logo
খবর

নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই: তারেক রহমান

সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি বক্তব্য এমনকি প্রতিটি প্রতিক্রিয়ায় সতর্ক থাকা দরকার।’ তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব যথার্থভাবে প্রতিপালনের রোড ম্যাপ তাদেরকেই নির্দিষ্ট করতে হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা৩ ঘণ্টা আগে
Copied!
নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘দেশ পরিচালনার জন্য নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের এমন দায়িত্বও কাঁধে নেওয়া সঙ্গত হবে না যেটা তারা বহন করতে সক্ষম হবে না।’ শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত রাকিব ও শহীদ সাব্বির হত্যার বিচারের দাবিতে ঝিনাইদহে বিএনপির গণসমাবেশে এ কথা বলেন তারেক রহমান।

সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি বক্তব্য এমনকি প্রতিটি প্রতিক্রিয়ায় সতর্ক থাকা দরকার।’ তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব যথার্থভাবে প্রতিপালনের রোড ম্যাপ তাদেরকেই নির্দিষ্ট করতে হবে।
স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে আকস্মিকভাবে সৃষ্ট সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো বিকল্প ছিল না উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘এ বিষয়টি আমরা সবাই জানি। তাই সঙ্গত কারণে তাদের প্রতি আমাদের সমর্থন সেদিনও ছিল,আজও আছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমাদের আস্থাকে প্রশ্নহীন রাখার চ্যালেঞ্জ তাদেরই নিতে হবে।’
এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে পরোক্ষভাবে বলেন, সব পরিবর্তন সাধন যেমন তাদের পক্ষে সম্ভব নয়, তেমনি এমন দায়িত্বও তাদের কাঁধে নেয়া সঙ্গত হবে না, যেটা তাঁরা বহন করতে সক্ষম হবেন না।’
ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মজিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ জনসভায় দলের খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারি হেলাল, রুহুল কবির কাজল, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা, সহসভাপতি মুন্সী কামাল আজাদ পান্নু, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুর রহমান পপ্পু, যুগ্ম সম্পাদক আসিফ ইকবাল মাখন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম পিন্টুসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা জনসভায় বক্তব্য রাখেন।
তারেক রহমান জনসভায় পরিস্কারভাবে জানান, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি বক্তব্য, এমনকি প্রতিটি প্রতিক্রিয়ায় প্রয়োজন সর্বোচ্চ সতর্কতার দৃশ্যমান প্রয়োগ। সরকার পরিচালনা একটি অতি সংবেদনশীল ও জটিল কাজ, এখানে সামান্য বিচ্যুতি যেমন বিরাট একটা প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে, তেমনি সামান্য অসতর্কতাও অতি আবশ্যক বিশ্বাসকে করতে পারে দুর্বল।

তিনি বলেন, ‘উল্লেখিত কারণে আমাদের শক্তির কেন্দ্রবিন্দুর ঐক্যতে ফাটল ধরানো সহজ হতে পারে। এর যে কোন একটিই বয়ে আনতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়। মনে রাখা দরকার, দেড় যুগ ধরে গড়ে ওঠা স্বৈরাচারের দৃশ্যমান আর অদৃশ্য প্রেতাত্মারা এত সহজে তার বিষ-নিশ্বাস থেকে আমাদের পরিত্রাণ দেবে না।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্বৈরাচারের ফেলে যাওয়া দলবাজ উচ্ছিষ্ট প্রশাসনের চলমান ষড়যন্ত্রের কাছে আমরা মাঝে মাঝেই সরকার পরিচালনায় দক্ষ, সৎ ও নিষ্ঠাবানদের অসহায় ও বিপর্যস্ত হতে দেখছি। এর অবসান না হলে, এদের বেড়াজালে আবদ্ধ সরকার ছোট ছোট বিপর্যয়কে এক সময় মহাবিপদ হিসাবে নিজেদের (সরকারের) সামনে দেখতে পাবে। তখন প্রতিকারের পথ হয়ে পড়বে অতি সংকীর্ণ।’

এ সময়ে তারেক রহমান আন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তাদের প্রতি আমাদের সেদিন যে সমর্থন ছিল, সেই সমর্থন আজও আছে। তারা জনগণের যে মূল দায়িত্ব পালনের জন্য আজ দায়িত্ব নিয়েছেন, সেই দায়িত্ব যাতে তারা সঠিক ভাবে পালন করতে সক্ষম হন, সেই রকম সমর্থন তাদের প্রতি আমাদের অবশ্যই অব্যাহত থাকবে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, একটি দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী করতে নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। জনগণের উন্নয়ন জনগণের নির্বাচিত সরকার দ্বারাই সম্ভব। কারণ, জনগণের সরকার হলে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকে। তাছাড়া জনগণের সরকারের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ভোটের মাধ্যমে। তাই যেদিন বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিনই মানুষ তার পূর্ণ স্বাধীনতা ফিরে পাবে।

তারেক রহমান বলেন, ‘আজকে আমরা মুক্ত ও ভয়হীন পরিবেশে কথা বলতে পারছি। এই পরিবেশের জন্য দীর্ঘ ১৭ বছর অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। গত জুলাই-আগস্ট মাসে হাজারো মানুষ নিহত ও অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। এই সময়ে শুধু বিএনপির ৬০ লাখ নেতা-কর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেকে মারা গেছেন। এত মানুষের আত্মত্যাগের কারণ একটাই, তাঁরা তাঁদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পেতে চান।

তিনি বলেন, দেশের জন্য ১৯৭১ সালে যেভাবে মুক্তিযোদ্ধারা আত্মত্যাগ করেছিলেন, ঠিক এভাবেই ২০২৪ সালের আন্দোলনে অনেকেই জীবন উৎসর্গ করেছেন। তবে মনে রাখতে হবে এই বাংলাদেশে স্বৈরাচারের পতন হলেও স্বৈরাচারের দোসররা এখনো রয়ে গেছে। তারা সব সময় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাই বর্তমান সরকার কাজ করতে গিয়ে এমন কিছু যেন না করে, যাতে পতিত স্বৈরাচার আবারও মাথাচাড়া দিতে পারে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ প্রত্যাশা করছেন, তাঁদের প্রিয় দল বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করবে। সে জন্য ১৭ বছর ধরে আমরাও সংগ্রাম করেছি। তাই বিএনপির নেতা-কর্মীদের বলব, এ দেশ থেকে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে বলেই সব বিপদ কেটে যায়নি। আমাদের সবাইকে সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। শুধু রাজনৈতিক মুক্তি পেলেই হবে না, বাংলাদেশের মানুষদের অর্থনৈতিক মুক্তি পেতে হবে। তা না হলে মানুষের সফলতা আসবে না।

তিনি বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক বিশ্বের আস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, ব্যবসা বাণিজ্যে স্বস্তি, জনমনে নিরাপত্তা, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা, তৃণমুল পর্যায়ে জনগণের প্রাত্যহিক নাগরিক সুবিধা দিতে একটি নির্বাচিত সরকারের কোন বিকল্প নেই।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের শিক্ষার্থী জনতার মহা জাগরণ আমাদের সামনে আরেক স্বাধীনতা আর বিজয়ের বার্তা বয়ে নিয়ে এসেছে। অতি উৎসাহে আমরা যদি এটাকে নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর সফলতা বলে চিহ্নিত করে ফেলি, তাহলে সম্ভবত আমরা আরেকটি ইতিহাস বিকৃতির ফাঁদে পা দেব।’

তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচার পতনের এই মহা সমরে দেশের সর্বস্তরের মানুষ, রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী-জনতা, গৃহিণী, শ্রমিক সবার অবদানকে আমরা যদি মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হই, কিম্বা গত সতের বছর ধরে অবিরাম আন্দোলনে গুম্, খুন, মামলা, হামলা আর নির্যাতনে পিষ্ট লাখ লাখ রাজনৈতিক কর্মীর অবদানকে যথাযথ মূল্যায়নে অসমর্থ হই তাহলে ইতিহাস আমাদের কাউকে ক্ষমা করবে না।’

শনিবারের জনসভার জন্য স্থানীয় ওয়াজির আলী উচ্চ বিদ্যালয় ময়দানে নির্ধারিত থাকলেও প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে পরবর্তীতে পায়রা চত্বরে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার বিএনপি নেতা কর্মী মিছিল সহকারে সভায় যোগদান করেন। আশে পাশের জেলা থেকেও অনেক বিএনপি নেতা-কর্মীরা সমাবেশে যোগদেন। এক পর্যায়ে জনসভা স্থল জনসমুদ্রে রূপ নেয়। এবার দীর্ঘ ১৭ বছর পর ঝিনাইদহে এটিই বিএনপির বড় জনসভা।

আরো পড়ুন

সরকার পরিচালনা রাজনৈতিক দলের কাজ: নুর

সরকার পরিচালনা রাজনৈতিক দলের কাজ: নুর

নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমি মনে করি যে, এই সরকারের ন্যূনতম ২ বছর থাকা দরকার। এখন যদি এক বছর ছয় মাসের মধ্যে একটা নির্বাচন হয়, তাহলে আপনাদের কি মনে হয়, বিদ্যমান ব্যবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন হবে?

দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচন দিন: মির্জা ফখরুল

দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচন দিন: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মানুষ ভোট দিয়ে তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়। এজন্য দ্রুত সংস্কার সম্পন্ন করে অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে।

নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই: তারেক রহমান

নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই: তারেক রহমান

সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি বক্তব্য এমনকি প্রতিটি প্রতিক্রিয়ায় সতর্ক থাকা দরকার।’ তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব যথার্থভাবে প্রতিপালনের রোড ম্যাপ তাদেরকেই নির্দিষ্ট করতে হবে।

আন্দোলনে ১৫৮১ নিহতের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ

আন্দোলনে ১৫৮১ নিহতের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ১ হাজার ৫৮১ জন নিহতের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আজ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।