলিয়ে দেয়। এমনভাবে টাঙানো হলো, দেখলে মনে হবে দাদু ক্যাশ বাক্স পাহারা দিচ্ছেন। আর ধুপ জ্বালিয়ে পবিত্র ধূয়ো এবং স্বর্ণে চোবানো জল চিটিয়ে দোকানকে পবিত্র করার কার্যক্রম বাড়িয়ে দিল। দোকানকে ছাপ-ছুতরো করা হলো। ইঁদুর আর তেলাপোকার আড্ডা ভেঙে গোলাপ জল ছিটিয়ে দিল। নিজেও সকালে উঠে পুকুরের জলে একটা ডুব দিয়ে নতুন না হলেও সাবান দিয়ে ধোয়া পুরোনো কাপড় পরে দোকানে আসতে শুরু করে। বউকেও বলে দিল, প্রতিদিন একসেট ধোয়া কাপড় চাই।
দেখতে দেখতে রমজান মাস এসে গেল। পয়লা রোজার দিন। একজন মধ্যবয়সী লোক এলেন। হাতে বিদেশি ছাতা। ছোট ছাতা। কাপড়ে মোড়ানো। ভদ্রলোক বসে বললেন, দাদাবাবু এখখান কথা কমু। কাছে এসে কানে কানে বললেন, আপনার মিষ্টি খুব ভালো। আমার পছন্দ। কিন্তু একটা কাজ করতে হবে। আমাকে ‘মধুমালা’–র রঙিন কার্টন দিয়ে প্যাক করে দিতে হবে। যদি দিতে পারেন তবে পাঁচ হাজার টাকার মিষ্টি নেব, আমার মেয়ের বাড়ি প্রথম ইফতারি দেব তো। তাই বলছিলাম, মিষ্টিটা ভালো চাই কি না।
বিজয় বলল, এটা সম্ভব নয় কাকা।
রাতের বেলা যখন দোকান বন্ধ করে বিজয় ঘরে এল তখন শরীরে অবসাদ নেমে এসেছে। ইদানিং শরীরে শক্তি পায় না বিজয়। মনে মনে ভাবে, কোন দোষে পেলোরে বাবা!
দাদুর মতো তার এত বুদ্ধি নেই। কী টালমাটাল দিন এল। এক সময় হাত ঝেড়ে বসা থেকে বারান্দায় দাঁড়ায় বিজয়। বুদ্ধি নেই তো কী হলো। বিজয় পণ করে, এবার ব্যবসা বদল করলে রাজনীতিই করবে। রাজনীতি নাকি এখন খুব ভালো ব্যবসা!
ছোট গল্প
মধুমালা মিষ্টির দোকান যেদিন যাত্রা শুরু করল, সেদিন মানুষের ভিড় দেখে বিজয় পাল চমকে গেল। এত দিন এত মানুষ কোথায় ছিল? এরা তো এই এলাকারই লোক! তাদের আলাইঘর বা মিষ্টির দোকান চল্লিশ বছরের পুরোনো, এভাবে তো মানুষ ভিড় করেনি, লাইন ধরেনি মিষ্টি কিনতে।
বিজয় পালের মিষ্টির দোকানের নাম নেই। কোনো সাইনবোর্ডও নেই। কিন্তু লোকে ‘মহাজানের মিষ্টির দোকান’ নামেই চেনে। সারা সিলেট তথা পুরো তল্লাটে এই দোকান চেনে না, এমন মানুষ কম। রমজান মাস এলেই ইফতারের বিশেষ আইটেম জিলেপি কিংবা রসগোল্লার জন্য কাছের শহর থেকেও লোকজন আসে। তাদের দোকানের বিখ্যাত মিষ্টির নামডাক কতকালের!
মধুমালা দোকানটি যখন উদ্ধোধন হয় সেদিন নিমন্ত্রণ পেয়েছিল বিজয়। সামাজিকতা রক্ষার্থে সে গিয়েছিল। মিষ্টির একটি প্যাকেট উপহার হিসাবে এনেছিল। এনে মুখে দিয়ে ওয়াক থু করে ফেলে দিয়েছি।
ছোট ভাই ঝলক জিজ্ঞেস করে, কী হলো দাদা!
বিজয় আস্তে করে বলল, রাখ, চিনির ভান্ড আস্ত। ছানার পাত্তাই নেই।
শাখা দোকানটি দিয়েছে পাশের বনগাঁ গ্রামের কলেজের অধ্যয়ন সমাপ্ত করা দুই যুবক। ব্যবসাটি নাকি চুক্তিভিত্তিক। মিষ্টি এখানে বানানো হবে না, প্রতিদিন ভ্যানগাড়িতে মিষ্টির চালান দিয়ে যাবে শহর থেকে কোম্পানির লোকজন। মাসিক নিয়মে হিশাব-নিকাশ। আর সুযোগটা তৈরি হয়েছে গত বছর ১০ মাইল দূরের বড় সড়কের সাথে এলজিডির নতুন পাকা সড়ক শ্যামগঞ্জ বাজারকে সংযুক্ত করায়। এ ছাড়া, দুই বছর হয় পল্লি বিদ্যুৎ আসায় বাজারের অবস্থা এখন দিনরাত সমান। ঝলমল করে দোকানপাট, বেড়ে গেছে মানুষের আনাগোনা। বলতে গেলে মানুষে গমগমই করে।
সামনে এক মাস পর রমজান মাস। রমজান মাসের ব্যবসাকে লক্ষ্য করেই মধুমালা খোলা হয়েছে। আগেভাগে কাস্টমার ধরতে হবে। এই উদ্দেশ্যে মধুমালার আগাম যাত্রা শুরু।
রমজান মাস অনেক দূরে, আজই এত লোকের ভিড়? বিজয় পালের এমন প্রশ্ন জাগা অমূলক নয়। এ এক নতুন দৃশ্য। তার চোখের পাতা এ দৃশ্যের প্রতি হা করে আছে। চোখ কপাল থেকে যেন আলগা হয়ে আছে এমনভাবে, দুই পাতা এক হচ্ছে না। তাকিয়েই আছে উৎফুল্ল আর উৎসুক মানুষের দিকে। তাকাতে তাকাতে যখন চোখ বুজল, তখন তার ঘুমোতে ইচ্ছে হলো। কেন জানি ঘুম এল বুঝতে পারে না।
ঘুম আসার এ সময়টিতে অন্যদিন সে কাসার থাল ভরে ভাত খেত। পেটে ক্ষুধায় চিমচিম করা পেট তখন ভাত পেয়ে, সারাদেহ ঝিম ধরে ঘুম এলে, বুঝত পেট ঠাণ্ডা। কিন্তু আজকে সে রকম নয়, মিষ্টির গন্ধে, না অন্য কোনো কারণে ঘুম এল, এটা ভাবতে ভাবতেই বাড়ি পৌঁছে যায় বিজয়। তেল চিটচিটে বালিশের গন্ধ তার নাকে কোমল আবেশ না ছড়ালেও ঘুম এসে গেল।
মিষ্টির সুনাম রয়েছে বাঙ্গালমুলুকে। টাঙ্গাইলের চমচম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানার মিষ্টি, বগুড়ার দই, ঢাকার মরণচাঁদের রসগোল্লা আর রসমালাই কত কী। খেলে জিহ্বায় লেগে থাকে ঘিয়ের ভাজা স্বাদ। সেই দিন পাল্টে গিয়ে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ে ফুলমালা, কাঞ্চনমালা, মধুমালা নামের মিষ্টির দোকানের শাখা জেলা থেকে জেলায়। শুরু নাকি চট্টগ্রাম থেকে। যতসব বাহারি মিষ্টির দোকান, রঙবেরঙের মিষ্টি। নতুন নতুন নামধারী মিষ্টি দেখতেও চোখ ঝলসে ওঠে। আগে যে সব ঐতিহ্যবাহী দোকান ছিল, সেগুলো সেই অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ, কোনো শাখা ছিল না, এখন আবার শাখা। বড় বড় পুঁজি নিয়ে নেমেছেন চাটগাঁইয়া সদাগররা। মিষ্টি আর পারিবারিক ব্যবসা নয়, সদাগরী ব্যবসা।
বিজয় পালরা ছিল তিন ভাই। ঝলক পাল ও তিলক পাল বাকি দুইভাই। তাদের বাবা আদিত্য পাল, দাদা সত্যপদ পাল। তিন পুরুষ সম্পর্কে বিজয় পালের জানা। এর আগের ইতিহাস তারা কেউ বলতে পারে না। তিন গ্রামের মধ্যখানে ভটেরখাল নামক নদীর পূব থেকে দক্ষিণমুখী বাঁকে গড়ে উঠেছে শ্যামগঞ্জবাজার। পূবপারে কামারদের গ্রাম বনগাঁ, পাশে নমশূদ্রদের বিষ্ণপুর এবং পশ্চিম পারে বিজয়দের গ্রাম পালনগর।
শোনা গল্প, এই তিন গ্রামের নিজ নিজ পেশার মানুষেরা তাদের পসর সাজিয়ে বসতেন নদীর মোড়ের উঁচু তীরে। তাও প্রতিদিন ভোরবেলা। সূর্য ওঠার মঙ্গে সঙ্গে হাট বসত, মাথার ওপর সূর্য আসার আগেই শেষ। বসবার জায়গাটি দিয়েছিলেন পালনগর গ্রামের অবস্থাসম্পন্ন গেরস্ত শ্যামচরণ দাস। নদী থেকে সদ্যধরা তাজা মাছ, মাঠ থেকে তুলে আনা কুয়াশামাখা শাকসবজি আনাজপাতি, কামারদের তৈরি দা–কাস্তে, যত কৃষিযন্ত্রপাতি মিলত হাটে। ধীরে ধীরে দোকানপাট ওঠে। নাম হয়ে যায় শ্যামগঞ্জ।
এই শ্যামগঞ্জ বাজারে ছিল বিজয়দের একটি ভিটে। দোকান তোলার সাধ্য ছিল না। বিজয়ের দাদামশাই সত্যবাবু বসতেন পেরা সর্ষের তেলের ভাণ্ড বা হাঁচি নিয়ে। টিনের তৈরি বেলি দিয়ে মেপে মেপে সর্ষের তেল বিক্রি করতেন। সর্ষে তেলেরও ইতিহাস আছে। বাড়ির পূবপাশে মেদল হাওরের জমিতে কার্তিক মাস এলে বিজয়ের দাদা সর্ষে বুনতেন। দেখতে দেখতে হলুদ হয়ে যেত মাঠ। তারপর সর্ষে পেকে এলে মাঠ থেকে এনে মাড়াই হতো উঠোনে। গরু দিয়ে মাড়াই। বিজয়ের ভাষ্যমতে ‘আমরা তিন ভাই সেই মাড়াই গরুর পেছনে ঘুরতাম হেই হেই করে। দাদা ও বাবা তেল বিক্রি করতেন বাজারের ভিটেতে বসে। আমরা নেংটিপরা তিন ভাই কাচুমাচু করে বসতাম পাশে। বেলি দিয়ে মেপে তেল বেচার পর বেলিতে যে তেল লেগে থাকতো, সেই তেল গা-গতর আর মাথার চুলে দেওয়ার জন্য চলত কাড়াকাড়ি। দাদু ধমক দিতেন। বলতেন, তোমরা অন্য কিছু করো, যাও এখান থেকে। কিছু সময়ের জন্য সরে গেলেও আবার হামলে পড়তাম। তেল ব্যবসার কারণে আমাদের পরিচয়টাও এক সময় হয়ে যায় ‘তেলি পাল’। মিষ্টির দোকানের রমরমা ব্যবসার দীর্ঘদিনেও সে পরিচয় আর বদল হয়নি।
একদিন বিজয়ের ছোট ঝলক পাল এক বুদ্ধি আটল। বুদ্ধিটা হলো, কলার পাতা এবং কচুপাতা হাটবারে বিক্রি করা গলি গলি হেঁটে। কলা ও কচুপাতা দিয়ে মলা-তামাক, শুঁটকিসহ আরও নানা সওদা পেঁচিয়ে বা মুড়িয়ে দোকানিরা বিক্রি করে। যেই ভাবা তেমনি নেমে যায় তিন ভাই এই দূর্দান্ত ব্যবসায়। কয়েক হাটবার পেরোনোর পর ব্যবসা যখন জমে ওঠে, দাদুও খুশি হলেন নাতিদের এই নতুন ব্যবসাটিতে, বাঁধা দিলেন না।
হঠাৎ দেখা গেল বাজারে প্লাস্টিকের বোতলে তেল বিক্রি হচ্ছে। ৫ লিটার, ৩ লিটার এবং ১ লিটারের বোতল। স্বচ্ছ প্লাস্টিক। দেখতে ভারী সুন্দর, বোতলের ভেতরে তেল টলটল করছে। কয়েক বছর হয় দেশ স্বাধীন হয়েছে। একাত্তরের যুদ্ধের ধকল সয়ে মানুষ মাত্র ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তখনই বিদেশি এই পণ্যের আর্বিভাব। তেলটির নাম পামওয়েল। বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা। এরপর এল সানফ্লাওয়ার। আস্তে আস্তে আরও অনেক তেল—তীর মার্কা, নৌকা মার্কা, জাহাজ মার্কা। আরও আরও বহু মার্কার তেল, বাজার সয়লাব। দাদুর পেরা তেলের কদর নেমে গেল খুচরা ক্রেতা পর্যন্ত।
বিজয়ের দাদু তেল বিক্রি বন্ধ করে দিলেন। সঙ্গে বন্ধ হলো সরিষাচাষ। বিজয়রা তিন ভাই প্রায় বেকার। ঘানিতে সরিষা মাড়াইয়ের সময় বিজয়রা তিন ভাই গরুর পিছে হেঁটে গরুকে হাঁটাত। একটা কিছুতে ওরা ব্যস্ত থাকলে ওদের দাদুও খুশি হতেন। কলাপাতা বিক্রিও বন্ধ। বাজারের দোকানে দোকানে এখন পুরোনো খবরের কাগজ দিয়ে সওদা পেঁচিয়ে বা মুড়িয়ে দেওয়া হয়। আস্তে আস্তে কাগজের ঠোঙ্গার প্রচলন হলো।
বিজয়ের দাদু বসে থাকার পাত্র নন। তিনি শুরু করলেন মিষ্টির ব্যবসা। বাজারের ভিটেয় তুললেন দোকান। একচালা টিনের ঘর। সামনে বারান্দাও সমান লম্বা। কোণায় চায়ের কেতলি বসানোর মাটির চূলা। পাশে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে জিলেপি বানানোর লোহার চ্যাপ্টা কড়াই। পুরোদস্তুর চা-মিষ্টির দোকান, রমরমা ব্যবসা।
বিজয় বলল, ‘যখন আমাদের চোখ অন্ধকার হওয়ার পালা, তখন দাদু আলো জ্বালালেন। আনন্দের কী বন্যা তখন বয়ে এল, গতি পেল আমাদের হঠাৎ থেমে যাওয়া জীবন। বাবা হাল ধরলেন এই মিষ্টির ব্যবসায়। এমনিতেই আমাদের কৃষিজীবী পরিবারে গোপালন হতো। দাদু মিষ্টির দুধ সংগ্রহের জন্য গ্রামে গ্রামে ধর্ণা দেওয়ার চেয়ে গোপালন বাড়িয়ে দিলেন। বছরের ভেতরেই গবাদিপশু এখন আমাদের চল্লিশটির কাছাকাছি। বেশির ভাগ দুধেল গাই। দুধ দই খাই কত? উৎসবের বান যেন ডেকে এল আমাদের জীবনে। দোকানদারদের মহাজন বলা হতো এ অঞ্চলে। তাই, দিনে দিনে দাদুর মিষ্টির দোকানের নাম রটে গেল মহাজনের মিষ্টি।’
চল্লিশ বছর পেরোনো দাদার মিষ্টির ব্যবসায় আবার আঘাত। এই আঘাতের চট সইতে গিয়েই বিজয় পালের ঘুম নামে চোখে। মধ্য রাতে ঘুম ছাড়ে চোখ থেকে। চোখ দুটো ঝেড়ে ঠান্ডা জল ঢেলে মুখটা ভিজিয়ে নিল বিজয় পাল।
মনে পড়ে, এক সময় কোনো কোনো দিন সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে মিষ্টি বিক্রি বেড়ে যেত। আগের দিনে মাটির হাঁড়ি দিয়ে মিষ্টি বিক্রির চল ছিল। মিষ্টি বেশি বিক্রির দিনে হাঁড়ি ফুরিয়ে যেত। তার বাবা কিছু বলতে চাইলে দাদু বাধা দিতেন। বলতেন, কী অলক্ষুণে কথা।
শুনেছি, সন্ধ্যাকালে নাকি জ্বিন-পরি বা ভূতরা মিষ্টি খেতে দোকানে দোকানে ঘোরে। সব দোকানে তারা সওদাপাতি কেনাকেটা করে না, যে দোকানে এমন বেসামাল বিক্রি হয়, বুঝতে হবে লক্ষীর পা পড়েছে। বিজয় পাল চোখ বুজে ভাবতে থাকে, তাহলে এই লক্ষী কি এখন মধুমালা মিষ্টির দোকানে আছর করল? এরা মানুষ, নাকি অন্য কিছু লাইনে দাঁড়ানো! যাদের তার দাদু এতদিন পোষ মানিয়ে এসেছিলেন! দাদু নেই বলে এরা পিছ দিয়েছে আমাদের। প্রতিযোগিতায় যদি টিকতে না-পারে? এমন করে ভাবতে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বিজয় পাল স্থির হয় এক সময়।
পরের দিন বিজয় ঘর থেকে ফ্রেম করা দাদুর একখান ছবি এনে দোকানের ভেতরের দেয়ালে ক্যাশ বাক্সের পেছনে টাঙিয়ে তাতে এক গাছি কাগজের ফুলের মালা যত্ন করে ঝুলিয়ে দেয়। এমনভাবে টাঙানো হলো, দেখলে মনে হবে দাদু ক্যাশ বাক্স পাহারা দিচ্ছেন। আর ধুপ জ্বালিয়ে পবিত্র ধূয়ো এবং স্বর্ণে চোবানো জল চিটিয়ে দোকানকে পবিত্র করার কার্যক্রম বাড়িয়ে দিল। দোকানকে ছাপ-ছুতরো করা হলো। ইঁদুর আর তেলাপোকার আড্ডা ভেঙে গোলাপ জল ছিটিয়ে দিল। নিজেও সকালে উঠে পুকুরের জলে একটা ডুব দিয়ে নতুন না হলেও সাবান দিয়ে ধোয়া পুরোনো কাপড় পরে দোকানে আসতে শুরু করে। বউকেও বলে দিল, প্রতিদিন একসেট ধোয়া কাপড় চাই।
দেখতে দেখতে রমজান মাস এসে গেল। পয়লা রোজার দিন। একজন মধ্যবয়সী লোক এলেন। হাতে বিদেশি ছাতা। ছোট ছাতা। কাপড়ে মোড়ানো। ভদ্রলোক বসে বললেন, দাদাবাবু এখখান কথা কমু। কাছে এসে কানে কানে বললেন, আপনার মিষ্টি খুব ভালো। আমার পছন্দ। কিন্তু একটা কাজ করতে হবে। আমাকে ‘মধুমালা’–র রঙিন কার্টন দিয়ে প্যাক করে দিতে হবে। যদি দিতে পারেন তবে পাঁচ হাজার টাকার মিষ্টি নেব, আমার মেয়ের বাড়ি প্রথম ইফতারি দেব তো। তাই বলছিলাম, মিষ্টিটা ভালো চাই কি না।
বিজয় বলল, এটা সম্ভব নয় কাকা।
রাতের বেলা যখন দোকান বন্ধ করে বিজয় ঘরে এল তখন শরীরে অবসাদ নেমে এসেছে। ইদানিং শরীরে শক্তি পায় না বিজয়। মনে মনে ভাবে, কোন দোষে পেলোরে বাবা!
দাদুর মতো তার এত বুদ্ধি নেই। কী টালমাটাল দিন এল। এক সময় হাত ঝেড়ে বসা থেকে বারান্দায় দাঁড়ায় বিজয়। বুদ্ধি নেই তো কী হলো। বিজয় পণ করে, এবার ব্যবসা বদল করলে রাজনীতিই করবে। রাজনীতি নাকি এখন খুব ভালো ব্যবসা!
যোগ্যতার চাইতে প্রাপ্তি বেশি হয়ে গেলে তখন সে লাগামহীন হয়ে ওঠে। এ অনেকটা মাটি ও খুঁটির মতো অবস্থা। খুঁটি শক্ত না হলে ঘর নড়বড়ে হবে আবার মাটি উর্বর না হলে খাওয়াপড়া জুটবে না। মানুষের চিন্তার সমৃদ্ধির জন্য পড়াশোনা কিংবা জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই।
পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে থাকা সুস্পষ্ট লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।
কথাসাহিত্যিক ও গবেষক সিরাজুল ইসলাম মুনির সমকালীন বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে সুপরিচিত নাম। তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির সমৃদ্ধ বহুমাত্রিকতা সৃষ্টি করেছে শক্তিশালী স্বতন্ত্র অবস্থান। সাবলীল শব্দ ব্যঞ্জনার প্রকাশে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন জীবন, দেশাত্মবোধ বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন মাত্রাকে।